নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দুঃখের কবিতাই শ্রেষ্ঠ কবিতা। ভালোবাসা হলো দুঃখ, এক ঘরে কবিতা ও নারী।
আমার লেখা জীবনের প্রথম চিঠিটির কথা আসলে মনে নেই, তবে, প্রথম চিঠি লেখার করুণ ও হৃদয়বিদারক বিব্রতকর অবস্থার কথা কখনো ভুলতে পারি না। সেটি আজ আপনাদের বলি।
এ ঘটনার আগে ক্লাসের বিভিন্ন পরীক্ষায় হয়ত চিঠিপত্র বা দরখাস্ত লিখে থাকবো, তবে মা-বাবা-চাচা-খালা, বন্ধু-প্রেমিকাকে কোনো পারিবারিক চিঠি লেখার সুযোগ হয় নি।
তখন 'কৃতিত্বের' সাথে ক্লাস ফাইভ পাশ করে হাইস্কুলে ক্লাস সিক্সে ভর্তি হয়েছি। আমার স্কুল থেকে প্রথম বারের মতো প্রাইমারি বৃত্তি পাওয়ায় আমার 'ভালো ছাত্র' হওয়ার ঘটনাও অনেক ছড়িয়ে পড়েছিল আবার হাইস্কুলের ১ম সাময়িক পরীক্ষায়ও আমার হাইয়েস্ট নাম্বারের ছড়াছড়ি থাকায় আমার এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহই ছিল না যে আমি ব্যাপক ভালো ছাত্র বটে আমার এমন সাফল্যের সময়ে একদিন আমার নানা এলেন আমার মায়ের কাছে। নানার এক ভাগ্নে, যিনি আমার মামা, চাকরি করেন সউদি আরবে। সে-আমলে সউদি আরবে (মানে বিদেশে) চাকরি করার দাম আজকের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। নানার সেই ভাগ্নের কাছে একটা চিঠি লিখতে হবে। এদ্দিন চিঠি লেখার জন্য নানাকে অনেক বেগ পেতে হতো, কারণ, চিঠি লেখার মতো শিক্ষত লোকের সংখ্যা তখন অপ্রতুল ছিল। তো, নানার নাতি, অর্থাৎ আমি যখন এতবড়ো শিক্ষিত হয়ে উঠেছি, এখন তো নানার পোয়াবাড়ো, যখন ইচ্ছে তখনই নাতিকে দিয়ে চিঠি লেখানো যাবে
নানার চিঠির উদ্দেশ্য, ভাগ্নেকে কুশলাদি জানানো আর নানার ছেলে (অর্থাৎ আমার একমাত্র সুরুজ মামা) আর আমার জন্য 'সিকো' ঘড়ি পাঠানোর কথা বলা। এর দাম অবশ্য নানাই বহন করবেন। আমি প্রাইমারি বৃত্তি পাওয়ায় নানার পক্ষ থেকে এটা হবে আমার জন্য একটা উপহার। মা যখন আমাকে এ চিঠি লেখার কথা বললো, তখন আমার মাথায় অল্পের জন্য আকাশ ভেঙে পড়লো না। আমি বিষম চিন্তায় পড়ে গেলাম শুধু একটা বিষয় নিয়ে - চিঠির শুরুতে সম্বোধনটা কীভাবে লিখতে হবে! আপনারা হয়ত ভাবছেন, এত সাধারণ একটা বিষয়ে চিন্তার কী হলো, প্রিয় কফিল, হ্যালো কফিল, ইত্যাদি যে-কোনো একটা কিছু লিখে দিলেই তো হতো! হ্যাঁ, ও-বয়সে চিঠি লেখার কোনো অভিজ্ঞতা না থাকায় এই সাধারণ বিষয়টিই মাথায় আসে নি। চিন্তায় চিন্তায় আমি প্রথমে ঘাস, পরে কাঠ হতে শুরু করলাম। ক্লাসমেট কাউকে যে জিজ্ঞাসা করবো, এ কথাটাও মাথায় আসে নি।
পরের দিন মা জিজ্ঞাসা করলো, চিঠি লেখা হয়েছে কিনা। আমি হয়ত কিছু একটা জবাব দিয়েই চিন্তায় আরো কঠিন কাঠ হতে হতে নিজ ভুবনে চলে গেলাম।
