নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাতের সে রঙ্গিন ফানুসতো উড়বেই

Every word, every thought, and every emotion come back to one core problem: life is meaningless.

মুহম্মদ ফজলুল করিম

সময় স্বল্প। জীবনটা সব বুঝে শুনে বলার জন্যে অনেক ছোট ... তবুও , আধবোজা চোখ নিয়ে লিখে যাই। মহাকালের খাতায় খুব সামান্য কিছু লিখে যাবার চেষ্টায় আছি। খুব সামান্য কিছু... অতি ক্ষুদ্র কিছু। ইমেইল- [email protected] / ফেসবুক- www.facebook.com/fkrocky

মুহম্মদ ফজলুল করিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

"মে টিনক্যা ঠিকাদার হ্যাঁয় বাবুজী! আপক্যা ভাগক্যা প্যাঁয়সা আনতা হু !"

০৩ রা মে, ২০১৫ দুপুর ১:৩০

এর আগে সিডরের সময় একটা খবর দেখেছিলাম। সিডরে , ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণের জন্যে যে টিন দেয়া হয়েছিল , এনজিওরা ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করায় সেই টিনও খুলে নিয়ে গিয়েছিল। হাজার হাজার মানুষ আবারো , মাথার উপরের একটুকু ছাউনি না নিয়েই দিন পার করে দিচ্ছে। কি হৃদয়বিদারক ঘটনা।



সেবারের মত ভয়াবহ না হলেও , আজকে আরেকটি খবর দেখলাম। "কিস্তি শোধ না করায় , এক মহিলা দিনমজুরের বসতবাড়ি ভেঙ্গে বিক্রি করে দিয়েছে এক এনজিও"। এখন তাদের উপরে আবারো সেই নীল আকাশটুকু ছাড়া আর কিছুই নেই। ঘটনাটা আগেরটার মতই , খুবই ধারাবাহিক!



খবরটা পড়ে যা বুঝলাম , সেই মহিলা গত ফেব্রুয়ারিতে ১৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিল। মধ্য দিয়ে মার্চ আর এপ্রিল সহ মোটমাট তিনটা মাস গিয়েছে। এই তিনমাসের মধ্যে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে সেটা আবার শোধ করে দেয়া মোটামুটি অসম্ভব , একজন দিনমজুরের পক্ষে। আরও বড় কথা , ইন্টারেস্ট রেট। কত জানেন , আইডিয়া আছে ?



আমিও জানি না , তবে উইকিপিডিয়ায় দেখলাম , সেই এনজিও "আশা" এর ইন্টারেস্ট রেট এভারেজ - ৩২% ( যেটাই হোক , এটা ২৫% থেকে বেশি , এককথায় দেশের যেকোন ব্যাংক থেকে বেশি!)! তাহলে ১৫ হাজার টাকায় মোট সুদ আসছে তিন মাসে ১২০০ টাকার মত।



একটা হতদরিদ্র মহিলার পক্ষে দিনমজুরী করে এই ঋণ , এই বিশাল অঙ্কের সুদসহ পরিশোধ করা মোটামুটি অসম্ভব। বুঝাই যাচ্ছে , মহিলাটি এই ঋণ নিয়ে কোন উৎপাদনশীল খাতে খাটায়নি। খাটিয়েছে , অবকাঠামো নির্মান কিংবা অন্যান্য সাংসারিক খরচে।



একজন দিনমজুর মহিলা কিভাবে এই ঋণ শোধ করবে - এটা না ভেবেই কেন এনজিওটি ঋণ দিল। যার মাসিক আয় হতে পারে - মোটামুটি ৯ হাজার টাকা। এক মাসে অবশিষ্ট থাকতে পারে - সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকা। তাও তো , ঋণ পরিশোধ করতে ১৫ হাজার টাকার পাশাপাশি আর ৬/৭ হাজার টাকার সুদ পরিশোধ করতে হবে। সামান্য কটা আয়ের টাকায় , এতো বড় অঙ্কের সুদ কিভাবে দেয়া সম্ভব ! তাও , আবার উৎপাদনশীল খাতেও না।



উৎপাদনশীল খাতে হলেও - এই ঋণ পরিশোধ করে , হাতে আর কয় পয়সা থাকে , যে সেটা দিয়ে দরিদ্রতা দূর করা সম্ভব - সেটা বলতে গেলেও মিথ্যুক এনজিওগুলোও এই মিথ্যা কথা বলতে আবারো লজ্জা পাবে।



