নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দুঃখের কবিতাই শ্রেষ্ঠ কবিতা। ভালোবাসা হলো দুঃখ, এক ঘরে কবিতা ও নারী।
আমার ছোটোবেলা থেকেই আমি ১লা বৈশাখ উদ্যাপিত হতে দেখে আসছি। তবে, এটা এখনকার মতো ছিল না। তখন আমরা এটাকে ১লা বৈশাখও বলতাম না। হালখাতা (আরেকটা কী যেন আঞ্চলিক নাম ছিল বলে ঝাপসা মনে পড়ে) এবং চৈত্রসংক্রান্তি বলেই জানতাম। ১লা বৈশাখের দিন সারা বাজার জুড়ে হালখাতার আমেজ থাকতো। মানুষের যত বকেয়া আছে, তা দোকানে গিয়ে পরিশোধ করতো, আর দোকানি তাদের মিষ্টি মুখ করাতো।
ছবি : উইকিপিডিয়া
আমার যদ্দূর মনে পড়ে, চৈত্র সংক্রান্তির দিন (চৈত্র মাসের শেষ দিন) ও হালখতার দিন (১লা বৈশাখ) - এই দুইদিনই গ্রামে গ্রামে মেলা বসতো। বড়ো মেলা, ছোটো মেলা। আমাদের এলাকায় সেই সময় বড়ো বড়ো গৃহস্থ বাড়িতে পাগলা ষাঁড় পোষা হতো চৈত্র সংক্রান্তির দিনে বড়ো মেলায় কাছি (রশি) ছেঁড়ানোর জন্য (কাছি ছেঁড়ানোর আরেকটা দিন ছিল কোরবানি ইদের দিন)। আর ছিল ঘোড়দৌড়। আমরা দলে দলে পাগলা ষাঁড়কে দাবড়ে নিয়ে যেতাম মেলার দিকে, আর ছিল গগনবিদারী শ্লোগান। যে ষাঁড় যত মোটা রশি ছিঁড়তে পারতো, সেই ষাঁড়ের মালিকের নাম তত বেশি প্রচার পেত। আমাদের গ্রামে হালিম মামাদের বাড়িতে এক দুর্দান্ত পাগলা ষাঁড় ছিল। চৈত্র সংক্রান্তির দিন আমাদের এলাকার বিখ্যাত নূরপুরের মাঠে বিরাট মেলা বসতো। সেই মেলায় পাগলা ষাঁড়ের কাছি ছেঁড়ার প্রতিযোগিতা হতো। মাঠের মাঝখানে মাটিতে গর্ত করে গাড়া হতো মোটা একটা খুঁটি। পাগলা ষাঁড়ের রশিটি বাঁধা হতো সেই খুঁটির গোড়ায়। তারপর ষাঁড়ের চোখের সামনে লাল কাপড় দেখিয়ে কিংবা পেছন থেকে একযোগে চিৎকার করে ষাঁড়কে দাবড়ানি দেয়া হতো; ষাঁড়টা প্রচণ্ড জোরে দৌড় দিত এবং এক দৌড়েই কাছি ছিঁড়ে গেলে সবাই আনন্দে শোরগোল করে উঠতো। হালিম মামাদের ষাঁড়ের সাথে নূরপুরের মাঠ, নারিশা মাঠ, এমনকি কোমরগঞ্জেও একবার গিয়েছিলাম আমরা। মাঠের অন্যদিকে লম্বালম্বি একটা জায়গায় ঘোড়দৌড় হতো। এক মাথা থেকে আরেক মাথায় তেজী ঘোড়া দাবড়ে নিয়ে যেত ঘোড়সওয়ার; ওটাও খুব মজা করে দেখতাম।
মেলা বসতো দুপুরের পর থেকে। কিছু মেলা সকাল থেকেই শুরু হতো।
কলেজ জীবনে ঢাকায় অবশ্য আজকের মতো এমন সাড়ম্বরে ১লা বৈশাখ উদ্যাপন হতে দেখি নি (আমি ১৯৮৪ সালে ঢাকা আসি, ঢাকা কলেজ)। তবে, ১৯৮৫-তে শিল্পকলা একাডেমীর সন্ধ্যার অনুষ্ঠান, বিকালে বাংলা একাডেমীর বটতলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এখনো আমার স্মৃতিতে উজ্জ্বল ফুটে আছে। বাংলা একাডেমীর অনুষ্ঠানে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার গান সামনে দর্শক-সারিতে বসে প্রথম শুনি। সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমীতে দেখা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি আমার জীবনের সেরা অনুষ্ঠানের একটি। 'হিটলার নিপাত যাক' নামক একটা অসাধারণ নাটক হয়েছিল, এরশাদবিধ্বংসী নাটক, যার সিকোয়েন্সগুলোও মনে পড়ে।
২০০৪ বা ২০০৫ সালে রমনায় ১লা বৈশাখের মেলায় যাই। মানুষের সমুদ্র। পা ফেলার জায়গা নাই। আর কখনো গিয়েছিলাম কিনা মনে পড়ে না। এ সময়ে ঢাকা শহরের অন্যান্য জায়গায়ও মেলা হতে দেখেছি, তবে, সেগুলো সবই গ্রামীণ মেলার আদলে আয়োজিত মেলা ছিল।
আমাদের গ্রামাঞ্চলে এভাবেই বৈশাখ উদ্যাপিত হতে দেখেছি। বিভিন্ন গবেষণা ও স্টাডিপত্র থেকে বাংলার ১লা বৈশাখের হাজার বছরের ঐতিহ্য এ রকমই ছিল, বর্তমানে যেভাবে করা হচ্ছে এটা হাজার বছরের ঐতিহ্য না।
১লা বৈশাখ উপলক্ষে ঘরে ঘরে নানান পদের খাবার, বা পান্তা ভাতে ভাজা ইলিশ খাওয়ার কোনো রেওয়াজ আমি কোথাও কোনোদিন দেখি নি। এই যে ১লা বোশেখের দিন সকালবেলা পান্তাভাত রান্না করে ভাজা ইলিশ দিয়ে খাওয়া - এই উদ্ভট খাদ্যাভাস কোনোদিনই বাঙালির ছিল না। পৌষ-মাঘ-ফাল্গুন-চৈত্রে নদীতে পানি কমে যায়, ইলিশ ধরা পড়ে খুবই অল্প, বর্তমান কালে বঙ্গোপসাগরের ইলিশের প্রাচূর্যের যুগেও যেখানে ইলিশ সব মানুষের নাগালের মধ্যে নেই, সেই যুগে এত অল্প পরিমাণ ইলিশ কখনোই সাধারণ মানুষের আয়ত্তে ছিল না (তখন বঙ্গোপসাগরের ইলিশ এত ব্যাপক হারে ধরা হতো না, সারাদেশে সাপ্লাইও হতো না)। শুকনো মৌসুমে বাজারে অন্যান্য মাছেরও প্রাচূর্য ছিল না, কারণ, তখন আজকের মতো মাছ চাষ হতো না। তো, এমন মৎস সংকটের যুগে সাধারণ মাছ কিনে খাওয়াই যেখানে সাধারণ মানুষের পক্ষে ছিল দুঃসাধ্য ব্যাপার, সেখানে নিয়মিত ইলিশ মাছ খাওয়া, তার উপর সকালবেলা পান্তাভাতের সাথে ইলিশ ভাজা খাওয়া ছিল অকল্পনীয় ব্যাপার। তবে, সচ্ছল পরিবারের কথা আলাদা। আমাদের মতো অসচ্ছল পরিবারের মানুষও যে কোনোদিন সকালবেলা পান্তার সাথে ভাজা ইলিশ খায় নি, ব্যাপারটা তেমন না, তবে, তা হয়ত কালেভদ্রে ঘটে যেত, কিন্তু তা অবশ্যই নিয়মিত অভ্যাসের মধ্যে পড়ে না এবং তা কখনো বাঙালিদের হাজার বছরের ঐতিহ্য হতে পারে না।