এভাবে প্রায় ৫/৭দিন চলে গেছে। ইতিমধ্যে আমার নানাও চিঠি নেয়ার জন্য বার দুয়েক আমাদের বাড়িতে এসে ফিরে গেছেন।
পরের ঘটনাটা ছিল খুব মধুর এবং স্বস্তিদায়ক, বলতে পারেন relieving দেখি, মা আমার প্রতিবেশী খোর্শ্বেদ কাকা, যার কাছে আমি প্রথম পড়া শিখেছি, যিনি অনেক দরদ দিয়ে, আপন সন্তানের মতো আমার পড়ালেখার গোড়াপত্তন করে দিয়েছিলেন এবং যার কাছে আমি চিরঋণী, যিনি ছিলেন আমার সর্বৈব একজন অবৈতনিক মহান ও মেধাবী প্রাইভেট টিউটর, তাকে দিয়ে চিঠিটি লিখিয়ে এনেছেন। আমি চিঠিটি হাতে নিয়ে পড়ে বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে গেলাম। আমার কাছে যে-বিষয়টা এত কঠিন মনে হচ্ছিল, আমার খোর্শ্বেদ কাকা সেটি কত সহজেই না লিখে ফেলেছেন। চিঠির ভাষা হুবহু তো আর মনে নেই - সেই ৭৯ সালের কথা, তবে, সারাংশটা, যা আমার চোখ খুলে দিয়েছিল, তা মোটামুটি এরকম ছিল :
বাবা কফিল,
আশা করি ভালো আছো। আমরাও খোদার ফজলে ভালো আছি। পর সমাচার এই যে, -----------। নিয়মিত খাওয়া দাওয়া করিবে। আল্লাহর নাম স্মরণ রাখিবে, ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়িবে। কারো সাথে ঝগড়া বিবাদ করিবে না ------- খোদা হাফেজ।
ইতি-
তোমার মামা কালু মোল্লা
'বাবা কফিল' সম্বোধনটাই আমার চিঠির সম্বোধনের সব কাঠিন্য দূর করে দিল। অথচ, তার আগে আমার মাথায়ই ঢোকে নি এভাবে ভাগ্নেকে একটা সম্বোধন করা যেতে পারে।
এরপর ঐ বয়স থেকেই আমাকে অনেক চিঠি লিখে দিতে হয়েছে। বেশির ভাগই ছিল 'ভাবী' সম্পর্কের আর একজন ছিলেন 'খালা' সম্পর্কের। তবে, এদের সবার চিঠিই থাকতো তাদের হাজব্যান্ডদের প্রতি। কয়েকজনকে চিঠি লিখে দিতে হতো মিডল ইস্টে চাকরিরত তাদের ছেলেদের কাছে।
হাজব্যান্ডদের কাছে চিঠি লেখাটাও বেশ কঠিনই মনে হয়েছিল প্রথম দিকে। এ সমস্যাটাও মোটামুটি 'সম্বোধন' নিয়েই। তবে, চিঠি লেখার পর পড়ে শোনানো হলে তারা খুশিতে ডগমগ হয়ে যেতেন, আর তা থেকেই বুঝে নিতাম বেশ সরস একটা চিঠিই লিখে দিয়েছি।
হাজব্যান্ডদের কাছে লেখা চিঠির সম্বোধন ও ভাষা ছিল মোটামুটি এরকম :
প্রিয় স্বামী, বা, ওগো আমার স্বামী, বা, হে আমার প্রিয় স্বামী, বা, প্রিয়তম, ওগো প্রিয়তম,
আপনি আমার শতকোটি সালাম নিবেন। আশা করি আল্লাহর অসীম রহমতে আপনি ভালো আছেন। পর সমাচার এই যে, আপনার জন্য সর্বদাই আমার মন ছটফট করে। অনেকদিন গত হইল আপনার সাথে আমার দেখা নাই। তাই আপনার জন্য আমার মন কাঁদিতেছে। জানি না, আবার কবে আপনার সাথে সাক্ষাৎ হইবে। ----- এ পর্যন্ত লেখা কথাগুলো ছিল আমার নিজের কথা এগুলো পত্রপ্রেরিকারা কেউ বলে দিতেন না। তাদের বেশিরভাগ চিঠিই থাকতো টাকা চাহিয়া স্বামীর কাছে পত্র লেখা খালি টাকার কথা কীভাবে লেখে, আগা-মাথায় কিছু না লিখে? তাই খোর্শ্বেদ কাকার আদলে (আমার নানার চিঠির