নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব,ইইই প্রকৌশলী। মতিঝিল আইডিয়াল, ঢাকা কলেজ, বুয়েট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র।টেলিকমিউনিকেশন এক্সপার্ট। Sustainable development activist, writer of technology and infrastructural aspects of socio economy.

এক নিরুদ্দেশ পথিক

সমাজের প্রতিটি ছোট বড় সমস্যার প্রকৃতি নির্ধারণ করা, আমাদের আচার ব্যবহার, সমাজের প্রচলিত কৃষ্টি কালচার, সৃষ্টিশীলতা, চারিত্রিক উদারতা এবং বক্রতা, অপরাধ প্রবৃত্তি, অপরাধ সঙ্ঘঠনের ধাঁচ ইত্যাদির স্থানীয় জ্ঞানের আলোকে সমাজের সমস্যার সমাধান বাতলে দেয়াই অগ্রসর নাগরিকের দায়িত্ব। বাংলাদেশে দুর্নীতি রোধ, প্রাতিষ্ঠানিক শুদ্ধিকরন এবং টেকনোলজির কার্যকরীতার সাথে স্থানীয় অপরাধের জ্ঞান কে সমন্বয় ঘটিয়ে দেশের ছোট বড় সমস্যা সমাধান এর জন্য লিখা লিখি করি। আমার নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি আছে কিন্তু দলীয় সীমাবদ্ধতা নেই বলেই মনে করি, চোর কে চোর বলার সৎ সাহস আমার আছে বলেই বিশ্বাস করি। রাষ্ট্রের অনৈতিক কাঠামোকে এবং দুর্নীতিবাজদের সবাইকে তীক্ষ্ণ ভাবে চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা করি। রাষ্ট্র কে চ্যালেঞ্জ করতে চাই প্রতিটি অক্ষমতার আর অজ্ঞতার জন্য, তবে আঘাত নয়। ব্যক্তিগত ভাবে নাগরিকের জীবনমান উন্নয়ন কে দেশের ঐক্যের ভিত্তিমূল মনে করি। ডাটাবেইজ এবং টেকনোলজি বেইজড পলিসি দিয়ে সমস্যা সমাধানের প্রোপজাল দেবার চেষ্টা করি। আমি মূলত সাস্টেইন এবল ডেভেলপমেন্ট (টেকসই উন্নয়ন) এর নিরিখে- অবকাঠামো উন্নয়ন এবং ডিজাইন ত্রুটি, কৃষি শিক্ষা খাতে কারিগরি ব্যবস্থাপনা ভিত্তিক সংস্কার, জলবায়ু পরিবর্তন, মাইক্রো ইকনমিক ব্যাপার গুলো, ফিনান্সিয়াল মাইগ্রেশন এইসব ক্রিটিক্যাল ব্যাপার নিয়ে লিখার চেষ্টা করি। মাঝে মাঝে চোরকে চোর বলার জন্য দুর্নিতি নিয়ে লিখি। পেশাঃ প্রকৌশলী, টেকনিক্যাল আর্কিটেক্ট, ভোডাফোন।

এক নিরুদ্দেশ পথিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

মেগা সিটি ম্যানেজমেন্টঃ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং ড্রেনেজ পরিকল্পনার প্রাসঙ্গিক বিষয় সমূহ

