নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব,ইইই প্রকৌশলী। মতিঝিল আইডিয়াল, ঢাকা কলেজ, বুয়েট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র।টেলিকমিউনিকেশন এক্সপার্ট। Sustainable development activist, writer of technology and infrastructural aspects of socio economy.

এক নিরুদ্দেশ পথিক

সমাজের প্রতিটি ছোট বড় সমস্যার প্রকৃতি নির্ধারণ করা, আমাদের আচার ব্যবহার, সমাজের প্রচলিত কৃষ্টি কালচার, সৃষ্টিশীলতা, চারিত্রিক উদারতা এবং বক্রতা, অপরাধ প্রবৃত্তি, অপরাধ সঙ্ঘঠনের ধাঁচ ইত্যাদির স্থানীয় জ্ঞানের আলোকে সমাজের সমস্যার সমাধান বাতলে দেয়াই অগ্রসর নাগরিকের দায়িত্ব। বাংলাদেশে দুর্নীতি রোধ, প্রাতিষ্ঠানিক শুদ্ধিকরন এবং টেকনোলজির কার্যকরীতার সাথে স্থানীয় অপরাধের জ্ঞান কে সমন্বয় ঘটিয়ে দেশের ছোট বড় সমস্যা সমাধান এর জন্য লিখা লিখি করি। আমার নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি আছে কিন্তু দলীয় সীমাবদ্ধতা নেই বলেই মনে করি, চোর কে চোর বলার সৎ সাহস আমার আছে বলেই বিশ্বাস করি। রাষ্ট্রের অনৈতিক কাঠামোকে এবং দুর্নীতিবাজদের সবাইকে তীক্ষ্ণ ভাবে চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা করি। রাষ্ট্র কে চ্যালেঞ্জ করতে চাই প্রতিটি অক্ষমতার আর অজ্ঞতার জন্য, তবে আঘাত নয়। ব্যক্তিগত ভাবে নাগরিকের জীবনমান উন্নয়ন কে দেশের ঐক্যের ভিত্তিমূল মনে করি। ডাটাবেইজ এবং টেকনোলজি বেইজড পলিসি দিয়ে সমস্যা সমাধানের প্রোপজাল দেবার চেষ্টা করি। আমি মূলত সাস্টেইন এবল ডেভেলপমেন্ট (টেকসই উন্নয়ন) এর নিরিখে- অবকাঠামো উন্নয়ন এবং ডিজাইন ত্রুটি, কৃষি শিক্ষা খাতে কারিগরি ব্যবস্থাপনা ভিত্তিক সংস্কার, জলবায়ু পরিবর্তন, মাইক্রো ইকনমিক ব্যাপার গুলো, ফিনান্সিয়াল মাইগ্রেশন এইসব ক্রিটিক্যাল ব্যাপার নিয়ে লিখার চেষ্টা করি। মাঝে মাঝে চোরকে চোর বলার জন্য দুর্নিতি নিয়ে লিখি। পেশাঃ প্রকৌশলী, টেকনিক্যাল আর্কিটেক্ট, ভোডাফোন।

এক নিরুদ্দেশ পথিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

BRTA’র মটরযান ফিটনেস নবায়ন ব্যবস্থা পুরোপুরি নন্সেন্স!

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:০১


প্রকৌশল সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের সরকারি সংস্থার কর্মপদ্ধতি ও মান কতটা নিচু হতে পারে, একটা দেশের সাধারণ কারিগরি ব্যবস্থাপনা কতটা নির্বোধ হতে পারে, তার একটা জ্বলন্ত নজির হচ্ছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ফিটনেস নবায়ন ব্যবস্থা।