কথা বলছি) আমি স্বামীর কাছে লেখা চিঠিতে কিছু উপক্রমণিকা লিখতাম নিজে থেকেই রোলটানা খাতার (এ খাতাও আবার আমার নিজেরই ) এক পাতা ভরে প্রেমের কথা লেখার পর চিঠি শেষ করার আগে লিখে দিতাম - বাড়িতে বাজার করার জন্য টাকার দরকার। চিঠি পাওয়ামাত্র অতিসত্বর টাকা পাঠাইবেন নিয়মিত খাওয়া দাওয়া করিবেন। আল্লাহর নাম স্মরণ রাখিবেন, ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়িবেন। কারো সাথে ঝগড়া বিবাদ করিবেন না। আজকের মতো এখানেই শেষ করিলাম। ইতি- আপনার প্রিয়তমা মালেকা বেগম।
এরপর জীবনে অনেক চিঠি লেখা হয়েছে। সে-সব চিঠির কথা মাঝেমাঝে এক-আধটু লিখেছি বিভিন্ন কমেন্টে। সেগুলোর অনেক চিঠিই শুধু চিঠিই ছিল না, ছিল তার চাইতেও অধিক কিছু। চিঠি লেখার সে-সব দিনের কথা মনে পড়লে যুগপৎ আনন্দ ও বেদনারা এসে ভিড় করে আমার সমস্তটা জুড়ে।
সবার জন্য শুভ কামনা রইল।
১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:৪৪
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: খুব ভালো লাগলো আপনার চিঠি লেখার অভ্যাসটা এখনো আছে, সেটা জেনে। জীবনে আমিও প্রচুর চিঠি লিখেছি, জিপিওতে/কুরিয়ারে চিঠি পাঠিয়েছি, বিশেষ করে লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশ করার সময়ে। সেই সময়ের কথা মনে পড়লে খুব স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি।
২| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:০২
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
আমাদের এলাকার অনেক স্বামীরা শহরে জুটমিলে কাজ করতেন। আমি বধুদের চিঠি লিখে দিতাম।
চিঠির ভাষা ছিল অনেকটাই কমন।
এলাহি ভরসা
পর সমাচার এই যে, দোকানে বাকি পড়িয়াছে । তাড়াতাড়ি টাকা পাঠাও।
১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:৪৬
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন:
হ্যাঁ, জুটমিলে চাকরিরত অনেক ভাইয়ের স্ত্রীর চিঠি আমিও প্রচুর লিখেছি। অনেক সময় চিঠি লেখার চাপ অনেক বেড়েও যেত, এমনকি, একদণ্ড সময় পাচ্ছি না, সেই কঠিন সময়েও মাঝে মাঝে চিঠি লিখে দিতে হতো
৩| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:২১
শেরজা তপন বলেছেন: আমি ছোটবেলায় অনেক অনেক চিঠি লিখেছি। চিঠি লেখা নিয়ে আপনার মত এমন বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়নি কখনো।
ভারতেশ্বরী হোমসে আমার ভাগ্নীরা পড়ত। কৈশোর বয়সে শুরুটা তাদের দিয়ে- পরে তাদের অনেক বান্ধবীদের নিয়মিত চিঠি লিখতে হোত। আমার চিঠির জন্য ভীষন একঘেয়ে সেই হোস্টেল জীবনে একটু ব্যতিক্রমী স্বাদ আনার জন্য একগাদা কিশোরী আমার চিঠির অপেক্ষায় থাকত।
সেই বয়সে এই নিয়ে হেব্বি ভাবে থাকতাম!
