নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সময় স্বল্প। জীবনটা সব বুঝে শুনে বলার জন্যে অনেক ছোট ... তবুও , আধবোজা চোখ নিয়ে লিখে যাই। মহাকালের খাতায় খুব সামান্য কিছু লিখে যাবার চেষ্টায় আছি। খুব সামান্য কিছু... অতি ক্ষুদ্র কিছু। ইমেইল- [email protected] / ফেসবুক- www.facebook.com/fkrocky
অনেকদিন আগের ঘটনা। ক্লাস ফাইভে পড়ি। একা একা স্কুলে যাওয়ার জন্যে , যথেষ্ট বয়স। সেদিন সকালেও স্কুলে যাচ্ছি। শীতের সকাল। ছোটকালে কত শীত পড়েছে , সেটা মাপতাম , মুখে কুয়াশা টেনে আবার ছেড়ে দেয়ার হিসেবে। যত বেশি ধোঁয়া বের হবে , তত বেশি শীত ! হিসেব অনুযায়ী সেদিন ছিল , প্রচণ্ড শীত। এখন অনেক বয়স হয়েছে , তাও ছেলেমানুষি অভ্যেসটা বিদায় হয়নি।
শীতে একই সাথে সবচেয়ে মজার এবং বিরক্তিকর বিষয় ছিল , গাছের উপর থেকে টুপটুপ করে গায়ে পানি পড়াটা। একদিকে মজাও লাগে , অন্যদিকে লাগে ঠাণ্ডার ভয়। আশেপাশে ধানের খেত। সবুজ সবুজ ধানগুলোর গায়ে ফোঁটা ফোঁটা পানি লেগে আছে আর গড়িয়ে পড়ার অপেক্ষা করছে - এটা সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে চমৎকার দৃশ্যগুলোর মধ্যে একটি। সেটাও , ছিল সেদিন। সেদিনের ঘটনার প্রত্যেকটা খুঁটিনাটি ডিটেইল আমার মনে আছে। কারণ , ঘটনাটা খুবই সামান্য ছিল , অথচ জীবনের স্মরণীয় ঘটনা। খুব সামান্য , তুচ্ছ ঘটনাগুলোই , একজন মানুষের জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনা হয়ে উঠতে পারে। কারণ , ঐ যে কথায় বলে না - দ্যা ক্লোজার ইউ লুক , দ্যা লেসার ইউ সী!
তো , মনের আনন্দে হেঁটে যাচ্ছি। কাঁধে স্কুল ব্যাগ। নিজের ওজনের সমান স্কুল ব্যাগ। বুঝাই যাচ্ছে , কাঁধে করে নিয়ে দুনিয়ার যত জ্ঞান বিজ্ঞান রয়েছে সব একসাথে নিয়ে যাচ্ছি।
তো সেখানে এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটলো। এক বৃদ্ধ মানুষ। বলা চলে আশি বছরের উর্দ্ধে। সাদা ধবধবে চেহারা। একটা কাশ্মীরি শাল গায়ে জড়িয়ে আছে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দেখে মনে হচ্ছে - কোন দাম্ভিক গ্রিক দেবতা তাকিয়ে আছে। উনি আমাকে থামালেন , এই দাঁড়াও!
আমি থমকে দাঁড়ালাম। উনি জিগ্যেস করলেন , কোন স্কুলে পড়ো ! এতো বই কি কারণে ?
থতমত খেয়ে কোনমতে উত্তর দিলাম। এবার বৃদ্ধ লোকটি আমাকে একটা প্রশ্ন করলেন , "বললেন , তো অনেক পড়ালেখাই তো করছও , একটা প্রশ্নের উত্তর দাও তো ! বল তো , মানুষের চোখ কয়টা! "
আমি ভেবেচিন্তে , চূড়ান্ত রকমের কনফিউজড হয়ে উত্তর দিলাম - , "চোখ তো দুইটাই?" উত্তরটা দিতে এতই কনফিউজড হয়েছিলাম , যে জীবনে এতো কনফিউজড এ যাবতকালে হই নি , ভবিষ্যতেও যে হব না , সেটা মোটামুটি নিশ্চিতই বলা চলে।
এবার বৃদ্ধটি একটা চরম তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো। এই শিখায় স্কুলে। এতদিনে এই শিখছো। আমি প্রশ্নবোধক চোখে তাকিয়ে রইলাম?
এবার বৃদ্ধটি বলল , "মানুষের চোখ তিনটা। তৃতীয় চোখ হচ্ছে অন্তর্দৃষ্টি ! এটা দিয়েই সবকিছু মানুষ দেখে। এটাই , আসল চোখ। যাও স্কুলে গিয়ে কিছু শেখার চেষ্টা করো!"