সাধারণ নিয়মে একটা ব্রান্ডনিউ গাড়ি রাস্তায় নামার পরে দেশভেদে ৩ বা ৪ বছর পরে এর ১ম ফিটনেস টেস্ট করতে হয়। এর ১ বা ২ বছর পর ২য় ফিটনেস টেস্ট করা লাগে। চতুর্থ বা পঞ্চম বছরের পরে প্রতি বছর ফিটনেস যাচাই করা বাধ্যতামূলক। এই টেস্টে গাড়ি চলার মৌলিক জিনিস গুলো এবং দুর্ঘটনা ঘটানোর সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলো যাচাই করা হয়। যেমন-
১। স্টিয়ারিং স্ট্যাবিলিটি, ব্রেক ফাংশন, ব্রেক শু ইত্যাদি ভেহিকল স্ট্যাবিলিটির মৌলিক জিনিস গুলো ঠিক আছে কিনা দেখা!
২। টায়ার গ্রিপের পুরুত্ব বা থ্রেড ডেপথ। অর্থাৎ টায়ার ক্ষয় দেখা হয়। ব্রেক সিস্টেম ঠিক থাকলেও শুধু টায়ার গ্রিপ সঠিক মানে পুরো না থাকায় বা টায়ার ক্ষয়ে যাবার কারণে একটা গাড়ির নিরাপদ ব্রেকিং দুরুত্ব কমে আসে।


বাংলদেশের বহু সড়ক দুর্ঘটনার কারণ পুরানো ক্ষয়ে যাওয়া, গ্রিপ না থাকা টায়ার ব্যবহার, বিশেষ করে বর্ষায়, অতি শীতে এবং অতি গরমে অর্থাৎ চরম ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায়।তদুপরি ভাঙ্গা রাস্তায়, গর্ত ভরা রাস্তায়, কাদার রাস্তায় কিংবা অতি সংকীর্ণ রাস্তায় যেখানে বিপরীতমূখী যান অতিক্রমের সময় চাকা রাস্তার পাশের কাঁদা, গর্তের কাঁদা, নির্মাণের ভাঙ্গা অংশ স্পর্শ করে যায় সেখানে কম পুরুত্বের টায়ার ভয়াবহ দুর্ঘটনার কারণ হয়। এই ক্ষেত্র গুলোতে চালকের সেইফ ব্রেকিং ডিস্টেন্স এর সেন্স অনুযায়ী ব্রেকিং সিস্টেম কাজ করে না। ফলে দুর্ঘটনা হয়।


পার্শ্বদেশ থেকে থ্রেড ডেপথ দেখা গেলেও উপরি তলের থ্রেড গ্রীপ ক্ষয়ে গেলে টায়ার পরিবর্তন করতে হয়।


বাংলদেশের বহু সড়ক দুর্ঘটনার কারণ পুরানো ক্ষয়ে যাওয়া, গ্রিপ না থাকা টায়ার ব্যবহার, বিশেষ করে বর্ষা, অতি শীতে এবং অতি গরমে অর্থাৎ চরম ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায়। নেদারল্যান্ডসে ফিটনেস পাবার শর্ত ৬মিমি থ্রেড থ্রেড ডেপথ। বাংলাদেশে ১ মিমি বা তারও কম প্রায় সম্পুর্ণভাবে থ্রেড হীন ফ্ল্যাট টায়ার ব্যবহার হয়, অর্থাৎ টায়ার প্রায় ফুটা না হওয়া পর্যন্ত বিপদজনক টায়ার ব্যবহার হয়। ।

৩। মটরযানের সামনের আয়না (Windscreen), লুকিং গ্লাস, রিয়ার ভিউ মিরর, পেছনের আয়না ঠিক আছে কিনা, ভিউ গুলো ক্লিয়ার কিনা দেখা। এখানে আরো দেখা হয় গ্লাস ক্লিনার বা ওয়াইপার কাজ করে কিনা। অর্থাৎ চালকের সামনে পিছনে ডানে বামের ভিজিবিলিটি যাচাই করা হয়। ইউকে’তে ১০মিমি চাইতে বড় ফাটল ফিটনেস টেস্টে ফেল করে কেননা এতে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনের ভিজিবিলিটিতে ব্যাঘাত হয়।