এই কৃত্রিম পান্তা-ইলিশ কালচারের বয়সও খুব বেশিদিন হয় নি। আমি সর্বপ্রথম সকালবেলার পান্তা ইলিশের দাওয়াত পাই ২০০৮ সালে। জনৈক ইউএনও মহোদয় একদিন হুট করেই আমার অফিসে এসে উপস্থিত, তিনি ১লা বোশেখে পান্তা-ইলিশের আয়োজন করেছেন, আমি সেখানে চিফ গেস্ট, আমাকে যেতেই হবে। ততদিনে অবশ্য বাংলাদেশে ডিশ অ্যান্টেনা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে; তার কয়েক বছর আগে থেকেই ১লা বোশেখের ইলিশ-পান্তা ও ১লা বোশেখ ব্যাপকভাবে উদ্যাপনের খবরাখবর ডিশ চ্যানেলের মাধ্যমে প্রচারিত হয়ে আসছে। ... পরদিন যথাসময়ে পান্তা-ইলিশ-ভোজ অনুষ্ঠানে যেয়ে দেখি বিরাট ব্যাপার। মাটির বাসনে নিটোল তরল পানিতে ঝকঝকে সাদা ভাত টলটল করে ভাসছে। বাসনের এক ধারে একখানি ভাজা ইলিশ পান্তায় অর্ধেক ডুবে আছে।
সেকালে সচ্ছল পরিবার এবং যে-পরিবারে সদস্যসংখ্যা বেশি ছিল, তাদের হয়ত প্রতিবেলাই রান্নাবান্না করতে হতো। কিন্তু অসচ্ছল পরিবারে বিকালে রেঁধে বিকালে ও রাতে খাওয়া হতো; অবশিষ্ট ভাতে পানি দিয়ে রাখা হতো সকালে খাওয়ার জন্য। ভাতে পানি দিলে ভাত নষ্ট হতো না বা পঁচতো না। তখন রেফ্রিজারেটর ছিল না বলে এ কাজ করা হতো।
আমাদের মতো সাধারণ ও অসচ্ছল পরিবারে দেখেছি, সকাল বেলার জন্য সামান্য একটু তরকারি, লাউ মেশানো ডাল, বা টক হয়ে যাওয়া ডাল অবশিষ্ট থাকে; এ দিয়ে সবটুকু পান্তা খাওয়া যায় না। তখন প্রয়োজন পড়ে কাঁচামরিচ, শুকনা মরিচ পোড়া, লবণ আর পেঁয়াজ। সম্ভব হলে আলুভর্তা বা বেগুন ভর্তা, কিংবা ধইন্যাপাতা ভর্তা।
পান্তা ভাতের সাথে পেঁয়াজ, লবণ আর কাঁচামরিচ বা শুকনামরিচ পোড়া মাখালে যে তা স্বাদ লাগে বা উপাদেয় হয়, এ জিনিসটা যিনি আবিষ্কার করেছিলেন, তিনি খুব মহান ব্যক্তি বা ব্যক্তিনি ছিলেন নিঃসন্দেহে। এ খাবারটা এত স্বাদের বলেই আবহমান কাল ধরে অসচ্ছল, কিংবা সচ্ছল বাঙালিরা এটা খেয়ে আসছিলেন এবং জনপ্রিয়তাও লাভ করেছিল।
বর্তমানে ১লা বৈশাখে ঢাকায় যে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়, তা শুরু হয়েছে ১৯৮৯ সালের দিকে। শুরুতে এর নাম ছিল বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা। হাজার বছর ধরে দুই বাংলায় ১লা বৈশাখ, হালখাতা বা চৈত্র সংক্রান্তিতে মেলা, গান-বাজনা, ইত্যাদি সহযোগে নববর্ষ উদ্যাপনের ইতিহাস থাকলেও বহুল বিতর্কিত ও অধুনা সংযোজিত আনন্দ শোভাযাত্রা, বৈশাখী শোভাযাত্রা বা মঙ্গল শোভাযাত্রার কোনো ইতিহাস নেই। উইকিপিডিয়া থেকে জানা যায় যে, ১৯৮০’র দশকে স্বৈরাচারী শাসনের বিরূদ্ধে সাধারণ মানুষের ঐক্য এবং একইসঙ্গে শান্তির বিজয় ও অপশক্তির অবসান কামনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের উদ্যোগে ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে সর্বপ্রথম আনন্দ শোভাযাত্রার প্রবর্তন হয়। ঐ বছরই ঢাকাবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয় এই আনন্দ শোভাযাত্রা। সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীগণ পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে এই আনন্দ শোভাযাত্রা বের করার উদ্যোগ প্রতি বছর অব্যাহত রাখে।
শোভাযাত্রার অনতম আকর্ষণ - বিশালকায় চারুকর্ম পুতুল, হাতি, কুমীর, লক্ষ্মীপেঁচা, ঘোড়াসহ বিচিত্র মুখোশ এবং সাজসজ্জ্বা, বাদ্যযন্ত্র ও নৃত্য। পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু থেকেই জনপ্রিয়তা পেয়ে আসছে। পরের বছরও চারুকলার সামনে থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। তবে সংবাদপত্রের খবর অনুযায়ী জানা যায়, ঐ বছর চারুশিল্পী সংসদ নববর্ষের সকালে চারুকলা ইন্সটিটিউট থেকে বর্ণাঢ্য আনন্দ মিছিল বের করে। শুরু থেকেই চারুকলার শোভাযাত্রাটির নাম মঙ্গল শোভাযাত্রা ছিল না।
মাহবুব জামাল শামীম নামক শুরুরদিকের একজন অংশগ্রহণকারীর কাছ থেকে জানা যায়, পূর্বে এর নাম ছিল বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা। সেই সময়ের সংবাদপত্রের খবর থেকেও এমনটা নিশ্চিত হওয়া যায়। সংবাদপত্র থেকে যতোটা ধারণা পাওয়া যায়, ১৯৯৬ সাল থেকে চারুকলার এই আনন্দ শোভাযাত্রা মঙ্গল শোভাযাত্রা হিসেবে নাম লাভ করে।
১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে চারুপীঠ নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যশোরে প্রথমবারের মতো নববর্ষ উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রার আয়োজন করে। যশোরের সেই শোভাযাত্রায় ছিল - পাপেট, বাঘের প্রতিকৃতি, পুরানো বাদ্যযন্ত্রসহ আরো অনেক শিল্পকর্ম। শুরুর বছরেই যশোরে শোভাযাত্রা আলোড়ন তৈরি করে। পরবর্তীতে যশোরের সেই শোভাযাত্রার আদলেই ঢাকার চারুকলা থেকে শুরু হয় বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৪ সালে।