আমি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম। বৃদ্ধটি হেঁটে চলে গেলো। পরে আমি অনেক অনেকবার ভেবেছি , কথাটা নিয়ে। বড় হয়ে বুঝেছি , এটা খুবই সাধারণ প্রচলিত একটা দার্শনিক কথা। তবে , ক্লাস ফাইভের একজন বাচ্চার জন্যে , এটা উঁচুমানেরই বলা চলে। বলা চলে - এই কথা দিয়েই আমার দৃষ্টিভঙ্গিতে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘতে। সবসময় , মনে মনে বলতাম - ভেতরের চোখ দিয়ে কি দেখা যায়। বাস্তবিকভাবে , ভেতরের চোখ দিয়ে কিছুই দেখতে পারি নি। ঐ বয়সে সে সামর্থ্যও ছিল না। তবে , জিনিসটা যে মনের মধ্যে গেঁথে নিয়েছি , সেটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া।
একজন শিশুকে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে , দার্শনিক কথা বলে , তাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা - আর যাই হোক। খুব সচারচর দেখা যায় না। যাওয়ার কথাও না। বৃদ্ধ লোকটি এই কাজটি কেন করেছিল , সেই উত্তর এখনো আমি খুঁজি। উত্তরটা পাইনি বলেই , এতো বছর পরেও ঘটনাটা মনের ভেতরে দাগ কেটে আছে।
শেষমেশ , আমি একটা থিওরি দাঁড় করিয়েছিলাম - বৃদ্ধ লোকটি , হয়তো এ যাবতকালের ঠুনকো , একমণী ওজনের ব্যাগের প্রাথমিক শিক্ষার প্রতি বড় অসন্তুষ্ট ছিল। এতটা , অসন্তুষ্ট যে একজন ক্লাস ফাইভের বাচ্চাকে ধরেও , জীবনধর্মী শিক্ষায় যে তোমরা কত নিচু দেখে নাও , এটা বলতে চেয়েছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন , বাচ্চাটি বুঝবে। এই তুচ্ছ তাচ্ছিল্য বাচ্চাটার মধ্যেও ঢুকে যাবে , সে খালি হার্ডডিস্কের মত তথ্য সেভ করে রেখে , খাতায় উগরে দেয়ার চেষ্টা বাদ দিয়ে নতুন করে জীবনধর্মী কিছু শেখার চেষ্টা করবে। সত্যিকারের মানুষ হবে।
আমি সেদিন হয়ত বুঝি নাই , আজকে বুঝেছি। তবু , বড্ড দেরী হয়ে গেছে। নিজেকে প্রশ্ন করি - তুমি কি মানুষ , সত্যকারের মানুষ। মানবীয় গুণগুলো কি মোটাদাগে আছে , নাকি আছে শুধু আত্মতুষ্টি আর আত্মবন্দনা। বাইরের চোখ আছে বললেও , ভেতরের সেই আধবোজা চোখটা যেদিন উনি খুলে দিতে চেয়েছিলেন , যা আজও পুরোপুরি খুলে নি - সে উত্তর দেয় , না এখনো হতে পারো নি। হবার সম্ভাবনাও দেখছি না! আমি দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলি।
এই দায় আমি কাকে দেবো। জানি না। নিজেই যখন পূর্ণাঙ্গ মানুষ হতে পারি নি , তখন অন্যরা মানুষ হয়েছে কি সে খবর নেয়া নিতান্তই ছেলেমানুষি। তবে , আমি এখন এই ছেলেমানুষি কাজটাই করি। বাচ্চাদের সাথে ফাঁক পেলে , সাধারণ দার্শনিকতা নিয়ে তাকে প্রশ্ন করি। ভুলেও লেকচার দেই না। শুধু প্রশ্নটা করি। এক কথায় বলতে গেলে , তাকে প্রশ্নটা দিয়ে দেই। সে প্রশ্নটা নিয়ে খেলুক। বেশিরভাগ সময়েই বাচ্চাটা বুঝেই না। তবে , আমার ধারণা , অনেক অনেক প্রশ্নের ভিড়ে কিছু প্রশ্ন একদিন মনে গেঁথে যাবে। সে সারাজীবন উত্তর খুঁজবে ... এটাই হবে জীবনকে বোঝার পথে তার মহা যাত্রা। হয়ত , সেও একদিন পথ খুঁজে পাবে।
তবে , একটা ভুলেও অন্য কারো সামনে এইসব প্রশ্ন করি না। যখন , একান্তে পাই তখন। কারণ , সামনাসামনি করলে অন্যরা আধ-পাগল মনে করার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ! অবশ্য , আমার নিজেরও মাঝে মাঝে সন্দেহ হয় - আমি আধ-পাগল নাতো!
১১ ই মে, ২০১৫ সকাল ১১:২৪
মুহম্মদ ফজলুল করিম বলেছেন: শুভকামনা রইলো , আপনার প্রতি।
২| ১০ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৩:২৯
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: দারুন!
সেই শৈশবে টুইস্ট দেযাতেই না আজকে এই ভাবুকের দেখা পেলুম!
নয়তো কে জানে হয়তো নেকটাই উড়িয়ে লাখো কোটি কর্পোরেট গোলামের ভীরে আরও নতুন এক নাম হয়েই থাকত ভাবক সত্ত্বাটাকে পেতুম না
++++++++++
২৩ শে মে, ২০১৫ সকাল ১১:১৬
মুহম্মদ ফজলুল করিম বলেছেন: আমার চাইতে আপনার ভাবুক স্বত্বাটা দেখছি আর প্রখর!
যেভাবে কর্পোরেট উদাহরণ দিলেন , আপনাকেই একটা প্লাস।
অনেক অনেক ধন্যবাদ জানবেন.।
৩| ১১ ই মে, ২০১৫ দুপুর ২:১২
কলমের কালি শেষ বলেছেন: চমৎকার বলেছেন । প্রশ্নটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ ।
২৩ শে মে, ২০১৫ সকাল ১১:১৭
মুহম্মদ ফজলুল করিম বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। এই প্রশ্নের হয় উত্তর নেই।
৪| ১১ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৪:২১
সুমন কর বলেছেন: "মানুষের চোখ তিনটা। তৃতীয় চোখ হচ্ছে অন্তর্দৃষ্টি ! এটা দিয়েই সবকিছু মানুষ দেখে।
ভালো বলেছেন। সহমত।
২৩ শে মে, ২০১৫ সকাল ১১:১৭
মুহম্মদ ফজলুল করিম বলেছেন:
©somewhere in net ltd.
১| ১০ ই মে, ২০১৫ দুপুর ২:৩০
এ সামাদ বলেছেন: valo laglo আরো ভাল লেখেন এই কামনা রইল।