১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:৫৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন:
হ্যাঁ, চিঠি লেখায় আপনি ছোটো বয়স থেকেই অভিজ্ঞ হেড লেটার রাইটার বটেন অন্যদের স্বামী/পুত্রদের কাছে চিঠি লেখা ছাড়া কয়েকবার কতিপয় প্রেমিককে প্রেমপত্র লিখে দিতে হয়েছিল বটে তা ছিল মজার ও নিদারুণ করুণ ঘটনা
তবে, জীবনের দুটো অধ্যায়ে অজস্র চিঠি লিখেছি আমি, (১) প্রেমে পড়ার পর প্রেমিকাকে ও (২) বিয়ে করার পর নিজস্ব স্ত্রীকে দুই ক্ষেত্রেই রোমান্টিসিজমের চিঠিগুলো সাধারণত ২/৩ পৃষ্ঠা হলেও মান-অভিমানের চিঠি হতো ১০-১৫ পাতা সেই যে সময় ছিল তখন, কী ভয়াবহ রোমাঞ্চকর
৪| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:৫২
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
সুন্দর স্মৃতিচারণ। আমিও দুএকজনের চিঠি লিখে দিয়েছিলাম। আসলেই মজার যুগ ছিল সেটা।
১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:০০
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: যুগটা আসলে এমন ছিল, প্রায় সব ছাত্রকেই কাউকে না কাউকে চিঠি লিখে দিতে হতো। স্মৃতিগুলো এখন বেশ মধুরই মনে হয়, যদিও অনেক সময় ইচ্ছের বিরুদ্ধেও এসব চিঠি লিখে দিতে হতো।
কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ মাইদুল সরকার ভাই।
৫| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৪:৩১
বাকপ্রবাস বলেছেন: মনির খান গেয়েছেন চিঠি লিখেছে বউ আমার ভাঙ্গা ভাঙ্গা হাবে, সে চিঠি আপনি লিখে দিয়েছিলেন কিনা সেটা অবশ্য বলেনি
১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:১৭
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: হাহাহাহাহা। আপনার ধারণা যে সত্য হতে পারে, তা আমার চিঠি লেখার আদিকাহিনি পড়ে সহজেই বোঝা যায় কে জানে, ওঐডা হয়ত আমারই হাতের লেখা আছিল
৬| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৫:৩৮
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- আমারদের এক বন্ধু চিঠি লেখায় ওস্তাদ। হাতের লেখা বেশ সুন্দর। আর চিঠি পড়লে মনে হবে কোনো বিখ্যাত কোনো সাহিত্যের পাতা থেকে তুলে আনা হয়েছে। ৭-৮ মাস আগে দেখে ওর হাতে দুই পাতা চিঠি। কোন এক স্কুলশিক্ষিকার সাথে ইয়ে চলছে। এই যুগে এসেও পত্র চালাচালি চলছে দেখে আমিত অবাক!!
১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:৩৮
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: এই তো, আরেক স্মৃতিতে ঘা দিলেন ছাত্রজীবনে আমারও হাতের লেখা মন্দ ছিল না হাতের লেখা কত সুন্দর করা যায়, তা নিয়ে ক্লাসমেটদের মধ্যে নীরব একটা প্রতিযোগিতাও ছিল। তবে, এইচএসসি'র পর, যখন বল পয়েন্ট পেন দিয়ে লেখা শুরু করি, তখন হাতের লেখা খারাপ হতে থাকে, তার জন্য আমার দুঃখের অন্ত ছিল না
আচ্ছা, চিঠির ভাষাও এক অনন্য সাহিত্য, ঐতিহাসিক চিঠিগুলো পড়লে আমরা বুঝতে পারি। অনেকের কথা বলায় এক অসাধারণ আর্ট থাকে, তেমনি অনেকের চিঠির ভাষাও সাহিত্যের ভাষার মতো। এমন মননশীল ও সৃজনশীল পত্রলেখকের সংখ্যা অবশ্য খুব বেশি না। আমি বা আমার মতো বেশিরভাগ পত্রলেখকই ছুডুবেলায় ওগো প্রাণের স্বামী, শতকোটি সালাম নিবেন, পর সমাচার এই যে--- দিয়াই চিঠি সমাপ্ত করিতাম
আপনার বন্ধুর জন্য শুভ কামনা রহিল