১৯৮৯ সালে প্রথম আনন্দ শোভাযাত্রায় ছিল পাপেট, ঘোড়া, হাতি। ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দের আনন্দ শোভাযাত্রায়ও নানা ধরনের শিল্পকর্মের প্রতিকৃতি স্থান পায়। ১৯৯১ সালে চারুকলার শোভাযাত্রা জনপ্রিয়তায় নতুন মাত্রা লাভ করে। চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিল্পীদের উদ্যোগে হওয়া সেই শোভাযাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভাইস চ্যান্সেলর, বিশিষ্ট লেখক, শিল্পীগণ-সহ সাধারণ নাগরিকরা অংশ নেয়।
শোভাযাত্রায় স্থান পায় বিশালকায় হাতি, বাঘের প্রতিকৃতির কারুকর্ম। কৃত্রিম ঢাক আর অসংখ্য মুখোশখচিত প্ল্যাকার্ড। মিছিলটি নাচে গানে উৎফুল্ল পরিবেশ সৃষ্টি করে। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে আনন্দ শোভাযাত্রার সম্মুখে রং বেরংয়ের পোশাক পরিহিত ছাত্র-ছাত্রীদের কাঁধে ছিল বিরাট আকারের কুমির। বাঁশ এবং বহু বর্ণের কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল কুমিরটি। ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে ‘১৪০০ সাল উদ্যাপন কমিটি’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরর চারুকলা ইন্সটিটিউটের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে। শোভাযাত্রার আকর্ষণ ছিল বাঘ, হাতি, ময়ূর, ঘোড়া, বিভিন্ন ধরনের মুখোশ। চারুকলার সামনে থেকে শোভাযাত্রাটি শুরু হয়ে শাহবাগ মোড় দিয়ে শিশু একাডেমি হয়ে পুনরায় চারুকলায় এসে শেষ হয়।
২০১৭ সাল থেকে কলকাতার ‘বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন পরিষদ’-এর উদ্যোগে কলকাতায় মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২১ সালেও আয়োজন করা হয়। কলকাতার গাঙ্গুলিবাগান থেকে শুরু হয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যাপীঠ ময়দানে যেয়ে শেষ হয় এই মঙ্গল শোভাযাত্রা। এছাড়াও বেশ কয়েকটি মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। দুই বাংলার শিল্পীদের আকা নানান জিনিস থাকে সেই শোভযাত্রায়।
বাংলা নববর্ষ পালনের রেওয়াজ সুদূর অতীত হতে চলে আসছে কলকাতায়। তবে বাংলাদেশে যেভাবে ঘটা করে বাংলা নববর্ষ পালন হয়, সেভাবে কলকাতায় হতো না। এখন হচ্ছে। বাংলাদেশে যে প্রাণের ছোঁয়া আর আবেগ ভরা অনুষ্ঠান ও নববর্ষের মেলা হয়, ইলিশ-পান্তা থেকে চিড়া-মুড়ি-বাতাসা আর দই-মিষ্টি খাওয়ার রেওয়াজ। সেটি এখন কলকাতায়ও শুরু হয়েছে।
২০২৩ সালে ০৯ এপ্রিল একজন বাংলাদেশী আইনজীবী মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধে আইনি নোটিশ দেন। তিনি ‘মঙ্গল’ শব্দটি একটি ধর্মীয় সংশ্লিষ্ট শব্দ এবং বৃহৎ আকৃতির পাখি, মাছ ও বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি প্রদর্শনের মাধ্যমে মুসলিম জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার দাবি করেন। এ আইনি নোটিশের প্রেক্ষিতেই এ বছর মঙ্গল শোভাযাত্রা বিতর্কিত হয়ে পড়ে, যদিও আগের বছরগুলোতেও এ শোভাযাত্রা বা যে-কোনো অনুষ্ঠান আয়োজনেই কিছু মুসলমান ধর্মাবলম্বী আপত্তি তুলে আসছিলেন। এ মঙ্গল শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে পুরো বাংলাদেশে এখন প্রধানত দুইটি মতামত বা দল মুখোমুখী দাঁড়িয়ে গেছে। একদল এ মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য বলে এটা অবশ্যই পালন করতে হবে, এমন দৃঢ়চেতা ও যুদ্ধংদেহী মূর্তি ধারণ করেছেন। আমাদের সনাতন ধর্মের বন্ধুরা মুখে এটাকে হাজার বছরের ঐতিহ্য বললেও অন্তরে অন্তরে এটাকে তাদের নিজ ধর্ম পালনের একটা উৎসব বলে মনে করতে থাকেন। মুসলমানদের মধ্যে আবার মোটামুটি তিনটা দল দেখা যায় - একদল এটাকে কোনোভাবেই সমর্থন করছেন না, হোক সেটা মঙ্গল শোভাযাত্রা, কিংবা বৈশাখী মেলা বা বৈশাখী অনুষ্ঠানমালা, এগুলো পালন করা ইসলাম ধর্মমতে নাজায়েজ বলে তারা এটা পালন করতে দিতে চান না। আরেকদল - যা খুশি তাই হোক, আমার ইচ্ছে হলে আমি যাব, ইচ্ছা না হলে আমি যাব না। এরা আসলে মডারেট গোষ্ঠী (সত্যি বলতে কী, আমি এই দলেই)। আরেক দল আছে, তাদের কথাবার্তা শুনে কখনো মনে হয় বলদ, আবার কখনো মনে হয় তারা কারো পক্ষে বুঝে অথবা না বুঝে দালালি করছেন। এরা কোথায় যে পাইছে 'হাজার বছরের সংস্কৃতি' নামক একটা শব্দ, তা না বুঝেই গড়গড় করে এই বুলি ছাড়তে থাকে, আর 'মঙ্গল শোভাযাত্রা' পালনের জন্য যে-কোনো মূল্যে তারা প্রস্তুত। আমাদের সনাতনী বন্ধুদের একটা মাত্র দল - তারা এ টু জেড এ 'মঙ্গল শোভাযাত্রা' বাস্তবায়ন করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, এটা বাস্তবায়ন করার জন্য তারা যেন যুদ্ধক্ষেত্রে নেমেছেন এবং সফল না হওয়া পর্যন্ত এ সংগ্রাম তারা চালিয়ে যেতেই থাকবেন, এতখানিই উগ্র মনোভাব তাদের মধ্যে দেখা গেল, কারণ, এটা তাদের ধর্মীয় রিচুয়াল পালনের অংশ। আমাদের স্বধর্মীয় দালাল শ্রেণির বন্ধুরা স্বধর্মীয় মৌলবাদীদের প্রতিহত করতে যেয়ে নিজেদের অস্তিত্ব হারিয়ে নিজেদের অজান্তেই সনাতনী মৌলবাদীদের ধর্মীয় রীতিতে নিমজ্জিত হয়ে যাচ্ছেন, এটা বুঝতেই পারছেন না।
