নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সময় স্বল্প। জীবনটা সব বুঝে শুনে বলার জন্যে অনেক ছোট ... তবুও , আধবোজা চোখ নিয়ে লিখে যাই। মহাকালের খাতায় খুব সামান্য কিছু লিখে যাবার চেষ্টায় আছি। খুব সামান্য কিছু... অতি ক্ষুদ্র কিছু। ইমেইল- [email protected] / ফেসবুক- www.facebook.com/fkrocky
প্রায় দুশো বছর আগের ঘটনা। ছেলেটার মা না মারা যায়। যেই বাবা , মার সাথে একসাথে ছোটবেলায় আদর করে করে রূপকথা শোনাতো ছেলেকে , সেই বাবাই কেমন যে বদলে গেলো। আরেক বিয়ে করে বসলো। ১৫ বছরের ছেলেটাকে সহ্যই করতে পারে না।
ছেলেটা কোথায় যাবে। যাওয়ার জায়গা কোথায় ? এই ঘরেই তো থাকতে হবে। বন্ধু-বান্ধব , ওটা ভুয়া কথা। শেষমেশ বাধ্য হয়েই বই পড়া শুরু করলো , সারাদিন পড়েতো পড়েই , এই সাহিত্যিক ছেড়ে ঐ সাহিত্যিক। এভাবেই সারাদিন চলতেই থাকলো , নিজের ভেতরে একটা বলয় তৈরি করে নিলো। বইয়ের চরিত্র , উপন্যাস , কাহিনীর ভেতরে এমনই মজে গেলো যে - বাবা গালি দিলে এক কান দিয়ে ঢুকে অন্যদিকে বের হয়ে যাওয়ার বদলে কথা মাথার উপর দিয়ে চলে যেতে থাকলো। ড্রাগস যারা নেয় তাদের এমন হয় , দুনিয়ার সব ভুলে গিয়ে ড্রাগে বুঁদ হয়ে থাকার চেষ্টা করে। জীবনটাকে ড্রাগ দিয়ে ভুলিয়ে দিতে চায়। মানুষগুলোর মাথায় ঐ ছেলেটার মতোও বুদ্ধি নেই।
(এখানে একটু নিজের কথা বলি , স্কুল-কলেজ জীবনে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সদস্য হয়ে সাড়ে সাত বছর ধরে , নিজেও ঐ বছরগুলোতে অন্তত হাজারটা বই পড়েছি। কেউ জানে না , এটা আমি সম্মোহিতের মত পড়তাম ড্রাগ ধরে নিয়েই। ঐসব চিরায়ত , ফিরায়ত , জীবন গড়া এইসব কিচ্ছু না। শুধু , পড়তাম , কিছুক্ষণের জন্যে ভুলে যেতে। ফলাফল হিসেবে অবশ্য কিছুই পাইনি - বাজে একাডেমিক রেজাল্ট , সারাদিন গালাগাল , একগাদা উপরি অপমান এইসবই। শেষমেশ , কিছুই হতে পারিনি জীবনে , উল্লেখযোগ্য কিছু হওয়ার সম্ভাবনাও খুব কম। ভাগ্য খুব ভাল থাকলে , কর্পোরেট ফার্মের পেটমোটা মুরগী হতে পারি। অবশ্য এসবই মেনে নিয়েছি , কারণ ড্রাগ নিলে এইটুকুন সাইড এফ্যেক্ট তো মেনে নিতেই হবে। )
মানুষ সুযোগ পেলেই নিজের কথা বলে। আমিও বলা শুরু করে দিয়েছিলাম। যাক , ছেলেটার কথায় ফিরে আসি। ছেলেটা , বড় হল। এতো বড় হল যে , ছেলে তুমি বললে রাগ করবে , আপনি বলতে হবে। বিপ্লবী আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে গেলো ছেলেটা। অভিযোগ আনা হল - এই ছেলে রাশিয়ার রাজনীতি নিয়ে সমালোচনা করেছে। দস্তয়েভস্কি অস্বীকার করলো। কিন্তু রাশিয়ার জার বলে কথা , ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়ে গেলো। । শান্ত এক সকাল বেলা মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত সবাইকে - ফায়ারিং স্কোয়াডে এনে হাজির করা হল। নাটকীয় ঘটনা , মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার শেষমুহুর্তে জারের চিঠি এলো। মৃত্যুদণ্ড হবে না , এদের নির্বাসন দাও। সাইবেরিয়ায় সশ্রম নির্বাসন। আট আটটা বছর খসে গেলো সাইবেরিয়াতে গিয়ে। এই আট আটটা বছর কেটেছে , শীতে হাত , পা ফাটা রক্তে রক্তাক্ত হয়ে , না খেয়ে , হাড়ভাঙ্গা খাটুনি করে। এই বন্দি ছিল , টপ লিস্টেড। তাই , এই আট আটটা বছর হাতে পায়ে শিকল পরেই কেটেছিলো।
