নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাই নেম ইজ খান

মাইনেম ইজ খান এন্ড আই অ্যাম এ মুসলিম। এটি একটি বিশ্বাসী লোকের ব্লগ পেজ, তাই এখানে অশ্লীল ও অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্য দেয়া থেকে বিরত থাকার জন্য বিনীত অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।

মাই নেম ইজ খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

হযরত ইউসূফ আ. ও তার ভাইদের ঘটনা (কুরআনে বর্ণিত সত্য ঘটনা)

০৮ ই আগস্ট, ২০১১ দুপুর ২:৩১

(আমার এই লেখাটি ছোটদের জন্য বিশেষভাবে লেখা শীঘ্রই প্রকাশিতব্য 'অটুঁট ঈমান' নামক বইয়ের অংশ বিশেষ, বড়রাও এটি পড়তে পারেন এবং নিজেদের আদরের সন্তানদেরকে পড়ে শোনাতে পারেন তাতে সকলেরই উপকার হবে আশা করি। ধন্যবাদ)



মক্কার মুশরিকরা সব সময় মহানবী সা. এবং মুসলিমদের অকল্যাণ কামনা করতো। তারা একেক সময় একেক প্রশ্ন করে মহানবী সা. কে আটকাতে চাইতো। তার দীনের দাওয়াত থামিয়ে দেয়ার জন্য অপচেষ্টা আর চক্রান্ত করতো। নিজেরা না পারলে মদীনায় গিয়ে ইহুদীদের কাছ থেকে প্রশ্ন শিখে এসে তারপর সেই প্রশ্ন রাসূল সা. কে করতো। এরই ধারাবাহিকতায় তারা একবার প্রিয় নবী সা. এর কাছে এসে মহানবী সা. কে প্রশ্ন করলো, যে বলো, বনী ইসরাইল কিভাবে জর্ডান নদীর তীরবর্তী কিনআন থেকে মিশর এসেছিলো? এর ইতিহাস কি?

বনী ইসরাইল বলা হয় মূলত: হযরত ইয়াকুব আ. এর বংশধরদেরকে। হযরত ইব্রাহীম আ. এর পুত্র হচ্ছেন হযরত ইসমাঈল আ. ও হযরত ইসহাক আ.। হযরত ইসহাক আ. এর বংশ থেকে আসেন হযরত ইয়াকুব আ. অর্থাৎ তিনি হলেন হযরত ইসহাক আ. এর পুত্র। হযরত ইয়াকুব আ. এর স্ত্রী ছিলেন চারজন এবং এই চারজন স্ত্রী থেকে তার সন্তান ছিলো ১২ জন। হযরত ইউসূফ ও বিন ইয়ামীন আ. ছিলেন চতুর্থ স্ত্রীর সন্তান। বাকি ১০ জন ছিলেন অন্য তিন স্ত্রীর। হযরত ইয়াকুব আ. এর এই ১২ জন সন্তান এবং তাদের বংশধরদেরকেই বনী ইসরাইল বলা হয়।

বনী ইসরাইল কিভাবে কিনআন থেকে মিশরে গেলো এটা স্বাভাবিকভাবে রাসূলুল্লাহ সা. এর জানার কথা নয়। কারণ তখন আরবে এমন ঐতিহাসিক কোন বই-পুস্তকও ছিলো না। এটা জানতো ইহুদীরা। তাই তারা রাসূল সা. কে ঠেকাবার জন্য মক্কার মুশরিকদেরকে দিয়ে তার কাছে এই প্রশ্ন পাঠালো। যেনো রাসূল সা. কে আটকানো যায়। মক্কার কাফির-মুশরিকদের প্রশ্ন গুলোর উত্তর স্বয়ং মহান আল্লাহ তার প্রিয় রাসূল সা. কে ওহীর মাধ্যমে জানিয়ে দিতেন। একই ধারাবাহিকতায় তাদের উপরোক্ত প্রশ্নের জবাবে মহান আল্লাহ তা’আলা সূরায়ে ইউসূফ নাযিল করলেন এবং এর মাধ্যমে তাদের প্রশ্নের জবাব দিলেন। বললেন, ‘ইউসুফ ও তার ভাইদের কাহিনীতে প্রশ্নকারীদের জন্য অবশ্যই অনেক নিদর্শন রয়েছে।’ এরপর মহান আল্লাহ আমাদেরকে শোনালেন এবং জানালেন হযরত ইউসূফ আ. এবং তার ভাইদের সেই ঐতিহাসিক কাহিনী। প্রিয় বন্ধুরা! এসো আমরা এখন সেই কাহিনী মনোযোগ দিয়ে শুনি।