আমাদের যা খুশি তাই পালনের স্বাধীনতা আছে। মঙ্গল শোভাযাত্রা বা আনন্দ শোভাযাত্রায় শামিল হওয়ার ইচ্ছা যদি আমার হয়, আমি যাব, যার ইচ্ছা হবে না, সে যাবে না। কিন্তু দুইদিনের একটা শোভযাত্রাকে হাজার বছরের ঐতিহ্য বলা শুধু বলদামিই না, ভণ্ডামি এবং অন্যায়ও। তেমনি এক ধর্মের মৌলবাদীদের প্রতিহত করতে যেয়ে আপনি অন্য ধর্মের মৌলবাদীদের ধর্মীয় রীতিতে ডুবে যাচ্ছেন, আর সেটাকে বাঙালি সংস্কৃতি বলছেন, এটাও তেমনি বলদামি ও অন্যায়। এর অর্থ হলো, আপনি মৌলবাদীদের বিরুদ্ধাচরণ করতে যেয়ে নিজেই মৌলবাদী হয়ে যাচ্ছেন।
নিজের সার্বজনীন বাঙালি অস্তিত্ব নিয়ে বাঁচতে শিখুন।
সূত্র : উইকিপিডিয়া - মঙ্গল শোভাযাত্রা
চাইলে পড়তে পারেন :
পহেলা বৈশাখ – আমাদের আসল খাদ্যসংস্কৃতি বনাম কৃত্রিম ইলিশ-সংস্কৃতি। ব্লগার ও ফেইসবুকারদের মতামত ভিত্তিক সমীক্ষা
শূন্য থেকে বাংলা সন শুরু হয় নি। ৯৬৩ হিজরির ১ মহররম=৯৬৩ বাংলা সনের ১ বৈশাখ
১৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১২:৫০
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ছোটোবেলায় আমরা কোনোদিন ১লা বৈশাখ, এমনকি বাংলা নববর্ষ কথাটা উচ্চারণ করেছি বলে মনে পড়ে না, উচ্চারণ করেছি হালখাতা আর চৈত্র সংক্রান্তি। হালখাতার সূচনা হয় সম্রাট আকবরের সময় থেকে, ১৫৮৪ সালে। বয়স হিসাব করলে ৫০০ বছরও হয় না। এটাকে তবু হাজার বছরের সংস্কৃতি বলা যায়, যেহেতু সময়টা দীর্ঘ আর 'হাজার' শব্দটা দীর্ঘতার প্রতিশব্দ হিসাবে, কিন্তু ১৯৮৯ সালে শুরু হওয়া আনন্দ শোভাযাত্রাকে যারা হাজার বছরের বাংলা সংস্কৃতি বলতে চান, তারা হয় ইতিহাস জানেন না, অথবা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এটা প্রোপাগেট করতে চান।
একটা রাষ্ট্রে একটা সংস্কৃতি গড়ে উঠতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন পড়ে। বাংলাদেশে পান্তা-ইলিশ কালচার শুরু হয়েছে বাংলাদেশী ডিশ চ্যানেল যুক্ত হওয়ার পর; আমার স্পষ্ট মনে আছে ২০০৪ বা ২০০৫ সালে প্রথম বারের মতো বিভিন্ন ডিশ চ্যানেলে ফলাও করে পান্তা-ইলিশ খাওয়ার উৎসব প্রচার করা হলো। তারপর এর উত্তরোত্তর প্রচারণা বাড়তে থাকলো। আমার কর্মজীবনেও ২০০৬ সালের আগে কোথাও অফিশিয়ালি ১লা বোশেখ উদ্যাপিত হতে দেখি নি।
আচ্ছা, ২০১৫ বা ২০১৬ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন ১লা বৈশাখে ঘোষণা দিয়ে ইলিশ খাওয়া বাদ দিলেন, তখন ১লা বোশেখে পান্তা-ইলিশ খাওয়ার হিড়িক ড্রাস্টিক্যালি কমে গেল। তার আগ পর্যন্ত বোশেখ উপলক্ষে ইলিশ মাছের দাম উঠে যেত আকাশ সমান। আপনি খেয়াল করে দেখুন, গত কয়েক বছরে বোশেখ মাছে ইলিশ খাওয়ার ধুম আর আগের মতো দেখা যায় না। কারণ কী? মানুষের মধ্যে চেতনা এসেছে, এটা আমাদের আসল সংস্কৃতি না, কৃত্রিম, চাপিয়ে দেয়া সংস্কৃতি।
গত কয়েক বছর ধরে, বিশেষ করে এ বছর, পান্তা-ইলিশ বা ইলিশের দাম নিয়ে কোনো হৈচৈ নেই, হৈচৈ হচ্ছে শোভাযাত্রা নিয়ে।
যেটা গণ মানুষের অভ্যাস না, সেটাকে সংস্কৃতি বলে ১লা বোশেখে পান্তা-ইলিশ খাওয়া মানে গণ মানুষকে ব্যাঙ্গ করা।
মুসলমানদের ইদের উদাহরণ দিই। ইদের দিন মুসলমানরা শেমাই-পায়েশ খান, সারা বছর না খেলেও এদিন খান। এটা হলো মুসলিমদের ইদের সংস্কৃতি। এটা খাদ্যাভ্যাস থেকে আসে নি। পৃথিবীর সব প্রান্তের মুসলিমরাই ইদের দিন মিষ্টি মুখ করেন। নবী (সঃ )-এর সুন্নত পালন হিসাবে।
পান্তা-ইলিশ কোনোদিন বাঙালি সংস্কৃতি হিসাবে দাঁড়াতে পারবে না, কারণ হলো, ইলিশের দাম এবং দুস্প্রাপ্যতা। এ প্রবণতা এখনই অনেক কমে গেছে, মাত্র ১৫-২০ বছরের মাথায়, আগামী ১৫-২০ বছর পর এতে অন্যমাত্রা যোগ হবে। এমনকি মঙ্গল শোভাযাত্রাও অন্যরূপ নিবে, এবারই দেখুন, নানা ধরনের প্রতিবাদী ব্যানার ও ফেস্টুন যোগ হয়েছে। আগামীতে হয়ত এটা প্রতিবাদের একটা মহোৎসবে পরিণত হতে পারে, এবং যেখানেই প্রতিবাদ, সেখানেই তা থামানোর জন্য কর্তৃপক্ষের বাধা আসবে।
২| ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১:০৪
শূন্য সারমর্ম বলেছেন:
দুই বাংলা এক হয়ে বৈশাখ উদযাপন করলে,উৎসব জনপ্রিয়তা পেতো বিশ্বব্যাপী।
১৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৭
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: বাংলাদেশে ১৪ এপ্রিল, ভারতে ১৫ এপ্রিলে ১লা বোশেখ উদ্যাপিত হয়। দুই বাংলা এক হয়ে কীভাবে উদ্যাপন করবে, সে ব্যাপারে কিছু আইডিয়া দিলে বুঝতে সহজ হতো।
৩| ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ সকাল ৯:৪৬
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: বিবর্তনের ধারায় বাংলা নববর্ষ উদযাপন
আপনার লেখাটি খুব ভালো লাগলো। আমার পুরনো একটি ছোট লেখা শেয়ার করলাম। ভালো থাকবেন।
১৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১:৫৬
