নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আবু আঈমান বিন শাহাদাত

আবু আঈমান বিন শাহাদাত › বিস্তারিত পোস্টঃ

"মাযহাব" এখন উম্মতের বড় সমস্যা!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!

০২ রা অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১:৪৯

মুফতী মুহাম্মাদ শফী (রঃ) “জাওয়াহিরুল ফিকহ” গ্রন্থের “ওয়াহদাতে উম্মত” রিসালায় বলেছেনঃ

“রাজনীতি ও অর্থনীতির অঙ্গনে এবং পদ ও পদবীর প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে যে বাড়াবাড়ি ও সীমালঙ্ঘন তার প্রতিকার তো আমাদের সাধ্যে নেই। কিন্তু দ্বীনী ও ধর্মীয় কাজে নিয়োজিত দলগুলোর নীতি ও কর্মপন্থার যে বিরোধ তা বোধ হয় দূর করা সম্ভব। কারণ সবার লক্ষ্য অভিন্ন। আর লক্ষ্য অর্জনে সফলতার জন্য তা অপরিহার্য। যদি আমরা ইসলামের বুনিয়াদী উসূল ও মৌলনীতি সংরক্ষণের এবং নাস্তিকতা ও ধর্মহীনতার স্রোত মোকাবেলাকে সত্যিকার অর্থে মূল লক্ষ্য মনে করি তাহলে এটিই সেই ঐক্যের বিন্দু, যেখানে এসে মুসলমানদের সকল ফের্কা ও সব দল একত্রিত হয়ে কাজ করতে পারে আর তখনই এই স্রোতের বিপরীতে কোনো বলিষ্ঠ পদক্ষেপ কার্যকর হতে পারে।

কিন্তু বাস্তব অবস্থার দিকে তাকালে বলতে হয়, এই মূল লক্ষ্যটিই আমাদের দৃষ্টি থেকে গায়েব হয়ে গেছে। এ কারণে আমাদের সমস্ত সামর্থ্য এবং জ্ঞান ও গবেষণার সমুদয় শক্তি নিজেদের ইখতিলাফি মাসআলায় ব্যয় হচ্ছে। ওগুলোই আমাদের ওয়াজ, জলসা, পত্রিকা ও বই-পুস্তকের আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের এমন কর্মকান্ডে সাধারণ মানুষ এ কথা মনে করতে বাধ্য হচ্ছে যে, ইসলাম ধর্ম কেবল এই দুই-চার জিনিসেরই নাম। আরো আক্ষেপের বিষয় এই যে, ইখতিলাফী মাসআলাসমূহে যেই দিকটি কেউ অবলম্বন করেছে তার বিপরীতটিকে গোমরাহী এবং ইসলামের শত্রুতা আখ্যা দিচ্ছে। ফলে আমাদের যে শক্তি কুফুরি, নাস্তিকতা, ধর্মহীনতা এবং সমাজে বাড়তে থাকা বেহায়াপনার মোকাবেলায় ব্যয় হতে পারত তা এখন পরস্পর কলহ-বিবাদে ব্যয় হচ্ছে। ইসলাম ও ঈমান আমাদেরকে যে ময়দানে লড়াই ও আত্মত্যাগের আহবান জানায় সেই ময়দান শত্রুর আক্রমণের জন্য খালি পড়ে আছে। আমাদের সমাজ অপরাধ ও অন্যায়ে ভরপুর, আমল-আখলাক বরবাদ, চুক্তি ও লেনদেনে ধোঁকাবাজি, সুদ, জুয়া, মদ, শূকর, অশ্লীলতা, নির্লজ্জতা ও অপরাধপ্রবণতা আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মিশে গেছে।

প্রশ্ন হল, আম্বিয়া কেরামের উত্তরসূরী এবং দেশ ও ধর্মের প্রহরীদের নিজেদের মধ্যেকার মতপার্থক্যের বেলায় যতটা সংক্ষুব্ধ হতে দেখা যায় তার অর্ধেকও কেন সেসব খোদাদ্রোহীদের বেলায় দেখা যায় না? এবং পরস্পর চিন্তাগত মতপার্থক্যের বেলায় যেমন ঈমানী জোশ প্রকাশ পায় তা ঈমানের এই গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে কেন প্রকাশ পায় না? আমাদের বাকশক্তি এবং লেখনীশক্তি যেমন শৌর্যবীর্যের সাথে নিজেদের ইখতিলাফি মাসআলায় লড়াই করে তার সামান্যতম অংশও কেন ঈমানের মৌলিক বিষয়ের উপর আসা হুমকির মোকাবেলায় ব্যয় হয় না? মুসলমানদেরকে মুরতাদ বানানোর প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে আমরা সকলে কেন সিসাঢালা প্রাচীরের মতো রুখে দাঁড়াই না? সর্বোপরি আমরা এ বিষয়ে কেন চিন্তা করি না যে, নবী প্রেরণ ও কুরআন নাযিলের ঐ মহান উদ্দেশ্য, যা পৃথিবীতে বিপ্লব সৃষ্টি করেছে এবং যা পরকে আপন বানিয়ে নিয়েছে, যা আদম সন্তানদেরকে পশুত্ব থেকে মুক্ত করে মানবতার মর্যাদা দিয়েছে এবং যা সমগ্র দুনিয়াকে ইসলামের আশ্রয়কেন্দ্র বানিয়েছে তা কি শুধু এই সব বিষয়ই ছিল, যার ভিতর আমরা লিপ্ত হয়ে আছি। এবং অন্যদেরকে হেদায়েতের পথে আনার তরীকা ও পয়গম্বরসুলভ দাওয়াত দেওয়ার কি এটাই ছিল ভাষা, যা আজ আমরা অবলম্বন করেছি?

এখনো কি সময় হয়নি যে, ঈমানদারদের অন্তরগুলো আল্লাহর স্মরণ ও তার নাযিলকৃত সত্যের সামনে অবনত হবে …
শেষ পর্যন্ত তাহলে ঐ সময় কবে আসবে যখন আমরা শাখাগত বিষয়-আশয় থেকে কিছুটা অগ্রসর হয়ে ইসলামের মৌলিক নীতিমালার সংরক্ষণ এবং অবক্ষয়প্রাপ্ত সমাজের সংশোধনকে নিজেদের আসল কর্তব্য মনে করব। দেশের মধ্যে খৃস্টবাদ ও কমিউনিজমের সর্বগ্রাসী সয়লাবের খবর নিব। কাদিয়ানীদের হাদীস অস্বীকার ও ধর্ম বিকৃতির জন্য কায়েম করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে পয়গম্বরসুলভ দাওয়াত ও এসলাহের মাধ্যমে মোকাবেলা করব।