৪। হেড লাইট, ডান ও বামের ইন্ডিকেশন লাইট, পেছনের ব্রেক লাইট, ইমার্জেন্সি লাইট ঠিক আছে কিনা। অর্থাৎ ভেহিকল টু ভেহিকল কমিউনিকেশন সিস্টেম কাজ করে কিনা দেখা হয়।

৫। রেডিয়েশন সিস্টেম, ব্যাটারি চেক ইত্যাদি। দেশ ভেদে ফিটনেস টেস্টে উত্তীর্ণ হবার ক্রাইটেরিয়া গুলো কিছু ভিন্ন হতে পারে। যেমন বাংলাদেশে গাড়ির গভর্নেন্স টেম্পার করে স্পীড রেঞ্জ চেঞ্জ করা হয়। তাই এখানে স্থানীয় অপরাধের আলোকে ফিটনেস চেকের তালিকা দীর্ঘ হওয়া উচিৎ। বাংলাদেশের রাস্তায় ধুলি, পানি ও কাঁদা থাকে বলে গাড়ির তলদেশে ব্যাপক ডেব্রি-আবর্জনা জমে থাকে যা মাঝে মাঝে গাড়ির তলদেশের গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ কে সমস্যা পূর্ণ করতে পারে (যেমন, ইঞ্জিন এরিয়া, এক্সেলেন্সার পাইপ), ফলে এসব চেকও দুর্ঘটনা এড়ানোর নিরাপত্তাগত বিবেচনায় আসতে পারে। তবে গাড়ির এসি, ইন্টেরিয়র বা বিনোদন সম্পর্কিত বিষয় ফিটনেস টেস্টে আসে না।

উন্নত দেশে ফিটনেস টেস্ট কোথায় করা হয়-
একটা দেশের প্রতিটি এলাকায় নূন্যতম সংখ্যক মটর মেকানিক শপ, গাড়ির শোরুম কিংবা গ্যারেজকে তাদের সুনির্দিস্ট টেস্ট সারঞ্জাম ও মেকানিক থাকার শর্তে ফিটনেস টেস্টের এজেন্টশীপ দেয়া হয়। সাধারণত সব এলাকার সব রেজিস্টার্ড মটর মেকানিক শপ, গাড়ির শোরুম কিংবা গ্যারেজই এই সারঞ্জাম ক্যাপাসিটি নূন্যতম হিসেবে রাখে।

দেশের কেন্দ্রীয় ট্রান্সপোর্ট অথোরিটি মটরযানের কেন্দ্রীয় ডেটাবেইজ সংরক্ষণ করে যেখানে গাড়ির যাবতীয় উৎপাদন গত তথ্য, মেকানিক্যাল তথ্য, নাম্বার প্লেইট, ইঞ্জিন নং, চেসিস নং, মালিকানা তথ্য, ঠিকানা, ভর, রঙ, কার্বণ এমিশন, ফয়েল ইফিসিয়েন্সি, ফিটনেস যাচাই ডেইট ইত্যাদি বিস্তারিত থাকে।

কোন গাড়ির ফিটনেস যাচাইয়ের ডেট আসার ১ মাস আগে এড্রেসে চিঠি দেয়া হয়, মালিক নিজের সুবিধামত সময়ে এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিজের পছন্দের মটর মেকানিক শপে গিয়ে নির্দিস্ট ফি (সাধারণত ৩০ থেকে ৫০ ইউরো) দিয়ে গাড়ির সার্টিফিকেট নবায়ন করে নেন। এখানে সাধারণত ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট সময় লাগে। ফিটনেস এক বা একাধিক পয়েন্টে ফেইল করলে সেগুলো আগে রিপেয়ার করে পরে আবারো ফিটনেস্ট টেস্ট করা হয়।

ফিটনেস টেস্ট শেষে অনুমোদিত এজেন্সি ডেটাবেইজ আপডেইট করে দেয়, এবং পরবর্তি এক বছরের তারিখ সহ একটা অতি সাধারণ ফিটনেস পেপার দিয়ে দেন যা গাড়িতে রাখা হয়।