২৪ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:০৬

নগর ব্যবস্থাপনায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কতটা গুরুত্ব পুর্ন?
​নগর ব্যবস্থাপনায় মোটা দাগের সমস্যা গুলোর মধ্যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খুবই চ্যালেঞ্জিং। অল্প সংখ্যক উন্নয়নশীল দেশ ছাড়া এই চেলেঞ্জ কে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশই সাফল্যের সাথে মোকাবেলা করছে বহু দশক আগে থেকেই, কিছু ব্যতিক্রম, দায়িত্ব হীনতা এবং অবহেলা ছাড়া। ​​নগরীর নান্দনিক পরিবেশ বজায়ের বাধ্যবাধকতা তো রয়েছে বটেই, সেই সাথে দূরদৃষ্টি সম্পন্ন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রবর্তনের প্রয়োজন আরো কয়েকটি অতন্ত্য ক্রিটিক্যাল কারনে-
ক। একটি শহর, শহরের পার্শবর্তী এলাকা সমূহের জীবাণু চক্র নিয়ন্ত্রণ।
(মূলত ফাঙ্গাল, ভাইরাল এবং ব্যাকটেরিয়াল জার্ম সাইকেল নিয়ন্ত্রণ। ব্যক্টেরিয়াল ব্যাধি, ক্যান্সার ইত্যাদি মরন ঘাতী রোগ বালাই প্রতিকার এবং প্রতিরোধ কে সামনে রেখে এই ব্যবস্থাপনার কর্ম পরিধি সাজানো প্রয়োজন।
এখানে বলে রাখা প্রাসঙ্গিক যে,
-ক্রমবর্ধমান ভাবে উচ্চ মাত্রার এন্টি ব্যক্টেরিয়াল (এন্টি বায়োটিক) ঔষধ প্রয়োগে ফলহীনতা,
-শহরে হার্ট এটাকের ঝোঁক এর অতি উচ্চ বৃদ্ধি,
-ক্যান্সারের ব্যাপক প্রসার
-শিশু রোগের ব্যপকতা সহ রেড এলার্মিং স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয় গুলোকে কোন ক্রমেই আর বিচ্ছিন্ন ভাবে দেখার সুযোগ নেই। বাসযোগ্য শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান পৃথিবীর হাজার হাজার শহরের মধ্যে একেবারেই তলানীতে, সম্ভবত দূষণের দিক থেকে আমাদের প্রিয় শহর গত এক দশকে সর্ব নিন্ম তিনটি শহরের মধ্যেই থাকছে, এই নিয়ে আমাদের নাগরিক ভাবনা গভীর করতে হবে। উত্তরনের জন্য পলিটিক্যাল গুড উইল তৈরির চাপ আমাদেরকেই করতে হবে।)
খ। নদী দূষণ মুক্ত রেখে পুরো খাদ্য চক্রকে (সাধু পানির মাছ, অন্যান্য ইনল্যান্ড ওয়াটার এর প্রান চক্র) বিষাক্ত তার হাত থেকে রক্ষা (প্রতিকার এবং প্রতিরোধ)।
গ। ভু-গর্ভস্ত সুপেয় পানির গভীরতা কে রাষ্ট্রের এবং দরিদ্র জনসমষ্টির উত্তোলন কিংবা পিউরিফিকেশন সাধ্যের নিয়ন্ত্রনে রাখা।
ঘ। উন্মুক্ত এবং প্রবাহিত জলীয় (পুকুর, খাল, বিল, নদীর) উৎসের পানিকে রিসাইকেল এবল রাখার বাধ্যবাধকতা।

(নচেৎ সামনে ভয়াবহ বিপর্জয় অপেক্ষা করছে, একদিকে- ঢাকার পার্শ্ব বর্তী নদীগুলোর এতটাই দূষিত যে তা রিসাইকেল সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। এক দশক আগে বুড়িগঙ্গা এই সক্ষমতা হারিয়েছিল, এখন বৃহৎ নদী শীতলক্ষ্যার পানিও পিউরিফিকেশন এবিলিটির বাইরে চলে যাচ্ছে।​ অন্যদিকে- ঢাকা এবং পার্শ্ব বর্তী এলাকার ভূগর্ভস্ত সুপেয় পানির গভীরতা আশংকা জনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।)
ঙ। কৃষি ভূমির অণুজীব চক্র কে ভেঙ্গে ফেলার হাত থেকে রক্ষা, অতি দীর্ঘ মেয়াদে জমির উর্বরতা রক্ষা।

নগর সমূহই বর্জ্য তৈরির প্রধান কারখানা। উপরোক্ত বিষয় সমূহ তাই নগর ব্যবস্থাপনার ইন্টেলেকচুয়াল ডিজাইন এবং ইমপ্লিমেন্টেশন স্কোপে এনে কর্ম পরিকল্পনা সাজানো বাধ্যতামূলক।​ ​​মৌসুমী বারিপাত মনে করিয়ে দিচ্ছে আমাদের বেসিকেই গলদ। জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রন করার জন্য হলেও একটি কার্জকর বর্জ্য এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা দরকা।। ঢাকা এবং চট্রগ্রেমের ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা কোন পর্যায়ভুক্ত তা এখন পরিষ্কার। এই অব্যবস্থাপনাই শহরের ভিতরে জীবানু সংক্রামণ করে স্বাস্থ্যগত বিপর্জয় ডেকে আনতে পারে।​ দরকার হয়ে ​পড়েছে ড্রেনেজ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে সমন্বিত করে মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা। ​

