নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বহু পথ পারি দেবার পর বুঝেছি, বহু জীবনের সাথে পথচলে বুঝেছি,\"হৃদয় থাকা একটা পাপ।\"

ফেরেশতা বলছি

সাধারন

ফেরেশতা বলছি › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রথম মা’কে ‘গর্বিত ‘ করা.

২৮ শে জুন, ২০১৫ সকাল ১০:৫৮

ক্লাস ফোরে পড়ার সময় রোযা রাখলাম সেবার।
ছোট বেলায় লিকলিকে ছিলাম বড্ড।
ভোর রাতে সবার আগে উঠে বসে আছি।
তখনো, মা’র হাতে ভাত খাই।
যাই হোক, সেহেরী খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।
সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে মক্তবে গিয়ে সব কাজিনদেরকে বলি আমি রোযা রাখছি।
ভাব সাবই অন্যরকম।
বাড়িতে এসে দেখি মা টেবিলে ভাত দিয়েছে, খেয়ে স্কুলে যাবো। চিৎকার করে উঠলাম, “আমিতো রোযা রাখছি “।
মা বললো, ” এই শত্রু তর বড়টায় ক্লাস সেভেনে পড়ে রোযা রাখতে সাহস পায়না, আর তুই কিসের রোযা রাখবি! ভাত খাইয়া স্কুলে যা তারাতারি। ”
বইগুলা নিয়া এক দৌড়ে স্কুলে চলে গেলাম, কে পায় আর আমাকে।
এক ক্লাস, দুই ক্লাস, তিন ক্লাস সহপাঠিরা টিফিনে মুড়ি, বিস্কুট, আচার, হজমি, খাওয়া শুরু করলো।
মাথাটা ঝিম ঝিম করা শুরু করলো, সেই সাথে পেটের ভিতরে মুচর।
কি করবো, বুঝে উঠতে পারতেছিনা, প্রচন্ড পানি পিপাষা পাচ্ছে।
মা ছাড়া উদ্ধার নাই এই বিপদ থেকে। কিন্তু এখন রুজা ভাংগাও স্বম্ভব না। মানুষ মস্কারা করবে, আর চাচাত ভাই বোন্দেরকে তো মুখই দেখাতে পারবোনা।

টিফিন শেষে দুইটা থেকে আবার ক্লাস শুরু হলো। শরীরের ঝিমানি ভাবটা বাড়তেই থাকলো, সেই সাথে পানির তৃষনা।
তখন সমাজ ক্লাস চলছে, কখন যেনো ক্লাসে ঘুমিয়ে পড়লাম।
চুখে পানির ঝাপ্টায় ঘুম ভাংলো। চুখ মেলে দেখি সবাই, আমার উপরে ঝুকে আছে।
স্যার জিজ্ঞেস করলো,” তুমি কি রোযা রাখছো বাবা! ” সহপাঠিরা মিচকি মিচকি হেসে বললো “হ স্যার। হেয় রোযা রাখছে “।
রুকেয়া ম্যাডাম এসে বললো, ” অর মা’র কি মাথা খারাপ! এইটুকো পুলারে রোযা রাখাইছে! ”
সবাই মা কে দোষ দিচ্ছে। রাগে আমার চুখ ফেটে পানি পড়তেছে। সহপাঠিরা বলতেছে স্যার স্যার দেখেন, ” হেয় ক্ষিধায় কান্তাছে “। এটা শুনে, রাগ আরও বেড়ে গেলো।
ততক্ষনে মাথা ঝিমানো ভাবটা আর নাই, পানি পিপাসাও আর নাই।
স্যার বললো বাড়িতে চলে যেতে।

স্কুল থেকে বের হবো, এমন সময় দেখি মা হাতে খাবার নিয়া হাজির।
স্যার, ম্যাডাম, সহপাঠিরা সবাই মা কে ঘিরে ধরে সব বললো।
রোকেয়া মেডাম মা কে বলতেছে ” আপনি কি পাগল! এইটুকো পুলারে রোযা রাখতে দিছেন “!
মা বললো
” এইটুকো কোথায় আপা, বয়সতো নয় হলো :) এখন থেকেইতো, শিখতে হবে ” :)
বলে, আমাকে কোলে তুলে নিয়ে চলে আসলো।
রাস্তায় কিছু বললো না, মা।

বাড়িতে এসেছি যখন তখন, বেলা সাড়ে তিনটা বেজে গেছে।
মা বললো, ” আয় বাবা ভাত খাইয়ে দেই। তারপরে একটু ঘুমা। দেখবি শরীর ভালো লাগবে। ”
আমি বললাম, ” মা আমি রোযা ভাংতাম না ”
মা জোর করে খাওয়াতে চাইলো, খাইলাম না।
ইতো:মধ্যে আব্বা চলে আসলো।
শুরু হলো, চেচামেচি।
মা’ র সাথে কথা কাটাকাটি।