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: কামাল ভাই, অসাধারণ একটা পোস্ট। পড়ে এলাম ওটি। খুবই শ্রমসাধ্য গবেষণা ছিল আপনার। পড়ে আমিও নিজেকে অনেক ঋদ্ধ করলাম। নিজেকে খুঁজে পেয়েছি আপনার বর্ণনায়। ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।
৪| ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ সকাল ১১:০৩
ঢাবিয়ান বলেছেন: নব্বই দশকের একটা বিরাট সময় আমার কেটেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সাইন্সের স্টুডেন্ট হওয়ার সুবাধে সেশন জ্যামটা খুব বেশি ছিল। অনার্স, মাস্টার্স মিলেয়ে সাত বছর লেগেছিল সে সময়। তবে তাতে মোটেও দুঃঃখিত ছিলাম না আমরা। কারন এই ক্যামপাসে যারা দিন কাটিয়েছে তারা জানে যে কতটা স্বপ্নময় সে বিচরন। জীবনের বহুপথ পারি দিয়ে আজো মনে হয় জীবনের স্রেষ্ঠ সময় পার করেছি প্রানপ্রিয় এই শিক্ষাঙ্গনে।
নব্বই দশকের চারুকলার আনন্দ শোভাযাত্রা খুবই কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। সে সময়ে এই শোভাযাত্রায় চারুকলার স্টুডেন্টরা বিশাল আকারের সবুজ রঙ এর কুমিরের এক কাগজে তৈরী প্রতিকৃ্তি কয়েকশত ছাত্র ছাত্রী মাথার উপড়ে বহন করত। অল্প কিছু অন্যান্য প্রানীর প্রতিকৃতি ও দেখেছি মনে পড়ে। তখনকার সময়ে এই শোভাযাত্রার বিরুদ্ধে কোন উচ্চবাচ্য্ হতে কখনো শুনিনি ।
সেই আমলেও পহেলা বৈশাখে এই শোভাযাত্রা খুবই বিরক্তিকর লাগত ভয়ানক শব্দ তৈরীর কারনে।শোভাযাত্রায় ঢোল, ড্রাম, বাশি ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্রের যৌথ সমাহার কানফাটা এক বিকট আওয়াজ তৈরী করত। শব্দ দুষনের দোষে দুষ্ট এই শোভাযাত্রা ক্যম্পাস পদক্ষিনের সময় হলেই দ্রুত সেই এলাকা থেকে সটকে পড়তাম।
আর বর্তমানের বিতর্কিত শোভাযাত্রা প্রসঙ্গে শুধু একথাই বলা চলে যে , হিন্দু ধর্মের সংস্কৃতি সংযোজন সাম্প্রতিক সময়ের আমদানি। সনাতন ধর্মের অনুসারী যারা বিতর্ক এরিয়ে চলতে পছন্দ করে তারাও এই শোভাযাত্রায় অংশগ্রহন করে না বা এর পক্ষালম্বন করে কোন বক্তব্য দেয় না।
১৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৪:০৪
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: নিজের অভিজ্ঞতা-সমৃদ্ধ চমৎকার একটা কমেন্টের জন্য শুরুতেই আপনাকে অজস্র ধন্যবাদ জানাই।
আমি এতক্ষণ কুমীরের প্রতিকৃতির ছবিটা খুঁজছিলাম। গতকাল বা পরশু ওটা দেখছিলাম ফেইসবুকে। মানুষখেকো কুমীরটা ছিল স্বৈরাচারের প্রতীক, তার পিঠে দুজন নরনারীর প্রতিকৃতি ছিল, সম্ভবত কুড়াল হাতে, কুমীরকে কুপিয়ে ধ্বংস করার জন্য। কনসেপ্টটা ধর্ম-নির্বিশেষে সমগ্র বাঙালির জাতির পক্ষেই যায় (কেবল স্বৈরাচার ও তাদের দোসর ছাড়া)। কিন্তু যখন কোনো একটা নির্দিষ্ট ধর্মাবলম্বী মানুষ মঙ্গল শোভাযাত্রায় তাদের নিজ ধর্মের বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি ব্যবহার করে তাদের নিজ ধর্মের রিচুয়াল পালন করেন, আর সেটাকে সমগ্র বাঙালি জাতির হাজার বছরের সংস্কৃতি বলে চাপিয়ে দিতে চান, তখন সেটা মানা কষ্টকর হয়। আমরা মুসলমান ধর্মের মৌলবাদীদের প্রতিহত করছি, অথচ সনাতন ধর্মের মৌলবাদীদের ধর্মীয় আচার পালন করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠছি, আচরণটা প্রচণ্ডরকম স্ব-বিরোধী হয়ে যায়, যা আমাদের প্রাণপ্রিয় বন্ধুগণ বুঝে উঠতে পারছেন না।
তবে, মঙ্গল শোভাযাত্রার বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন বদলে গেছে এবারই। মনে হচ্ছে আগামী বছর এর ব্যাপক পরিবর্তন হবে। মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম আনন্দ শোভাযাত্রা বা বৈশাখী শোভাযাত্রা হলে অন্তত এত বিতর্ক হতো না।
৫| ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ সকাল ১১:১৬
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: নববর্ষ উদযাপনের সাথে মঙ্গল শোভাযাত্রার কোন সম্পর্ক আছে বলে আমি মনে করি না। সনাতন ধর্মের যারা এটা কে বাঙালি সংস্কৃতির আবশ্যক অংশ বলে মুসলমানদের এই অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণে বাধ্য করতে চায় মানে হিন্দু আচারে বাধ্য করতে চায় তারা উগ্র মৌলবাদী। মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক হিন্দু তাবলীগ জামায়াতের আশ্রয় নিয়ে ভারতে পালিয়েছে। তাবলীগের ভাইয়েরা তাদের সহযোগিতা করেছেন। সেটা আলাদা বিষয়। মুসলমানরা হিন্দু আচার পালন করবে কেন? চারুকলা কি বাঙালি সংস্কৃতির জন্মদাতা বা ধারক ও বাহক। ইসলাম শান্তির ধর্ম। মনে গড়া ধর্ম নয়। পবিত্র কুরআন একমাত্র অবিকৃত ধর্মগ্রন্থ। বাকি সব বিকৃত পরিবর্তিত মানুষের দ্বারা । যেমন ভাবে ১৯৮০ সালের বিষয় হাজার বছরের ঐতিহ্য হয়ে গেল। এসব মিথ্যাবাদীরা জ্ঞানপাপী ও পরিত্যাজ্য। এ সমস্ত বেদাতি কাজকারবার ইসলামে নিষিদ্ধ। ইসলাম পরিপূর্ণ জীবন বিধান।
১৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৪:০৯
