![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম বন্দরে ‘অপারেশন জ্যাকপটের’ মাধ্যমে পাকিস্তানি অস্ত্রবাহী জাহাজসহ বিদেশী জাহাজ ধ্বংসের ঘটনা ছিল একটি বিশাল ইতিবাচক দিক। এ সাহসী অভিযানের প্রেক্ষিতে যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি ও মুক্তিযোদ্ধাদের শক্তি সম্বন্ধে সারা বিশ্ব আগাম ধারণা পেয়ে যায়। এ অপারেশন স্বাধীনতার বিজয়কে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। বাসস
আড়াই-তিন মাসের দীর্ঘ কষ্টকর প্রশিক্ষণ শেষে সুইসাইড স্কোয়াডের ৬০ জনের দলটি ’৭১’র আগস্টের প্রথম দিকে ভারত সীমান্ত পাড়ি দিয়ে চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে পৌঁছে। বড়দারোগাহাটে কিছুদিন অবস্থান করে দলটি। উদ্দেশ্যে, ‘অপারেশন জ্যাকপট’। চট্টগ্রাম বন্দরে অবস্থানরত বিদেশী জাহাজগুলো ধ্বংস করা।
২০ জন করে প্রশিক্ষিত ৩টি দলের কমান্ডার ছিলেন মজহার উল্য¬া (বীরউত্তম), ডা. শাহ আলম (বীর উত্তম) এবং আব্দুর রশিদ। ৩টি দলের সার্বিক কমান্ডার ছিলেন আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী। মীরসরাই থেকে কৌশলে পাক-আর্মিদের চোখ এড়িয়ে মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকটি গ্র“পে বিভক্ত হয়ে চট্টগ্রাম শহরের হাজিপাড়া সেন্টার, নাসিরাবাদ কাকলী বিল্ডিংসহ কয়েকটি শেল্টারে এসে পৌঁছে।
মীরসরাই থেকে মাইন ও অস্ত্রের চালান চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন শেল্টারে পৌঁছানো হয়। এ কাজে মুক্তিযোদ্ধা জানে আলমের বিশাল ভূমিকা ছিল। তিনি একটি গাড়িকে বরের গাড়ির মতো সাজিয়ে তাতে মাইনসহ বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র পরিবহন করেছিলেন।
অপারেশন জ্যাকপটের ঈঙ্গিত সম্পর্কিত ২টি গান চিহ্নিত করা হয়েছিল। তা শুধুমাত্র কমান্ডাররা জানতেন। কলকাতার আকাশবাণী থেকে গান দু’টি প্রচারের ব্যবস্থা করা হয় Ñ ‘আমি তোমায় যতো শুনিয়েছিলাম গান, তার বদলে চাইনি কোন দান’ এবং ‘আমার পুতুল আজকে যাবে শ্বশুর বাড়ি’। প্রথম গানটি শুনলে প্রস্তুত হতে হবে। আর ২৪ ঘন্টা পর দ্বিতীয় গান শুনলে সে রাত ১২টায় অপারেশন। এভাবে ভারতে বসেই অপারেশন নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা করা হয়।
১৩ আগস্ট যোদ্ধারা মীরসরাই থাকতেই প্রথম গান শুনিয়ে যোদ্ধাদের প্রস্তুত করা হয়। ওইদিন রাতের মধ্যে যোদ্ধারা কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে পৌঁছে যায়। সকালে সাধারণ মানুষের মতো নদীতে সাঁতার কেটে রেকি করেন কমান্ডাররা। একইসাথে নদী পথের দূরত্বও আঁচ করা হয়।
১৪ আগস্ট রাত। আব্দুল ওয়াহেদ, মজহার উল্য¬া, ডা. শাহ আলমের নেতৃত্বে ৩৯ জনের দলটি কর্ণফুলীর দক্ষিণ তীর আনোয়ারা লাক্ষার চরে অবস্থান নেয়। সব প্রস্তুত। কিন্তু বৃষ্টির জন্য শেষ পর্যন্ত ১৪ আগস্টের অপারেশন বাতিল করা হয়। ১৫ আগস্ট সকালে ২নং জেটি থেকে ১৬নং জেটি পর্যন্ত অবস্থানরত টার্গেট শিপগুলো পরিদর্শন করেন মজহার উল¬্যাসহ আরও কয়েকজন।
১৫ আগস্ট রাত । প্রত্যেক যোদ্ধার বুকে সাড়ে ৫ কেজি ওজনের একাটি করে লিমপেড মাইন বেঁধে দেয়া হয়। একটি করে ছুরিও দেয়া হয় জাহাজের গায়ে শেওলা পরিস্কারের জন্য। সবার পায়ে সাঁতার সহায়ক পিনস পরিয়ে দেয়া হয়। রাত সাড়ে ১২টা বাজলো। অন্ধকারে নিস্তব্ধ কর্ণফুলীতে ঝাঁপিয়ে পড়লো যোদ্ধারা। যে কোন সময় পাক-সেনাদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যেতে পারে শরীর।
এসময় বন্দর রক্ষার দায়িত্ব পালন করছিলো বেলুচ রেজিমেন্ট এবং এয়ারপোর্ট রক্ষায় পাঞ্জাব রেজিমেন্ট। তখন পাক-সেনাদের তীক্ষè নজর শত্র“পক্ষের উপর। মজহার উল্যার টার্গেট ছিলো পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সুসজ্জিত অস্ত্রবোঝাই ‘হরমুজ’ জাহাজটি। একে একে সকলে যার যার টার্গেট জাহাজে মাইন বসিয়ে নিজ নিজ অবস্থানে পৌঁছায়।
৪০ থেকে ৬০ মিনিটের মধ্যে বিকট শব্দে মাইনগুলো বিস্ফোরিত হতে শুরু করলো। একে একে বিধ্বস্ত জাহাজগুলো তলিয়ে যেতে থাকে কর্ণফুলীর জলে। সেদিনের সফল অপারেশনে বিশালাকায় ‘আল আব্বাস’ এবং অস্ত্র বোঝাই ‘হরমুজ’সহ ১২-১৩টি ছোট বড় জাহাজ ধ্বংস হয়েছিলো। চট্টগ্রাম বন্দরে এ হামলা পাকিস্তানি বাহিনীর ভিতকে ভালোভাবেই নাড়িয়ে দেয়। বিশ্ব প্রচার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের এ দুঃসাহসী অভিযানের কথা ব্যাপকভাবে প্রচার পায়।