আর যদি আমরা এগুলো না করি এবং হাশরের ময়দানে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এ প্রশ্ন করেন যে, আমার দ্বীন ও শরীয়তের উপর এই হামলা হচ্ছিল, ইসলামের নামে কুফরি বিস্তার লাভ করছিল, আমার উম্মতকে আমার দুশমনের উম্মত বানানোর ধারাবাহিক প্রচেষ্টা চলছিল, কুরআন ও সুন্নাহর প্রকাশ্য বিকৃতি ঘটছিল, আল্লাহ ও রাসূলের প্রকাশ্য নাফরমানি করা হচ্ছিল তখন তোমরা ইলমের দাবীদারেরা কোথায় ছিলে? তোমরা এর মোকাবেলায় কতটা মেহনত এবং ত্যাগ স্বীকার করেছ? কতজন বিপথগামী ব্যক্তিকে পথে এনেছ? তো আমাদের ভেবে দেখা উচিত সেদিন আমাদের উত্তর কী হবে?”রাবেতাতুল আলামিল ইসলামী’র আল মাজমাউল ফিকহী (ফিকহী বোর্ড) ফুরুয়ী বিষয়ে ইখতিলাফের ব্যাপারে মন্তব্য করেছেনঃ
আকীদা ও বিশ্বাসগত বিষয়ে মতভেদ হচ্ছে يجب أن لا يكون অর্থাৎ তা না হওয়া অপরিহার্য। আর আহকাম ও বিধানের বিষয়ে যে মতভেদ তা لا يمكن أن لا يكون অর্থাৎ তা না হওয়া অসম্ভব।

এতে শায়খ ইবনে বায (রঃ) ও শায়খ আবদুল্লাহ উমর নাসীফ এর মতো সালাফী আলেমদের স্বাক্ষরও আছে।

ফুরুয়ী মাসয়ালায় এই ইখতিলাফ যা ‘না হওয়া অসম্ভব’ (لا يمكن أن لا يكون ) এগুলো কি আজকের যুগে শুরু হয়েছে?

এগুলো কি এক-দুই দিনে, দুই-এক বছরে বাহাছ-বিতর্ক করে সমাধান করা, ঐক্যমতে পৌঁছানো সম্ভব?

তাহলে মুসলিম উম্মাহ কি এখন এসব ফুরুয়ী ইখতিলাফের সমাধান বের করতে আর কোন মাসয়ালায় কোন ইমামের ইজতিহাদ উত্তম তা বের করতে গিয়ে সকল সময় ব্যয় করতে থাকবে?

নাকি মূল ও বড় বড় সমস্যার সমাধানে সময় দিবে?

ধরুন, বিতরের নামাজের ব্যাপারে ৫/৬ মাস বিভিন্ন মাদ্রাসায় হাঁটাহাটি করে, বিভিন্ন আলেমদের মতামত জেনে, তাদের সকল যুক্তি-দলীল জেনে, নিজেরা আবার সেগুলোর বিচার-বিশ্লেষণ করে আমরা আমাদের বুঝ অনুযায়ী একটা স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সামর্থ হলাম। এরপর আবার হটাৎ সামনে আসলো রফে-ইয়াদাইনের হাদিস, এরপর আত্তাহিয়াতুতে আঙ্গুল নাড়ানো, এরপর আসলো ঈদের নামাজে ১২ তাকবীরের হাদিস, এরপর আসলো তারাবীর নামাজের ৮ রাকাতের হাদিস, এরপর আসলো কোন দিন ঈদ – স্থানীয় চাঁদ নাকি বিশ্বব্যাপী চাঁদ এই আলোচনা ইত্যাদি।
এখন এই রকম প্রত্যেকটা মাসয়ালায় যদি আমরা ৩/৪ মাস করে হাঁটাহাঁটি করে সব পক্ষের মতামত, যুক্তি-তর্ক, দলীল-পত্র সাধ্যমতো যাচাই–বাছাই করে চলতে থাকি, আমাদের সারাটা জীবনই তো তাহলে এই পথে কেটে যাবে।

এইভাবে ফিকহের প্রত্যেকটা মাসয়ালায় সঠিক মত বের করার চেষ্টায় ব্রতী হওয়া কি প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জরুরী?

বর্তমানে উম্মতের এই দুর্যোগের সময়ে এসব ফুরুয়ী মাসয়ালার পিছনে কতটুকু সময় দেয়া যুক্তি-বুদ্ধি-ইনসাফ ও হিকমতের দাবী বলে আপনি মনে করেন?

আর কতটুকু সময় এখন জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ এর প্রস্তুতির জন্য দেয়া উচিত? বাংলাদেশে এখন কতজন আলেম নিজেই একজন মুজতাহিদ?

আর আমরা মুজতাহিদ আলেমকে খুঁজে না পেলে তো যে আলেমের কাছেই যাই, তিনি অন্য কোন না কোন মুজতাহিদ ইমামের ফতোয়া আমাদেরকে জানাবেন, তারপর আমরা তাঁর কথায় সেই ফতোয়ার উপর আমল করতে হবে।
কোন আলেমের কাছ থেকে ফুরুয়ী মাসয়ালার কোন ফতোয়া জানার সময় যদি কেউ (যে আরবী ভাষা জানে না, হাদিসে ও ফিকহ শাস্ত্র ইত্যাদি কিছুই জানে না) দলীল-প্রমাণ ছাড়াই সরাসরি ফতোয়া / মাসয়ালা জেনে নেয় এবং সেই অনুযায়ী আমল করে, তাহলে সেটা কি তার জন্য হারাম হবে?

যদিও ঐ আলেম তাদেরকে ২/৩ টি আয়াত কিংবা হাদিস শুনিয়ে দেনও, কিন্তু শুধু এই ২/৩ টি আয়াত কিংবা হাদিস দিয়েই তো আর সেই ফতোয়াটা আসেনি। সে তো ঐ আলেমের উল্লেখিত ফিকহের উসুল / হাদিসের বিরোধিতার ক্ষেত্রে গৃহীত মূলনীতি ইত্যাদি জানে না। এগুলো তার কাছে ‘চাইনিজ ভাষার’ মতো অপরিচিত।

এক্ষেত্রে কি সে শুধু ঐ আলেমের উপর আস্থা রেখে তাঁর জানানো ফতোয়ার উপর আমল করতে পারবে না? যদি পারে, তবে এটা কি তাক্বলীদ হবে না?

যদি দলীল ছাড়া মাসয়ালা জানার সুযোগ না থাকে, এমতাবস্থায় এই ব্যক্তি কিভাবে যে কোন আলেমের কাছ থেকে মাসয়ালা জানবেন? সে তো আরবী ভাষা, তাফসীর, হাদিস, ফিকহের উসুল ইত্যাদি কিছুই বুঝে না?
নাকি দ্বীন ইসলাম সাধারণ মুসলমানদের জন্য দলীল না বুঝলেও দলীলসহ মাসয়ালা জানতে বাধ্য করেছে?