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: প্রিয় কবি সেলিম আনোয়ার ভাই, আপনার কমেন্টটাও খুব ভালো লাগলো। আপনার বক্তব্যের সাথে একমত।
আপনি খেয়াল করে দেখবেন, মুসলমানদের মধ্যে কেউ ধর্ম নিয়ে কথাবার্তা বললে আমাদের অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টগণ তাদেরকে মুহূর্তে মৌলবাদী বলে গালি দিতে পিছপা হোন না। আর তারাই সনাতন ধর্মের মৌলবাদীদের আচরণগুলোকে সমাদরে গ্রহণ করছেন, তখন তাদের উগ্রতার মধ্যে কোনো দোষই খুঁজে পাচ্ছেন না। ভণ্ডামি আর কাকে বলে।
৬| ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১২:৪১
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
আনন্দের জায়গায় মঙ্গল সংযোজন ই বিতর্কের কারণ। আগে হাল খাতাই হতো ছোট বেলায় দেখেছি।
১৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৪:১১
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আমার মতেও মূল পয়েন্টটাই এখানে- আনন্দের জায়গায় মঙ্গল শব্দ জুড়ে দেয়া। আমার ধারণা, আগামীতে এর নাম আগের মতোই বাংলা বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা বা বৈশাখী শোভাযাত্রা হয়ে যাবে।
৭| ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১২:৪৭
নীল আকাশ বলেছেন:
ছোটবেলা থেকে আমরা পহেলা বৈশাখের মেলায় যেতাম। ঘুরাঘুরি করতাম। এইসব মেলা এখনো হোক তাতে কোনো আপত্তি থাকার কথা না কারো।
কিন্তু সমস্যা তখনই তৈরি হয়, যখন এই মেলাকে অন্য ধর্মের অনুষ্ঠানের সাথে মিলিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে মুসলিমদের মাঝে শিরক এর প্রচলন শুরু করার ধান্দাবাজি করে এরা।
শোভা যাত্রা করুক, আনন্দ করুক, এতেও সমস্যা নেই। কিন্তু বিনা কারণে এটা মিথ্যাচারের মাধ্যমের হাজার বছরের তকমা লাগাবে কেন এরা?
আমরা মুসলিমরা কেন জেনে শুনে এইসব সনাতনী ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যাবো?
পশু পাখি মূর্তি বানিয়ে এদের নিয়ে মঙ্গল শোভা যাত্ররা মানে কী? এরা মঙ্গল এনে দেবে?
নাউজুবিল্লাহ। এটা সরাসরি শিরক যা আল্লাহ ঘোষনা দিয়েছে কোনোদিন ক্ষমা করবেন না।
পোস্ট দারুণ হয়েছে। লাইকড সহ প্রিয়তে নিয়ে রাখলাম।
১৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৩৮
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: মুসলমানদের মধ্যে একটা গোষ্ঠী আছেন, যারা নিজেদেরকে অতি প্রগতিশীল মনে করেন। তারা ইসলামী মৌলবাদীদের প্রগতিশীলতার শত্রু মনে করলেও সনাতন ধর্মের মৌলবাদীদের বুকে টেনে নেন। তাই তাদের আচার-অর্চনাও ভালো লাগে, আর সেগুলো হয়ে যায় হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি।
যুনাইদ ভাই, আপনার স্ক্রিনশটটা পড়লাম। ফেইসবুকেও এ ধরনের একটা স্ক্রিনশট ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে ১৯৮৫ সালে যেভাবে আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু হয়ে ১৯৯৬ সালে তা মঙ্গল শোভাযাত্রায় পরিণত হলো, তার সাথে স্ক্রিনশটের বক্তব্যের কোনো মিল নেই। ভয়েস অব আমেরিকার এই পোস্টটা দেখতে পারেন। উইকিপিডিয়াতেও একই ইতিহাস লেখা আছে।
যাই হোক, আপনার কমেন্টের সাথে একমত।
অনেক ধন্যবাদ সুন্দর কমেন্টের জন্য।
৮| ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১:৩৮
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- বৈশাখী উৎসব আর মঙ্গল শোভাযাত্রাকে অনেকেই এক করে ফেলেন। কেউ কেউ বুঝে এক করেন, কেউ কেউ না বুঝে এক করেন, কেউ কেউ গায়ের জোড়ে এক করেন।
১৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৪৪
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: হাহাহাহাহা। মূল কথাটা আপনিই বললেন মনে হচ্ছে।
বৈশাখী উদযাপনের ইতিহাস কয়েকশ বছরের পুরনো হলেও মঙ্গল শোভাযাত্রার ইতিহাস খুব বেশি পুরনো নয়। মঙ্গল শোভাযাত্রা প্রথম শুরু হয়েছিল ১৯৮৫ সালের পহেলা বৈশাখে যশোরে। তখন দেশে ছিল সামরিক শাসন। উদ্দেশ্য ছিল দেশের লোকজ সংস্কৃতি উপস্থাপনের মাধ্যমে সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করা। আর সেই শোভাযাত্রায় অশুভের বিনাশ কামনা করে শুভশক্তির আগমনের প্রার্থনা করা হয়।
এবারই বেশকিছু প্রতিবাদী পোস্টার দেখা গেছে। আগামীতে কী হয় কে জানে।
কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ জলদস্যু ভাই।
৯| ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ২:১৫
রাজীব নুর বলেছেন: মূলত বাঙ্গালীরা দুঃখী জাতি। তাঁরা ভাতে দুঃখী, কাপড়ে দুঃখী। এদের আনন্দ উৎসবের দিন খুব কম। তাই বিশেষ দিনকে সামনে রেখে আনন্দ উৎসব করা মন্দ কিছু নয়। এই আনন্দের সাথে ধর্ম জড়ালে সংঘর্ষ বাধবেই। তাই ধর্ম থেকে দূরে থেকেও হলেও আনন্দ উৎসব করতে হবে। আর যারা নিজেকে ধার্মিক মনে করেন, তাঁরা এরকম উৎসব থেকে দূরে থাকবেন। এবং যারা আনন্দ করবে তাদের বাঁধা দিতে যাবেন না।
১৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৫৯