পরবর্তীতে মজহার উল্য¬া, ডা.শাহ আলম, ফারুক-ই আজম, অনিল বরন রায় প্রমুখের নেতৃত্বে আরও কয়েকটি অপারেশনের মাধ্যমে গভীর সাগরে তেলের ট্যাংকারসহ পাকিস্তানিদের সহায়ক বেশকিছু জলযান ধ্বংস করা হয়।
২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১০:৩৬
াহো বলেছেন: Click This Link
Click This Link
২| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১১:৩২
খান মেহেদী ইমাম বলেছেন: ভাই অসাধারণ।
৩| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১২:১৩
রিয়াদ চৌধুরী বলেছেন: অসাধারণ।পুরাই সিনেমাটিক কাহিনী।
৪| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১২:৪৭
আসফি আজাদ বলেছেন: অসাধারণ।
৫| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১২:৫২
রামন বলেছেন:
গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনগুলোতে জিয়াউর রহমানের নাম ছাড়া বাকি বীরদের নাম তালিকায় উঠে এসেছে।
এতেই প্রমান হয় জিয়াউর রহমান যুদ্ধ করার চাইতে ক্যাম্পে বসে নিজের চুল পরিপাটি রাখতে আয়না-চিরুনি নিয়েই বেশী ব্যস্ত ছিলেন।
৬| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ২:৩৩
রুদ্র মানব বলেছেন: ভাই , পুরাই অসাধারণ । মুক্তিযুদ্ধাদের এসব সফল অভিযানের খবর শুনলে মনটাই আনন্দে ভরে উঠে । পোস্টে +++
৭| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১২ ভোর ৪:১৬
বিপ্লব06 বলেছেন: আসলেই সিনেমাটিক ছিল পুরো অপারেশনটি। ড্যামেজও হয়েছিল অনেক।
৮| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১২ ভোর ৪:৩৭
আবু মান্নাফ খান বলেছেন: এ বিষয় টি নেইয়ে লিখার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। তবে কিছু তথ্য সম্ভবত ভুল আছে।
হরমুজ জাহাজ টি কাদের সিদ্দিকির দল দ্বারা টাঙ্গাইলের কাছে ধ্বংস করা হয় আর ধ্বংসের আগে সেখান থেকে অনেক অস্ত্র সংরহ করা হয় বলে পড়েছি।
আর অপারেশন এর আগে অবস্থান গুলো আরো ডিটেইলস ছিল।
যা হোক ভাল থাকবেন।
৯| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১২ সকাল ৮:৪৪
চাঁপাডাঙার চান্দু বলেছেন: সুন্দর পোস্ট দিছ াহো ভাই। কপি পেস্ট ছাড়া কেমনে লিখলা এতগুলা কথা? এমন পোস্ট আরও দাও।
++++
১০| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ২:৫৫
ফারজানা শিরিন বলেছেন: ধন্যবাদ ।
১১| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:০৮
এম এম ইসলাম বলেছেন: বীর যোদ্ধাদের সালাম।
ভাল পোস্ট দিয়েছেন।
১২| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৯:১৭
মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: ভালো লাগলো ভাইয়া। অনেক কিছু জানা হল।
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১০:৩৫
াহো বলেছেন:
অপারেশন জ্যাকপট
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ঝাঁপ দাও: পরিভ্রমণ, অনুসন্ধান
অপারেশন জ্যাকপট বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নৌ-সেক্টর পরিচালিত সফলতম গেরিলা অপারেশন। এটি ছিল একটি আত্মঘাতী অপারেশন। এ অপারেশন ১৯৭১ এর ১৫ আগস্ট রাত ১২টার পর অর্থাৎ ১৬ আগস্ট প্রথম প্রহরে চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দর এবং দেশের অভ্যন্তরে আরো কয়েকটি নদী বন্দরে একই সময়ে পরিচালিত হয়[১]। ১০নং সেক্টরের অধীনে ট্রেনিং প্রাপ্ত নৌ কমান্ডো যোদ্ধাদের অসীম সাহসিকতার নিদর্শন এই অপারেশন জ্যাকপট। এই গেরিলা অপারেশনে পাকিস্তানি বাহিনীর অনেকগুলো অস্ত্র ও রসদবাহী জাহাজ ধ্বংসপ্রাপ্ত ও বড় রকমের ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত ও ধ্বংসপ্রাপ্ত জাহাজগুলোর মধ্যে পাকিস্তানি বাহিনীকে সাহায্যকারী অনেকগুলো বিদেশি জাহাজও থাকায় এই অপারেশন বাংলাদেশের যুদ্ধ এবং যোদ্ধাদেরকে সারা বিশ্বে পরিচিতি পাইয়ে দেয়।Operation Jackpot
মূল যুদ্ধ: Bangladesh Liberation War and Indo-Pakistan War of 1971
চিত্র:Bansec71.PNG
Partial representation of Operation Jackpot setup in November 1971. Some of the location are indicative because of lack of primary data.
