নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফাতিন আরেফিন

ভালোবাসি- সাদাকালোর শুভ্রতা...

ফাতিন আরফি

অর্ন্তনীল পথ অন্তসারশূন্য হয় অঘোষিত মত নির্বাসিতই থেকে যায় যা বাঁচে তা মরার জন্যেই বাঁচে আর যা মরে যায়, তা কখনও বাঁচানো যায়না। ফেইসবুক আইডিঃ https://www.facebook.com/Arefin.Fathin1

ফাতিন আরফি › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটদের গল্প- “স্বাধীনতা”

১১ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:২১

মেয়েটির নাম তন্ময়, সবাই তানু বলেই ডাকে। বেশ চটপটে আর দুষ্ট। মন যা চাইবে, তাই সে করবে। স্কুল টাইম বাদ দিলে প্রায় পুরোটা সময়ই পুতুল নিয়ে ব্যস্ত থাকে। খাওয়ার সময় পুতুল, পড়ার সময়ও পুতুল। পুতুল ছাড়া সে কোন কিছুই করতে চায় না। তানুর মা সাহারা বেগম পড়েছেন ভীষণ ঝামেলায়। তানু অল্প একটু সময়ও তাকে ছাড়া থাকতে চায় না। যাই সে করুক না কেন, সাহারা বেগমকে তার পাশে থাকতে হয়। এমনকি তানু যখন স্কুলে থাকে তখনও সে স্কুলের বারান্দায় বসে থাকে, ক্লাসের ফাঁকে যখন তখন দৌড়ে সে মায়ের কাছে চলে আসে। বয়সে কিন্তু তানু খুব একটা ছোট না, ক্লাস থ্রিতে পড়ে। এতো দুষ্টোমী আর ঝামেলা করলেও পড়াশুনায় সে খুবই মনোযোগী, ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল। আর এজন্যেই আব্বু আম্মু, ক্লাসের শিক্ষক সহ সবাই ওকে প্রচন্ড ভালোবাসে। তানুর আরেকটা ভালো গুন হল ও বেশি বেশি কার্টুন দেখে সময় নষ্ট করে না। মাঝে মাঝে যা একটু আব্বুর মোবাইলে টুকটাক গেইম খেলে। এছাড়া সে সময়ের কাজ সময় মতই শেষ করে।



সেদিন তানু ওর মায়ের সাথে রিকশায় চড়ে বাসায় ফিরছিল। খিলগাঁও রেল্ক্রসিং এর চিরাচরিত জ্যামে আটকে আছে রিকশা। পাশেই একজন লোক খাঁচা ভর্তি বিভিন্ন ধরনের পাখি বিক্রি করছে। নানা রঙের পাখি দেখে তানু চিৎকার করে বলল, আম্মু আম্মু, দেখো, কি সুন্দর পাখি!

আম্মু বলল, তাইতো, পাখিগুলো দেখতে অনেক সুন্দর।

আমি একটা টিয়ে কিনব, আমাকে একটা টিয়ে কিনে দাও না আম্মু!

না মা, পাখি কেনার দরকার নেই। পাখিদের খাঁচায় আটকে রাখলে ওরা অনেক কষ্ট পায়।

না, আমি কিনব, আমি ওকে একটুও কষ্ট দেবো না। দাও না আম্মু কিনে, দাও না।

তানু নাছোড় বান্দা, আম্মুর বাড়ন কেঁদেকেটে ভাসিয়ে দিয়ে টিয়ে পাখি সে কিনেই ছাড়ল।

বাসায় এসে তানু তো মহাখুশি। পাখির খাঁচাটি অনেক যত্ন করে সে তার রুমের ব্যালকোনিতে ঝুলিয়ে রাখল। এরপর থেকে প্রতিদিন সে পাখিটিকে দুধ-ভাত খেতে দেয়, মনের সুখে খেলা করে, নিজে নিজে কথা বলে। তানু পাখিটিকে নিয়ে আনন্দে থাকলেও পাখিটি কিন্তু মোটেই আনন্দে ছিল না। কখনও মন মরা হয়ে বসে থাকত। কখনও বা জোড়ে চিৎকার চেঁচামেচি করত। কিন্তু তানু তার মানে বোঝে না । এমন করে আস্তে আস্তে ছয়টি মাস কেটে যায়। পাখিটি প্রতিনিয়ত খাঁচা ছেড়ে পালাতে চেষ্টা করে। কিন্তু পারে না।



তানুর মা বেশ কিছু দিন ধরে অসুস্থ। তানুর ছোট্ট একটা ভাই হবে। এজন্যে কয়েকদিন ধরে সে তার বাবার সাথে স্কুলে আসা যাওয়া করে। একদিন স্কুল থেকে ফিরে তানু ওর মায়ের কোল ঘেঁষে শুয়ে পড়ল। আম্মু জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে মা।