৭| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৩৯
প্রামানিক বলেছেন: অতীতের কথা মনে পড়ে গেঃল, এরকম অভিজ্ঞতা আমারও আছে
১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:৩৯
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: হ্যাঁ, সেটাই বলছিলাম - প্রায় সব ছাত্রকেই কাউকে না কাউকে চিঠি লিখে দিতে হয়েছে সেই যুগে। সেই চিঠির যুগ কবে শেষ হইয়া গেল, চলে এলো অ্যান্ড্রয়েডের যুগ
৮| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৫৬
ঢাবিয়ান বলেছেন: দারুন মজার অভিজ্ঞতা। আমাদের সময়ে পত্র মিতালী খুব চালু ছিল। অনেকেই অজানা মানুষের সাথে বন্ধু পাতাতো । আমার ক্লাসের এক সহপাঠী এরকম এক মেয়ের সাথে পত্র মিতালি পাতিয়েছে। কয়েক বছর ধরে চিঠি আদান প্রদান। মেয়েটা ঢাকার বাহিরে থাকত। একবার দেখা করার সিদ্ধান্ত নিল। আমাদের কয়েকজনকে সঙ্গী বানালো। কি রঙ এর পোষাক পড়া থাকবে তা বলা ছিল। কিন্ত বন্ধু সেই রঙ এর পোশাক পড়ে নাই। আমরা দূর থেকে আগে মেয়েটাকে দেখলাম। এরপর বন্ধু সটান তার সামনে দিয়ে হেটে চলে গেল এবং সেই দিনের পর চিঠি লেখায় ইস্তফা দিল।
১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:২৪
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ভালো কথা মনে করিয়ে দিলেন। তখন পত্রমিতালির যুগ ছিল। সাপ্তাহিক বিচিত্রাসহ বেশ কিছু পত্রিকায় 'ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন' নামের একটা কলাম ছিল, যেখানে মহান পত্রবন্ধুবান্ধবীরা তাদের ঠিকানা লিখে দিতেন এবং পত্রমিতালির খায়েশ প্রকাশ করতেন। ছাত্রজীবনে এসব ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন দেখতে দেখতে একবার অতি-উৎসাহী হয়ে আমিও একটা পত্র লিখেছিলুম। কিন্তু আফোস, কোনো উত্তর আসে নাই তবে, ছাত্রজীবনের পরে বিচিত্রায় আরেকটা বিজ্ঞাপন দেখে পত্র লিখেছিলাম বিজ্ঞাপনের ভাষার প্রতিবাদ করে। আশ্চর্য, পত্রের উত্তর এলো অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই এবং আপ্লুত হয়ে এত্তগুলো প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে জানালো, আমি যে তার সাথে পত্রমিতালি করতে আগ্রহী, এতে সে দারুণ খুশি, অথচ মিতালির কোনো উল্লেখই ছিল না সেই চিঠিতে। এরপর আরো ২/৩ বার বাদ-প্রতিবাদের পর আমিই ক্ষান্ত হয়ে যাই
আপনার বন্ধুর অভিজ্ঞতাটা আমার কাছে বেশ বিব্রতকর এবং মেয়েটার জন্য খুব হতাশারই ছিল বলে মনে হলো। নিশ্চয়ই মেয়েটি সুদর্শনা ছিল না, যার ফলে আপনার বন্ধু পত্রমিতালিতে আর আগ্রহ ধরে রাখতে পারে নি। এটা আমার ধারণা মাত্র, ব্যাপারটা এরকম নাও হয়ে থাকতে পারে।
চমৎকার কমেন্টটির জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ঢাবিয়ান ভাই। শুভেচ্ছা।
৯| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:২৩
শায়মা বলেছেন: হাহা ভাইয়া হাজব্যান্ডদের কাছে চিঠি লেখাগুলো তো মজার ছিলো!!
১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৩১
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন:
হ্যাঁ, চিঠির যুগে স্বামীর কাছে লেখা চিঠির ভাষা মোটামুটি এমনই ছিল চিঠি-লেখক আর দলিল-লেখক প্রায় সম-গোত্রের বলতে পারেন
১০| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১০:০৩
বিজন রয় বলেছেন: চিঠি দারুন একটা ব্যাপার!!