এখন যদি এইভাবে কোন আলেমের কাছ থেকে দলীল-প্রমাণ ছাড়াই ফতোয়া জানা উপরুক্ত ব্যক্তির জন্য অনুমোদিত হয়, তাহলে আর কোন কোন ব্যক্তির জন্য এটা অনুমোদিত, আর কোন কোন ব্যক্তির জন্য এটা অনুমোদিত নয়, দয়া করে সলফে সালেহীন / মুজতাহিদ ইমামগণের মতামতসহ জানাবেন?

আর যদি আমরা দলীল-প্রমাণ যাচাই-বাছাই ছাড়াই কোন ব্যক্তির কথায়, তার মুখ থেকে কিছু হাদিস শুনেই আমাদের আমল পরিবর্তন করি, তাহলে কি আমরা মুজতাহিদ ইমামের তাকলীদের পরিবর্তে, এক সাধারণ ব্যক্তির তাকলীদ করা শুরু করলাম না? কারণ এই মাসয়ালায় আমরা তার উপর নির্ভর করছি। এমন নয় যে সে সকল দলীল-প্রমাণ ইত্যাদি বুঝিয়েছে এবং এরপর আমরা আমাদের আমল পরিবর্তন করেছি।

প্রশ্ন দুই ধরে নিন, আমরা হানাফী মাজহাবের অনুসারী। আমরা বর্তমানে বিতর নামাজ সেইভাবে আদায় করি যেভাবে হানাফী মাজহাবে উল্লেখ আছে। এখন যদি আমরা হটাৎ একদিন নীচের এই দুইটা হাদিস কোন সাধারণ শিক্ষিত মুসলমান ভাই এর মুখ থেকে শুনিঃ

রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিতরের প্রথম দুই রাকাতে সালাম ফেরাতেন না।’ আরেকটি বর্ণনায় আছে: ‘তিনি তিন রাকাত বিতর পড়তেন আর শুধু শেষ রাকাতে বসতেন।” [আন-নাসাঈ ৩:২৩৪, আল বায়হাকী ৩:৩১]

ইবনে ওমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এর বর্ণনা যে তিনি সালামের মাধ্যমে প্রথম দুই রাকাতকে তৃতীয়টির থেকে আলাদা করতেন, এবং তিনি বলেন, রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এভাবে পড়তেন। [ইবনে হিব্বান ২৪৩৫]

এই দুইটা হাদিস শুনিয়ে আমাদের ঐ ভাই আমাদেরকে বললেন, বিতরের নামাজ হানাফী নিয়মে পড়লে হবে না। বরং হয় তিন রাকাত পড়লে হয় মাঝখানে না বসে সরাসরি ৩য় রাকাতে উঠে দাঁড়াতে হবে। অথবা ২ রাকাত পর সালাম ফিরিয়ে আলাদা এক রাকাত পড়তে হবে।

এখন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ অনুসরণের মানে কি এটাই যেঃ

আমরা আর কোন যাচাই-বাছাই না করে, এই সাধারণ শিক্ষিত ভাই এর কথায় আমাদের বিতরের নামাজ পরিবর্তন করে ফেলবো?

ধরুন, আমরা তো আরবী জানি না, এই হাদিসের অনুবাদ এই ভাইরা সঠিকভাবে পেয়েছেন কিনা, সেটা আমরা নিশ্চিত হতে পারছি না।

যদি সাধারণ শিক্ষিত ভাই না হয়ে একই হাদিস আমরা জানতে পারি কোন মসজিদের ইমাম, কিংবা কোন মাদ্রাসার ছাত্র এর কাছে, যিনি আমাদেরকে নিশ্চয়তা দিচ্ছেন, যে এর অনুবাদ ঠিকই আছে, তাহলে কি আমরা সাথে সাথে তার কথায় আমাদের বিতর নামাজ পরিবর্তন করে ফেলবো?

আমরা তো এখনো নিশ্চিত না, এটা জাল নাকি জয়ীফ নাকি সহীহ?

আমরা যদি একই হাদিস পাই, কোন মাদ্রাসার শিক্ষক থেকে যিনি আমাদেরকে এই ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিচ্ছেন যে, এই হাদিস সহীহ। তাহলেই কি সাথে সাথে আমরা আমাদের বিতরের নামাজ পরিবর্তন করে ফেলবো?

অথচ তিনি এখনো আমাদেরকে জানাতে পারছেন না যেঃ

– বিতরের নামাজের ব্যাপারে অন্য আর কি কি হাদিস আছে, সেগুলির সাথে এই হাদিসের সম্পর্ক কি?
– অন্য কোন হাদিসের মাধ্যমে এই হাদিস কি মানসুখ হয়ে গেছে কিনা?
– অন্য কোন হাদিস এই হাদিসের অর্থকে খাস করে দিচ্ছে কিনা?
– এই হাদিসে ব্যবহৃত শব্দগুলোর অর্থ কি জাহির (সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট) নাকি এর শব্দগুলো থেকে বিভিন্ন অর্থ নেয়ার সুযোগ আছে?
– এই হাদিস যদি অন্যান্য সনদে বর্ণিত হয়ে থাকে – তাহলে এই সনদ থেকে শক্তিশালী অন্য কোন সনদের হাদিসের মতনের সাথে
এর তারতম্য আছে কিনা?
– এই হাদিসের রাবীরা নিজেরা এই হাদিসের উপর আমল করছেন কিনা?
– এই হাদিস ফেলী হলে একই ব্যাপারে ক্বাওলী কোন হাদিসের সাথে এর বিরোধ আছে কিনা?
– এই হাদিসে ব্যবহৃত শব্দের অর্থ কোন স্তর থেকে নেয়া উচিত হবেঃ ইবারাহ, দ্বলালাহ, ইকতিদা, নাকি ইশারাহ স্তর থেকে?
– এই হাদিসের উপর ভিত্তি করে সাহাবা, তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীনগণ (রাদিয়াল্লাহুম আলাইহিম আজমাঈন) কিভাবে আমল
করেছেন?
– সাহাবাগণের (রঃ) আমলে এই হাদিসের পক্ষে-বিপক্ষে আমল পাওয়া যায় কিনা?
– এই হাদিসের ব্যাখ্যায় তাবেয়ীন ও তাবে-তাবেয়ীনগণ কি বলেছেন? তাঁদের মাঝে এর ব্যাখ্যায় দ্বিমত ছিলো কিনা?
– এই হাদিসের সাথে অন্য হাদিসের বিরোধ থাকলে এই হাদিসগুলোর মধ্যে সমন্বয় হবে কিনা? নাকি একটির উপর আরেকটি তারজীহ (প্রাধান্য) পাবে, নাকি দুইটার উপরই আমল স্থগিত থাকবে?
– আবার সমন্বয় হলে কিভাবে হবে? এই হাদিসগুলোর ব্যাপারে কোন আলেমের সমন্বয় উত্তম?
– তারজীহ দেয়া হলে কিসের ভিত্তিতে তারজীহ দেয়া হবে? কোন মুজতাহিদের তারজীহ দেয়া এই ব্যাপারে উত্তম হয়েছে?
– সার্বিকভাবে এই হাদিসের অর্থ ও ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অমুক ইমামের ইজতিহাদ সঠিক নাকি অন্য কোন মুজতাহিদ ইমামের ইজতিহাদ সঠিক?
– যদি দুইজন মুজতাহিদ ইমামের ইজতিহাদে, এই হাদিসের ব্যাখ্যা ও প্রয়োগে পার্থক্য হয়ে থাকে, তাহলে দুই মুজতাহিদ ইমামের মাঝে এই হাদিস থেকে মাসয়ালা ইস্তেমবাতের ক্ষেত্রে কার ফিকহের উসুল (দলীল থেকে হুকুম বের করার মূলনীতি) অধিক শক্তিশালী ও অধিক উপযোগী ছিলো?
– এই দুই ইমামের ইজতিহাদগত মতপার্থক্যের ব্যাপারে হাদিসের ও ফিকহের অন্যান্য ইমামরা কি কি বক্তব্য দিয়েছেন, যার মাধ্যমে বুঝা যায়, এই মাসয়ালায় কোন ইমামের ইজতিহাদ সঠিক?
– যদি পরবর্তী ইমামরাও এই মাসয়ালায় দ্বিধা-বিভক্ত থাকেন, তাহলে কোন পক্ষের উসুল এই ক্ষেত্রে শক্তিশালী ছিলো? আর আমরা কোন কোন ভিত্তির উপর এই দুই উসুলের মাঝে যে কোন একটিকে শক্তিশালী মনে করে সেই পক্ষের মতকে অধিক গ্রহণযোগ্য মনে করছি? ইত্যাদি