সময়কাল May 15, 1971 – December 16, 1971[২]
অবস্থান Bangladesh, then East Pakistan
ফলাফল • মুক্তিবাহিনীর জন্য প্রশিক্ষন এবং যুদ্ধের সরঞ্জাম সরবরাহ
• পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর শক্তিমত্তার প্রদর্শন
• পাকিস্তানী নৌবাহিনীকে দূর্বল করা
অধিকৃত
এলাকার
পরিবর্তন Bangladesh
বিবদমান পক্ষ
বাংলাদেশ
ভারত পাকিস্তান
নেতৃত্ব প্রদানকারী
Lt. Gen. B. N. Jimmy Sarkar[৩] Lt. Gen. Jagjit Singh Aurora
Col. M. A. G. Osmani Lt. Gen. A. A. K. Niazi
RAdm M. Shariff
BGen Bill Harrison
CDRE David R. Felix
সৈন্য সংখ্যা
Indian Army:[৪]
Brigadier B. C. Joshi – Alpha Sector
Brigadier Prem Singh – Bravo Sector
Brigadier N. A. Salik – Charlie Sector
Brigadier Shahbed Singh – Delta Sector Sector
Brigadier M. B. Wadh – Echo Sector
Brigadier Sant Singh – Foxtrot Sector
Mukti Bahini :[৫]
Sector No. 1 – Major Rafiqul Islam
Sector No. 2 – Lt. Col. Khaled Musharraf
Sector No. 3 – Lt. Col. K M Shafiullah
Sector No. 4 – Col. C. R. Dutta
Sector No. 5 – Lt. Col. Mir Shawkat Ali
Sector No. 6 Wing Commander M. K. Basher
Sector No. 7 – Lt. Col. Q. N. Zaman
Sector No. 8 – Major Abu Osman Chowdhury
Sector No. 9—Major Md Jalil
Sector No. 10: Naval Commando: Col. M. A. G. Osmani
Sector No. 11 – Lt. Col. Abu Taher Pakistan Army:
14th Infantry Division
9th Infantry Division
16th Infantry Division
39th Ad hoc Infantry Division
36th Ad Hoc Infantry Division
97th Independent Infantry Brigade
40th Army Logistic Brigade
4th Army Aviation Squadron
Pakistan Navy:
Pakistan Naval SEALs
Pakistan Marine Corps
17th Naval SD Squadron
Pakistan Air Force:
No. 14 Squadron
Paramilitary Forces:
East Pakistan Civil Armed Force: 6 Sector HQ wings, 17 operational Wings[৬]
Razakars
পরিচ্ছেদসমূহ [আড়ালে রাখো]
১ নৌ-কমান্ডো সেক্টর
২ পেছনের কথা
৩ গেরিলা ট্রেনিং পর্ব
৪ অপারেশনের বর্ণনা
৫ দলগুলোর গ্রুপ লিডারদের নাম ও তাদের গন্তব্যগুলো হলঃ-
৬ চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর' অপারেশন
৭ মংলা সমুদ্র বন্দর অপারেশন
৭.১ চাঁদপুর নদী বন্দর অপারেশন
৮ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দর অপারেশন
৯ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ
১০ অপারেশনের মূল্যায়ন
১০.১ অপারেশন 'হটপ্যান্টস
১১ অপারেশন জ্যাকপটে শহীদ হওয়া নৌ-কমান্ডোদের নাম
১২ "জাতীয় বীর" খেতাব পাওয়া নৌ-কমান্ডোদের নাম
১৩ তথ্যসূত্র
১৪ আরো জানতে পড়ুন
১৫ বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]
নৌ-কমান্ডো সেক্টর
বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের সময় যে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছিল তার মধ্য দেশের অভ্যন্তরীন সকল নৌ চলাচল, বন্দর এবং উপকূলীয় এলাকা নিয়ে গঠিত হয়েছিল ১০নং সেক্টর বা নৌ সেক্টর। এ সেক্টরের কোন নির্দিষ্ট সেক্টর কমান্ডার ছিল না। যখন যে সেক্টরে অপারেশন চলত তখন সেই সেক্টরের কমান্ডারদের সহযোগীতায় নৌ-গেরিলাদের কাজ করতে হত। তারা সরাসরি মুজিবনগর হেডকোয়ার্টারের অধীনে কাজ করতেন।
[সম্পাদনা]
পেছনের কথা
মার্চের শুরুর দিকে পাকিস্তানি সাবমেরিন পি এন এস ম্যাংরো ফ্রান্সের তুলন সাবমেরিন ডকইয়ার্ডে যায় পাকিস্তানি সাবমেরিনারদের প্রশিক্ষন দেয়ার জন্য। সেই ৪১ জন সাবমেরিনারদের মধ্যে ১৩ জন ছিলেন বাঙালি অফিসার। তারা আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যমে ২৫ মার্চের গণহত্যার কথা শুনে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসার সিদ্ধান্ত নেন। এর মধ্যে ৮ জন ৩০ মার্চ বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। ৯ এপ্রিল ১৯৭১ তারা দিল্লিতে এসে পৌছান[৭]। এখানে তাদের নাম উল্লেখ করা হলোঃ-[৮]