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন:
এই আনন্দের সাথে ধর্ম জড়ালে সংঘর্ষ বাধবেই। তাই ধর্ম থেকে দূরে থেকেও হলেও আনন্দ উৎসব করতে হবে। আর যারা নিজেকে ধার্মিক মনে করেন, তাঁরা এরকম উৎসব থেকে দূরে থাকবেন। এবং যারা আনন্দ করবে তাদের বাঁধা দিতে যাবেন না।
এই পোস্টে বলা হয়েছে প্রধানত (১) আমি ছোটোবেলা থেকে কীভাবে বৈশাখ উদ্যাপিত হতে দেখেছি (২) ১৯৮৫ সাল থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু হয়, ১৯৯৬ সালে তা মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম ধারণ করে - এ ব্যাপারে ইতিহাস তুলে ধরা
প্রিয় রাজীব ভাই, এই যে আপনি কমেন্টটা লিখলেন, আপনি কি পোস্টটা পড়ে এ কমেন্ট লিখেছেন, নাকি চারদিকে এ নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে তা থেকে একটা পূর্ব-ধারণা নিয়েই আপনার মনে হলো আমি মানুষের আনন্দ করায় বাধা দিচ্ছি, যার ফলে আপনি এটা বলতে পারলেন - 'যারা আনন্দ করবে তাদের বাধা দিতে যাবেন না'? মঙ্গল শোভাযাত্রার পুরোটাই যে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তাদের ধর্মীয় আচার পালনের উৎসব মনে করেন, আপনি কি সেটা জানেন? ইসলাম আর মুসলমান নাম শুনলেই তো আপনার গা জ্বলে ওঠে, তো সনাতন ধর্মের মৌলবাদীদের কর্মকাণ্ডে কি আপনার গা জ্বলে না?
আপনার নকল বা লেখাচুরি, আপত্তিকর পোস্ট, আপত্তিকর কমেন্ট, ইত্যাদির প্রেক্ষিতে সমগ্র ব্লগ যখন আপনার বিপক্ষে, তখনো আমি আপনার বিরুদ্ধে একটা কথাও বলি নি, আপনাকে ভালোবাসি সেজন্য। আপনি তো ভুলে গেছেন, এখন মুখে ঝাড়েন কোন ওস্তাদে নাকি আপনারে ব্লগিং শিখাইছে। এই ব্লগে আপনারে আর নুরুরে ব্লগিং শিখাইছি আমি। লাইম লাইটে নিয়া আসছি আমি। আপনারে ব্লগার নাম্বার উপাধি দিয়া পোস্ট করেছি আমি। সেই পোস্ট পেয়ে খুশিতে ডগমগ হইয়া পোস্ট দিয়েছেন, সেটা কি ভুলে গেছেন?
গঁৎবাঁধা, আপত্তিকর কমেন্ট আমাকে শুধু ব্যথিতই করে নি, অনেক ক্ষিপ্তও করেছে।
দয়া করে আমার পোস্টের ত্রীসীমায় যেন আপনাকে আর কোনোদিন না দেখি।
১০| ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৪:১৬
ডার্ক ম্যান বলেছেন: ফেসবুকে পড়েছি।
আজকে তো আপনার মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী? যদি আমার ভুল না হয়ে থাকে
১৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৪:২৭
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: কয়েকটা কমেন্ট বাদ দিয়ে আপনার কমেন্টের উত্তর দিচ্ছি। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রিয় সৈকত ভাই। আপনি আমার মায়ের মৃত্যুদিবসটা মনে রেখেছেন। ১৯৮০ সালের ১৬ এপ্রিল, সেদিন বুধবার ছিল, ঠিক এমন সময়েই (যখন রিপ্লাই লিখছি), বিকাল ৩-৪টার দিকে আমার মা মারা যান।
আপনি গতবছরও এ দিনটার কথা বলেছিলেন, আমার মনে আছে।
মানুষের মন থেকে চিরস্থায়ী ভালোবাসা পাবার একটা অলৌকিক ক্ষমতা আছে আপনার, যা হয়ত আপনি নিজেও জানেন না।
১১| ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৪:৩৩
দপ্তরবিহীন মন্ত্রী বলেছেন: মঙ্গল শোভাযাত্রার বিরুদ্ধে লেখার কারণে আমাকে জেনারেল করা হয়েছে। তেমন উগ্রবাদ কিছু ছিল না। মজার ব্যপার হল, লেখাটা ছিল রিপোস্ট! অর্থাৎ ১ম বার তাদের মনে হয়নি এই লেখা খারাপ কিছু। পরের বার মনে হল, এই লেখা দেশ বিরোধী!
১৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:০৩
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: কী লিখেছিলেন জানি না। তবে দেশবিরোধী কন্টেন্ট থাকা সত্ত্বেও প্রথমবার হয়ত অথোরিটির চোখ এড়িয়ে গিয়েছিল। দেশ বিরোধী কন্টেন্ট থেকে থাকলে তা সরিয়ে নিয়ে অথোরিটি কিন্তু আপনারই উপকার করেছে, বলতে হবে আফটার অল, পোস্টের দায় ব্লগ অথোরিটির চাইতে লেখকের উপরই বর্তায় বেশি।
তো মন্ত্রী, আপনাকে অনেকদিন পর ব্লগে দেখে আপ্লুত বোধ করলুম। শুভেচ্ছা নিন।
১২| ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ৮:৩৭
শেরজা তপন বলেছেন: অনেক কিছু জানিলাম -অনেক কিছু বুঝিলাম!!!
আপনার দেখা হালখাতা মানে সেই পহেলা বৈশাখ আর আমার দেখা পহেলা বৈশাখের ধরন একই ছিল। ক্যামনে কি পালটায় গেল বুঝলাম না
১৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১০:২২
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন:
আপনার দেখা হালখাতা মানে সেই পহেলা বৈশাখ আর আমার দেখা পহেলা বৈশাখের ধরন একই ছিল। ক্যামনে কি পালটায় গেল বুঝলাম না
আমার বদ্ধমূল ধারণা, বাংলাদেশে ডিশ কালচারের আগমনের সাথে সাথেই এগুলো বদলে যেতে শুরু করেছে। আপনি স্মরণ করে দেখুন, এমনকি ২০০০ সালেও এত জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে কোথাও বৈশাখী উৎসব পালন করা হয়েছে কিনা। হয়ে থাকলেও সেটা এখনকার মতো হয়েছে কিনা।
সেই সময়ে কি আজকের দিনের মতো ১লা ফাল্গুনে বসন্ত উৎসব উদ্যাপিত হতো?