এই যখন একটা দেশের মটর গাড়ির ফিটনেস যাচাইয়ের অবকাঠামো হবার কথা সেখানে বাংলাদেশের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। বাংলাদেশের ফিটনেস যটতা না মটর গাড়ির মেকানিক্যাল স্ট্যাবিলিটী, সামনে পাশে ও পিছনের ভিজিবিলিটি, লাইটিং কমিউনিকেশন, টায়ার ও রেডিয়েশন ইত্যাদি যাচাইয়ের বিষয় তার চেয়েও বেশি হচ্ছে টাকা সহ কিছু পেপার ওয়ার্ক্স জমা দেয়া এবং একটা উচ্চমান কাগজে প্রিন্টেড সার্টিফিকেশন নিবার ওয়ার্ক মাত্র। ফিটনেস্ট টেস্ট নামমাত্র। গাড়ি প্রতি এখানে ১ থেকে ৫ মিনিট বরাদ্দ করা হয় সর্বোচ্চ। আসলে এখানে গাড়ি হাজির করাই যেন মূখ্য কাজ!

সারা দেশে বিয়ারটিএ’র ৫৪টি কেদ্রীয় ও আঞ্চলিক অফিস আছে। অধিকাংশ অফিসেই মাত্র ১ বা ২ জন করে মটর মেকানিক থাকেন। শহরের অফিস গুলোতে ৪ থেকে সর্বোচ্চ ৬ জন মটর মেকানিক আছেন। পাশাপাশি থাকেন ১ বা ২ থেকে সর্বোচ্চ ৬ জন মটর মেকানিক।


বিয়ারটিএ’র মাত্র ৫৪ টি অফিসে দেশের রাস্তায় চলা অর্ধ কোটি মটর সাইকেল, প্রাইভেট ও বাণিজ্যিক গাড়ি, ট্রাক, ট্রেইলার সহ যাবতীয় পুরানো গাড়ির ফিটনেস দেখে।

সারা দেশে বিয়ারটিএ’র ৫৪টি কেদ্রীয় ও আঞ্চলিক অফিস আছে। অধিকাংশ অফিসেই মাত্র ১ বা ২ জন করে মটর মেকানিক থাকেন। শহরের অফিস গুলোতে ৪ থেকে সর্বোচ্চ ৬ জন মটর মেকানিক আছেন। পাশাপাশি শহর ও মফস্বল শহর ভেদে থাকেন ১ বা ২ থেকে সর্বোচ্চ ৬ জন মটরযান পরিদর্শক।

লিখার প্রথম দিয়ে প্রকৃত ফিটনেস টেস্টের যে নূন্যতম ৫টি আইটেমের কথা বলা হয়েছে সেসব যাচাইয়ের যান্ত্রিক সক্ষমতা কতটি অফিসের আছে তা নিয়ে ব্যাপক সন্দেহের অবকাশ আছে। বহু ঢোল পিটিয়ে বহু ব্যয় করে পরে অক্টোবর ৩০, ২০১৬ মিরপুরের বিয়ারটিএ তে ডিজিটাল ‘ভেহিকল ইন্সপেকশন সেন্টার’ উদ্ভোদন করা হয়েছে, বাকি সেন্টার গুলো ম্যানুয়ালই রয়ে গেছে। যদিও ভেহিকল ইন্সপেকশন কোন কালেই পুরাপুরি ম্যানুয়াল কাজ ছিল না, অন্তত ব্যাটারি মান যাচাইয়েও একটা মেশিন লাগে!
ছুটি, ট্রেনিং, অসুস্থতা, দেরিতে অফিসে আসা, আগে চলে যাওয়া, ঘুষ খাবার গড়িমসি ও সময় ক্ষেপণ, তদবির, ফিটনেস পার্টস ঠিক না করেই ফিটনেস্ট পেপার দিবার দুর্নীতি মিলে এই সামান্য জনবলের বাস্তব কর্মঘন্টা যে একেবারেই সীমিত তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