মোঃ রহমতউল্লাহ।
মোঃ সৈয়দ মোশাররফ হোসেন।
মোঃ শেখ আমানউল্লাহ।
মোঃ আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী।
মোঃ আহসানউল্লাহ।
মোঃ আবদুর রকিব মিয়া।
মো আবদুর রহমান আবেদ।
মোঃ বদিউল আলম।
তারপর উক্ত ৮জনের সাথে আরো কয়েকজনকে একত্র করে ২০ জনের একটি গেরিলা দল গঠন করে তাদের ভারতে বিশেষ ট্রেনিং দেয়া হয়। তারপর তারা দেশে আসলে তাদের সাথে কর্নেল ওসমানীর দেখা করানো হয়। তখন ওসমানী নৌ-কমান্ডো বাহিনী গঠনের সিদ্ধান্ত নেন।
[সম্পাদনা]
গেরিলা ট্রেনিং পর্ব
ওসমানীর সিদ্ধান্তে নৌ-কমান্ডো সেক্টর খোলার পর বাছাইকৃত গেরিলাদের ট্রেনিং দেয়ার উদ্দেশ্যে ঐতিহাসিক পলাশীর স্মৃতিসৌধের পাশে ভাগীরথী নদীর তীরে ২৩ মে ১৯৭১ তারিখে একটি গোপন ট্রেনিং ক্যাম্প খোলা হয়। এই ট্রেনিং ক্যাম্পের সাংকেতিক নাম দেয়া হয় সি-২ পি (C-2 P)। এখানে ট্রেনিং দেয়ার উদ্দেশ্যে অন্যান্য সেক্টরসমূহের বিভিন্ন শিবির থেকে মে মাসের শুরুর দিকে প্রায় ৩০০ জন বাছাইকৃত যোদ্ধা সংগ্রহ করা হয়[৯]। ট্রেনিং ক্যাম্পে এদের কি ধরনের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে সে বিষয়টি এতই গোপনীয় ছিল যে, সেক্টর কমান্ডারদের মধ্যেও শুধুমাত্র যার এলাকায় অপারেশন চালানো হবে তিনি ব্যাতিত আর কেউ এই সম্পর্কে জানতেন না[১০]।
ট্রেনিং শুরু হবার আগেই বাছাইকৃত যোদ্ধাদের বলে দেয়া হয় যে এটি একটি সুইসাইডাল অপারেশন বা আত্মঘাতী যুদ্ধ হবে। তাই অপারেশনের সময় যেকোন মূল্যে অপারেশন সফল করারা উদ্দেশ্যে প্রয়োজনে তাদের প্রাণ দিতে হতে পারে। তাই প্রশিক্ষণের শুরুতেই প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীদের ছবি সহ একটি সম্মতিসূচক ফর্মে স্বাক্ষর নেয়া হতো।ফর্মে লেখা থাকতো যে, আমি দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন বিসর্জন দিতে সম্মত হয়েই এই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছি, আর যুদ্ধে আমার মৃত্যু ঘটলে কেউ দায়ী থাকবে না।[১১]
নৌ-কমান্ডোদের ঐ প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন ভারতীয় নেভাল অফিসার কমানডার এম,এন,সামানত,এম,ভি,সি ও ট্রেনিং দেয়ার দায়িত্বে ছিলেন লেঃ কমান্ডার জি এম মার্টিস,ভি,আর,সি ও এন,এম এবং আরও ভারতীয় ২০ জন প্রশিক্ষক তারা হলেনন লেঃ দাস,ভি,এস,এম,লেঃভি,পি,কফিল,ভি,আর,সি,। প্রশিক্ষকদের মধ্যে ফ্রান্স থেকে পালিয়ে আসা ৮ জন সাব-মেরিনার ছাড়াও আরো ছিলেন ভারতীয় নৌ-বাহিনীর,লিডিং সি,মান কে,সিং,এম,ভি,সি,লিডিং সি,মান মিঃ গুপ্ত,এন,এম, এল সিং,এন,এম, মারাঠি নানা বুজ এবং সমীর কুমার দাশসহ আরো কয়েকজন[৮]।
ট্রেনিং এর দুটো অংশ ছিল। সবাইকে প্রয়োজনীয় স্থলযুদ্ধ যেমনঃ- গ্রেনেড নিক্ষেপ, এক্সপ্লোসিভের ব্যবহার, স্টেনগান রিভলবার চালানো, আন-আর্মড কমব্যাট(খালি হাতে যুদ্ধ) ইত্যাদি শিখতে হতো। আর জলযুদ্ধের ট্রেনিঙের মধ্যে ছিল বিভিন্ন ধরনের সাতার যেমনঃ- বুকে ৫-৬কেজি ওজনের পাথর বেধে সাতার, চিৎ সাতার, কোন মতে পানির উপরে নাক ভাসিয়ে একটানা অনেক্ষন সাতার, পানিতে সাতরিয়ে এবং ডুব সাতার দিয়ে লিমপেট মাইন ব্যবহার, স্রোতের প্রতিকূলে সাতার, জাহাজের কেবল ভাঙা ইত্যাদি কঠিন সব প্রশিক্ষণ দেয়া হত তীব্র খরস্রোতা ভাগীরথী নদীতে। শীত-বর্ষায় একটানা ৪৮ ঘণ্টা পানিতে থাকার অভ্যাস করতে হয় সব যোদ্ধাকে[১২]।
প্রায় টানা তিন'মাস ট্রেনিং এর পর আগস্টের প্রথম সাপ্তাহে তাদের ট্রেনিং শেষ হয়।
[সম্পাদনা]
অপারেশনের বর্ণনা
যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের শেষদিকে এসে আক্রমণের পরিকল্পনা সাজানো হতে থাকে। একই সাথে একই সময়ে দুই সমুদ্র বন্দর ও দুই নদী বন্দরে আক্রমণ চালানোর জন্য চার সেক্টরের পরিকল্পনার সমন্বয় ঘটানো হয়। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রথম ব্যাচকে চার স্থানে আক্রমণের উদ্দেশ্যে মোট চারটি দলে ভাগ করা হয়েছিল। ৬০ জনের ২টি দল এবং ২০ জনের আরো ২টি দল। চারটি দলের চারজন লিডার ঠিক করে দেয়া হয়েছিল। টিম লিডারদের অপারেশন পরিচালনার জন্য শিখিয়ে দেয়া হয়েছিল বিশেষ গোপনীয় পদ্ধতি যা টিমের অন্যান্য সদস্যদের কাছে গোপন রাখা হয়েছিল[৮]। টিম কমান্ডারদের বলা হয়েছিল যে, দুটি বাংলা গানকে সতর্ক সঙ্কেত হিসেবে ব্যবহার করা হবে। গান দুটি প্রচার করা হবে কলকাতা আকাশবানীর পক্ষ থেকে পূর্বাঞ্চলীয় শ্রোতাদের জন্য বিশেষ অনুষ্ঠানে সকাল ৬টা থেকে ৬:৩০ মিনিট অথবা রাত ১০:৩০ মিনিট থেকে রাত ১১টায়। এই ফ্রিকোয়েন্সির নাম ও গান দুইটি শুধু টিমের কমান্ডারই জানতো[১০]। গানদুটি অথবা তাদের সঙ্কেত হলোঃ- ১ '। আমার পুতুল আজকে প্রথম যাবে শশুর বাড়ি, আল্পনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাওয়া শিশু সংগীত। এটি হবে প্রথম সঙ্কেত, এর অর্থ হবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২য় গান প্রচার হবে। এর মধ্যে আক্রমণের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে। '২.'আমি তোমায় যত শুনিয়েছিলাম গান, বদলে চাইনি প্রতিদান পংকজ মল্লিকের গাওয়া রবীন্দ্র সংগীত। এটি ২য় এবং চূড়ান্ত সঙ্কেত, অর্থাৎ সুস্পষ্ট নির্দেশ যে ঐ রাতে যে ভাবেই হোক আক্রমণ করতেই হবে।[১০] [১৩]
[সম্পাদনা]
দলগুলোর গ্রুপ লিডারদের নাম ও তাদের গন্তব্যগুলো হলঃ-
'
গ্রুপ ১- কমান্ডার চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরঃ সাবমেরিনার আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী। সদস্য সংখ্যাঃ ৬০ । গন্তব্যঃ চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর'
গ্রুপ ২- কমান্ডার মংলা সমুদ্র বন্দরঃ নৌ- কমানডো আমিনুর রহমান,খসরু I সদস্য সংখ্যাঃ ২৬০ ।(৬০জন নৌ কমানডো ও ২০০ জন সি আন্ড সি কমান্ডো ) গন্তব্যঃ মংলা সমুদ্র বন্দর ।
গ্রুপ ৩- কমান্ডার চাঁদপুর নদী বন্দরঃ সাবমেরিনার বদিউল আলম। সদস্য সংখ্যাঃ ২০ । গন্তব্যঃ চাঁদপুর নদী বন্দর ।
গ্রুপ ৪- কমান্ডার নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরঃ সাবমেরিনার আবদুর রহমান। সদস্য সংখ্যাঃ ২০ । গন্তব্যঃ নারায়ণগঞ্জ''' নদী বন্দর ।[৮]
যাত্রা শুরু হয়েছিল পলাশির হরিনা ক্যাম্প থেকে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল, তারা একযোগে পৌছে যাবেন স্ব স্ব এলাকা চট্টগ্রাম,মংলা, চাঁদপুর ও নারায়ণগঞ্জ।তারা যাত্রা করার সময় তাদেরকে প্রয়োজনীয় অস্ত্র দিয়ে দেয়া হয়। প্রত্যেক নৌ-কমান্ডোকে একটি করে লিমপেট মাইন,ছুরি,একজোড়া সাঁতারের ফিন আর কিছু শুকনো খাবার দেয়া হয়। প্রতি তিন জনের জন্য একটি করে স্টেনগান এবং কমানডারদের দেয়া হয় একটি করে ট্রানজিস্টার। অপারেশনের দিন ধার্য করা হয়েছিল ১৫ আগস্ট '১৯৭১ I
এখানে অপারশনগুলোর বর্ননা দেয়া হলঃ
[সম্পাদনা]
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর' অপারেশন
চট্টগ্রাম বন্দরে অপারেশন পরিচালিত হয় ১৫ আগস্ট মধ্যরাতে অর্থাৎ ১৬ আগস্ট প্রথম প্রহরে।
