নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গন্তব্যহীন সোশিওপ্যাথের পরিচয় দিয়ে কি হবে?

মিস্টার ব্যাকবেঞ্চার

আইম ব্যাড এন্ড দ্যাটস গুড

মিস্টার ব্যাকবেঞ্চার › বিস্তারিত পোস্টঃ

জন হেনকিঃএকজন মহানায়ক, একজন আদর্শ

০৬ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:০৩

জন হেনকি, সতেরো বছরের এক কিশোর, দূরারোগ্য কান্সারে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয় নিউ ইয়র্কের লিনাক্স হিল হাসপাতালে। ক্যান্সার খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছিল শরীরের আনাচে কানাচে। ডাক্তাররা বাচাঁনোর শেষ উপায় হিসাবে পা দুটো কেটে বাদ দেয়। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না। অবশেষে সবাই বুঝে ফেলে তার দিন শেষ হয়ে আসছে।

ছোটবেলা থেকেই জন জড়িত ছিল বয় স্কাউট আন্দোলনের সাথে। স্কাউটিং এর জন্য প্রদত্ত সব কয়টি খেতাবই সে অর্জন করে, সর্বোচ্চ পদক “ঈগল ব্যাচ” ছাড়া। এই সুন্দর পৃথিবীকে বিদায় বলার আগে তার শেষ চাওয়ার ছিল ঐ ঈগল ব্যাচটিই। কিন্তু তা পেতে হলে যে সমাজের কল্যাণে মহৎ কিছু করতে হয়! জন হেনকি, সতেরো বছরের পা’হীন ক্যান্সার আক্রান্ত এক কিশোর হাসপাতালের বেডে শুয়ে কিভাবে সমাজের জন্য মঙ্গল কিছু বয়ে আনবে?

একদিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আতঙ্কিত কন্ঠে লাউড স্পিকারে জানান দেয় তাদের ব্লাড ব্যাংকে কোন রক্ত নেয়। অবস্থা জেনে জনের বুকেও কাঁপন ধরে। মনে পড়ে পা অপারেশনের সময় কি বিপুল পরিমাণ রক্তের প্রয়োজন হয়েছিল তার। রক্তের এরকম ঘাটতি চলতে থাকলে রক্তের চাহিদা আছে এমন রোগীদের কি পরিণতি হবে?

সে ভাবে। ভাবতেই থাকে। হঠাৎ তার মাথায় বুদ্ধি খেলে যায়। হ্যাঁ, সে নিজেই আহ্বান জানাবে। যদি তার ডাকে সাড়া দিয়ে ১০০ জন মানুষও এগিয়ে আসে তাহলে আর কোন সমস্যা থাকেনা। একই সাথে এই কাজ হয়তো ঈগল ব্যাচের অপ্রাপ্তিও ঘুচাবে।

এই বার ভাবনাকে কাজে রূপ দেয়ার পালা। জন ব্লাড ব্যাংকের সেক্রেটারি ডেকে এনে পাশে বসায়। জানায় সে কি করতে চায়। জনের পরিকল্পনা মতো সেক্রেটারি মহোদয় ছড়িয়ে দেন জনের আহবান।



"আমি জন হেনকি। আমার বয়স সতেরো। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে লড়াই করছি ক্যান্সারের সাথে। ছিলাম স্কাউট আন্দোলনের দুরন্ত বালক। ঈগল ব্যাচ ছাড়া পেয়েছি সব কয়টি সম্মান। এখন শুয়ে আছি বিছানায়। অপেক্ষা করছি মৃত্যুর। কিন্তু পেতে চাই, না পাওয়া সেই পদক।

কিছুদিন আগে ক্যান্সারের গতি থামাতে কেটে ফেলতে হয় আমার পা দুটো। অপারেশনের সময় প্রয়োজন হয় অনেক রক্ত। আমার মতো অনেক রোগীর নিত্য চাহিদা রক্তের। অথচ আজ এই হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকে কোন রক্তই নেই। কি হবে তার যার এই মুহূর্তে অপারেশন করা লাগবে?

ঈগল ব্যাচ! আমার শেষ আকাঙ্খা! সমাজ কল্যাণে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালনকারীই পারে কেবল এর দাবিদার হতে। আজ আমার সামনে এসেছে একটি সুযোগ। আপনারাই পারেন আমার জীবনের শেষ ইচ্ছাকে পূরণ করতে। আপনারা যদি রক্ত দান করেন, এই হাসপাতালের রক্তের ঘাটতি মিটিয়ে দেন তবে হয়তো আমার জন্য খুলে যাবে ঈগল ব্যাচের দরজা।

আপনাদের দান করা রক্ত প্রাণ বাঁচাবে অনেক মানুষের। আপনাদের দান করা রক্ত বাস্তব করবে আমার স্বপ্ন। আপনারা কি আসবেন না?"