তানু আদুরে আদুরে কন্ঠে বলল, জানো আম্মু, আমার বান্ধুবী তানিশা না সুন্দর একটা ট্যাব কিনেছে। ওতে না অনেক মজার মজার গেইম আছে। সারাদিন ও গেইম খেলে। আমারও খেলতে ইচ্ছে করে। আমাকে একটা ট্যাব কিনে দেও না আম্মু।

আম্মু বলল, এখন না মা, তুমি আরো বড় হও, তখন কিনে দেবো।

কিন্তু তানিশাকে যে ওর আব্বু কিনে দিয়েছে, ও তো আমারই মত- আমি কিনব।

ওর মা ওকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করল, কিন্তু ও কিছুতেই বুঝতে চাইল না। বুঝবেই বা কেন ছোটবেলা থেকেই ওর সব আবদার পূরণ হয়েছে তবে এটা কেন নয়! এক পর্যায়ে তানুর মা বিরক্ত হয়ে ওকে একটু বকাঝকা করলেন। এমনটা সে আগে কখনই করেননি। তানুর দু’ চোখ বেয়ে অজোর ধারায় জল পড়তে লাগল। দৌড়ে সে তার রুমে চলে গেল। সাহারা বেগম বয়সের অজুহাত দিলেও আসল কারন সে ওকে বলতে পারছে না। কদিন বাদে নতুন বাচ্চা আসবে, অদিকে ওর আব্বুর যা ইনকাম তাতে হটাত করে ১৫- ২০ হাজার টাকা খরচ করা কঠিন হয়ে পড়বে। কিন্তু ছোট্ট মেয়েটিকে তো তা বোঝানো যাবে না।



স্কুল ছুটি হয়েছে ঘন্টা খানেক হল, আব্বু এখনও নিতে আসেনি। অদিকে আম্মু বকা দেয়ায় তানুর মনটাও খুব খারাপ। আনমনে হাটতে হাটতে কখন সে গেটের বাইরে চলে এসেছে গেটম্যানও তা লক্ষ্য করেনি। স্কুল থেকে একটু দূরে একজন আচার বিক্রেতা দাঁড়িয়ে ছিল। তানুকে দেখেই সে আচার! আচার! বলে চিৎকার করতে লাগল। মজার মজার আচার দেখে তানুর আচার খেতে ইচ্ছে করল।

তানু আচার বিক্রেতাকে বলল, এই যে চাচা, আমাকে একটু তেতুঁলের আচার দিনতো।

আচার বিক্রেতা বলল, এই তো দিতাছি আফামনি।

তা আফামনি, আপনে কি একা আইছেন, আফনার লগে কি কেউ নাই।

আছে, কিন্তু এখনও আসেনি।

ও আইচ্ছা, এই নেন আফনের তেঁতুলের আছার।

আচার মুখে দিয়ে তানু কিছুদূর যেতেই অজ্ঞান হয়ে পড়ল। আর তখনই পথচারী ছদ্মবেশী আচার বিক্রেতার লোকজন হাসপাতালে নেয়ার অজুহাতে তানুকে গাড়িতে করে নিয়ে গেল। আসলে ওটা ছিল একটি সংঘবদ্ধ ছেলে ধরা চক্র। ওরা তানুকে উত্তরার একটা অভিজাত বাড়িতে নিয়ে আটকে রাখল। সেখানে তানুর মত অনেককেই আটকে রাখা হয়েছে।



দিনের পর দিন কেটে যায়, তানু ফিরে আসে না। তানুকে হারানোর শোকে ওর বাবা মা বিমর্ষ হয়ে পড়ে। ওদের বাড়িটি যেন রুপকথার মতই নিস্তব্ধ হয়ে যায়। শুধু একটি প্রানী ছাড়া, সেই টিয়ে পাখিটি। কেউ তাকে নিয়মিত খাবার দেয় না, যত্নও করে না। ক্ষুধার্ত চিত্তে সে ছটফট করে খাঁচা ছেড়ে পালানোর জন্য। কিন্তু খাঁচার শৃংখল সে নিছক ঠোঁট দিয়ে কখনই ছিন্ন করতে পারে না। তানু দিনরাত কান্নাকাটি করে। ওর মত ওখানকার সবাই কাঁদে। কিন্তু কেউ ওদের কান্নার জবাব দেয় না। বাবা মায়ের কাছে ফিরে যাবার আকুতি দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসে ওদের কাছেই। কাঁদতে কাঁদতে তানুর চোখে আর জল আসে না। একদিন হটাত করেই ওর পোষা পাখিটির কথা ওর মনে পড়ল।