হরিনা ক্যাম্প থেকে আগত ৬০ জনের দলকে ২০ জন করে তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়। ১ ও ২ নং দল তাদের পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক ভিন্ন ভিন্ন পথ ধরে চট্টগ্রামের নির্দিষ্ট বেইজ ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে এবং ১৪ আগস্ট তারা প্রথম গানের সংকেত পায়। এই সংকেত পাবার পর তারা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কর্ণফুলী নদীর পূর্বতীরে চরলক্ষ্যায় তাদের বেইজ ক্যাম্পে পৌছায়। ৩য় দলটির তখনো কোন খবর পাওয়া যায় নি। এরপর ১৫ আগস্ট তারা ট্রানজিস্টারে চূড়ান্ত সংকেত পায়, এবং অপারেশনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে। এ অপারেশনে ৩১ জন কমান্ডো যোদ্ধা অংশ নেয়। ১৬ আগস্ট প্রথম প্রহরে রাত ১টায় নৌ-কমান্ডোরা তাদের অপারেশনের জন্য যাত্রা করে। রাত ১টা ১৫ তে তারা পানিতে নেমে জাহাজের উদ্দেশ্যে সাঁতরানো শুরু করে, এবং বেশ দ্রুততার সাথে নিজ নিজ বাছাইকৃত টার্গেট জাহাজসমূহের গায়ে মাইন লাগিয়ে সাঁতার কেটে সরে পরে। রাত ১টা ৪০ মিনিটে প্রথম বিস্ফোরণ ঘটে। তারপর একে একে সব গুলো মাইন বিস্ফোরিত হয়[১০]। এ সফল অপারেশনে তিনটি বড় অস্ত্রবাহী জাহাজ এবং বড় জাহাজ গুলো হলোঃ
এম ভি হরমুজ। এটি ১৪ আগস্ট চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। ৯৯১০ টন অস্ত্রসম্ভারবাহী এই জাহাজটি ১৩ নং জেটিতে নোঙর করা ছিল।
এম ভি আল-আব্বাস। এটি ১০৪১৮ টন সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে ৯ আগস্ট ১২ নং জেটিতে অবস্থান নেয়।
ওরিয়েন্ট বার্জ নং ৬ । এটি ৬২৭৬ টন অস্ত্র,গোলাবারুদ নিয়ে ফিস হারবার জেটির সামনে অবস্থান করছিল
[সম্পাদনা]
মংলা সমুদ্র বন্দর অপারেশন
২৭শে জুলাই ১৯৭১ সনে,৬০ জন নৌ- কমান্ডো ও ২০০ জন বাংদেশী সি আন্ড সি বিশেষ কমান্ডো দল আমিনুর রহমান,খসরুর নেতৃত্বে ভারতের পোরট কানিং মাতলার থেকে মংলা অপারেশনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে Iসুন্দর বনের গভীর জংগল পাড়ি দিয়ে কমান্ডো দলটি ১৩ ই আগস্ট ১৯৭১ সনে সন্ধা ৬ টায় মংলা বন্দর এ পৌঁছায় I ২৬০ জনের কমান্ডো দলটি মংলা বন্দর ও ডাংমারি বিলের পিছনে, পরিতাক্তো জমিদার বাড়িতে অবস্তান নেয়I সেখান থেকে মংলার দুরত্ব ডাংমারি বিলের মাঝ দিয়ে ৬ মাইল,নৌকায় পৌঁছোতে সময় লাগে ১ঘনটা I ১৫ই আগস্ট,৭১ এ রেডিও মারফত একশন গান শোনার পর কমান্ডোরা গায়বি যানযায় অংশ নেয় এবং গায়বি যানাযা শেষে পরম করুনাময় আল্লাহ`র কাছে স্বাধীনতা যুদ্ধের শহিদের ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সকল অপারেশন সাফল্যের জন্য বিশেষ দোয়া করা হয়I ঠিক রাত ১২টায় কমান্ডোরা ১৫টি নৌকায় মংলা বন্দরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে Iমংলায় পৌঁছোনোর শেষ সময় নিরধারিত ছিল রাত ২ টা কিন্তু পথ পরিদরশকের ভুল পরিচালনায় কমানডোরা নিরধারিত সময়ের অনেক পরে মংলা বন্দরে পৌঁছায়I ইতি মধ্য অপারেশনের নকশা মাফিক বাংলাদেশের সব নদি ও সমুদ্র বন্দর এ অপারেশন শেষI এ অপারেশন শুধু মাত্র জীবনের ঝুকিই নয় বরং মংলার ১৬ আগসট,৭১ ভোরের এ অপারেশন ছিল সরাসরি একটি সুইসাইড একশান I সব বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে ভোর ৪.৩০ মিনিটে মংলা অপারেশন শুরু হয়,অপারেশন চলা কালে ২০০ জন সি আন্ড সি বিশেষ কমান্ডো দল ,হেভি মেশিন গান,মেশিন গান,এনরগা সহকারে ৩ জনার ছোট ছোট দল করে, ৬৬টি উপদলে বিভক্ত হয়ে , নৌ- কমান্ডোদের ছাওনি দিতে ( কভারিং দিতে) মংলা বাঁধের পিছনে অবস্তান নেনI অপারেশন চলা কালে, সি আন্ড সি কমান্ডো দলের উপ -কমান্ডার জনাব রাজা ও জনাব খিজির জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌ- কমান্ডোদের সহোযোগিতায় মেশিন গান নিয়ে পশুর নদীর হাটু পানিতে নেমে আসেন I সময় এর অভাবে শুধুমাত্র ২৪ জন নৌ- কমানডো এ অভিযানে অংশ নিতে পেরেছিলেন I ৬টি উপদলে বিভক্ত হয়ে ২৪জন নৌ-কমান্ডো ৬ টি বিদেশী জাহাজে মাইন লাগন,ভোর ৬-৩০ মিনিট থেকে নৌ- কমান্ডোদের লাগানো মাইন বিকট শব্দ করে ফাটতে শুরু করেI ৩০ মিনিটের মধ্যেই পাকিস্তান বিমান বাহিনির ৪টি বিমান মংলা বন্দরের উপরে ঘুরতে দেখা যায়I Iআক্রান্ত জাহজ গুলির মধ্য একটি সোমালিয়ান,একটি মারকিন যুক্তরাষট্রের,২টি চায়নিজ,১টি জাপানি ও ১টি পাকিস্তানী জাহাজ I এ অপারেশনে আক্রান্ত মোট ৬টি বিদেশী জাহাজ ই ধ্বংস হয় এবং ৩০,০০০ হাজার টন গোলা-বারুদ ও যুদ্ধের সরঞ্জাম সহকারে ধীরে ধীরে পশুর নদীতে নিমজ্জিত হয় [১৪]I মংলা অপারেশন কমান্ডার আমিনুর রহমান,খসরু ও আরও ২ জন নৌ- কমান্ডো এ অপারেশনে মংলা বন্দর এর অতিরিক্ত বাধা পার হয়ে অসীম সাহসিকতার সাথে সোমালিয়ান ৭,০০০ হাজার টনের অস্ত্রসম্ভারবাহী জাহাজ এস,এস,লাইটং এ মাইন লাগান এবং এস,এস,লাইটংI কে ধ্বংস করেন I[১৫]