যে কাগজ গুলো গাড়ির রুটপারমিট প্রদানের সময় জমা নিবার কথা তাই নেয়া হচ্ছে ফিটনেস্ট টেস্টের সময়। ফিটনেস আবেদনের জন্য একটা ফর্ম আছে, সেখানে সর্বশেষ করবে ফিটনেস চেক কারানো হয়েছে এবং কবে পরবর্তি ফিটনেস চেক ডিউ ছিল বা আছে তার কোন ফিল্ড নেই। অর্থাৎ বিয়ারটিএ’র কাছে এর গুরুত্ব আসলে নেই।

বিয়ারটিএ যে কাগজ গুলো গাড়ির বাৎসরিক রুট পারমিট প্রদানের সময় জমা নিবার কথা তাই নিচ্ছে ফিটনেস্ট টেস্টের সময়। ফলে গাড়ির যান্ত্রিক সক্ষমতা ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধী মৌলিক কাঠামো যাচাইয়ের পরিবর্তে বাংলাদেশে ফিটনেস্ট টেস্টের নামে আসলে কিছু অফিস ওয়ার্ক হয়।

ফিটনেস আবেদন ফর্মে (এরকমের ফর্ম থাকাও হাস্যকর বটে!) বেশ কিছু তথ্য নেয়া হলেও সর্বশেষ করবে ফিটনেস চেক কারানো হয়েছে এবং কবে পরবর্তি ফিটনেস চেক ডিউ ছিল বা আছে তার কোন ফিল্ড নেই। অর্থাৎ বিয়ারটিএ’র কাছে এর গুরুত্ব আসলে নেই।
এই যে অপব্যবস্থাপনা তার ফল হচ্ছে নিচের দুটি ছবি। দেশের সর্বত্রই এরকম ভাঙ্গা চোরা গাড়ির অবাধ বিচরণ। বিয়ারটিএ নামক দুর্নীতির খনির ভিতরে, এটা অবকা করার বিষয় নয় যে, এই গ্লাস, বাম্পার, বুট, হেডলাইট, ইন্ডিকেশন লাইট, ব্রেক লাইট ছাড়াই চলা, টায়ার থ্রেড ডেপথ না থাকা এই গাড়ি গুলোরও অনেকেরই ফিটনেস সার্টিফিকেট আছে! আমাদের সব সম্ভবের দেশে!


More than 70,000 vehicles have not had their fitness certificates renewed in 10 years. এখানে শুধু ফিটনেস ডকুমেন্টের বিবেচনা এসেছে, বাস্তবের যান্ত্রিক ফিটনেস হিসেব করলে এই সংখ্যা কয়েক গুণ হয়ে উঠতে পারে!
‘নো ফিসনেস ডকস, ইয়েট রানিং’ শিরোনামে গত ২৩ মার্চ ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। এর ভাষ্য, ৭০ হাজারের বেশি যানবাহন ফিটনেস সার্টিফিকেট ১০ বছরেও নবায়ন করেনি, এর অনেকগুলোই দুর্ঘটনার গুরুতর ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় আছে। প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে এলে গত ২৭ মার্চ আদালত স্বতঃপ্রণোদিত রুল দেন।


পরিত্যাক্ত গাড়ি নয়, একটা দেশের রাজধানীর প্রধান গণপরিবহন!

গত ২৩ জুলাই হাইকোর্ট এক আদেশে ঢাকাসহ সারাদেশে রেজিস্ট্রেশনের পর ফিটনেস নবায়ন না করা ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩২০টি যানের ফিটনেস নাবায়ন করতে গাড়ি মালিকদের দুই মাস সময় বেধে দেন। ১ আগস্ট থেকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিআরটিএর কাছে গিয়ে এসব যানের ফিটনেস পরীক্ষা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