মেগা সিটি ম্যানেজমেন্টঃ নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
​​উৎস অনুসারে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে ক্লাসিফাই করে এর ব্যবস্থাপনার পৃথক এবং সমন্বিত মডেল সাজাতে হবে।
-গ্রিহস্থলীর পচনশীল বর্জ্য
-গ্রিহস্থলীর অপচনশীল বর্জ্য
-সুয়েজ বর্জ্য
-পলিমার বর্জ্য (রিসাইকেল করতে হবে)
-প্লাস্টিক ওয়েস্ট
ওয়েস্ট বেইজড রিনিউএবল এনার্জি প্ল্যান্ট এন্ড প্রসেসিং
-কাগজ এবং সমজাতীয় বর্জ্য (রিসাইকেল করতে হবে)
-রিসাইকেল এবল ইলেকট্রিক বর্জ্য এবং ব্যাটারী (রিসাইকেল করতে হবে)
-নন রিসাইকেল এবল ইলেকট্রিক বর্জ্য
-রিসাইকেল এবল ম্যাকানিকেল এবং অটোমোবাইল বর্জ্য
-শিল্প বর্জ্য (ইন্ডাস্ট্রিয়াল হ্যাজার্ড)
-কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রির বর্জ্য (কেমিক্যাল হ্যাজার্ড)
-গার্মেন্টস বর্জ্য (গার্মেন্টস হ্যাজার্ড)
-হাট বাজার এর বর্জ্য এবং মিট প্রসেসিং হ্যাজার্ড
-রাস্তার ধূলি বালি এবং ভাসমান বর্জ্য
-নির্মান শিল্পের বর্জ্য ( কন্সট্রাকশন হ্যাজার্ড)

উৎস থেকেই পৃথকীকরণ করে পচনশীল বর্জ্য, রিসাইকেল এবল বর্জ্য প্রসেস করতে হবে। সরকারি এবং বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় রিনিউএবল এনার্জি প্ল্যান্ট চালু করে রি সাইকেল এবল বর্জ্য প্রসেস নিশ্চিত করতে হবে। বাসা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকান পাট, বাজার এবং সকল অফিস আদালতের নিজস্ব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে যা সিটির কেন্দ্রীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সাথে সমন্বিত থাকবে। সত্যিকার অর্থে সিটি কর্পরেশন এর সহযোগী হিসেবে একটি আলাদা স্বাধীন "ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট" প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলাই ভবিষ্যৎ ওরিয়েন্টেড। বাসা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকান পাট, বাজার, সকল অফিস আদালত, শিল্প কারখানা, ম্যানুফেকচারিং প্ল্যান্ট, ওয়াশিং প্ল্যান্ট, কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি, গার্মেন্টস, কনস্ট্রাকশন সাইট ইত্যাদির জন্য বর্জ্যের প্রকার অনুযায়ী পৃথক পৃথক মডেলের ডাস্টবিন বা ময়লার ব্যাগ ডিজাইন করতে হবে, ব্যবহার বাধ্য করতে হবে। এতে রিসাইক্লিং সহজতর হবে।