হযরত ইয়াকুব আ. থাকতেন কিনআন নামক স্থানে। এটি জর্ডান নদীর তীরবর্তী একটি অঞ্চল। সে সময়ে এটি ফিলিস্তিনের অন্তরগত ছিলো। হযরত ইয়াকুব আ. এর ১২ জন সন্তান ছিলো। ১২ ভাইয়ের মধ্যে মধ্যে ছোট ছিলেন হযরত ইউসূফ আ. তারও ছোট ছিলেন বিন ইয়ামীন আ.। হযরত ইউসূফ আ. ও বিনয়ামীন আ. একই মায়ের আপন দুই ভাই। আবার তাদের ছোট অবস্থাতেই তাদের মাতা ইন্তেকাল করেন। এজন্য হযরত ইয়াকুব আ. অন্য ভাইদের চেয়ে তাদের দু’জনকে একটু বেশিই আদর করতেন। কিন্তু এটি অন্য ভাইদের কাছে ভালো লাগলো না। এক রাতে হযরত ইউসূফ আ. একটি আশ্চর্যজনক স্বপ্ন দেখলেন। সকালে উঠে তিনি রাতে দেখা তার সেই স্বপ্নের কথা স্বীয় পিতা হযরত ইয়াকুব আ. কে বললেন এভাবে বললেন, “হে আমার পিতা, আমি এগারটি নত্র, সূর্য ও চাঁদকে দেখেছি যে তারা আমাকে সিজদা করছে।” এই কথা বলার পর হযরত ইউসূফ আ. এর পিতা হযরত ইয়াকুব আ. বললেন, “হে প্রিয় সন্তান, তুমি তোমার ভাইদের নিকট তোমার এই স্বপ্নের কথা বলো না। কারণ তুমি তাদেরকে এটি বললে তারা তোমার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করতে পারে। নিশ্চয় শয়তান মানুষের প্রকাশ্য দুশমন।” এরপর হযরত ইয়াকুব আ. এই স্বপ্নের ব্যখ্যা করলেন এভাবে, যে হে প্রিয় সন্তান, তোমার দেখা স্বপ্নের অর্থ হচ্ছে “এভাবে তোমার রব মহান আল্লাহ তোমাকে নবী হিসেবে মনোনীত করবেন। উচ্চ মর্যাদাবান করবেন এবং তোমাকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিা দেবেন। আর তোমার উপর ও ইয়াকূবের পরিবারের উপর তাঁর নিয়ামত পূর্ণ করবেন যেভাবে তিনি অতীতে তা পূর্ণ করেছিলেন তোমার পিতৃপুরুষ ইবরাহীম ও ইসহাকের উপর, নিশ্চয় তোমার রব সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।”



নবীদের স্বপ্নও ওহী হয়ে থাকে। হযরত ইউসূফ আ. এর স্বপ্নে দেখা এই ১১ টি নত্র দ্বারা তার ১১ ভাই এবং চন্দ্র ও সূর্য দ্বারা তার পিতা-মাতাকে বোঝানো হয়েছিলো। তারা সিজদা করছেন দ্বারা তার সম্মান ও উচ্চ মর্যাদার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছিলো। এই স্বপ্ন শেষ পর্যায়ে বাস্তবে রূপ নিয়েছিলো। যার বর্ণনা আশাকরি সামনে আসবে। তাই এই স্বপ্নের কথা শুনে হযরত ইয়াকুব আ. বুঝতে পেরেছিলেন যে, এর অর্থ হচ্ছে হযরত ইউসূফ আ. তার সকল ভাইদের চেয়ে বেশি মর্যাদাবান হবেন এবং তার সকল ভাই তার সামনে খাটো হবেন। আর এটা শুনলে তার সেই ভাইয়েরা তখন হয়তো ইউসূফ আ. এর ব্যাপারে আরো বেশি শত্র“তা করবে। তাই তিনি হযরত ইউসূফ আ. কে এই স্বপ্নের কথা প্রকাশ করতে নিষেধ করেছিলেন।