ভালোবাসা দিবস কি এত ব্যাপকতা পেয়েছিল?
দিনগুলো দ্রুত বদলে যাচ্ছে যুগের হাওয়ায়। আমরা কিছু টের পাই, বেশিরভাগই চোখের সামনে ঘটে বাট আমরা পরিবর্তনটা ধরতে পারি না, যেমন, আপনার সাথে একত্রে ৫ বছর কাটালে, আপনার শরীরের পরিবর্তনগুলো আমার চোখে পড়বে না, কিন্তু যারা আপনাকে ৫ বছর পরে দেখবে, তারা দেখতে পাবে আপনার শরীরের অনেক কিছুই পালটে গেছে।
হেসে খেলে জীবনটা যদি চলে যায়!
১৩| ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১:৩৪
নতুন বলেছেন: এমনকি মঙ্গল শোভাযাত্রাও অন্যরূপ নিবে, এবারই দেখুন, নানা ধরনের প্রতিবাদী ব্যানার ও ফেস্টুন যোগ হয়েছে। আগামীতে হয়ত এটা প্রতিবাদের একটা মহোৎসবে পরিণত হতে পারে, এবং যেখানেই প্রতিবাদ, সেখানেই তা থামানোর জন্য কর্তৃপক্ষের বাধা আসবে।
করে নাকো ফুসফাস মারে নাকো ঢুষঢাষ.... এমন জিনিস সরকারের পছন্দ।
এখন আগামীতে যদি এই মহোৎসবে প্রতিবাদী ব্যানার ও ফেস্টুন যোগ হয় তবে সেটা সরকারের সূর্যসন্তানেরাই প্রতিরোধ করবে...
সমস্যা হচ্ছে আনন্দ শোভাযাত্রাকে ধর্মীয় রং দিয়ে টানাটানির ফলে আজকের আলোচনা।
আমার মনে আছে ছোট বেলায় বৈশাখী মেলা আর হালখাতা। গ্রামের মেলায় ষাড়ের দাবড়ের কথাও শুনেছি যাওয়া হয়নি কখনো।
১৭ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১:৫৯
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন:
শুভ নববর্ষ-১৪৩০।
সমস্যা হচ্ছে আনন্দ শোভাযাত্রাকে ধর্মীয় রং দিয়ে টানাটানির ফলে আজকের আলোচনা। জ্বলন্ত সত্য কথা এটাই।
বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা যদ্দিন ছিল, এ নিয়ে কোথাও কোনো বাধা বা আপত্তির কথা উঠেছে বলে মনে পড়ে না। মঙ্গল শোভাযাত্রা নাম হওয়ার পরই আপত্তি উঠতে থাকে, এবং যখন এর মধ্যে সনাতন ধর্মের বিভিন্ন প্রতীক ঢুকিয়ে দেয়া হলো হাজার বছরের ঐতিহ্যের নামে, তখন থেকেই আপত্তি উঠতে থাকে। আমার পয়েন্টটাও এখানেই। এই যে হাজার বছরের ঐতিহ্যের নামে সনাতন ধর্মের বিষয়গুলো আনন্দ শোভাযাত্রায় ঢুকিয়ে দেয়া হলো, আমাদের দালাল ও নির্বোধ শ্রেণির একটা গোষ্ঠী এখানে কোনো ধর্মীয় মৌলবাদিতা বা অন্ধত্ব দেখতে পায় না, কিন্তু যখনই মুসলমানরা এতে আপত্তি তুললো, তখনই এ দালালের দল তাদেরকে মৌলবাদী আখ্যা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে লেগে পড়লো।
আমার মনে হয়েছে যে, বাংলাদেশের শতকরা ৯৯ ভাগ মানুষই মনে করতো যে, মঙ্গল শোভাযাত্রা হলো বাঙালির বৈশাখ উদ্যাপনের হাজার বছরের সংস্কৃতি। এই যে এবার এর বিরুদ্ধে একটা আইনি নোটিশ হলো, এর একটা ভালো দিক হলো, অনেক মানুষই এবার এ বিষয়টা নিয়ে স্টাডি করেছে। স্টাডি করে তারা প্রচণ্ড হতাশ হয়ে দেখলো যে, এটা হাজার বছরের সংস্কৃতি নয়, বরং স্বৈরাচার পতনের উদ্দেশ্য নিয়ে মাত্র সেদিন, ১৯৮৫ সাল থেকে এই আনন্দ শোভাযাত্রার প্রচলন শুরু হয়।
আমার মনে আছে ছোট বেলায় বৈশাখী মেলা আর হালখাতা। গ্রামের মেলায় ষাড়ের দাবড়ের কথাও শুনেছি যাওয়া হয়নি কখনো। মোটের উপর, শুরু থেকে বাঙালির বৈশাখী উৎসব বলতে বৈশাখী মেলা, চৈত্র সংক্রান্তির মেলা ও হালখাতাকেই বোঝায়।
কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ নতুন ভাই।
©somewhere in net ltd.
১| ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১২:১৪
অপু তানভীর বলেছেন: একটা ব্যাপার যদি খেয়াল করে দেখেন যারা যারা পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধিতা করে তারাই নিজেদের লেখায় মঙ্গলশোভা যাত্রাকে হাজার বছরের সংস্কৃতি বলে নিজেদের যুক্তি উপাস্থাপন করে । মঙ্গল শোভা যাত্রা মাত্র সেদিন সংযোজিত হয়েছে । এটা কে না জানে ! এটা অবশ্যই হাজার বছরের সংস্কৃতি নয় ।
বাংলা নববর্ষটা আমাদের বাঙালী জীবনের সাথে কয়েক শ বছর ধরে জড়িয়ে আছে ।
আর সংস্কৃতির সংঙ্গাটা কী ? মানুষের আচরণের সমষ্টি । আমরা যা করি সবই আমাদের সংস্কৃতির সাথে প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে । যার কিছু বাতিল হয়ে যাচ্ছে সময়ের সাথে নতুন কিছু যুক্ত হচ্ছে । এখানে পান্তা ইলিশ আগে ছিল না এখন হয়েছে, মঙ্গলশোভা যাত্রা ছিল না এখন হয়েছে । টিকে থাকলে থাকবে নয়তো বাতিল হয়ে যাবে ! সামনে আরো কত কিছু যুক্ত হবে ।
আমাদের দেশের মানুষের সমস্যা হচ্ছে সবাই কেবল চায় সে একটা ব্যাপারকে যে ভাবে দেখে সবাইকে সেই ভাবেই দেখতে হবে! ক্ষমতা থাকলে সেটা করতে বাধ্য করা । আমি পালন করি না তার মানে তোমাকেও পালন করতে দিবো না !