ময়লার ব্যাগ সংগ্রহ কারী প্রতিষ্ঠান ময়লা ক্লাসিফাই না করে ময়লা প্যাকেট করলে তা আর্থিক পেনাল্টির আওতায় আনবে। খোলা ময়লা সংগ্রহের প্রশ্নই আসে না। সরকারকে রিনিউএবল এনার্জি প্ল্যান্ট এ ইনভেস্ট করতে হবে। বেসরকারি ইনভেস্ট কে প্রোনদনা দিয়ে উৎসাহিত করতে হবে।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল বর্জ্য এর জন্য দুটি মডেল প্রযোজ্য।
এক। শিল্প প্রতিষ্ঠান নিজেই বর্জ্য শোধন করে নীতিমালা মেনে বাকী বর্জ্য রিসাইকেল বা ভূগর্ভস্ত কিংবা ড্রেনেজ করবে।
দুই। সরকার বা বেসরকারী প্রতিষ্ঠান নগরীর সকল শিল্প বর্জ্য সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয় প্ল্যান্টে শোধন করবে। একাজে তারা সরকার এবং শিল্প প্রতিষ্ঠান গুলোর কাছ থেকে খরচ এর অর্থ পাবে। নাগরিকের দূষণ ট্যাক্স ও এখানে ন্যায্য ভাবে ব্যয়িত হবে।
দুটি মডেল এর সমন্বয় সাথন করে এদের যৌথ উপস্থিতিই কার্জকর। মোট কথা একটি শহর থেকে কোন ভাবেই নদী দূষিত হয় এমন বর্জ্য ড্রেইন্ড আউট করা যাবে না। প্রতিটি প্রধান এবং অপ্রধান ড্রেন এর শেষ প্রান্তে পিওউরিফিকেশন প্ল্যান্ট, পানি শোধনাগার, বর্জ্য রিসাইকেল প্ল্যান্ট থাকা বাধ্যতামূলক করতে হবে।

ইলেকট্রনিক ওয়েস্ট ব্যবস্থাপনা খুবই চেলেঞ্জিং। একাজে সিট কমিশন, স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে অনেক অনেক মাথা ঘামাতে হবে। প্রতিটি ইলেকট্রনিক পন্য উৎপাদন কারী অথবা আমদানী কারী - বাজারজাত কারী প্রতিষ্ঠানকে ইলেকট্রনিক পন্যের লাইফ সাইকেল শেষে কিভাবে সেই পন্যের ওয়েস্ট ম্যানেজ করবে (রি কল) তা ডিফাইন করবে। হয় ঐ প্রতিষ্ঠান নিজে তা রিসাইকেল করবে অথবা সরকার তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কেন্দ্রীয় ভাবে তা প্রসেস করবে। এর জন্য অতি দক্ষ নীতিমালা এবং উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন এডমিনেস্ট্রশন লাগবে। এলেক্ট্রনিক এবং ক্যামিক্যেল হ্যাজার্ড আমাদের জল স্থল সব বিষিয়ে তুলেছে।

সবশেষে বলতে হবে, ময়লা উৎস থেকেই প্যাকেটাইজ করে ট্রান্সপোরটেশন করতে হবে। এখানে সেখানে আবাসিক এলাকা, রাস্তার পাশ কিংবা শিল্প কারখানা, প্ল্যান্ট, নির্মান সাইট, দোকানের পাশে ময়লা ডাম্পিং করা যাবে না কোন ভাবেই। ট্রান্সপোরটেশন ব্যবস্থা ঠিক হলে রাস্তার পাশে ময়লা রাখার উন্মুক্ত ডাম্পিং ডাস্টবিন এর প্রয়োজন থাকবে না।

তবে আবাসিক এলাকার ভিতরে ময়লার প্রকারভেদ অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন ট্রান্সপোর্টএবল বা মোবাইল ডাম্পিং স্টেশন থাকতে পারে যেগুলো উন্মুক্ত হবে না। এই ধরনের ডাম্পিং স্টেশন ভূগর্ভস্ত হতে পারে। একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর ট্রেইলার ভ্যান এসে পুরো ডাম্পিং উনিট্টিকে নিয়ে গিয়ে আরেকটি খালি ডাম্পিং বক্স বসিয়ে যাবে। এগুলো সিসি ক্যামেরার কভারেজ এ রাখা যেতে পারে, যাতে উন্মুক্ত ময়লা ফেলা লোক কে কঠোর আর্থিক পেনাল্টির আওতায় আনা যায়।

নগরীর সুয়ারেজ ড্রেনেজ কে বৃষ্টির পানির ড্রেনেজ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করতে হবে। বৃষ্টির পানি বিনা বাধায় নদীতে উন্মুক্ত হবে। সুয়ারেজ এবং শিল্প বর্জ্য বহন কারী বদ্ধ ড্রেন গুলো অবশ্যই একটি শোধনাগারে ট্রামিনেট করেই এবং দূষণ পরিশোধিত করেই শুধু মাত্র নদীতে উন্মুক্ত করা যাবে।
নগরীর পাখ পাখলীকে ময়লা খাবারের জন্য ময়লার ভাগাড় উন্মুক্ত করে না দিয়ে বরং তাদের নিয়মিত আহার সিটি কর্পোরেশন কেই জোগাতে হবে। এই কাজের সাথে নগরীর পার্ক এবং উদ্যান ব্যবস্থাপনা কে সমন্বিত করতে হবে।