দৃশ্যত এটা একটা ভাল কাজ ছিল, যদিও বাংলাদেশের আদালত আসলেই জানেন না যে, বিয়ারটিএ’র বর্তমান সক্ষমতায় ৫৪ টি অফিসে ২ মাসের ৫১ বা ৫২ কার্যদিবসে পৌনে পাঁচ লক্ষ গাড়ির যথাযথ ফিটনেস যাচাই সম্ভব ই না। কোন ধরণের ঘুষ, দুর্নীতি না থাকলেও এটা সম্ভব না। দুই মাস পর দেখা গেল, ঢাকাসহ সারাদেশে রেজিস্ট্রেশনের পর ফিটনেস নবায়ন না করা ৮৯ হাজার ২৬৯টি গাড়ি গত দুই মাসে ফিটনেস নবায়ন করেছে (বিআরটিএ)। বাকি ৩ লক্ষ ৯০ হাজার ৫১ টি ফিটনেস নিতেই আসেনি।

অনুমান করা দুঃসাধ্য নয় যে, ফিটনেস নেয়া ৮৯ হাজার ২৬৯টি গাড়ি যে ফিটনেস নিয়েছে সেখানে আসলে গাড়ির মেকানিক্যাল সক্ষমতা যাচাই হয়নি, হয়েছে টাকা জমা দেয়া সহ পেপারোয়ার্ক জমা দান , ঠিক বেঠিক, দুর্নীতির হাত ধরে নতুন একটা সার্টিফিকেট নিবার কাজ মাত্র। কেননা বিয়ারটিএ, এই দুই মাসে মাত্র ৫৪ টা অফিসেই মিলে প্রতি ঘন্টায় ২১৪ টা ফিটনেস সার্টিফিকেট দিয়েছে। যেখানে ভালো ভাবে ফিটনেস টেস্টে ২৫-৩০ মিনিট ব্যয় করলেও সর্বোচ্চ ৪০ হাজার গাড়ির ফিটনেস পাবার কথা এই সময়ে। তাও ছুটি, ট্রেনিং, অসুস্থতা, দেরিতে অফিসে আসা, আগে চলে যাওয়া, ঘুষ খাবার গড়িমসি ও সময় ক্ষেপণ, তদবির, ফিটনেস পার্টস ঠিক না করেই ফিটনেস্ট পেপার দিবার দুর্নীতি এই সবকিছু বাদ দিয়ে। ফিটনেস ফেইলের পয়েন্ট গুলো সারানোর সময় বাদ দিয়ে এবং এটাও ধরে নিয়ে যে, অফিস গুলোর যথাযথ ফিটনেস যাচাই যন্ত্রপাতি আছে। এত কিছু বাদ দিয়েও এত গাড়িকে ফিটনেস দিয়ে ইতিমধ্যেই বিয়ারটিএ যেন এক অসম্ভব কাজ করে ফেলেছে। সরেজমিনে গেলে দেখা যাবে, আসলে গাড়ি হাজিরা আর পেপারোয়ার্ক্সের কাজ ছাড়া ফিটনেস টেস্টের কিছুই হয়নি!

তথাপি বাকি ৩ লক্ষ ৯০ হাজার ৫১ টি গাড়ি ফিটনেস নেয়নি!এদিকে ফিটনেসবিহীন গাড়িতে জ্বালানি না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। কিন্তু হাইকোর্টের জানা নেই যে, এই নির্দেশ শুনতে ভালো হলেও আসলে বাস্তবায়ন অযোগ্য।কেননা ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার নাম করে বিয়ারটিএ শত শত কোটি টাকা খরচ করলেও তারা এমন কোন পাবলিক ভেহিকল ডেটাবেইজ কিংবা এপ করতে পারেনি, যেখানে নম্বর প্লেইট বা গাড়ির নং দিয়ে এন্টার চাপলেই ফিটনেস ডেট সহ অন্যান্য তথ্য তাৎক্ষণিক ভাবে বেরিয়ে আসবে!ফলে আসলেই কোন গাড়ির ফিটনেস আছে কিনা তা ফুয়েল স্টেশনের লোকেদের যাচাই অসম্ভব কেননা এই দেশে কেউ চাইলেই একটা জাল সার্টিফিকেট তৈরি করে নিতে পারে এবং সেটা যাচাইয়ের কোন কারিগরি সিস্টেমও আমাদের কথিত ডিজিটাল বিয়ারটিএ'র নেই!শুধুমাত্র পুরাতন গাড়ি বেচাকেনাকে উৎসাহ দিতেই এরকম একটা ভেহিকল ডেটাবেইজ দরকার।

