![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
- আপনার পারফিউমটা দিবেন একটু? গার্লফ্রেন্ডের বিয়েতে যাচ্ছি। গোসল করে আসতে মনে নাই। একটু মেখে যেতাম।
লাল চোখে লেপ্টে থাকা কাজল নিয়েই লিজা তাকাল সজীবের দিকে। অপরিচিত একটা ছেলের জানার কথা না, লিজার ব্যাগে পারফিউম আছে। অপরিচিত কারও সাথে কারণ ছাড়া কথা বলাও ঠিক না। তবুও লিজা চোখ মুছে বলল, আমার কাছে পারফিউম আছে আপনাকে কে বলল?
- মেয়েদের ব্যাগে অনেক কিছুই থাকে আমি জানি। সাজুগুজুর জিনিস থেকে শুরু করে অস্ত্র পর্যন্ত। আমার গার্লফ্রেন্ডের ব্যাগেও থাকত।
লিজার মন খুব খারাপ। দারুণ রকম বিষণ্ণ। অপরিচিত কারও সাথে কথা বলার কোন আগ্রহ কখনও ছিল না লিজার। তবুও এই ছেলের সাথে বললে এখন কিছুই হবে না। লিজা ব্যাগ থেকে পারফিউম বের করে সজীবের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, নিন।
সজীব জামার উপর দিয়ে, গলার কাছ দিয়ে পারফিউম মেখে ফেরত দিল লিজার কাছে।
- ঘ্রাণটা অনেক সুন্দর।
- এটা লেডিস পারফিউম।
- আরে একটা হলেই হয়। ঘামের গন্ধের চেয়ে তো ঘ্রাণ ভাল। তাতেই হবে। চটজলদি চিরুনিটা দিন তো, মাথায় কেমন জট পেকে আছে। চুল গুলো একটু আঁচড়ে নেই। পরিপাটি হয়ে বিয়েতে না গেলে, খাবার দেবার সময় বেছে বেছে হাড় গোড় দিবে, ভাল পিস পাওয়া যাবে না।
লিজা ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলে ব্যাগ থেকে চিরুনি বের করে সজীবের দিকে দিল। সজীব চিরুনি হাতে নিয়ে বলল, আয়না হবে না, ছোট দেখে?
- হবে।
- দিন তো।
লিজা আয়নাও বের করে সজীবের হাতে দিল। সজীব তা দিয়ে চুল আঁচড়াল। আজ অর্পার বিয়ে। অর্পা নিজে ফোন করে দাওয়াত দিয়েছে সজীবকে। সজীব বলে দিয়েছে অর্পাকে ওর কাছে এখন টাকা পয়সা নেই, ভাল কোন গিফট আনতে পারবে না। অর্পা ধরে আসা গলায় শুধু বলেছে, তুমি আসলেই হবে। সজীব জেনে নিয়েছে খাবারের আয়োজন কী? খাবারের ব্যবস্থা হয়েছে খাসি, গরু, মুরগী, ইলিশ মাছ। সজীব বলে রেখেছে খাসির দুইটা পা যেন রাখা হয় সজীবের জন্য। অর্পা শুধু ছোট করে আচ্ছা বলেছে।
- আপনি সত্যি আপনার গার্লফ্রেন্ডের বিয়েতে যাচ্ছেন?
- আপনার সাথে আমি মিথ্যা বলব কেন? মানুষ কাছের মানুষের সাথে মিথ্যা বলে, যে যত কাছের তার সাথে বলা মিথ্যা গুলো তত বেশী ভয়াবহ। আপনি আমার অপরিচিত, আপনার সাথে মিথ্যা বলার প্রশ্নই উঠে না।
- আপনার খারাপ লাগছে না?
- খারাপ লাগবে কেন? বহু দিন পর বিয়ের দাওয়াত খাব। আমি বলে দিয়েছি অর্পাকে যেন আমার জন্য খাসির দুইটা পা রাখা হয়।
- আপনার গার্লফ্রেন্ডের নাম অর্পা?
- জ্বি। আপনার?