বলা হয়ে থাকে ঢাকার কাক ন্যাচারাল সুইপার, কিন্তু প্রানী হিসেবে কাকের শুধু এই ময়লাই খাবার কথা নয়। এর মাধ্যমে জীবাণু সংক্রমণ ভয়াবহ আকারে বাড়তে পারে, অন্য একটি নির্দেশক হচ্ছে কাক ছাড়া বাকি প্রায় সব পাখিই বিলুপ্ত হচ্ছে। সুতরাং উন্মুক্ত ময়লায় ভাগাড় সব বন্ধ করতে হবে, প্রান কূলের বেঁচে থাকার পরিবেশ থাকার পরিবেশ স্বাভাবিক ভাবে রিস্টোর করতে পদখেপ নিতে হবে।
​​
সমন্বিত ড্রেনেজ পরিকল্পনাঃ
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলগুলোর মধ্যে একটি এইরূপ যে, প্রধান প্রধান ঋতু সমূহ (যেমন গ্রীষ্ম বর্ষা এবং শীত) এক্সট্রিম হচ্ছে। ঋতুর সংখ্যা কমে আসছে, গরমের সময় গরম বেশি পড়ছে, বর্ষার সময় বৃষ্টি বেশি হচ্ছে কিংবা বর্ষা কাল দেরিতে আসছে কিংবা শীত কালে এর প্রকোপ বাড়ছে, অর্থাৎ এক কথায় বলা যায় আবহাওয়া চরম ভাবাপন্ন হচ্ছে দিন দিন।
ড্রেনেজঃ বৃষ্টিপাতের ড্রেন
২০১৫ সালে সমসাময়িক বছর গুলোর তুলনায় কিছুটা বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। কক্সবাজার চট্রগ্রাম যশোর এবং ঢাকায় ভারি বৃষ্টি পাত হয়েছে কোথাও বা কয়েক বছরের রেকর্ড মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর সাথে দেখা দিয়েছে ড্রেনেজ, জলাবদ্ধতা , পয়নিস্কাশন সমস্যা এবং ফ্ল্যাশ ফ্লাড এর মত দুর্ভোগ সৃষ্টিকারী সমস্যা গুলো।

এই ব্যাপার গুলোকে মোকাবেলায় সত্যি কারের সমন্বিত ড্রেনেজ ডিজাইনের বিকল্প নেই। একটি শহরে বৃষ্টিপাতের ধারাবাহিক রেকর্ড অনুযায়ী তিনটি জিনিসের হিসেব করতে হবে-
১। বৃষ্টি পাতের পানি কি পরিমান ভূমিতে শোষিত হয় সেটা। এর পরিমান শহর অথবা শহরের বিভিন্ন এলাকা ভেদে ভিন্ন হয়, এলাকার গ্রাউন্ড কার্পেটিং এর পরিমান, পার্ক এবং উন্মুক্ত ভূমির পরিমানের উপর। এটা পরিমাপ এ রাখা দরকার।
২। বৃষ্টিপাতের কি পরিমান বাষ্পীভূত (ইভাপোরেটিং) হয় (ঘন্টায় বা দিনে), এটা শহরের গড় তাপমাত্রর উপর হেরফের হয়, তবে মোটামুটি স্থির।
৩। আরবান রান অফ- আরবান রান অফ হোল ভূমির শোষণ এবং বায়ু মন্ডলে বাস্পায়ন শেষে কি পরিমান পানি গড়িয়ে নদী খাল বা অন্যন্য জলীয় আধারে গিয়ে পড়ে।
ঢাকার "আরবান রান অফ" এর হিসেব ড্রেনেজ ডিজাইনের একটি প্রধান অনুষঙ্গ। যেহেতু একটি শহরে বৃষ্টিপাতের পানির বাষ্পীভবন এবং ভূমির শোষণ এর পরিমান বছর বছর অতি ধীরে পরিবর্তিত হয় তাই বলা চলে "আরবান রান অফ" এর হিসেবেই ড্রেন ডিজাইন করতে হবে। মৌসুমে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড বই খুলে কিছু অতিরিক্ত বাফার ক্যাপাসিটি রেখে আরবান রান অফ এর জন্য ড্রেন ক্যাপাসিটি হিসেব করে ড্রেন এর ধারন ক্ষমতা (আয়তন এবং গভীরতা) বের করতে হবে। মোট গড়িয়ে পড়া পানি যত বেশি হবে ড্রেন এর ধারন ক্ষমতা তত বেশি হবে, ড্রেন তত গভীর হবে। ড্রেন এর ম্যান্টেনেইন্স হোলও তত বেশি হবে। আর অবশ্যই ড্রেন এর তলদেশ কোথাও উঁচু কোথাও নিচু হতে পারবে না।

