নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গন্তব্যহীন সোশিওপ্যাথের পরিচয় দিয়ে কি হবে?

মিস্টার ব্যাকবেঞ্চার

আইম ব্যাড এন্ড দ্যাটস গুড

মিস্টার ব্যাকবেঞ্চার › বিস্তারিত পোস্টঃ

জিলা স্কুলের দিনগুলো

২৯ শে মে, ২০১৪ রাত ৯:২৮

কোনো লেখার শুরুটা লেখা খুব কঠিন বেপার, তবে আমি একটি ছোট ঘটনা দিয়েই তা শুরু করছি।২০০৯ সালের জানুয়ারি মাস, একদিন ইসলাম ধর্মের ক্লাসে বই আনিনি।আমাদের ধর্ম শিক্ষক ছিলেন খুব কড়া, বই না আনলে শাস্তি অনিবার্য।ভয়ে অস্থির হয়ে ভাবছিলাম কি করব, তখন ক্লাসে একটি নোটিস আসলো রেড ক্রিসেন্টে যোগ দেয়ার জন্য। সুযোগটা লুফে নিলাম শুধু মাত্র নিজেকে বাচানোর জন্য।সেই দিন থেকেই বলতে গেলে আমার রেড ক্রিসেন্টে স্কুল ইয়ুথ হিসেবে যাত্রা শুরু।এই ছোট্ট ঘটনা আমার জীবন বদলে দেয়।রেড ক্রিসেন্টে আমার ৫ বছরের স্কুল জীবনের যাদেরকে সবচেয়ে বেশি স্মরণ থাকবে তাদের মধ্য প্রথমেই যার কথা বলতে হয় তিনি হলেন রেড ক্রিসেন্টের ১ম বর্ষের দলনেতা শুভ ভাই। তিনি আমাদের শিখিয়েছেন মানবসেবার মুল্য, তখনো আমি এই ধরনের বড়ো বড়ো বিষয় বুঝতাম না।ভাবতাম এইসব করে লাভ কি? ২০১০ সালের কথা, আমাদের স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়ায় আমাকে সেচ্ছাসেবী হিসাবে নির্বাচিত করা হলো এবং শারীরিক গড়ন ছোট বলে বড় কাজ গুলো আমাকে না দিয়ে ভাইয়ারা করতো।আমার কাজ ছিল শুধু পানি আনা ।হাস্যকর হলেও এটিই ছিল আমার জীবনের প্রথম সেচ্ছাসেবা।শুভ ভাই আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন আমার অবস্থা কেমন, রেগে গিয়ে আমি বললাম ‘পানি আনতেছি আর খাওয়াইতেছি,আর কি?’ ।তিনি বললেন, ‘ অঝোররে, তুই যে পানি খাওয়াইতেছস এতে যে শুধু তার লাভ হচ্ছে তা না তোরও তো লাভ হচ্ছে।’ আমি বললাম , ‘মানে?’ ।তিনি বললেন , ‘একটা ছেলেরে ডাক তো যারে তুই পানি খাওয়াইছস!’ আমি সামনের একটা ছেলেকে ডাকতেই সে সামনে চলে আসলো। শুভ ভাই তাকে ২০ টাকা দিয়ে ছেলেটাকে বলল দোকান থেকে লেয়স চিপস আনতে এবং সাথে সাথে ছেলেটি কোনো প্রশ্ন না করে চলে গেল। তখন লেয়স চিপস সহজে দোকানে পাওয়া যেত না ,স্কুল থেকে অনেক দূরে যেতে হয়। কিন্তু বিশ মিনিট পর ছেলেটি একটি সাইকেল থেকে নেমে আমার সামনে এসে বলল, ‘ভাই আপনার চিপস ।’ এরপর তিনি আমার দিকে তাকিয়ে জীজ্ঞাসা করলেন, ‘কি বুঝলি?’ আমি কিছু বুঝতে পারছিলাম না,তাই কিছু বললাম না। এরপর তিনি বললেন , ‘তুই যদি কারো উপকার করিস তাহলে সেও তোর জন্য ভালো কিছু করতে কোনো কার্পণ্য করবে না’। আমি বললাম, ‘এইটা তো শুধু একটা চিপস!’।তিনি আমার কথা শুনে হেসে উঠলেন।কিন্তু সময়ের সাথে সাথে শুভ ভাইয়ের কথা গুলো আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল।স্কুল জীবনের প্রতিটি ধাপে ধাপে আমি এর উদাহরন পেয়েছি। এরপর জিসান ভাই ও শুভ ভাইদের মতো দলনেতাদের সান্যিধ্য অর্জনেরও সৌভাগ্য আমার হয়েছে।তাদের কাছ থেকে আমি সেচ্ছাসেবার সত্যিকারের মুল উদ্দেশ্য শিখতে পারি। তারা আমাদের শিখিয়েছেন যে মানুষ কারো জন্য ভালো কাজ করে শুধু মাত্র আত্মতৃপ্তির জন্য, কেউ খারাপ কাজ করলে সে নিজেই বিদ্ধস্ত হয়ে পড়ে। আর তাই এ ধরনের কাজ করলে আমাদের মন সবসময় শান্ত থাকে এবং আমরা সত্যিকারের তৃপ্তি পেয়ে থাকি। রেড ক্রিসেন্টের ৪র্থ বর্ষ(২০১২ সাল) আমার জীবনের সেরা মুহুর্তগুলোতে পুর্ণ ছিলো।জিলা স্কুল রেড ক্রিসেন্ট দল পরিচালনার সৌভাগ্য,জীবনের প্রথম ইউনিট মিটিং,বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহন, জাতীয় যুব রেড ক্রিসেন্ট ক্যাম্পে অংশগ্রহন ইত্যাদি আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরনীয় মুহুর্ত হয়ে আছে।সবচেয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখিনও হয়েছি এই ক্রিসেন্টে।এছাড়া আমাদের পরের স্কুল প্রজন্ম যেন আমাদেরও ছাড়িয়ে যায় এই আশাও মনে বেধে রেখেছি। রেড ক্রিসেন্ট আমাকে দিয়েছে সাকিব, প্রচ্ছদ, সালেহিন ও সিফাতের বন্ধু , দিয়েছে একগাদা অভিভাবকসুলভ বড়ভাই ও বোন।কাওসার ম্যাডামকে ধন্যবাদ,আমাকে রেড ক্রিসেন্ট পরিবারের সাথে যুক্ত করবার জন্য।পরিশেষে একজন আদর্শের কথা বলবো, মিঠু ভাই ছিলেন আমার দেখা সবচেয়ে ভালো মানুষদের একজন। ওনাকে আমি বেশি হলে ২ বছর যাবত চিনি, কিন্তু তিনি আমাকে আমার বড় ভাইয়ের মতই আপন করে নিয়েছিলেন।শুধু আমি না, ইউনিটের সকলে ছিল ওনার ছোট ভাই-বোন।শুধু তিনি একজন ভালো মানুষই ছিলেননা, মিঠু ভাই ছিলেন ইউনিটের সবচেয়ে সফল যুবপ্রধানদের একজন।এবং আমি তার ইউনিটে থাকতে পেরে সত্যিই গর্বিত।গত তারিখে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে যান। আমি শুধু একটা কথা বলেই শেষ করছি..............

‘ মিঠু ভাই তুমি যেখানেই থাক,ভালো থেকো ’

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.