এরমানে ওরা জেনেশুনেই এই লোন দিয়েছে। ওরা শিক্ষিত মানুষ , ওরা খুব ভালো করেই জানেন , মহিলাটাকে টাকা দিয়ে পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য। তবু তারা টাকা দিয়েছে , কারণ তারা এর আগে সিডরের মাঠে ড্রিল করে এসেছে , কিভাবে ঘরের টিন খুলে টাকা নিয়ে নিতে হয়। আবারো , বাড়িঘর বেঁচে দিয়ে টাকা নিয়ে নিল। উল্টো , মহিলাটি যে কয়েকমাসের কিস্তি দিয়েছিল , সেটাও দেয় নি। অন্তত যে টাকা লোন দিয়েছে , সেই টাকার আরো বেশি টাকা এনজিওটি পেয়েছে।



আর যৎসামান্য লোন অফিসারের , এই কাজ করার সাহস কিংবা ইচ্ছা কোনটাই হবে না , যদি না উপর থেকে নির্দেশ আসে। তাহলে ... কি দাঁড়ালো? এরাই , আবার গর্বের সাথে বুক ফুলিয়ে ফুলিয়ে বলে বেড়ায় - আমাদের ঋণখেলাপির হার খুব খুব কম। এটাই আমাদের সাফল্য। ( টিন বেঁচে , গরু-ছাগল বেঁচে , ঘরের হাড়ি-পাতিল বেঁচে - এই সাফল্য আনা হয় আরকি ?)



আমার মতে এনজিওগুলোর এই ঋণ দেয়ার ধরণ বদলাতে হবে। প্রত্যেকটা ঋণ দেয়ার আগেই , কাগজে কলমে নিজেদেরই বের করে নিতে হবে এই ঋণ দেয়ার পর , শোধ করে কিভাবে ঋণগ্রহীতা স্বাবলম্বী হতে পারবেন। যদি , কাগজে কলমে এই হিসেবে , তারা দেখাতে ব্যর্থ হন , তাহলে তারা ঋণ দিতে পারবেন না। সরকার এই বিষয়টার জন্যে প্রত্যেকটা জেলায় একটি মনিটরিং সেল ঘটন করবে। সেখানকার সরকারী লোন অফিসার যদি কাগজপত্র , এবং নিজেদের সরকারী স্টাফরা সরোজমিনে দেখে সন্তুষ্ট হয় - তাহলেই এপ্রূভ করবে। তারপরেই , ঋণ দেয়া যাবে। নইলে নয়। এরপরেও , যদি কোন কারণে , সেই ঋণ শোধ না দিতে পারে , তাহলে প্রথমত সময় বাড়ানো হবে। কয়েকবার সময় না বাড়িয়েও যদি না পারে , তাহলে সুদহীন আদায় কিংবা আংশিক আদায়ের জন্যে ব্যবস্থা নেয়া যাবে। যদি সেটাও সম্ভব না হয় , তাহলে মওকুফ করতে হবে। কারণ , দোষটা তাদের যারা সঠিকভাবে সম্ভাব্যতা হিসেব না করে ঋণ দিয়েছে। তবে , যেহেতু এরা হতদরিদ্র এবং ঋণের পরিমাণ খুবই অল্প , সেক্ষেত্রে মোটেও বাসস্থানের দিকে হাত বাড়ানো যাবে না। আর্থিক অবস্থা অনুযায়ী যদি , এই নিয়ম না মেনে ঋণ না দেয় , তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সরকারের ব্যাবস্থা নিতে হবে। এটা একজন নিতান্তই সাধারণ মানুষের মতামত , সরকার কি করবে জানি না , তবে এটি শুধুই সাধারণ মানুষের মতামত হিসেবে বিবেচনা করতে পারেন।



আবার , এই টিন বেঁচা ব্যবস্থাকে যারা ইনিয়ে বিনিয়ে সমর্থন করে , কিংবা বেনিফিসিয়ারি তাদের মনে মনে বলি -

"The world's poorest people pay the world's highest interest rate in this so called micro-finance program ! So , shut the fuck off !"



মনে মনেই বলতে হয় , কারণ তারা অনেক বিজ্ঞ মানুষ। কিছু বলতে গেলেই সার্টিফিকেট বের করে দেখিয়ে বলবে - "তুম কন হো?"