সমুদ্র সমতলের সাথে প্রতি সেন্টিমিটার উচ্চতার সমন্বয় রেখে সোর্স থেকে ডেস্টিনেশন পর্জন্ত পর্জায়ক্রমে গভীর থেকে গভীরতর ড্রেন ডিজাইন করতে হবে। সেই সাথে অবশ্যই অতি আবশ্যিক ব্যাপার সমূহ মাথায় নিতে হবে তার মধ্যে কয়েকটি হোল-
ক। নগরীর আবর্জনা ব্যবস্থাপনার মান -এটা জানার জন্য যে- গড়ে কি পরিমান ভাসমান আবর্জনা, ধূলি বালি ময়লা পলিথিন বাসার অব্যবহৃত জিনিস পত্র নির্মান সামগ্রীর অবশিষ্ট, কনক্রিটের অবশিষ্ট, কাগজ জাত পন্য ইত্যাদি ডেবরী বৃষ্টির পানির সাথে বাহিত হয়।
খ। বাংলাদেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খুবই মানহীন মলে এই ডেবরীর পরিমান খুব বেশি, তাই এগুলি ড্রেন গুলোকে জ্যাম করে ফেলে তার উপর আছে রাস্তার ব্যাপক ধূলি এবং কাদা মাটি।
যত বেশি আবর্জনা বাহিত হবে তত বেশি ড্রেন মেইন্টেনেন্স হোল করতে হবে, শুধু মেইন্টেনেন্স হোল বেশি করলেই হবে না, এই হোল গুল আয়তনে বড় হবে, এবং গভীরও হবে। অর্থাৎ ড্রেনের গভীরতের থেকেও মেইন্টেনেন্স হোল গভীর হবে বেশি। গভীরতাই বেশি গুরুত্ব পুর্ন, এতে করে ডেবরী এই হোল গুলোতে গিয়ে জমা হয়ে ড্রেন সচল রাখবে।

গ। বড় ড্রেইন এ বিপরীত প্রবাহ ঠেকানোর জন্য স্লুইস গেইট নির্মান

বৃষ্টিপাতের ড্রেন সাধারনত সরাসরি নদি খাল বা জলীয় আধারে উন্মুক্তু হয়, বিনা প্রসেসিং এ।

ড্রেনেজঃ পয়নিস্কাশন ড্রেন
পয়নিস্কাশন ড্রেন বারিপাত বহন কারি ড্রেন থেকে ভিন্ন হয়। এদের সোর্স এবং ডেস্টিনেশনও ভিন্ন। এই ড্রেন গুলো কে প্রেসেস প্লাট এ টার্মিনেট করে এর জলীয় অংশ আলাদা করে কিছুটা পরিশোধন করে পরে নদীতে ফেলতে হয়। বাকি ডেবরী ভূ গর্ভস্ত করার নিয়ম।
বৃষ্টিপাতের ড্রেন এবং পয়নিস্কাশন ড্রেন মিলানো যাবে কোন ভাবেই, তবে পরিশোধন এর পরে এই দুই ড্রেন একসাথে মিলে নদিতে নেয়া যেতে পারে।