- লিজা।
- আমি সজীব।
- আচ্ছা।
- ইদানীং ওয়াটার প্রুফ কাজল পাওয়া যায়। একটা কিনে নিয়েন। দাম বেশী না।
লিজা চোখ ছোট ছোট করে তাকাল সজীবের দিকে।
- মানে?
- মানে হল, সেই কাজল চোখে দিলে কাঁদলেও কাজল নষ্ট হবে না। আপনি একটু কাঁদাতে ভূতনি ভূতনি লাগছে কাজল লেপ্টে।
লিজা হেসে দিল। অনেক কষ্টেও হেসে দিল। হাসাটা উচিৎ হয় নি। একটু আগে খুব মন খারাপের মত একটা কারণ ঘটেছে। মন খারাপের মত কারণ ঘটলে, যত হাসির ঘটনাই ঘটুক হাসতে নেই। সজীবও হেসে হেসে বলল, কাঁদছিলেন কেন?
নিজের ব্যক্তিগত ব্যাপার গুলো কাউকে বলতে হয় না। তবুও লিজা বলে যায়, আমি যাকে ভালবাসতাম সে আরেকটা মেয়ে নিয়ে ঘুরতেছে দেখলাম একটু আগে। এই শপিং মলেই। তাই খারাপ লাগছিল।
- হাহা, এটা কোন কারণ হল কাঁদার? কাঁদার কোন কারণই না এটা। সে ঘুরেছে আপনিও ঘুরবেন। অর্পা বিয়ে করেছে আমিও করব একদিন। কার জন্য আবার কার জীবন থামে? থামিয়ে রাখার কী দরকার? চলতে দিন, ভাল থাকতে দিন নিজেকে।
লিজার মাথার ভিতর কি যেন খেলে গেল। একটু আগেই শিহাবকে দেখল, একটা মেয়ের হাত ধরে হাঁটতে, মেয়েটা শরীরের সাথে একদম শরীর মিশিয়ে হাঁটছিল। শিহাব একটু পর পর সুযোগ পেলেই মেয়েটার কোমরে হাত দিচ্ছিল। লিজা মানতে পারছিল না ব্যাপার খানা, লজ্জায় শিহাবের সামনেও যেতে পারছিল না। শুধু কষ্ট আর কষ্ট গুলো চোখের জল করে বের করে দেয়া।
- আপনি আমার একটা উপকার করতে পারবেন?
সজীবের দিকে তাকিয়ে বলল লিজা। সজীব মাথায় চিরুনি বুলাতে বুলাতেই বলল, আমি তো মানুষের অপকার করতে পারি।
- না আপনি পারবেন।
- বলেন দেখি শুনি।
- আপনি আমার সাথে একটু ঘুরবেন শপিং মলটায়? আমি শিহাবকে খুঁজব। খুঁজে পেলে আপনাকে নিয়ে ওর সামনে যাব। এমন একটা ভাব করব যেন হুট করেই দেখা হল। ও অন্য একটা মেয়েকে নিয়ে ঘুরছে, আমিও একটা ছেলেকে নিয়ে ঘুরছি।
- আমার কি আপনার হাত ধরে হাঁটতে হবে?
- অবশ্যই।
- এই ব্যাপারটা বাদ দেন। সবাই তো আর ওভাবে হাঁটে না। ধরেন আমরা হলাম গিয়ে অতি ভদ্র প্রেমিক প্রেমিকা। যারা হাত ধরতে পর্যন্ত লজ্জা পায়।
লিজা আবার হাসে। হেসে হেসেই বলে, আচ্ছা।
সজীবকে নিয়ে ঘুরে বেরায় লিজা। খুঁজে বেরায় শিহাবকে। সজীব মোবাইল বের করে কল করে অর্পাকে, শোন, অর্পা। আমরা আসতেছি একটু পরেই।
- আমরা মানে কারা?
- আমি আর লিজা।
- লিজা কে?