[সম্পাদনা]
চাঁদপুর নদী বন্দর অপারেশন
এটিও ১৯৭১ এর ১৫ আগস্ট মধ্যরাত বা ১৬ আগস্ট প্রথম প্রহরে হয়েছিল। এ অপারেশনে ১৮জন নৌ-কমান্ডো অংশ নেন। এ গ্রুপের ১৮ জনকে তিনজন করে মোট ৬টি ছোট দলে ভাগ করা হয়[৮]। এই অভিযানে মাইন বিস্ফোরণে ২টি স্টিমার, গমবাহী একটি জাহাজ সহ ছোট বড় আরো অনেকগুলো নৌযান ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়[৮]
[সম্পাদনা]
নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দর অপারেশন
এটিও ১৯৭১ এর ১৫ আগস্ট মধ্যরাত বা ১৬ আগস্ট প্রথম প্রহরে হয়েছিলIএ অপারেশনে মোট ৪টি জাহাজ ও বেশ কয়েকটি নৌযান নৌ কমানডোরা ধংস করেনI শহরের মাঝে এ অপারেশনে কমানডোরা বিশেষ সাহসকতার পরিচয় দান করেনIএ অপারেশনে মোট ২০জন কমানডো অংশ নেনI
[সম্পাদনা]
ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ
১৫ আগস্টের ঐ অপারেশন গুলোতেই প্রায় ২৬টি জাহাজ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং আরো অনেক নৌযান ক্ষতিগ্রস্থ হয়[১৩]।
আগস্ট মাসের এসব অপারেশন ছাড়াও আগস্ট-নভেম্বর মাসব্যাপী আরো অনেকগুলো নৌ-কমান্ডো অপারেশন পরিচালনা করা হয়। এসব অপারেশনে পাকিস্তানি বাহিনীর আনুমানিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হলঃ
প্রায় সর্বমোট ৫০৮০০ টন জাহাজ ধ্বংসপ্রাপ্ত ও নিমজ্জিত।
৬৬০৪০ টন জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত।
এবং বেশ কিছু সংখ্যক পাকিস্তানি নৌযান বাংলাদেশী নৌ-কমান্ডোদের হস্তগত।[১৬]
[সম্পাদনা]
অপারেশনের মূল্যায়ন
নৌ কমান্ড মিশনগুলোর সবগুলোই কিন্তু সাফল্যের মুখ দেখেনি । অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের পর পাহারা শক্তিশালী করায় চট্টগ্রামে আর কোন অভিযান চালানো সম্ভব হয়নি[১৭], যার ফলে চারবার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ধ্বংস করার চেষ্টা করা হলেও তা বিফলে যায় । [১৮] কয়েকটি কমান্ডো দল শত্রুপক্ষের এম্বুশের কবলে পড়ে তাদের নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। [১৯] দূর্ভাগ্য ও ভুল হিসাবের কারনেও কিছু অভিযান বিফল হয় । [২০] শত্রুপক্ষ তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করায় নারায়নগঞ্জ, বগুরা, ফরিদপুর এবং চট্টগ্রাম এর তেলের ডিপোগুলো স্যাবোটাজ করা সম্ভব হয়নি । যদিও পরবর্তীতে মুক্তিবাহিনি হেলিকপ্টার এবং টুইন অট্টার বিমানের সাহায্যে ১৯৭১ সালের ২ ডিসেম্বরে চট্টগ্রাম এবং নারায়নগঞ্জের তেল ডিপো দুটো ধ্বংস করতে সক্ষম হয় ।
মোট ৫১৫ জন কমান্ডো সিটুপি (C2P) থেকে প্রশিক্ষন নেন । আটজন কমান্ডো শহীদ হন, ৩৪ জন আহত হন এবং আগস্ট-ডিসেম্বরের মাঝে ১৫ জন কমান্ডো শত্রুর হাতে ধরা পড়েন । [২১] এই সময় কালের ভেতর নৌ কমান্ডোরা প্রায় ১২৬ টি জাহাজ / কোস্টার/ ফেরি নষ্ট বা ডুবিয়ে দিতে সক্ষম হন, এবং এক সূত্র মোতাবেক অগাস্ট-নভেম্বর ১৯৭১ এই সময়ের মধ্যে কমপক্ষে ৬৫টি বিভিন্ন ধরনের নৌযান (১৫ টি পাকিস্তানী জাহাজ, ১১ টি কোস্টার, ৭ টি গানবোট, ১১ টি বার্জ, ২ টি ট্যাংকার এবং ১৯টি সাধারন নৌযান) [২২] তারা ডুবিয়ে দিতে সক্ষম হন । কমপক্ষে ১০০,০০০ টন নৌযান ডুবিয়ে বা বিকল করে দেয়া হয়, জেটি এবং বন্দর অকার্যকর করে দেয়া হয় এবং চ্যানেলগুলো বন্ধ করে দেয়া হয় । কোনো নিজস্ব সামরিক নৌযান না থাকা সত্তেও , নৌ কমান্ডোরা তদানিং পুর্ব পাকিস্তানের (বর্তমানে বাংলাদেশ) নৌপথকে একরকম নিজেদের দখলেই রেখেছিলো [২৩]