আমার রুক্ষ, পানষে আব্বাও অনেক আদর করলো, লাভ হলোনা।
খালি কান্না পাচ্ছিলো এই ভেবে যে,
” আমার জন্য সবাই মা’কে বকতেছে “।
সবার উপরে রাগ হচ্ছিলো।
মনে মনে, জেদ হলো,
” মরে গেলেও খামুনা “।
আব্বা গিয়ে পাশের বাড়ি থেকে আমার নানী কে ডেকে আনলো। নানীও মা কে বকলো।
[[ আমার আব্বা আমার নানা-নানীকে আমাদের এখানে নিয়ে এসেছিলো। কারণ, তারা বুড়া-বুড়ি একা ছিলো। তাই, নানা-নানি আমাদের পাশের বাড়িতে থাকতো। ]]

আমার জেদ ক্রমশ বাড়তে থাকলো।
শুরু হলো আসল যুদ্ধ। বাড়িতে চাচা-চাচী, চাচাতো ভাই বোন আসলো, তামশা দেখতে।
সেই পুড়ানো কথা।
সব মা’ র দোষ।
সবার উপরে প্রচন্ড রাগে, অভিমানে আমি কেদেই যাচ্ছি।
আর সবাই মনে করতেছে, আমি ক্ষুদার কস্টে কাদতেছি।
চাচিরা বললো, ” ভাবি আসেন ইমনরে জোর কইরা খাওয়াইয়া দেই। ”
মা বললো, ” নাহ। আছরের ওয়াক্ত হয়ে গেছে, এতক্ষন যখন পাড়ছে তখন আর একটু সময় পারবে কষ্ট করতে। তোমরা দোয়া করো। ”
এবার মনে জোর বেড়ে গেলো।
মা চাচাতো ভাই-বোনদের বললো, ” তরা অরে নিয়া একটু ঘুরে আয় “।
বিছানা থেকে ওঠে দাড়াতে গিয়ে “ধপ্পাস ” করে পরে গেলাম।
মাথা ভু ভু করে ঘুরতাছে।
সবাই হই হই করে ওঠলো।
এবারতো, আব্বা মা’র ওপরে ভিষণ রেগে গেলো। চিল্লাইতে থাকলো।
পাড়ার অনেক মানুষ জড় হল।
সবাই মা’কে বুজাতে চাইলো, কিন্তু মা’র এক কথা, ” মরলে মরোক, এক ফোটা পানিও খাওয়ামুনা “।
মা বুকে চিপে ধরে কানে কানে বলতেছে ” বাবা তোমার কি খুব খারাপ লাগতাছে!
আর এক ঘন্টা আছে, পারবানা থাকতে! ”
মাথা ঝাকালাম।
মনে মনে বলললাম ” সবাইরে দেখিয়ে দিমু মা ”

সময় যেনো, কাটতেই চায়না। সবাই অপেক্ষায় আছে। মসজিদের ঈমাম সাহেব এসে মাথায় হাত বুলিয়ে, দুয়া করে গেছেন।
চুখ খুলে রাখতে পারতেছিনা। আমার এখনো, স্পষ্ট খেয়াল আছে, ” চারপাশের সব কিছু ঘুরতেছিলো।
আর অনেকগুলা মুখ আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি মা’র সাথে সাথে আল্লাহ আল্লাহ ডাকতেছি। মা কাদতেইয়াছে। ”

ততক্ষণে, খুদার উপরে ভিষণ রাগ হচ্ছে, ” খুদা দেখতাছেনা, মায় কান্তাছে! আজকে একটু তাড়াতাড়ি আযান দিলে কি হয়! ”
হঠাত, কোনো এক চাচাতো বোন চিৎকার দিয়ে উঠলো, ” কাকীইইইইইই আযান দিছে! ”
হইহুল্লুর পরে গেলো, কে কি খাওয়াবে। অনেকেই অনেক কিছু নিয়ে এসেছিলো।
সেই প্রথম মা’কে ‘গর্বিত ‘ করা।
তারপরে কেটে গেছে অনেক বষন্ত, কিন্তু, মা গতকালও নতুন ভাবিকে বলতেছিলো, সেই কথা। “আমার সোনায় ৯ বছর থেইকা………….
” মা তুমি কি জানো, একটু আগে যেটুকু অক্সিজেন গ্রহন করছি, তা তোমার জন্য ".....।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ২:১০

রানা আমান বলেছেন: অসাধারণ সুন্দর একটা লেখা ।

২৮ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৩

ফেরেশতা বলছি বলেছেন: ধন্যবাদ :)

২| ২৮ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৫

পেন্সিল স্কেচ বলেছেন: অসাধারণ ++

২৮ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৩

ফেরেশতা বলছি বলেছেন: ধন্যবাদ :)

৩| ২৮ শে জুন, ২০১৫ রাত ৮:১০

আমি শঙ্খচিল বলেছেন: ভাল লাগলো । খুবই সুন্দর ।

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ দুপুর ২:৩৯

ফেরেশতা বলছি বলেছেন: ধন্যবাদ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.