উপরুক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর না শুনে / না জেনে উপরুক্ত হাদিস দুটো শুনা মাত্রই কি সাথে সাথে আমাদের জন্য আমল পরিবর্তন করে ফেলা উচিত হবে?

আমাদের দেশের এই রকম কতজন আলেম আছেন বলে আপনি মনে করেনঃ যারা যে কোন ব্যাপারে একটি হাদিস শুনলেই এই হাদিসের ব্যাপারে উপরুক্ত প্রশ্নসমূহের উত্তর সঠিকভাবে দিতে সক্ষম হবেন?

যারা পারবেন, তারাও কি তাৎক্ষনিক উত্তর দিতে পারবেন? সেটা না পারলে, গড়ে আমাদের দেশের আলেমদের জন্য এই সকল ব্যাপারে প্রশ্নের উত্তর দিতে কতক্ষণ / কতদিন সময় লাগবে?

ধরুনঃ আমরা ঐ মাদ্রাসার শিক্ষকের কথায় আমাদের নামাজ পরিবর্তন করে ফেললাম। পরে আবার আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব আরেকটি হাদিস আমাদেরকে শুনালেন যে,
في كل ركعتين التحية
“প্রতি দুই রাকাতে রয়েছে তাশাহুদ”। (সহীহ মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ, বাইহাকী, আবু ইয়ালা, আবু আওনাহ)
এখন আবার আমরা আরেক চিন্তায় পড়লাম। এই হাদিসে দেখা যাচ্ছেঃ আমাদেরকে আবার বিতরের ২ রাকাতের পর বসতে হবে। আবার আমরা বিভিন্ন আলেমের কাছে ছুটাছুটি করতে থাকলাম।

এখন আমরা কি আবার আমাদের বিতরের নামাজ হানাফী মাজহাবের ফতোয়া অনুযায়ী পড়া শুরু করবো?

আমরা তো সব সময় এমন আলেমকে আমাদের পাশে পাইনা, যিনি সহজে আমাদেরকে এসব বিষয়ের উত্তর দিতে পারবেন? বিভিন্ন মাজহাবের সব-কিতাব, সকল হাদিসের কিতাব, সেগুলোর শরাহতো দেশের অধিকাংশ জেলায় খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেসব কিতাবের উপর ভিত্তি করে এসব মাসয়ালায় বিভিন্ন মাজহাবের সিদ্ধান্ত বিস্তারিত যাচাই-বাছাই করে আলেমরা একটা স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবেন, এই মাসয়ালায় কোন ইমামের ইজতিহাদ সত্যের অধিক নিকটবর্তী?

উপরে উল্লেখিত যে কোন স্তরের ব্যক্তি (সাধারণ শিক্ষিত / মসজিদের ইমাম / মাদ্রাসার শিক্ষক) যিনি নিজে একজন মুজতাহিদ নন, তিনি যদি শুধুমাত্র কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করে, একই ব্যাপারে অপর কোন মুজতাহিদ ইমামের রায় / মতামত উল্লেখ না করে, আমাদেরকে বলেন যে, আমরা যেন আমাদের নামাজের নিয়ম পরিবর্তন করি, তাহলে কি আমরা ঐ ব্যক্তির কথায় আমাদের নামাজ পরিবর্তন করে ফেলবো?

অথচ ঐ ব্যক্তি নিজে ইজতিহাদ করার কিংবা মাসয়ালা ইস্তেম্বাত করার ক্ষমতা রাখেন না এবং তিনি এই মাসয়ালায় ইমামগণের মতামতসমূহ তুলনামূলক পর্যালোচনাও করেননি এবং তুলনামূলক পর্যালোচনা করার জন্য যে ইলমী যোগ্যতা থাকা দরকার, যে সব কিতাব দরকার তা উনার আছে কিনা, সেটাও আমরা জানি না।

এছাড়াও বিভিন্ন মুজতাহিদ ইমামগণের রায়ের এই তুলনামূলক বিচার-বিশ্লেষনের ব্যাপারে আমরা যুগ যুগ ধরে স্বনামধন্য ওলামায়ে-কেরামগণের (রঃ) মতামতকে প্রাধান্য দিবো, নাকি উপরুক্ত ঐ ব্যক্তির (সাধারণ শিক্ষিত / মসজিদের ইমাম / মাদ্রাসার শিক্ষক) মতামতকে প্রাধান্য দিবো? ইমাম আব্দুল্লাহ আজ্জাম (রঃ) ‘এসো কাফেলাবদ্ধ হই’ বই এ উল্লেখ করেছেনঃ
إن الشعب الأفغاني أمي تربى على المذهب الحنفي ولم يعايش المذهب الحنفي في أفغانستان مذهب آخر، ولذا فكثير منهم يظن أن كل من يخالف المذهب الحنفي ليس من الإسلام، وعدم وجود مذاهب أخرى في أفغانستان أظهر التعصب للمذهب الحنفي في قلوب الأفغان، فعلى كل من أراد الجهاد مع الشعب الأفغاني أن يحترم المذهب الحنفي.
إن الشعب الأفغاني شعب وفي عنده مروءة ورجولة وإباء ولا يعرف المراوغة ولا المداهنة، فإذا أحب شخصا بذل لأجله دمه ونفسه، وإذا بغض لا يقوم لبغضه شيء. وترك بعض هيئات الصلاة في بداية الإختلاط بهم، تعطيك فرصة غالية حتى تصل إلى قلوبهم فتوجههم وتربيهم، وتصلح في أمر دينهم ودنياهم، وقد أفتى أحمد بن حنبل ومالك وابن تيمية بمثل هذا] – الحق بالقافلة [