আমরা দেখছি প্রায় এক লক্ষ গাড়ি ফিটনেস ছাড়াই ১০ বছর ধরে রাস্তায় চলছে!!!!অতচ পুলিশ প্রতিদিন প্রতি রাস্তায়, প্রতি মোড়ে গাড়ি চেক করে। পুলিশের তো গাড়ি চেকের সক্ষমতা নেই, যন্ত্রপাতি নেই, চেকের কথাও নয়, ফলে সে আসলে গাড়ি চেক করে না বরং চাঁদা খায়!

বাংলাদেশের সড়কে কেন এত দুর্ঘটনা হয়, কেন এত মানুষ মরে রাস্তায়, তার কারিগরি ব্যবস্থাপনা গত কারণ গুলো নিয়ে কি এই দেশের প্রশাসন ও সরকার আদৌ বুঝে বা ভাবে?


ফলে সময় হয়েছে দেশের মটর মেকানিক শপ গুলোকে যান্ত্রিকভাবে সক্ষম করে তাদের হাতেই এই কাজ ছেড়ে দেয়া-

ক। একাধিক মটর মেকানিকের পাশাপাশি অন্তত একজন করে হলেও ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং-ম্যাকানিক্যাল সার্টিফাইড ইঞ্জিনিয়ার রেখে, ফিটনেস্ট টেস্ট এর যাবতীয় যন্ত্রপাতি রাখার শর্তে, সরকারি বেসরকারি অডিটের শর্তে, ফিটনেসের এজেন্টশীপ/ফ্রাঞ্ছাইজি প্রতি থানার একাধিক মেকানিক শপের প্রতিযোগিতামূলক হাতে ছেড়ে দেয়া হোক। লক্ষ লক্ষ গাড়ীর বিপরীতে ৫৪টি মাত্র বিয়ারটিএ অফিসের শ’চারেক ম্যাকানিক্যাল পরিদর্শক নির্ভর, সার্টিফিকেট সর্বস্ব ফিটনেস দেশের সড়ক পরিবহন নিরাপদ করতে সক্ষম নয়, ফিটনেস হীন গাড়ির দুর্ঘটনা রোধ সম্ভব নয়, কারগরি কারণে সড়কে মিরত্যুর মিছিল থামানো সম্ভব নয় বরং শতবছর পুরানো সেকেলে পদ্ধতি হয়রানি ঘুষ ও জালিয়াতির কেন্দ্র।

খ। বাংলাদেশে গাড়ির গভর্নেন্স টেম্পার (স্পীড রেঞ্জ বাড়ানো) সহ মোটরযানে নিরাপত্তাগত বিষয়ে যেসব স্থানীয় অপরাধ হয় তার আলোকে ফিটনেস চেকের তালিকা হওয়া উচিৎ।

গ। বিপরীতে বিয়ারটিএ জনবল মটর মেকানিকের ফিটনেস টেস্ট মানসম্পন্ন হচ্ছে কিনা, তাদের দক্ষ জনবল আছে কিনা, সার্টিফাইড মেকানিক আছে কিনা, যন্ত্রপাতি আছে কিনা, ডেটা বেইজ আপডেইট ঠিক ঠাক করছে কিনা, সঠিক পদ্ধতিতে ফিটনেস যাচাই হচ্ছে কিনা তা মাসিক বা ত্রৈমাসিক নিয়মিত এবং র‍্যান্ডোম অডিট করবে।