ড্রেনেজঃ শিল্পও আবর্জনা
সম্পুর্ন আদালা ড্রেন, সাধারনত উৎসে ক্যামিকেল আবর্জনা পরিশোধন করে পরেই ড্রেনে উন্মুক্ত করা যেতে পারে। আবর্জনার প্রসেস প্ল্যান্ট থেকে বের হওয়া ক্যামিক্যাল এর মাত্রা আন্তর্জাতিক স্টান্ডার্ড এ সেট করা আছে। উৎসে প্রসেস করা না গেলে কেন্দ্রীয় ভাবে সম্পুর্ন সেপারেট ড্রেন দিয়ে শিল্পও এলাকার বর্জ সেন্ট্রাল প্রসেস প্ল্যান্ট এ নিয়ে শোধন করতে হবে। শোধনাগের আউটপুট শুধু মাত্র উপরে বর্নিত ২ টি ড্রেনেজ এর সাথে মিলে নদিতে পড়তে পারে।

ক্যামিক্যাল নদীতে উন্মুক্ত করলে তা বাহিত হয়ে কৃষি ভূমি, কৃষি ভূমির অনুজীব চক্র এবং অন্যন্য জলজ প্রাণীর বাঁচার পরিসবেশ নস্ট করে ফেলে। এতে স্বাদু পানির মাছ এর স্বল্পতা দেখে দেয়, ভূমির ন্যাচারাল উর্বরতা কমে যায়।

ড্রেনেজ পরিকল্পনা নিন্মোক্ত বিষয় গুলিও আমলে নিতে হবে-
১। সমুদ্র সমতলের সাথে প্রতি সেন্টিমিটার উচ্চতার সমন্বয় রেখে সোর্স থেকে ডেস্টিনেশন পর্জন্ত পর্জায়ক্রমে গভীর থেকে গভীরতর ড্রেন ডিজাইন। নিষ্কাশন এলাকা, সর্বোচ্চ মৌসুমি বৃষ্টিপাত এবং সুয়ারেজ এর সাথে ডাইমেনশন ক্যল্কুলেশন করে ড্রেনের গভীরতা, ধারন ক্ষমতা, সার্ভিস ফেসিলিটি নির্ধারন করতে হবে, ধারন ক্ষমতা এবং সার্ভিস - ড্রেন ক্লিনিং এর ফেসিলিটি অনুসারে ড্রেনের প্রবেশ মুখে ফিল্টার (মেইন্টেইন এবল) বসাতে হবে।
২। নগরের রাস্তার উচ্চতা সমুদ্র সমতলের রেফারেন্সে নির্দিস্ট করতে হবে। পুরানো কার্পেটিং নষ্ট হলে তা সম্পুর্ন রুপে তুলে (এর জন্য বিশেষ মেশিন রয়েছে) আবার পুর্বের উচ্চতায় রাস্তা কার্পেটিং করতে হবে। কোন ভাবেই পুর্বের ক্ষয়ে যাওয়া পিট-পাথরের উপর নতুন কার্পেটিং করে রাস্তার উচ্চতা বাড়ানো যাবে না।
৩। দুর্নিতি কমিয়ে টেকসই রাস্তা এবং ড্রেন বানাতে হবে। ভেহিকেলের সর্বোচ্চ লোডেড মাস/অয়েট অনুযায়ী রাস্তার পীট এবং পাথরের মিশ্রণ ডিফাইন করতে হবে। পীট-পাথরের রোলিং উপজুক্ত হতে হবে। মানসম্পন্ন কার্পেটিং ২০-৪০ বছর স্থায়ী হবার কথা। কংক্রিটের তৈরি বলে প্রতিটি ড্রেন ৫০-১০০ বছরের জন্য টেকসই করে বানাতে হবে। রড সিমেন্ট চুরি করে মানহীন কনক্রিট স্ট্রাকচার বানানো বন্ধ করতে হবে।
৪। ভার বহনের উপযোগী এবং টেকসই কভার দিয়ে ড্রেন শত ভাগ ঢাকতে হবে। নির্দিস্ট কর্তৃ পক্ষ ছাড়া ড্রেনের ইনলেট টেম্পার করার নিয়ম পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে।
৫। শহরের ভিতর দিয়ে উন্মুক্ত মাল বাহী ট্রাক (মাটি, বালু, সুরকি) পরিবহন বন্ধ করতে হবে। মালবাহী ট্রাকের বডী ডিজাইন এ পরিবর্তন এনে ওয়াটার লীক প্রুফ এমন করে ট্রাকের মালবাহী অংশের বডির পাতাটন এবং সাইড তৈরি করতে হবে। নতুবা মাটি, বালু, সুরকি সম্পুর্ন কভার্ড ভ্যানে পরিবহনের নিয়ম করতে হবে।
৬। নির্মানাধীন বাড়ী থেকে কোন ভাসমান কঠিন কিংবা প্রবাহিত ওয়েস্ট/ বর্জ (মাটি, কাদা মাটি, লোদ, ময়লা পানি, বালি-সুরকির মিস্রন, পাইলিং এর কাদা) ইত্যাদি ড্রেন এ নির্গমন করানো যাবে না। এই কাজ কে অতি উচ্চ আর্থিক পেনাল্টির আওতায় আনতে হবে।
৭। নির্মান কাজে তলা এবং স্কয়ার ফিট অনুযায়ী পানি ব্যবহারের নির্দেশনা দিতে হবে, অতিরিক্ত পানি অপচয় কে মিটার রিডিং থেকে পিক করে উচ্চ আর্থিক জরিমানার আওতায় আনতে হবে।