“যেহেতু আফগানিস্থানে হানাফী মাজহাব ছাড়া অন্য কোন মাজহাব ছিলো না, তাই এখানকার সাধারণ মানুষ হানাফী মাজহাবের খিলাফ কিছু দেখলে সেটাকে দ্বীনের খেলাফ মনে করেন। … তাই যারা আফগানিস্তানে জিহাদ করতে ইচ্ছুক, তারা হানাফী মাজহাবকে সম্মান করে চলতে হবে।

…… তাই আফগানদের সাথে প্রথম প্রথম মিশতে গেলে একজনের উচিত হবেঃ নামাজে বিশেষ বিশেষ কাজ না করা (অনুবাদক নোটঃ অর্থাৎ যে সব কাজ হানাফী মাজহাব অনুযায়ী নামাজে নেই, যেমনঃ রফে ইয়াদাইন ইত্যাদি), যাতে সে তাদের হৃদয়ে স্থান করে নিতে পারে। …এ ব্যাপারে ইমাম আহমাদ (রঃ) , ইমাম মালেক (রঃ) ও ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রঃ) এর ফতোয়া রয়েছে। ”।

দেখা যাচ্ছে, ইমাম আব্দুল্লাহ আজ্জাম (রঃ, আল্লাহ তাঁকে শহীদ হিসেবে কবুল করুন) এখানে জিহাদের স্বার্থে নামাজের কোন কোন সুন্নত যা হানাফী মাজহাবে নেই, তা আরব সালাফী মুজাহিদীনদেরকে না করতে বলছেন, যাতে তারা সাধারণ আফগানদের হৃদয়ে স্থান করে নিতে পারেন।

যাতে হানাফী-আফগান-আনসার আর সালাফী-আরব-মুহাজিরের মাঝে কোন মতবিরোধ সৃষ্টি না হয়। যাতে সাধারণ আনসারদের মনে মুজাহিদদের ব্যাপারে কোন ভুল ধারনার সৃষ্টি না হয়।

আরো উল্লেখ্য, এর কাছাকাছি ফতোয়া ইমাম আহমাদ (রঃ) , ইমাম মালেক (রঃ) ও ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রঃ) দিয়েছেন বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

তাহলে বুঝা যাচ্ছে, এই ফতোয়া শুধু তাঁর একক ফতোয়া নয়, বরং এই ব্যাপারে সলফে সালেহীনদেরও ফতোয়া রয়েছে।

এখন কোন আহলে-হাদিস / সালাফী ভাই যদি বাংলাদেশে অধিকাংশ হানাফী মাজহাবের অনুসারী মুসলমানদের সাথে মিলেমিশে এবং ঐক্যবদ্ধভাবে জিহাদের স্বার্থে এই ফতোয়ার উপর আমল করে নামাজে রফে ইয়াদাইন ও অন্যান্য সুন্নাহ যা হানাফী মাজহাবে প্রচলিত নয় সেগুলো না করেন, তাহলে আপনি তার ব্যাপারে কি মনে করেন?

এছাড়াও রাসুলুল্লাহ (সাঃ) উম্মত ফিতনায় পড়তে পারে, ভুল বুঝতে পারে এই আশংকায় কাবাঘর পুনঃনির্মান করতে যাননি। এখন এই দেশের অধিকাংশ সাধারণ হানাফী মুসলমান ভুল বুঝতে পারেন, তখন তাওহীদের সঠিক কথাই তাদের সামনে তুলে ধরা যাবে না, জিহাদের ব্যাপারে তাদেরকে তাহরিদ করা যাবে না, তাওহীদ ও জিহাদের পথে তাদেরকে শরীক করা কষ্টকর হবে – এই আশংকায় কোন আহলে হাদীস / সালাফী ভাই যদি নামাজে রাফে-ইয়াদাইন ও অন্যান্য সুন্নাহ যা হানাফী মাজহাবে প্রচলিত নয় সেগুলো না করেন তবে এই ভাই এর ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কি হবে?