বাংলাদেশের পরিবহন খাতে অতি প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, কিন্তু এই প্রবৃদ্ধি পরিবহনের মান যাচাই বাছাই না করে, কর্মসংস্থান না করে, সড়ক নিরাপদ না করেই হচ্ছে। উল্টো রাস্তার দুর্ঘটনা, রাস্তার প্রাণহানিতে একদিকে গাড়ির পার্টস আমদানীতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে (আমদানি প্রবৃদ্ধি) এবং সাথে সাথে স্বাস্থ্য খাতের খরচ বাড়াচ্ছে (স্বাস্থ্য খাতের প্রবৃদ্ধি)। এই প্রত্যেকটি খাতের প্রবৃদ্ধি নেগেটিভ, যা কোন দেশের কাম্য নয়। যেখানে সময় সাশ্রয়, নির্দিস্ট ফিটনেস চেক অফিসের এলাকায় যানজট কমানো দরকার, দেশের পৌনে পাঁচ হাজার থানায় অন্তত সাড়ে নয় হাজার গ্যারেজকে ফিটনেস টেস্ট সেন্টার হিসেবে গড়ে তুলে ডিপ্লোমা মেকানিনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ও মটর মেকানিক খাতের কর্মসংস্থান এগিয়ে নেয়া দরকার সেখানে অতি নগণ্য সংখ্যক লোকের ঘুষ খেয়ে দ্রুত বড় লোক বানানোর জন্য একটা ননসেন্স ব্যবস্থাপনাকে জারি রাখা হয়েছে যুগের পর যুগ।

বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল, কিন্তু ভিতরে ঢুকলে দেখা যায়, আধুনিক ব্যবস্থাপনা কেমন হতে পারে, কারগরি ব্যবস্থপনা কতটা টেকসই হতে পারে এব্যাপারে আমাদের নির্বোধ মিথ্যুক ও চোর নেতাদের নূন্যতম কোন ধারণাই আসলে নাই।

সময় হয়েছে বিয়ারটিএ’এর নন্সেন্স কাজ কারবার বন্ধ করে কারিগরি ব্যবস্থাপনা গুলোকে বোধগম্য, আধুনিক ও সেন্সিবল করার। গণপরিবহন নিরাপদ করার। মটর যানের নিরাপত্তার কারিগরি দিক যাচাইকে ব্যক্তি নির্ভর না করে প্রযুক্তি নির্ভর করার। ব্যক্তিগত গাড়ি থেকে শুরু করে পরিবহন খাতের গাড়ির মালিকদের হয়রানি মুক্ত সেবা নিশ্চিত করার এবং সাথে সাথে দু-চারটি খাতে কর্মসংস্থানের বিকাশ ঘটানোর।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ৯:১৮

রাজীব নুর বলেছেন: কয়টা টাকা দিলে ফিটনেস্বের ঝামেলা শেষ।
এই নিয়ম টা সবার আগে বন্ধ করতে হবে।

২| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১১:৪১

ইজ্জত উল্লাহ বলেছেন: ভালো লিখেছেন .......

৩| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ২:৩২

চাঙ্কু বলেছেন: দেশে টাকা থাকে ২০ বছরের পুরানো গাড়ীকেও ব্র্যান্ড নিউ গাড়ি বলে রাস্তায় নামানো যায়!

৪| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৯ বিকাল ৩:২০

নীল আকাশ বলেছেন: ভালো লিখেছে। বস্তুনিষ্ঠু প্রতিবেদন।
যেই দেশে ২০০০/= টাকা বেশি দিলে আনসীনে গাড়ীর ফিটনেস করিয়ে নেয়া যায় সেখানে আর কি আশা করেন?

৫| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৭:০৩

মলাসইলমুইনা বলেছেন: খুবই চমৎকার লিখেছেন । অনেক দিন বিদেশে থাকার সুবাদে এখানে গাড়ির ফিটনেস কেমন করে নেওয়া হয় সেটা নিজেই জানি ।যেহেতু নিজের গাড়ির ইয়ার্লি চেক আপগুলো আমাকে করতে হয় সেজন্য । আমাদের দেশের এই পুরো সিস্টেমগুলো যে কতটা প্রাঐতিহাসিক সেটা জানার সুযোগ হলো আপনার লেখায় আর যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে যারপরনাই ভীতসন্ত্রস্ত হলাম ।লেখায় ভালো লাগা ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.