৮। পলিথিন নিয়ন্ত্রন এবং ১০০% রি সাইক্লিং ড্রেন ম্যেনেজমেন্টের পুর্ব শর্ত।
৯। নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কারের বন্দবস্ত।
১০। নাগরিকের কাছ থেকে পানি দূষিত করন জনিত কারনে ন্যায্য সার্ভিস চার্জ আদায় করে তা দিয়ে ড্রেনের পানি ডেস্টিনেশনে পড়ার পুর্বেই আংশিক শোধন করে নদী দূষণ কমানোর দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নীতিমালা নিতে হবে।

১১। বড় বড় আবাসিক কম্পাউন্ড এ টয়লেট ফ্ল্যাশ এর পানির রিসাইকেল ব্যবস্থার প্রবর্তন করা।
১২। যটতা সম্ভভ নগরীর খাল সমূহ কে উদ্ধার এবং প্রবাহিত করার বন্দবস্ত করন।
১৩। নগরীর পুকুর দীঘি লেক সমূহকে উদ্ধার এবং গভীর করে খনন করে করে সাময়িক জলাধারের সৃষ্টি করা। নগরীর লেক সমূহকে কানেক্টেড করা।


নগর সভ্যতা গড়ার অর্থ যদি হয় বেশি থেকে বেশি জীবনের যন্ত্রনা জড়ো করে নাগরিক সমস্যায় জর্জরিত একটা জনপদ তৈরি করা তাহলে এই সভ্যতার ট্রাস্নফর্মেশনের কৌশল গুলো ভেবে দেখতে হবে গভীর ভাবে। নগরের জলাবদ্ধ মানুষেরই তৈরি। তাই ড্রেনেজ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন এবং ইমপ্লিমেন্টেশন এর কারিগরি বিষয় গুলো গুরুত্ব সহকারে আমলে নেয়া খুব দরকার।

নগরের ড্রেনেজ পরিকল্পনা মানসম্পন্ন এবং দূরদৃষ্টি সম্পন্ন হোক,
​নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিবেশ বান্ধব হোক, রিসাইকেল বেইজড হোক,

আমাদের নগর সমূহ নান্দনিক হোক!
বাংলাদেশ এগিয়ে যাক!​


( পোস্ট স্টিকি করে সচেতনতা ছড়িয়ে দেবার আবেদন রইলো প্রিয় মডারেটরগনের প্রতি)

মন্তব্য ১ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:৩০

এক নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: নিজ শহরের আবর্জনা পরিষ্কারে ঢাকায় অবস্থানরত বিদেশী - বিদেশিনীদের মানসিক তাড়না জাত কিংবা সচেতনাতা সৃষ্টির প্রয়াসকে ফ্যাল ফ্যাল করে না দেখে এবং ফেবু পিকচার আপডেট এর জন্য সেলফি তোলার সুযোগ না নিয়ে আসুন- বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং ড্রেনেজ পরিকল্পনাকে আধুনিক করা এবং সমন্বিত মাস্টারপ্ল্যান করার জন্য সিটি কার্পোরেশন, পাউবো, ওয়াসা এবং সরকারকে চরম নাগরিক চাপে রাখি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.