অনুরুপভাবে কোন আলেম যদি একই ফতোয়ার কারণে নিজে রফে ইয়াদাইন ইত্যাদিকে উত্তম মনে করলেও এদেশের অধিকাংশ হানাফী মুসলমানদেরকে সাথে নিয়ে জিহাদের স্বার্থে এর উপর আমল না করেন, তাহলে তিনি কি জিহাদের জন্য অধিক কুরবানী করছেন না? নিজের মতামতকে কুরবানী দিচ্ছেন না?
একই আলেম যদি একই কারণে এই সব এখতেলাফী মাসয়ালায় কথা না বলেন, বরং ফুরুঈ মাসয়ালার ক্ষেত্রে এই এলাকার অধিকাংশ মুসলমান যে পন্থার উপর আছেন সেই পন্থা অনুযায়ী নিজে চলেন (অর্থাৎ হানাফী মাজহাব অনুযায়ী) এবং হানাফী মাজহাব অনুযায়ী ফতোয়া দেন, তাহলে এই আলেমের ব্যাপারে আপনার ভাষ্য কি? জিহাদের জন্য তিনি কি নিজের মতামতকে কুরবানী দিয়ে অধিক সওয়াবের ভাগীদার হচ্ছেন না?
ধরুন, অন্য একজন আলেম যিনি জিহাদের পথে আছেন কিন্তু ইমাম আব্দুল্লাহ আজ্জাম (রঃ) এর এই ফতোয়ার উপর আমল না করে, বিভিন্ন ফুরুয়ী মাসয়ালায় নিজ এলাকার অধিকাংশ মানুষের মাজহাবের বিপরীত আমল করেন, সেগুলো প্রচার ও প্রসার করেন। উপরুক্ত আলেম ও এই আলেমের মাঝে আপনার দৃষ্টিতে কে বেশী প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন এবং কে বেশী হিকমতের অনুসারী?
এই সব ইখতেলাফী ফুরুয়ী মাসয়ালার বিভিন্ন মতের ব্যাপারে ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রঃ) বলেছেনঃ
وَقَاعِدَتُنَا فِي هَذَا الْبَابِ أَصَحُّ الْقَوَاعِدِ أَنَّ جَمِيعَ صِفَاتِ الْعِبَادَاتِ مِنْ الْأَقْوَالِ وَالْأَفْعَالِ إذَا كَانَتْ مَأْثُورَةً أَثَرًا يَصِحُّ التَّمَسُّكُ بِهِ لَمْ يُكْرَهْ شَيْءٌ مِنْ ذَلِكَ بَلْ يُشْرَعُ ذَلِكَ كُلُّهُ كَمَا قُلْنَا فِي أَنْوَاعِ صَلَاةِ الْخَوْفِ وَفِي نَوْعَيْ الْأَذَانِ التَّرْجِيعِ وَتَرْكِهِ وَنَوْعَيْ الْإِقَامَةِ شَفْعِهَا وَإِفْرَادِهَا وَكَمَا قُلْنَا فِي أَنْوَاعِ التَّشَهُّدَاتِ وَأَنْوَاعِ الِاسْتِفْتَاحَاتِ وَأَنْوَاعِ الِاسْتِعَاذَاتِ وَأَنْوَاعِ الْقِرَاءَاتِ وَأَنْوَاعِ تَكْبِيرَاتِ الْعِيدِ الزَّوَائِدِ وَأَنْوَاعِ صَلَاةِ الْجِنَازَةِ وَسُجُودِ السَّهْوِ وَالْقُنُوتِ قَبْلَ الرُّكُوعِ وَبَعْدَهُ وَالتَّحْمِيدِ بِإِثْبَاتِ الْوَاوِ وَحَذْفِهَا وَغَيْرِ ذَلِكَ لَكِنْ قَدْ يُسْتَحَبُّ بَعْضُ هَذِهِ الْمَأْثُورَاتِ وَيُفَضَّلُ عَلَى بَعْضٍ إذَا قَامَ دَلِيلٌ يُوجِبُ التَّفْضِيلَ وَلَا يُكْرَهُ الْآخَرُ .
“এ বিষয়ে আমাদের নীতি, আর এটাই বিশুদ্ধতম নীতি, এই যে, ইবাদতের পদ্ধতির বিষয়ে (যেসব ক্ষেত্রে মতভেদ রয়েছে তাতে) যে পদ্ধতি সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য আছার রয়েছে তা মাকরূহ হবে না; বরং তা হবে শরীয়াত সম্মত। সালাতুল খওফের বিভিন্ন পদ্ধতি, আযানের দুই নিয়ম : তারজীযুক্ত বা তারজীবিহীন, ইকামতের দুই নিয়ম : বাক্যগুলো দুইবার করে বলা কিংবা একবার করে, তাশাহহুদ, ছানা, আউযু এর বিভিন্ন পাঠ, কুরআনের বিভিন্ন কিরাআত, এই সবগুলো এই নীতিরই অন্তর্ভূক্ত। এভাবে ঈদের নামাযের অতিরিক্ত তাকবীর-সংখ্যা (ছয় তাকবীর বা বারো তাকবীর), জানাযার নামাযের বিভিন্ন নিয়ম, সাহু সিজদার বিভিন্ন নিয়ম, কুনুত পাঠ, রুকুর পরে বা পূর্বে, রাব্বানালাকাল হামদ, ওয়াসহ অথবা ওয়া ছাড়া, এই সবগুলোই শরীয়াতসম্মত। কোনো পদ্ধতি কখনো উত্তম হতে পারে কিন্তু অন্যটি মাকরূহ নয়”। (মাজমূউল ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া ২৪/২৪২-২৪৩; আল-ফাতাওয়া আল কুবরা ১/১৪০)
ইবনুল কাইয়্যিম (রঃ) যাদুল মাআদ গ্রন্থে’ ফজরের সালাতে কুনুত পড়া প্রসঙ্গে বলেছেনঃ
وهذا من الاختلاف المباح الذي لا يعنف فيه من فعله ولا من تركه وهذا كرفع اليدين في الصلاة وتركه وكالخلاف في أنواع التشهدات وأنواع الأذان والإقامة وأنواع النسك من الإفراد والقران والتمتع
“এটা ওইসব মতভেদের অন্তর্ভূক্ত যাতে কোনো পক্ষই নিন্দা ও ভর্ৎসনার পাত্র নন। এটা ঠিক তেমনই যেমন সালাতে রাফয়ে ইয়াদাইন করা বা না করা, তদ্রূপ আত্তাহিয়্যাতুর বিভিন্ন পাঠ, আযান-ইকামাতের বিভিন্ন ধরন, হজ্বের বিভিন্ন প্রকার – ইফরাদ, কিরান, তামাত্তু বিষয়ে মতভেদের মতোই”। (যাদুল মায়াদ, ১/২৫৬)
দেখা যাচ্ছে, এই দুই সম্মানিত ইমামের (রঃ) মতে আমাদের সমাজে বর্তমানে যে সকল ফুরুয়ী ইখতিলাফী মাসয়ালা নিয়ে প্রচুর সময় ব্যয় করা হচ্ছে, তার বেশীরভাগকেই তাঁরা মুস্তাহাব পর্যায়ের বলছেন। যেমনঃ

– রাফে ইয়াদাইন করা বা না করা।
– ইকামাতের কথাগুলো দুইবার বনাম একবার বলা।
– ঈদের নামাজের ৬ তাকবীর বনাম ১২ তাকবীর।
– সিজদা সাহুর বিভিন্ন নিয়ম।
– দুয়া কুনুত রুকুর আগে বনাম রুকুর পরে। ইত্যাদি।