নিশ্চয় ওকে কেউ নিয়মিত খাবার দেয় না, হয়ত রাত্রিবেলা বাইরে থেকে ঘরের ভেতরে এনে রাখে না। নিশ্চয়ই বাঁচার জন্যে এখন ও পালাতে চেষ্টা করছে। কিন্তু পারছে না। আমার মত পাখিটাও অনেক কষ্ট পাচ্ছে। আচ্ছা, ওর ও তো আব্বু আম্মু আছে। ওর ও তো তাদের কাছে যেতে ইচ্ছে করে- এসব ভেবে ভেবে ও নিজের কথা ভুলে পাখিটির জন্য কাঁদতে শুরু করল। নিজেকে সে অপরাধী ভাবতে লাগল। পাখিটিকে আটকে কষ্ট দেয়ায় সে বুঝি এখন তার শাস্তি ভোগ করছে।



হটাত একদিন গভীর রাতে বাসির সাইরেন আর চিৎকার চেঁচামেচিতে সবার ঘুম ভাঙ্গল। পুলিশ এসে পাচারকারীদের হাতেনাতে গ্রেফতার করেছে। বন্দি শিশুদের উদ্ধার করে প্রত্যেকের বাবামায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছে। তানু আবার ফিরে এসেছে তার বাবা-মায়ের কাছে। সারা বাড়িতে আত্মীয় স্বজন আর পাড়া প্রতিবেশীদের হই হুল্লোড়ে আনন্দের বন্যা বইতে লাগল। বাবা-মা খুশিতে আত্মহারা তানুকে বুকে জড়িয়ে নিল। এই খুশিতে তানু কিন্তু ভুলে যাইনি তার পোষা পাখিটির কথা। সে জলদি করে পাখিটিকে খাঁচা থেকে বের করল। পেটপুরো নিজ হাতে দুধ-ভাত খাওয়ালো। অর্ধাহারে- অনাহারে পাখিটি প্রায় মরে মরে অবস্থা। এরপর বারান্দায় গিয়ে পাখিটিকে বাইরে ছেড়ে দিল। পাখিটি মনের আনন্দে আকাশে উড়তে লাগল। তা দেখে তানুও আনন্দে লাফাতে লাগল। তানুর কান্ড দেখে ওর বাবা-মা ও অনেক খুশি হল। এরপর থেকে তিনটি টিয়ে পাখি মাঝে মাঝেই তানুর বারান্দায় বেড়াতে আসে। তানু ওদের জন্য দুধ ভাত বেড়ে রাখে। পাখিগুলো মনের সুখে দুধ-ভাত খেয়ে ফিরে যায় শহীদুল্লাহ হলের পাশের বড় রেইনট্রি গাছটিতে, যেখানে ওদের মত হাজার হাজার টিয়ে পাখি মনের আনন্দে স্বাধীনভাবে ছুটোছুটি করে এ ডাল থেকে ও ডালে, ব্যস্ত শহর ছেড়ে সুদূর নীল আকাশে।

আমার ফেইসবুক আইডি

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:২৭

প্রতিবাদীকন্ঠ০০৭ বলেছেন: ভাল হয়েছে। তানুদের সুন্দর ভবিষ্যত আমাদের সবাইকে নিশ্চিত করতে হবে। অনেক তানুরা পাচার হয়ে যাচ্ছে বিদেশে।

পোস্ট এ প্লাস ।

২| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৩১

ফাতিন আরফি বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয়।

৩| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৮:৩০

মামুন রশিদ বলেছেন: খুব সুন্দর লিখেছেন । ছোটদের নিয়ে আমাদের দেশে খুব একটা লেখালেখি করা হয় না ।

গল্পে ভালোলাগা++

১১ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৬

ফাতিন আরফি বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয় মামুন রশিদ, ছোটদের নিয়ে ভিন্ন ধারার গল্প লেখার ইচ্ছে আছে। দোয়া করবেন। ভালো থাকুন সবসময়।

৪| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৩৫

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: ছোটদের নিয়ে লেখা গল্প পড়তে ভালো লাগে। এই গল্পটা আমার বাচ্চাকে শোনাবো। ধন্যবাদ আপনাকে।

৫| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৮

ফাতিন আরফি বলেছেন: কৃতজ্ঞ হলাম, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আশা করি আপনার বাচ্চার গল্পটা শুনে ভালো লাগবে। ভালো থাকুন সবসময়।

৬| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:১৪

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:

ভাই একটি অনুরোধ লেখাটা বোল্ড না করে নরম্যাল করে দিন প্লীজ।

লেখায় ভালো লাগা রইল।

৭| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৭

ফাতিন আরফি বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার পরামর্শের জন্যে। আমি এখুনি নরমাল করে দিচ্ছি। শুভ কামনা আপনার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.