![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুসলমনাদের অবস্থা এখন বড়ই খারাপ। কোথাও তারা নিরাপদ নয়। না দেশে, না বিদেশে। ইসলাম ধর্মকে সন্ত্রাসী ধর্ম, অসাম্প্রদায়িক ধর্ম আখ্যা দেওয়ার জন্য নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে উপর্যুপরিভাবে। ঠিক এমনি সময় মুসলমানরা আজ শতধা বিভক্ত। মুসলমনদের মাঝে ধর্মীয় কোন্দলের সয়লাব। অথচ এখন সবচে’ প্রয়োজন হল মুসলমানদের মাঝে একতা সৃষ্টি করা। ঐক্যমত্ব প্রতিষ্ঠিত করা। নবীজী সাঃ এর কালিমায়ে তায়্যিবার প্লাটফর্মে এক হওয়া আজ সময়ের আবশ্যকীয় দাবি।
যখন মুসলমানদের দুশমনরা মুসলমানদের উপর হামলা করে, তখন তারা এটা দেখেনা যে, সে কি দেওবন্দী না বেরেলবী? সে কি মুকাল্লিদ না গায়রে মুকাল্লিদ? সে কি কিয়াম করে না করেনা? সে কি মাজারে যায় কি যায় না? সে ইমামের পিছনে কিরাত পড়ে না পড়েনা?
কিন্তু এখন আমরা এই দুঃখজনক বাস্তবতার সম্মুখীন যে, ওহাবী/সালাফী/আহলে হাদীস নামের দলটি বারবার সহীহ হাদীস-জাল হাদীস-দুর্বল হাদীসের কথা বলে সহজ-সরলমনা মুসলিমদের ধোঁকা দিচ্ছে। নবীজী সাঃ এর বিশাল হাদিস ভান্ডারকে অস্বিকার করার জন্য কেবল বুখারী মুসলিম আর ক্ষেত্র বিশেষে কেবল সিহাহ সিত্তার হাদিস মানা। এই দাবির মাধ্যমে মুয়াত্তা মালিকের মত স্বীকৃত অসংখ্য সহীহ হাদিসের কিতাবের সহীহ হাদিসকে অস্বিকার করার এক ভয়ংকর খেলায় মেতে উঠেছে এই দলটি। এমনকি তারা নিজেদের মতবাদসমূহকে সত্য বলে প্রমাণ করার জন্য তাদের নিজস্ব প্রকাশনী থেকে সহীহ হাদীসগুলোকে জাল হিসেবে তৈরী করে চলেছে বেশ কয়েক দশক ধরে। তাদের প্রকাশনী পৃথিবী ব্যপি ছড়িয়ে আছে।
রাবী=যিনি হাদীস বর্ণনা করেন।
হাদীসের চেইন= একটি হাদীস পাওয়া গেল এভাবে হযরত মুহাম্মাদ(সাঃ) থেকে ক, ক থেকে খ, খ থেকে গ একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। এখানে ক, খ এবং গ হলেন একজন রাবী। আর “হযরত মুহাম্মাদ(সাঃ) থেকে ক, ক থেকে খ, খ থেকে গ” এটা হল হাদীসের চেইন।
এখন একটি হাদীস বিভিন্ন চেইনে পাওয়া যায়। সেই চেইনের ভিতর থাকেন অসংখ্য রাবী। খোদ বুখারী-মুসলিম শারীফেই দেখা যায় অনেক বার একই হাদীস একাধিক বার এসেছে। এটা হয়েছে একই হাদীসের বিভিন্ন চেইনের কারণে। চেইনের মধ্যে রাবী থাকেন। সেই রাবী হতে পারেন সত্যবাদী অথবা মিথ্যাবাদী। ধরুন একটি হাদীস নিম্নোক্ত কয়েকটি চেইনে পাওয়া গেলঃ
প্রথম চেইনঃ ক-খ-গ-ঘ
দ্বিতীয় চেইনঃ চ-ছ-জ-ঝ
তৃতীয় চেইনঃ ট-ঠ-ড-ঢ
চতুর্থ চেইনঃ ত-থ-দ-ধ
ধরে নিন অক্ষরগুলো হল রাবী। উপরের প্রথম তিনটি চেইনে গ, ছ, ট নামে তিন জন মিথ্যা বাদী রাবী রয়েছেন। কিন্তু চতুর্থ চেইনের সব রাবীগুলোই সত্যবাদী। সুতরাং প্রথম তিনটি চেইনের কারণে হাদীসটি জাল হিসেবে সাব্যস্ত হবে। কিন্তু চতুর্থ চেইনে আসার পর যখন দেখা যাবে সেখানের সব গুলো রাবীই সত্যবাদী তখন সেই জাল হাদীস সহীহ হয়ে যাবে। কারণটা খুব সহজ চতুর্থ চেইনের সব রাবীই সত্যবাদী। যার ফলে অনেক জাল হাদীস অনেক সময় সহীহ হাদীস হয়ে গেছে। এটা হল হাদীস যাচাই-বাছাই এর একটি উপায় মাত্র। এছাড়া আরও অনেক উপায় আছে। আগেরকার যুগের নামকরা মুহাদ্দিসগণ এভাবে অনেক হাদীস যাচাই-বাছাই করে তাদের নিজস্ব সহীহ হাদীস কিতাবে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু আহলে হাদীসেরা যখন কোনো একটি হাদীসকে জাল বলে তখন তারা কেবলমাত্র সেই চেইনটির কথা উল্লেখ করে যেই চেইনটিতে মিথ্যাবাদী রাবী রয়েছে। সেই চেইনটির কথা তারা গোপন রাখছে যেই চেইনটির সকল রাবীই সত্যবাদী এবং যেই কারণে ঐ হাদীসটি সহীহ হিসেবে সাব্যস্ত হয়েছে। এটা হয় তারা ইচ্ছাকৃতভাবে করছে না হয় হাদীস শাস্ত্র সম্পর্কে তাদের বা তাদের তথাকথিত নামধারী আলেমদের নূন্যতম কোনো ধারণাই নেই। আবার তারা শুধু তাই বলছে যা তাদের নেতারা শিখাচ্ছে বা তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে লিখা আছে। সেটা যাই হোক না কেন এভাবে একাধিক চেইনে প্রাপ্ত হাদীসগুলোর কেবলমাত্র একটা চেইনের কথা উল্লেখ করে যে সহজ-সরলমনা মুসলিমরা প্রতারিত হচ্ছে সেটা তারা আদৌ বুঝতে পারছেন বলে মনে হয় না।হাদীস সহীহ হয়, জয়ীফ হয়, হাসান হয়, সনদের উপর ভিত্তি করে। মুহাদ্দিসগন যখন কোন হাদীসের রাবী (হাদীস বর্নণাকারীর) নাম পরিচয়,আমল আখলাক ইত্যাদি যাচাই- বাছাই করেন এর উপর ভিত্তি করে হাদীসের মান নির্নয় করা হয়।
এমন অনেক হাদীস আছে যেই হাদীসগুলো ইসলামের প্রাথমিক জামানাতে সহীহ শুদ্ধ ছিলো কিন্তু পরবর্তীতে সনদের কারনে সেই হাদীসের মান দুর্বল হয়েছে। তাই বলে জয়ীফ দুর্বল হাদীসকে জাল হাদীস বলার কোন সুযোগ নেই। সমস্ত মুহাদ্দীসগন একমত যখন কোন বিষয়ে একাধিক জয়ীফ হাদীস থাকে তখন ওই হাদীস সহীহ হাদীসের পর্যায়ে চলে যায় এবং ফাযায়েলের বিষয়ে যয়ীফ হাদীসের উপর আমল করা যায়।
আর জাল হাদীস এটা তো কোন হাদীসই না এজন্যই তো এটা জাল। মুহাদ্দীসগন যখন হাদীস গ্রহন করেন অনেক সময় এমনও হয়, যার কাছ থেকে হাদীস শুনছেন তার স্মরন শক্তি হয় তো কম, তাই হাদীস টা সম্পুরনভাবে পৌছাইতে পারে নাই তাই এখানে সতর্কতা স্বরুপ হাদীসের মান দুর্বল রাখা হয়েছে।
একারনেই দেখবেন একই রকমের হাদীস এক রেওয়ায়েতে একভাবে আরেক রেওয়ায়েতে কিছু কম বেশি হয়ে আসছে।
জাল আর জয়ীফের পার্থক্য একটা দৃষ্টান্তের মাধ্যমে বুঝার চেষ্টা করি।
ধরুন, দুই জন অসুস্থ মানুষ পাশাপাশি বেডে (খাট) শোয়া একজন মারা গেলো আর আরেক জন মারা যায় নাই। যে মারা গেছে তাকে সবাই কী বলে? লাশ আর যেই লোক অসুস্থ তাকে সবাই মানুষই বলে। কারন তার ভিতর এখনও জান (প্রান) আছে।
ঠিক এমনই যেই হাদীস জাল এটা লাশের মত এটা কোন হাদীসই না কিন্তু যেই হাদীস জয়ীফ সেটা হাদীস।
মুহাদ্দীসগন তাদের কিতাবে সেই হাদীস উল্লেখ করেছেন। কিন্তু দু:খের বিষয় কথিত আহলে হাদীসদের শায়খ নাসের উদ্দিন আলবানী তিরমিযী শরীফ ও আবু দাউদ শরীফের যয়ীফ হাদীসগুলো আলাদা করে দুইটা কিতাব বাহির করছে। সহীহ আবু দাউদ ও যয়ীফ আবু দাউদ, সহীহ তিরমিযী ও যয়ীফ তিরমিযী।
কেমন যেন বুঝাতে চাচ্ছে যে, যয়ীফ হাদীস এটা কোন হাদীসই না। হাদীস সহীহ না হওয়া কে বাতিল গণ্য করা হচ্ছে এবং আমলের অনুপযোগী মনে করা হচ্ছে এবং মূলত হাদীসকে অস্বীকার করা হচ্ছে। শুধু সহীহ হাদীস মানার কথা বলে তারা ইসলাম কে অপরিপুর্ন, সংকীর্ন করছে এবং অসংখ্য হাদীসকে এনকার (অস্বীকার) করছে।
আর মজার বিষয় হল তারা তাদের সুবিধামত আমাদের বিরুদ্ধে অনেক সহীহ হাদীসকে যয়ীফ বলে আর তাদের পক্ষে অনেক যয়ীফ হাদীস কে সহীহ বলে চালিয়ে দেয়।
কিতাবুলইলম,কম
©somewhere in net ltd.