[সম্পাদনা]
অপারেশন 'হটপ্যান্টস
১৬ অগাস্ট এর অপারেশনের পর, সকল কমান্ডো ভারতে ফেরত যায় । এর পরে নৌকমান্ডোরা আর কোন পূর্ব-পরিকল্পিত এবং একযোগে অভিযান পরিচালনা করেননি । তার বদলে, ছোট ছোট দল পাঠানো হতো কিছু নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুর ওপর আঘাত হানতে, এবং সুযোগ পেলেই কমান্ডোরা সেখানে আক্রমন চালাতেন । মেজর জলিল, মুক্তিবাহিনীর সেক্টর ৯ এর কমান্ডার, অগাস্ট মাসে তত্কালীন বাংলাদেশ সরকার প্রধান তাজউদ্দীন আহমদ কাছ থেকে অনুমতি পেয়েছিলেন একটি নৌ ইউনিট এর গোড়াপত্তন করার [২৪] এবং সেই মোতাবেক কমান্ডার এম এন সামান্থ এর কাছে ৪টি গানবোটের জন্য আবেদন করেছিলেন । ১৯৭১ সালের অক্টোবার মাসে কোলকাতা বন্দর ট্রাস্ট ২টি টহলযান (অজয় এবং অক্ষয়) মুক্তিবাহিনীকে দান করে । ৩৮ লাখ ভারতীয় রুপি খরচায় নৌযান দুটি ক্ষিদিরপুর ডকইয়ার্ডে একমাস ধরে মেরামত করা হয় [২৫] যা পরবর্তীতে ২ টি কানাডিয়ান ৪০X৬০ মিমি বোফর গান এবং ২টি হালকা ইঞ্জিন এবং ৮ টি গ্রাউন্ড মাইন (ডেকের দুই পাশে চারটি করে) এবং উপরন্ত আরো ১১টি গ্রাউন্ড মাইন দ্বারা সজ্জিত করা হয় । [২৬] তাদের নতুন নাম দেয়া হয় বিএনএস পদ্মা এবং পলাশ, এবং তাতে মোট ৪৪ জন বাংগালী নাবিক এবং ১২ জন নৌকমান্ডো ছিলেন । জাহাজ দুটোর নেতৃত্বে ছিলেন ভারতীর নৌবাহিনীর সদস্যরা এবং মুক্তিবাহিনীর কাছে তা পুরোপুরি হস্তান্তর করা হয় ৩০, অক্টোবর, ১৯৭১ সালে । প্রবাসী বাংলাদেশে সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাপ্টেইন কামরুজ্জামানের উপস্থিতিতে কোলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট চেয়ারম্যান মিঃ পি কে সেন জাহাজ দুটো কমিশন করেন। লেঃ কমান্ডার কেপি রায় এবং কে মিত্র ছিলেন জাহাজ দুটোর কমান্ডে নিয়োজিত । বাংলাদেশে নবগঠিত এই নৌবাহিনীর উদ্দেশ্য ছিলো: [২৭]
ছালনা প্রবেশমুখ মাইন দ্বারা উড়িয়ে দেয়া
পাকিস্তানী জাহাজের উপর হামলা চালানো
ভারতীয় নৌবাহিনীর ফ্রিগেট এর প্রহরায় , নভেম্বরের ১০ তারিখ জাহাজদুটি সফলভাবে মংলা বন্দরের প্রবেশমুখে মাইন দ্বারা আক্রমন চালাতে সক্ষম হয় । তার পরদিনই ১১ নভেম্বর , ১৯৭১ এ তারা ব্রিটিশ জাহাজ "দ্যা সিটি অফ সেইন্ট এলব্যান্স" কে মংলা বন্দর থেকে তাড়াতে সক্ষম হয় । [২৮]
[সম্পাদনা]
অপারেশন জ্যাকপটে শহীদ হওয়া নৌ-কমান্ডোদের নাম
[২৯]
কমান্ডো আব্দুর রাকিব, ফুলছড়ি ঘাট অপারেশনে শহীদ হন
কমান্ডো হোসেইন ফরিদ, চট্টগ্রামে দ্বিতীয় অপারেশন চলাকালীন সময়ে পাক বাহিনীর হাতে শহীদ হন। তিনি অপারেশনের সময় পাকিস্তানী আর্মির হাতে আটক হন এবং পরবর্তীতে পাক সেনারা তাকে ম্যানহোলে দেহের নিম্নভাগ ঢুকিয়ে মেরুদন্ড না ভাঙ্গা পর্যন্ত শরীর বেকিয়ে, নির্মমভাবে হত্যা করে ।
কমান্ডো খবিরউজ্জামান, ফরিদপুরের দ্বিতীয় অপারেশনে শহীদ হন
কমান্ডো সিরাজুল ইসলাম, এম আজিজ, আফতাব উদ্দিন এবং রফিকুল ইসলাম অপারেশন চলাকালীন নিখোঁজ হন ।
[সম্পাদনা]
"জাতীয় বীর" খেতাব পাওয়া নৌ-কমান্ডোদের নাম
[৩০]
জনাব এ. ডাব্লিউ. চৌধুরী - বীর উত্তম
ডঃ শাহ আলম - বীর উত্তম
জনাব মাজহার উল্লাহ - বীর উত্তম
জনাব শেখ মোহাম্মদ আমিন উল্লাহ - বীর উত্তম
জনাব আবেদুর রহমান - বীর উত্তম
জনাব মোশাররফ হোসেইন - বীর উত্তম (বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার তার খেতাবটি বাতিল করে)
মোহাম্মদ খবিরউজ্জামান - বীর বীক্রম
জনাব মমিন উল্লাহ পাটওয়ারী - বীর প্রতীক
জনাব শাহজাহান কবীর - বীর প্রতীক
জনাব ফারুক-এ-আজম - বীর প্রতীক
মোহাম্মদ রহমতউল্লাহ - বীর প্রতীক
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হোসেইন - বীর প্রতীক
আমির হোসেইন - বীর প্রতীক