হযরত ইউসূফ আ. এর দেখা এই স্বপ্ন সম্পর্কে হযরত জাবির রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদীস আছে যে, ‘বুসতানা’ নামক ইহুদীদের একজন বড় আলেম একবার প্রিয়নবী সা. এর কাছে এসে বললো যে, “হে মুহাম্মাদ সা.! যে এগারোটি নত্র হযরত ইউসূফ আ. কে সিজদা করেছিলো সেগুলোর নাম আমায় বলো দেখি!”

তার এই প্রশ্ন শুনে মহানবী সা. কিছুণ নীরব ছিলেন। ইতিমধ্যে হযরত জিব্রাঈল আ. রাসূলের কাছে এসে প্রিয়নবী সা. কে সেই নত্র গুলোর নাম জানিয়ে দেন। রাসূলুল্লাহ সা. তখন ঐ লোকটিকে ডেকে বললেন, “তারকাগুলোর নাম যদি আমি তোমাকে বলি, তাহলে কি তুমি ঈমান আনবে?

সে বললো: হ্যাঁ।

তখন মহানবী সা. বললেন, “তারকাগুলোর নাম হচ্ছে ১. জিরইয়ান, ২. তা’রিক, ৩. দিয়াল, ৪. যুল কানফাত, ৫. কা’বিস, ৬. অসাব, ৭. আমূদান, ৮ ফালীক, ৯. মিসবাহ, ১০. যরূহ এবং ১১. ফারাগ।”

তখন সেই ইহুদী আলেমটি বলে উঠলেন, “আল্লাহর শপথ! ঐ নত্রগুলির নাম এগুলোই।” (সূত্র: দালায়েলে বায়হাকী, মুসনাদে আবি ইয়ালা, মুসনাদে বাযযার এবং তাফসীরে আবি হা’তিমেও রয়েছে।)



ঘটনার যোগসূত্র:

এই ঘটনা রাসূল সা. কে জিজ্ঞাসা করা এবং মহান আল্লাহ কর্তৃক এর উত্তর দানের মধ্যে আরেকটি রহস্য ছিলো, তাহলো হযরত ইউসূফ আ. যেমন প্রথমে তার নিজ আত্মীয় তথা ভাইদের দ্বারা নির্যাতিত হলেন এমনকি তাকে হত্যা করার চক্রান্ত হলো, শেষ পর্যন্ত তাকে কূপে নিপে করা হলো। এরপর ঘটনা পরিক্রমায় সেখান থেকে তিনি মিশর গেলেন। এরপর যেই ভাইয়েরা তাকে হত্যার চেষ্টা করেছিলো এক সময় তারাই আবার তার কাছে আসলো সাহায্যের জন্য এবং পরিশেষে ক্ষমা চাইলো।