শুধু চিঠির জোরেই অনেকে সাহিত্যিক হয়ে উটেছিলেন।
চিঠি নিয়ে আমারো অনেক স্মৃতি আছে।
শেষ যে কবে খামে করে চিঠি পাঠিয়েছি তা মনে নেই।
তাও ভাল যে আমাদের ছোট বেলায় চিঠির যুগ কিছুটা পেয়েছিলাম।
আজকালকার ছেলে মেয়েরা তো চিঠির মজা জানেই না।
কেমন আছেন?
১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৪৬
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: অনেক ভালো আছি আল্লাহর রহমতে। ব্লগে আপনাকে অনেকদিন পর এত অ্যাক্টিভ দেখে ভালো লাগছে।
শেষ যে কবে খামে করে চিঠি পাঠিয়েছি তা মনে নেই। আপনার এ কথা পড়ে আমিও এখন স্মৃতি হাতড়াচ্ছি, শেষ কবে হাতে লেখা চিঠি লিখেছি, বন্ধু বা অন্য কারো কাছে। আমি লিটল ম্যাগের সর্বশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছি ফেব্রুয়ারি ২০১৩-তে, পত্রিকা কুরিয়ার করার সময় হয়ত চিরকুটে ছোটো ছোটো ২-১টা কথা লিখেছি, সেগুলো হয়ত চিঠি ছিল না। লিটল ম্যাগ নিয়মিত প্রকাশ করতাম ২০০৭ পর্যন্ত। তখন কোনো কোনো লেখকের কাছে চিঠি লিখতাম লেখালেখি বা ম্যাজাজিন সম্পর্কে। তাতে চিঠির আধখানি মজা ছিল ২০০৪ সালে স্বল্প সময়ের জন্য শ্রীলংকায় ছিলাম। ঐ সময় স্ত্রীর কাছে দুইখানা পত্র লিখেছিলুম স্মৃতি হাতড়ে যা পেলুম, কলিযুগের চিঠি সম্ভবত আমার ওটাই ছিল তবে, ফাঁক-ফোকরে অন্য কোনো চিঠির কথা যদি ভবিষ্যতে মনে পড়ে যায়, তাহলে এখানে এসে একটা রিজয়েন্ডার দিয়ে যাব নে
এখন ক্লাসপাঠ্য বইয়ে চিঠি লেখা শেখানো হয় কিনা জানি না, এর বদলে হয়ত এসএমএস লেখা শেখানো হতে পারে বাচ্চারা আজকাল মেসেজিঙে দারুণ এক্সপার্ট
দারুণ কমেন্টে ধন্যবাদ প্রিয় বিজন রয়। শুভেচ্ছা রইল।
১১| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ১১:৪৮
রাজীব নুর বলেছেন: ভালো লিখেছেন।
ধন্যবাদ।
১২| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:০৯
গেঁয়ো ভূত বলেছেন: ভাই! অসাধারণ লিখেছেন! লিখাটি পড়ে আমাদের পারিবারিক চিঠির অনেক স্মৃতি মনে পড়ে গেল, ছোটবেলায় আমরা গ্রামে থাকতাম, সরকারি চাকুরে আমাদের "আব্বা" বাড়িতে নিয়মিত চিঠি পাঠাতেন হলুদ রঙের খামে, কখনো কখনো পোস্ট কার্ডও পাঠাতেন।
চিঠির যুগের সেই দিনগুলি সত্যিই খুব অনুভূতি প্রবন ছিল।
১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৫৯
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: সরকারি খাম এখনো হলুদই আছে, যার মূল্য সর্বশেষ ২টাকা পর্যন্ত দেখেছিলাম, কত সালে দেখেছি তা মনে নেই।
বিয়ের পর আমাকে বহুদিন একা থাকতে হয়েছে। তখনো পৃথিবীতে মোবাইল আবিষ্কৃত হয় নাই পুলিশের ওয়াকিটকি দেখে কেবল আফসোস হতো, ইশ, যদি ওরকম দুটো ওয়াকিটকি সেট পাওয়া যেত, যার রেঞ্জ হবে সমগ্র বাংলাদেশ, তাহলে কতই না মধুর হতো তখন দীর্ঘ চিঠি লিখতাম। ২টাকার খামে প্রায়শ আরো কয়েক টাকার টিকিট লাগাতে হতো। এ ছাড়া বাজারে নানান ডিজাইনের খাম পাওয়া যেত, আমি বিভিন্ন ডিজাইনের খাম কিনতাম। খামের ভেতরে শুধু চিঠিই না, সুগন্ধি ফুলের পাঁপড়ি, পারফিউম, সুগন্ধি পাউডার মাখিয়ে দিতাম কেরিকেচার মোটামুটি কম করি নাই সেইসব চিঠি স্ত্রীর কাছে সংরক্ষিত ছিল, যা এখন আবার আমার দখলে ফিরে এসেছে এবং সুন্দর করে ফাইল করে রেখেছি - ট্রাংক খোলা হলে ওগুলো মাঝে মাঝেই চোখের সামনে চলে আসে, কখনো-বা পড়েও দেখি - ঐ সময়ে কী লিখেছিলাম আবেগ বেশ ভালোই ছিল