- আমার কাছের বান্ধবী। দুইটা পা ঠিক রেখো খাসির। একটা আমার, একটা লিজার। আমরা দুজন এখন শপিং মলে ঘুরতেছি। তোমার জন্য কী কেনা যায় তাই দেখতেছি। লিজাই সব দেখতেছে। অবশ্য লিজা কিছুটা রাগ করেছে এটা শোনার পর যে তুমি আমার এতো ভাল একটা বান্ধবী অথচ আমি ওকে ব্যাপারটা জানাই নি।
- তোমার আসার কোন দরকার নেই।
বলেই অর্পা কল কেটে দেয়। সজীব লিজার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে বলে, অর্পাকে বলেছি আপনাকে নিয়ে আসতেছি। অর্পা বলল, অবশ্যই নিয়ে আসো।
- রাগ করল না?
- আরে না, আমার গার্লফ্রেন্ড আমার মতই। কোন কিছুতেই রাগ টাগ নেই।
শিহাবের সামনে দিয়ে লিজা সজীবকে নিয়ে চলে গেল। শিহাব অবাক হওয়া চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। লিজাই একটু দূর থেকে শিহাবকে ডাক দিল, আরে শিহাব, তুমি এখানে। এ সজীব, আমার বয়ফ্রেন্ড। সজীব এটা আমার ফ্রেন্ড, শিহাব।
লিজা শিহাবের পাশের মেয়েটাকে দেখিয়ে বলল, এটা তোমার গার্লফ্রেন্ড বুঝি? দুজনকে ভাল মানিয়েছে তো। আচ্ছা ঘুরো তাহলে তোমরা। আমরা আবার একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে যাব।
শিহাব একটা কথাও বলল না। একটা কথাও মুখ দিয়ে বের হল না। সজীবকে সাথে করে চলে আসলো সামনে থেকে লিজা। সজীব আর লিজা এখন বিয়ের অনুষ্ঠানে যাবে। সজীবের ভালবাসার মানুষের বিয়ের অনুষ্ঠানে।
এই দুটি মানুষের সাথে ঘটে যাওয়া খারাপ লাগা গুলো দুজনের কেউ ই কেমন যেন লাগাল না গায়ে। বুকের ভিতর কি বয়ে যাচ্ছে কে জানে? হয়ত প্রচণ্ড উলটপালট হয়ে যাওয়া, ভিতরে বয়ে যাওয়া এলোমেলো ঝড়। তবুও ভাল লাগার অভিনয়ে ভাল থাকা।
যে কষ্ট গুলো চাইলেই তাড়িয়ে দেয়া যায় না, চাইলেই খারাপ লাগা সরিয়ে ভাল থাকা যায় না। যে কারণ গুলো কাঁদার কারণ, যে কারণ গুলো কাঁদায়, ক্ষণে ক্ষণেই কাঁদায়। সে কারণ গুলোর উপর একটা সুখের প্রলেপ লাগানোই যায়। সেই ভাল থাকার, হাসি মুখের প্রলেপে হয়ত মাথা চাড়া দিয়ে কখনও সে খারাপ লাগা গুলো উঠতে পারবে না। একটা সময় নিঃশব্দে কাঁদাই যায়, একটা সময় সে দুঃখ গুলোর খোঁজ নেয়াই যায়। তাই বলে, সেই দুঃখের প্রলেপে সব ভাল থাকা গুলোকে মুড়িয়ে নিতে নেই। কখনই না।
২| ২০ শে মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৯
কালনী নদী বলেছেন: আপনার সাথে আমি মিথ্যা বলব কেন? মানুষ কাছের মানুষের সাথে মিথ্যা বলে, যে যত কাছের তার সাথে বলা মিথ্যা গুলো তত বেশী ভয়াবহ। আপনি আমার অপরিচিত, আপনার সাথে মিথ্যা বলার প্রশ্নই উঠে না।
বব মার্লের একটা গান দিচ্ছি আশা করি খারাপ লাগবে না। আপনার গল্পের দুঃখের সাথে আমারও পরিচয় আছে, মেয়ে ও ছেলের দুজনেরই।
কিছু জায়গায় মিউজিক এতটাই সরব যে হয়তো সে কারণেই মার্লে প্রকৃত অর্থেই একজন রাজা।
ThRee LiTTLe BiRdS
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৫:৩১
বিদ্রোহী সিপাহী বলেছেন: ঠিকই তো, দুঃখের প্রলেপে ভালোলাগা গুলোকে মুড়িয়ে নিতে নেই...