মক্কার জীবনের শেষের দিকে, হিজরতের দেড়-দুই বছর আগে অবতীর্ণ হওয়া এই ঘটনায় মহানবী সা. এর প্রতিও এই ইঙ্গিত ছিলো যে, এই ঘটনা আপনি মক্কার মুশরিকদেরকে বলার মাধ্যমে একদিকে যেমন তাদের প্রশ্নের উত্তর দেয়া হচ্ছে অপরদিকে আপনার জন্যও এই ঘটনায় শিনীয় বিষয় হলো, যেভাবে হযরত ইউসূফ আ. কে হত্যার চক্রান্ত করা হয়েছিলো, আপনার ক্ষেত্রেও তেমনটি হবে। ইউসূফ আ. কে যেভাবে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন রা করেছিলেন, আপনাকেও সেভাবেই তিনি রা করবেন। ইউসূফ আ. যেভাবে মিশরে গিয়ে এক সময় মিশরের রাষ্ট্রীয় মতা অর্জন করেছিলেন, তেমনিভাবে এক সময় আপনার হাতেও এক সময় রাজ্যমতা আসবে। মহান আল্লাহ আপনাকে বিজয় দান করবেন এবং মক্কার কুফফাররা যারা আপনাকে হত্যা করার জন্য ষড়যন্ত্র আর চক্রান্ত করেছে, যারা আপনাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে সেই লোকগুলো এক সময় আপনার কাছে মা চাইবে। মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে মহান আল্লাহ যা বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন। ইউসূফ আ. যেমন সেদিন বলেছিলেন,

قَالَ لا تَثْرِيبَ عَلَيْكُمُ الْيَوْمَ يَغْفِرُ اللَّهُ لَكُمْ وَهُوَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ (৯২)

“আজ তোমাদের উপর কোন ভর্ৎসনা নেই, আল্লাহ তোমাদের মা করুন। আর তিনি সবচেয়ে বেশি দয়ালু।” (ইউসূফ : আয়াত ৯২)



তেমনি মহানবী সা.ও মক্কা বিজয়ের দিন বলেছিলেন, তোমাদের বিরুদ্ধে আমার কোনো ােভ নেই। আজ আমি কোনো প্রতিশোধ নিবো না। আল্লাহ তোমাদের মা করুন। আর তিনি সবচেয়ে বেশি দয়ালু। যারা নিজ ঘরে, আবূ সুফিয়ানের ঘরে কিংবা বাইতুল্লাহর ভেতর আশ্রয় নিবে তারা সবাই মা পাবে। যারা নিজ অস্ত্র কোষবদ্ধ করে রাখবে তাদের বিরুদ্ধেও কোন আক্রমণ করা হবে না। এরপর তিনি মক্কার লোকদেরকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “আজ তোমরা আমার কাছে কেমন ব্যবহার আশা করো?”

তারা তখন বললো, “আমরা আপনার কাছে একজন উত্তম ও প্রিয় ভাই এবং প্রিয় সন্তানের মতোই ব্যবহার প্রত্যাশা করি।”

তখন মহানবী সা. বললেন, “আমি আজ সে কথাই বলছি, যা বলেছিলেন আমার ভাই হযরত ইউসূফ আ.। হযরত ইউসূফ আ. কে তার ভাইয়েরা হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিলো। কিন্তু তিনি মিশরের প্রধান শাসক হওয়া এবং নিজ ভাইদেরকে হাতের মুঠোয় পাওয়ার পরও তাদের থেকে কোনো প্রতিশোধ না নিয়ে বরং তাদেরকে মা করে দিয়েছিলেন। একইভাবে তোমরাও আমাকে বের করে দিয়েছিলে, আমার লোকদেরকে উপর নির্যাতন-নিপীড়ন করেছিলে। কিন্তু আজ আমাকে মহান আল্লাহ বিজয় দিয়েছেন। তোমাদেরকে হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছেন। ইচ্ছা করলে আমি প্রতিশোধ নিতে পারি, কিন্তু আমি তা না করে তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিলাম।”



চলবে... পরের পর্ব: ভাইদের ষড়যন্ত্র

মন্তব্য ১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই আগস্ট, ২০১১ বিকাল ৩:৫০

সিকদার বলেছেন: সুন্দর পোষ্ট। ইসলাম ধর্মের নবীগনের কাহিনী যেমন চিত্তাকর্ষক তেমনই উপদেশ মুলক। এসব কাহিনী শিশুদের জানানো খুবই প্রয়োজন। আপনার এই প্রচেষ্টা ও পথ চলা সফল হোক। ধন্যবাদ।জাজাকাআল্লাহ খায়ের।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.