চিঠির যুগের সেই দিনগুলি সত্যিই খুব অনুভূতি প্রবন ছিল। আমার মনের কথাটাই বলে দিয়েছেন মল্লিক ভাই।
সুন্দর কমেন্টের জন্য একরাশ ধন্যবাদ।
১৩| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:২২
মিরোরডডল বলেছেন:
প্রেমপত্র বলতে যা বোঝায় সেটা আমার কখনও লেখা হয়নি।
এলাকার রোমিওরা যে চিঠি পাঠাতো, সেগুলো গিয়ে পরতো বাবার হাতে।
আমরা বোনরা আবার সেগুলো খুঁজে বের করে পড়ে দেখতাম কে কি লিখেছে।
আমার ভাই অনেক বছর দেশের বাইরে ছিলো। আমিও তাই।
সেসময় আমরা ভাই বোন একে অপরকে চিঠি লিখতাম।
পাঁচ মাস আগে ও যখন না ফেরার দেশে চলে গেলো, আমি তার লেখা চিঠিগুলো পড়ি।
মানুষটা নেই কিন্তু পুরনো হয়ে যাওয়া চিঠিগুলোর মাঝে এখনও প্রাণ আছে।
চিঠির মাঝে আমি তার স্পর্শ পাই।
চিঠিগুলোতে কি নেই! আমাদের দুজনের যত কষ্ট দুঃখ আনন্দ স্বপ্ন সবকিছু।
এরকম আরও কত না বলা কথা ছিলো তাকে বলার, ওরও হয়তো ছিলো।
আমার খুব ইচ্ছে করে তাকে আবার চিঠি লিখতে। একবার হলেও ইচ্ছে করে।
জানতে চাইবো, ওর কি এমন কোন কথা ছিলো যা সে বলতে চেয়েছিলো কিন্তু বলতে পারেনি।
চলে যাবার সময় একা ছিলো, তখন ওর ঠিক কি মনে হয়েছিলো!
ওর চোখ কি তখন শেষবারের মতো কাউকে খুঁজেছিলো!
১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৪৮
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: পোস্টটা একটু রম্য স্বাদেরই ছিল, আপনার কমেন্টের প্রথম অংশ পড়েও খুব মজা লাগছিল, কিন্তু শেষের অংশটা পড়ার পর বিষাদে মন ছেয়ে গেল। সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের 'ছিন্নমুকুল' কবিতার কথা মনে করিয়ে দিল আপনার ভাইয়ের চিঠির স্মৃতিগুলো।
আপনার ভাইয়ের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
১৪| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১২:৪৪
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: আমার প্রথম চিঠির কথা মনে নেই । যখন বড় দুলা ভা্ই আপুনির হাজবেন্ড লন্ডনে গেলেন উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য তখন চিঠি লিখেছিলাম দুলাভাইকে ।
১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:৫০
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ প্রিয় কবি সেলিম আনোয়ার+
©somewhere in net ltd.
১| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ৮:৫১
নাহল তরকারি বলেছেন: আমিও এখন মানুষকে চিঠি লিখি। নিয়মিত জিপিও তে যাই। উপজেলা/থানা সাব পোস্ট অফিস ছাড়া চিঠি পোস্ট করি না।