বইপত্র পড়ার সুযোগ ছিলো না। কিন্তু রক্ত কি আর মিথ্যে বলে। নির্বাসন থেকে বেরিয়েই আবার একগাদা সাহিত্যের , দর্শনের বই জোগাড় করে ফেললেন। কিন্তু তিনি তখন এক ভিন্ন মানুষ - ধার্মিক একজন মানুষ। পরে , ধীরে ধীরে লিখলেন , তার ক্লাসিক উপন্যাসগুলো। তার নাম কি বলার দরকার আছে - বলেই ফেলি , ফিওদর দস্তয়েভস্কি।
উনাকে হঠাৎ স্মরণ হল কেন , এটা যদি বলতেই হয় , তাহলে বলি - উনার "জুয়াড়ি" উপন্যাসটা কিছুদিন আগে পড়ছিলাম। প্রায় এক বৈঠকেই শেষ করলাম। যদিও বইয়ের ভূমিকায় লিখা ছিল , এক বৈঠকেই পড়ার মত বই এটা। বিশ্বাস করি নি , পড়তে গিয়ে বাধ্য হলাম।
জুয়া খেলে সর্বস্বান্ত একজন যুবকের গল্প বলা হচ্ছিল , উপন্যাসে। সত্যি কথা বলতে কি , দস্তয়েভস্কি নিজেই জুয়া খেলে ফতুর হয়ে , টাকা যোগানোর জন্যে মাত্র কয়েক সপ্তাহে উপন্যাসটি লিখে শেষ করেন। সম্ভবত , কম সময়ে লেখা একমাত্র সার্থক ক্লাসিক পৃথিবীর ইতিহাসে এই একটিই।
উপন্যাসের একটা উক্তি আমার খুব মনে ধরেছিলো , যেটা বলার জন্যেই এতো কিছু বলা , কথাটা প্রায় এরকম - "মানুষ জীবনের যেকোন পর্যায়ে থেকে , মর্যাদার জন্যে লড়তে পারে।"
মানুষটা লড়ে গেছে। সব ধ্বংস হবার পরও লড়ে গিয়েছে। শুধু মর্যাদার জন্যে ... শেষমেষ পেয়েছেও - সেই নির্বাসনে থাকা তুচ্ছতম কয়েদির জন্যে আজকে দুশো বছর পরও মাথা নত করে আছি।
( যারা বুদ্ধিমান ছেলে-মেয়ে , তারা বুঝার কথা কি বলেছিলাম। কিন্তু ভুলেই গিয়েছিলাম , এত্ত প্যাঁচানো অনুপ্রেরণার লেখা ছেলে মেয়েদের এই মুহূর্তে মাথায় ঢুকার কথা না। লেখাটা তোমাদের জন্যে - এসএসসি রেজাল্টের আশায় বুক ঢিপঢিপ করা ছেলে মেয়েদের জন্যে। আমার সমস্যাটা পুরাতন - কথাকে সোজাসুজি বলতে পারি না , একটু প্যাঁচিয়েই বলি। কিছু মনে করো না। অবশ্য , একটা উদ্দেশ্যও আছে। প্যাঁচিয়ে লেখার প্যাঁচ যখন উদ্ধার করবে , তখন কথা অনেকদিন মনে থাকবে। সোজাসুজি কথা মনে থাকে না। এই যাহ , আমিও তো সোজাসুজিই সব প্যাঁচ বলে দিলাম। এখন কি হবে ! )
৩০ শে মে, ২০১৫ সকাল ১১:৩৮
মুহম্মদ ফজলুল করিম বলেছেন: পাশ করুক সবাইই চাই। এর চেয়ে বড় চাওয়া - সবাই মানুষ হোক।
২| ৩০ শে মে, ২০১৫ সকাল ৭:৫৩
হার্ড নাট বলেছেন: লেখাটা অসাধারণ। যাদের জন্যই হোক।
৩০ শে মে, ২০১৫ সকাল ১১:৪৬
মুহম্মদ ফজলুল করিম বলেছেন: লেখাটা যখন শুরু করি - তখন ছিল উদ্দেশ্যহীন। পরে দেখলাম - এটা এই লেখা হিসেবে চালিয়ে দেয়। যাক , স্বীকার করেই ফেললাম।
৩| ৩০ শে মে, ২০১৫ দুপুর ২:০৯
অবলা জাতি বলেছেন: লেখাটা উপভোগ করলাম। এক কথায় দূর্দান্ত.....
৪| ৩০ শে মে, ২০১৫ রাত ১০:১৬
রুমি৯৯ বলেছেন: "মানুষ জীবনের
যেকোনো পর্যায়ে থেকে , মর্যাদার জন্যে
লড়তে পারে।"...... অসাধারণ বক্তব্য
৫| ৩১ শে মে, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৪
নয়ন গাজী বলেছেন: বেশ ভালো লাগলো
৬| ৩১ শে মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২২
মিনুল বলেছেন: ভালো লাগল ।
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে মে, ২০১৫ ভোর ৪:০৬
ভয়ংকর বিশু বলেছেন: সবাই ভালোমতো পাশ করুক