তখন ভাবছি , আমি সাহস করে বলবো - "মে টিনক্যা ঠিকাদার হ্যাঁয় বাবুজী! আপক্যা ভাগক্যা প্যাঁয়সা আনতা হু !"





---------------------

---------------------

খবরঃ কিস্তি শোধ না করায় ঘর ভেঙে নিল এনজিও



ফেসবুকে প্রকাশিত

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা মে, ২০১৫ দুপুর ১:৪৫

শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: এনজিওরা ঋন দেয় নাকি? ওদেরটা হইলো বল্গাহীন সুদের ব্যাবসার সেইরকম উদাহরন।

পোস্ট ভালো হইছে।

++

০৩ রা মে, ২০১৫ দুপুর ১:৪৯

মুহম্মদ ফজলুল করিম বলেছেন: একপাশ দিয়ে দরিদ্র ইনপুট করা হলে অন্যপাশে আউটপুট বের হবে হতদরিদ্র - এইটাই এনজিও!

২| ০৩ রা মে, ২০১৫ দুপুর ২:২৭

শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: ভালো কইছেন ভাই। লাইকড ইট।

০৪ ঠা মে, ২০১৫ রাত ১২:৪৯

মুহম্মদ ফজলুল করিম বলেছেন: থ্যাঙ্ক ইউ , ভাই :)

৩| ০৩ রা মে, ২০১৫ বিকাল ৩:০২

জেন রসি বলেছেন: সবকিছুই মুনাফার লোভ।অধিকাংশ মানুষ হচ্ছে মুনাফালোভীদের খেলার পুতুল।

০৪ ঠা মে, ২০১৫ রাত ১২:৫০

মুহম্মদ ফজলুল করিম বলেছেন: মজার ব্যাপার উপরের প্রতিষ্ঠানটি , নিজেদের অলাভজনক দাবী করে। আমি চিন্তায় , এরা যদি নিজেদের লাভজনক বলতো - তাইলে , কি অবস্থা করতো!

৪| ০৪ ঠা মে, ২০১৫ সকাল ৯:৩৩

রাতুলবিডি৪ বলেছেন: "The world's poorest people pay the world's highest interest rate in this so called micro-finance program ! So , shut the fuck off !"

১০ ই মে, ২০১৫ দুপুর ১:৪০

মুহম্মদ ফজলুল করিম বলেছেন: এটাই সত্যি , ভাই!

৫| ০৫ ই মে, ২০১৫ রাত ৮:৪৭

ঢাকাবাসী বলেছেন: উপরে একজন বলেছেন দরিদ্ররাই সবচাইতে বেশী কর দেয়। আমাদের গবমেন্ট দেখেননা খালি গরিব আর মধ্যবিত্তের জীবনযাত্রার উপর হামলা চালায়।

১০ ই মে, ২০১৫ দুপুর ১:৪২

মুহম্মদ ফজলুল করিম বলেছেন: ভালো বলেছেন। গরীবের রক্তচুষতে পারদর্শী না হলে , ধনী হওয়া প্রায় অসম্ভব।

৬| ০৫ ই মে, ২০১৫ রাত ৯:৩২

রিকি বলেছেন: ভাই আপনার এই পোস্ট আগেই পড়েছিলাম....কালকে সন্ধ্যায় আবার এই ঘটনা নিয়ে একাত্তর টিভিও প্রতিবেদন দিয়েছে..মাটিতে জায়গা ছাড়া আর কিছুই রাখেনি..কিভাবে এত নির্দয় হতে পারে মানুষ...ধারণার বাইরে...আশ্রয় তো দূরে থাক, বালিশ কাঁথাও নিয়ে গেছে. এই ধরনের ঘটনা আমাদের সাথে শেয়ারের জন্য ধন্যবাদ জানাই আপনাকে.

১০ ই মে, ২০১৫ দুপুর ১:৪৩

মুহম্মদ ফজলুল করিম বলেছেন: পত্রপত্রিকায় কিছু আলোচনা হয়েছে। এরপর সব আগের মত , এনজিওটি সঠিক ব্যবস্তাহ নিয়েছে কিনা , সেটাও অজানা। খুব সম্ভবত নেয় নি।

কোথায় বিচার দেবো , জায়গা কোথায়!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.