পরদিন সকাল বেলা দুই বালক কড়া নাড়ে হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকে। “এটাই কি সেই জায়গা যেখানে রক্ত দিতে হবে? আমরা এসেছি জনের জন্য।” কিছুক্ষণ পর আরো পাচঁজন এসে হাজির। তারাও রক্ত দিতে চায়। এভাবে একজন দুই জন করে আসতেই থাকে। রক্তকেন্দ্রের সামনে বাড়তে থাকে ভিড়। একসময় সেটা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। সকলে এসেছে জনের জন্য। অতি অল্প সময়ের মধ্যেই ১০০ নম্বর রক্তের ব্যাগ সংরক্ষণাঘারে নিয়ে যাওয়া হয়, সময়টি ছিল ২৩ মার্চ, ১৯৮১ সাল।

অল্পদিনেই জনের বহু আকাঙ্খার বহু স্বপ্নের ঈগল ব্যাচে লাগে বাস্তবের ছোঁয়া। জনের পরমানন্দের একটি দিন, উল্লাসিত হবার দিন। অথচ জন বিছানায়। ইতিমধ্যে তার শরীর পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। সেই সাথে হারিয়েছে একটি চোখ। জনের হাতে আছে আর মাত্র কয়েকটা দিন। ডাক্তাররা স্কাউটস কর্তৃপক্ষকে যত শীঘ্রি সম্ভব অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য তাগাদা দেয়।

৩০ মার্চ, জাকঁজমকের সাথে অনুষ্ঠিত হয় জনের ঈগল ব্যাচ পড়ার অনুষ্ঠান। স্ট্রেচারে শুয়ে জন প্রবেশ করে হলরুমে। স্কাউটস মাস্টার জনের নাম ঘোষণা করেন এবং তার মাকে অনুরোধ জানান জনের হয়ে পদকটি গ্রহণ করার জন্য। সারা হলরুম উল্লাসে ফেটে পড়ে।

এর মাত্র দুই সপ্তাহ পর সকলেই আবার একত্রিত হয় স্থানীয় একটি গীর্জায়। এখানেও জন আছে অনেকগুলো উৎসুখ চোখের কেন্দ্রে। আগের মতোই শুয়ে। নিথর হয়ে এবং নিথর করে।

জন হেনকি, মিরাকল ঘটিয়েছিল যে ছেলেটি, সকলে নীরব শোকে বিদায় জানায় তাকে।

পরিশেষে একটা কথাই বলব...........................

"Only blood will do.......only you can give!"

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:২৮

রাহাত লতিফ তৌসিফ বলেছেন: পরোপকার সবার মাঝে থাকে না

২| ০৬ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:৩২

মিস্টার ব্যাকবেঞ্চার বলেছেন: কিন্তু পরোপকারী আছে বলেই দুনিয়া টিকে আছে

৩| ০৬ ই জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০২

আরজু পনি বলেছেন:

আবেগী হয়ে গেলাম লেখাটা পড়ে...

অনেক অনেক ধন্যবাদ লেখাটা শেয়ার করার জন্যে ।



তবে ছবি/তথ্যসূত্র এসব পোস্টে দিলে পোস্ট পরিপূর্ণ হয় ।

শুভেচ্ছা রইল ।।

৪| ০৬ ই জুন, ২০১৪ রাত ৯:২৫

মিস্টার ব্যাকবেঞ্চার বলেছেন: আসলে জন হেনকির কোন ছবি পাইনি, আর তথ্য কি দেওয়া যায় সাজেশন দেন @আরজুপনি ভাই

৫| ০৬ ই জুন, ২০১৪ রাত ১০:৩৩

মিনুল বলেছেন: ভালো লাগলো পোস্ট টি পড়ে। আসুন আমরা ভালো কাজগুলির একটি নিয়মিত রক্ত দানের অভ্যাস গড়ে তুলি।

৬| ০৬ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:১৬

আরজু পনি বলেছেন:

জন হেনকির ছবি আমিও খুঁজে পেলাম না তাই হাসপাতালটার ছবি দিলাম ।

আর পুরো নাম সম্ভবত William John Henkey

এখান থেকে পেলাম ...http://www.findagrave.com/cgi-bin/fg.cgi?page=gr&GRid=48278633

আপনি ঘটনাটা জানলেন কোথা থেকে তথ্যের উৎস হিসেবে তাই দিতে পারেন । আর ঘটনার সময়কালটা এ্যাড করতে পারেন যদি জানা থাকে ।

৭| ০৬ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:১৮

আরজু পনি বলেছেন:

চিৎকার করে বলতে হবে না...আস্তে বললেও শুনে, পড়ে যাব ।

অনুসরণে নিলাম জনাব ব্যাকবেঞ্চার ।



লেখার বিষয়বস্তু ভালো ।

এভাবেই ভালো কিছু লিখতে থাকুন ।

অনেক শুভেচ্ছা রইল ।

৮| ০৬ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:৪৪

মিস্টার ব্যাকবেঞ্চার বলেছেন: ধন্যবাদ, আরজুপানি ভাই!

৯| ০৭ ই জুন, ২০১৪ রাত ২:২৬

মেঘের স্বপ্ন বলেছেন: A++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.