অর্থাৎ এগুলো করলে কিংবা না করলে নামাজের কোন ক্ষতি হবে না। নামাজ পুরোপুরিই আদায় হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। এসব বেশীরভাগ মাসয়ালায় এক ইমামের মতে এক পদ্ধতি উত্তম এবং অন্য ইমামের মতে অপর কোন পদ্ধতি উত্তম।
এই দুই সম্মানিত ইমামের (রঃ) কথাকে সামনে রেখে, ফিকহের ফুরুয়ী মাসয়ালায় কোন পদ্ধতি উত্তম, সেটা নিয়ে বাহাস-বিতর্ক করাকে, এই ব্যাপারে আলাদা বক্তৃতা দেয়াকে, এই ব্যাপারে খুতবাহ দেয়াকে, এই ব্যাপারে বারংবার কথা বলাকে, এই ব্যাপারে বিভিন্ন আলোচনা করাকে আপনি কোন দৃষ্টিতে দেখেন?
পূর্ণ তাওহীদের সঠিক প্রচার-প্রসার, দ্বীন কায়েম, ইসলামী শরীয়াতকে বিজয়ী করা, মজলুম মুসলমানদেরকে সাহায্য করা, অধিকৃত মুসলিম এলাকাসমূহ শত্রু মুক্ত করা ইত্যাদি বিভিন্ন কাজের অগ্রাধিকারের মধ্যে এই রকম আলোচনা-বিতর্ক-বাহাসের স্থান কোথায়? উম্মাহর এই দুরবস্থার মধ্যে এসব মাসয়ালায় উত্তম-অনুত্তম নিয়ে সময় ক্ষেপন করা কি যুক্তিসংগত বলে আপনি মনে করেন?
এসব মাসয়ালার পিছনে কতটুকু সময় ব্যয় করা যাবে বলে আপনি মনে করেন?
শাইখ সালিহ আল উসাইমিন (রঃ) ‘আল উসুল মিন ইলমিল উসুল’ বই এ ‘তাকলীদ’ অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেনঃ
واصطلاحاً: اتباع من ليس قوله حجة.
يكون التقليد في موضعين:
الأول: أن يكون المقلِّد عاميًّا لا يستطيع معرفة الحكم بنفسه ففرضه التقليد؛ لقوله تعالى: ) فَاسْأَلوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لا تَعْلَمُونَ)(النحل: الآية43)، ويقلد أفضل من يجده علماً وورعاً، فإن تساوى عنده اثنان خير بينهما.
الثاني: أن يقع للمجتهد حادثة تقتضي الفورية، ولا يتمكن من النظر فيها فيجوز له التقليد حينئذ، واشترط بعضهم لجواز التقليد أن لا تكون المسألة من أصول الدين التي يجب اعتقادها؛ لأن العقائد يجب الجزم فيها، والتقليد إنما يفيد الظن فقط.
অর্থাৎ, “তাকলীদ হচ্ছে এমন কারো অনুসরণ করা যার কথা হুজ্জত নয়। …
তাকলীদ দুইটি ক্ষেত্রে করা হয়ঃ
১। যখন মুকাল্লিদ হচ্ছেন একজন আ’ম (সাধারণ) ব্যক্তি যার নিজে নিজে শরীয়াতের হুকুম-আহকাম জানার সামর্থ নেই। এই ব্যক্তির উপর তাক্বলীদ ফরজ। … তাই এই ব্যক্তি এমন এক ব্যক্তির তাক্বলীদ করবে যাকে সে ইলম ও তাকওয়ার অধিকারী বলে জানে। …
২। মুজতাহিদ, যখন নতুন কোন বিষয়ের সম্মুখীন হন এবং এই ব্যাপারে তার সুযোগ হয়নি ইজতিহাদ করার, এই ক্ষেত্রে তার জন্য অনুমতি আছে তাকলীদ করার। …”
একই বই এ শাইখ উসাইমিন (রঃ) তাকলীদের প্রকারভেদ উল্লেখ করতে গিয়েঃ সেটাকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন। তিনি বলেনঃ
“প্রথম ভাগ হচ্ছেঃ সাধারণ তাক্বলিদ যা হচ্ছে দ্বীনের সকল ব্যাপারে যে কোন এক মাজহাবের সকল করণিয় ও বর্জনীয় মেনে চলা।
আলেমরা এই ব্যাপারে মতবিরোধ করেছেন। পরবর্তী যুগের আলেমদের কেউ কেউ এই ব্যক্তির উপর এটা ওয়াজিব বলেছেন কারণ সে ইজতিহাদ করতে অক্ষম (অনুবাদক নোটঃ এই ইজতিহাদ করতে যে কোন ইমাম কোন মাসয়ালায় উত্তম ফতোয়া দিয়েছেন)। অন্যরা এটা তার জন্য হারাম বলে উল্লেখ করেছেন কারণ এর মাধ্যমে রাসুল (সাঃ) ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তিকে সকল ক্ষেত্রে অনুসরণের জন্য নির্ধারিত করা হচ্ছে”।দেখা যাচ্ছেঃ শাইখ উসাইমিন (রঃ) সাধারণ মুসলমানদের জন্য তাকলীদ ওয়াজিব বলে উল্লেখ করেছেন।
শাইখ উসাইমিন (রঃ) এর উপরুক্ত কথার ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কি হবে? আপনি উনার সাথে এই ব্যাপারে একমত পোষণ করেন? একমত পোষণ না করলে, দয়া করে বিস্তারিত ভাবে জানাবেন।
দেখা যাচ্ছে, শাইখ উসাইমিন (রঃ) মাজহাবকে অস্বীকার করেন নি। এর প্রয়োজনীয়তাকে তিনি অস্বীকার করেন নি। বরং যে কোন এক মাজহাব সর্বদা মানার ক্ষেত্রে আলেমদের মতবিরোধ রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। তারপর তিনি এই দুই মতের মধ্যে তাঁর মতে যেটা সঠিক, সেই মতের পক্ষে কথা বলেছেন।
এই মতবিরোধের এক পক্ষে আছেনঃ ইমাম নববী (রঃ) এর মতো আলেম ও ফকীহ। অন্য দিকে আছেনঃ ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রঃ) এর মতো আলেম। ইমাম নববী (রঃ) বলেছেনঃ
ووجهه انه لو جاز اتباع أي مذهب شاء لا فضى إلى ان يلتقط رخص المذاهب متبعا هواه ويتخير بين التحليل والتحريم والوجوب والجواز وذلك يؤدى إلى انحلال ربقة التكليف بخلاف العصر الاول فانه لم تكن المذاهب الوافية بأحكام الحوادث مهذبة وعرفت: فعلى هذا يلزمه ان يجتهد في اختيار مذهب يقلده على التعيين
“ব্যক্তি তাকলীদের অপরিহার্যতার কারণ এই যে, মুক্ত তাকলীদের অনুমতি দেয়া হলে প্রবৃত্তি তাড়িত মানুষ সকল মাজহাবের অনুকূল বিষয়গুলোই শুধু বেছে নিবে। ফলে হালাল-হারাম ও বৈধ-অবৈধ নির্ধারণের এখতিয়ার এসে যাবে তার হাতে। প্রথম যুগে অবশ্য ব্যক্তি তাকলীদ সম্ভব ছিলো না। কেননা ফিকাহ বিষয়ক মাজহাবগুলো যেমন সুবিন্নস্ত ও পূর্ণাংগ ছিলো না তেমনি সর্বত্র সহজলভ্যও ছিলো না। কিন্তু এখন তা সুবিন্যস্ত ও পূর্ণাংগ আকারে সর্বত্র সহজলভ্য। সুতরাং যে কোন একটি মাজহাব বেছে নিয়ে একনিষ্টভাবে তা অনুসরণ করাই এখন অপরিহার্য”। (আল মাজমু শরহুল মুহায্যাব, ১/১৯)
অপরদিকে ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রঃ) সর্বদা একই মাজহাব মানা জরুরী এই মতের বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ
وقال: من التزم مذهباً معيناً، ثم فعل خلافه من غير تقليد لعالم آخر أفتاه، ولا استدلال بدليل يقتضي خلاف ذلك، ولا عذر شرعي يقتضي حل ما فعله، فهو متبع لهواه فاعل للمحرم بغير عذر شرعي، وهذا منكر، وأما إذا تبين له ما يوجب رجحان قول على قول إما بالأدلة المفصلة إن كان يعرفها ويفهمها، وإما بأن يرى أحد الرجلين أعلم بتلك المسألة من الآخر، وهو أتقى لله فيما يقوله، فيرجع عن قول إلى قول لمثل هذا، فهذا يجوز بل يجب، وقد نص الإمام أحمد على ذلك. الفتاوي الكبرى (4/625) .
“যে ব্যক্তি কোন একটি নির্দিষ্ট মাজহাব অনুসরণ করে এবং এরপর অপর কোন আলেমের তাকলীদ না করেই যিনি তাকে আরেকটি ফতোয়া দিয়েছেন কিংবা এমন কোন দলীলের ভিত্তি ছাড়াই যা তার মাজহাবের ফতোয়ার বাইরে তাকে আমল করতে বাধ্য করে কিংবা শরীয়াতের কোন রুখসত ছাড়াই যদি সেই মাজহাবের বিরোধি কোন ফতোয়া অনুযায়ী আমল করে, তাহলে সে ব্যক্তি নিজের নফসের অনুসরণ করছে, এমন হারাম কাজ করছে, যে ব্যাপারে শরীয়াতের কোন ছাড় নেই। এটা অন্যায় ও গুনাহর কাজ।
কিন্তু যদি তার কাছে বিস্তারিত দলীল-প্রমাণের কারণে কিংবা দুইজনের মধ্যে একজনকে এই মাসয়ালায় অধিক ইলমের অধিকারী মনে হওয়ায় এবং এই ব্যাপারে তিনি যা বলেছেন তা তাকওয়ার অধিক নিকটবর্তী মনে হওয়ায় তার কাছে এটা পরিস্কার হয়ে যায় যে, এক ইমামের কথার চেয়ে এই ব্যাপারে অন্য এক ইমামের কথা অধিক নির্ভরযোগ্য এবং এই কারণে তিনি একজনের ফতোয়ার বদলে অন্যজনের ফতোয়াকে ছেড়ে দেন, তাহলে সেটা জায়েজ, বরং সেটা ওয়াজিব। এ ব্যাপারে ইমাম আহমেদের একটি উক্তি রয়েছে”। (ফাতওয়া আল কুবরা, ৪/৬২৫)
ইমাম নববী (রঃ) এর কথাতো সুস্পষ্ট। তিনি বর্তমান যুগে সবার জন্য যে কোন এক মাজহাব মানার ব্যাপারে মত দিয়েছেন। ইচ্ছেমতো বিভিন্ন মাজহাবের বিভিন্ন ফতোয়া অনুসরণ উচিত নয় বলে উল্লেখ করেছেন।
আর ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রঃ) এর মত থেকে তো এতটুকু নিশ্চিত যে তাঁর মতেঃ
– যে কোন একটা মাজহাব মানার সুযোগ আছে। এটাকে তিনি হারাম বলে উল্লেখ করেন নি।
– বরং অন্য কোন ইমামের ফতোয়া কিংবা পর্যাপ্ত দলীল-প্রমাণ ছাড়া নিজ মাজহাবের ফতোয়াকে ছেড়ে দেয়াকে তিনি নফসের খায়েশাত বলে উল্লেখ করেছেন।
– শুধুমাত্র কোন মাসয়ালায় নিশ্চিত জ্ঞানের অধিকারী হলেঃ নিজ মাজহাবের ফতোয়াকে ত্যাগ করে অপর ইমামের ফতোয়াকে গ্রহণ করাকে তিনি জায়েজ এবং ওয়াজিব বলেছেন।
কিন্তু আশ্চর্য হতে হয়ঃ আমাদের দেশে আহলে হাদিস কোন কোন আলেম পুরো মাজহাবকেই অস্বীকার করেন। অনেকে বলেনঃ
– মাজহাব বলতে কিছু নেই।
– কারো তাকলীদ করা যাবে না।
– তাকলীদ সর্বাবস্থায় হারাম। ইত্যাদি।

ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রঃ) এর ঐ কথার ব্যাপারে আপনার অভিমত কি যেখানে তিনি অন্য কোন আলেমের তাক্বলীদ ব্যতীত কিংবা অন্য শক্তিশালী কোন দলীল ছাড়াই নিজ মাজহাবের বিপরীত আমল করাকে নফসের খায়েশাত বলে উল্লেখ করেছেন?


…… তাই আফগানদের সাথে প্রথম প্রথম মিশতে গেলে একজনের উচিত হবেঃ নামাজে বিশেষ বিশেষ কাজ না করা (অনুবাদক নোটঃ অর্থাৎ যে সব কাজ হানাফী মাজহাব অনুযায়ী নামাজে নেই, যেমনঃ রফে ইয়াদাইন ইত্যাদি), যাতে সে তাদের হৃদয়ে স্থান করে নিতে পারে। …এ ব্যাপারে ইমাম আহমাদ (রঃ) , ইমাম মালেক (রঃ) ও ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রঃ) এর ফতোয়া রয়েছে। ”।

দেখা যাচ্ছে, ইমাম আব্দুল্লাহ আজ্জাম (রঃ, আল্লাহ তাঁকে শহীদ হিসেবে কবুল করুন) এখানে জিহাদের স্বার্থে নামাজের কোন কোন সুন্নত যা হানাফী মাজহাবে নেই, তা আরব সালাফী মুজাহিদীনদেরকে না করতে বলছেন, যাতে তারা সাধারণ আফগানদের হৃদয়ে স্থান করে নিতে পারেন।

যাতে হানাফী-আফগান-আনসার আর সালাফী-আরব-মুহাজিরের মাঝে কোন মতবিরোধ সৃষ্টি না হয়। যাতে সাধারণ আনসারদের মনে মুজাহিদদের ব্যাপারে কোন ভুল ধারনার সৃষ্টি না হয়।

আরো উল্লেখ্য, এর কাছাকাছি ফতোয়া ইমাম আহমাদ (রঃ) , ইমাম মালেক (রঃ) ও ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রঃ) দিয়েছেন বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

[এই কথাগুলি কিছু দ্বীনি ভাই একজন বিখ্যাত আলেমের কাছে জানতে চেয়েছিলেন! আমি প্রশ্নগুলি আপনাদের সকলের কাছে জানতে চাই উত্তর দিয়ে বাঁধিত করিবেন }

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.