![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কোন আলেম যদি একই ফতোয়ার কারণে নিজে রফে ইয়াদাইন ইত্যাদিকে উত্তম মনে করলেও এদেশের অধিকাংশ হানাফী মুসলমানদেরকে সাথে নিয়ে জিহাদের স্বার্থে এর উপর আমল না করেন, তাহলে তিনি কি জিহাদের জন্য অধিক কুরবানী করছেন না? নিজের মতামতকে কুরবানী দিচ্ছেন না?
একই আলেম যদি একই কারণে এই সব এখতেলাফী মাসয়ালায় কথা না বলেন, বরং ফুরুঈ মাসয়ালার ক্ষেত্রে এই এলাকার অধিকাংশ মুসলমান যে পন্থার উপর আছেন সেই পন্থা অনুযায়ী নিজে চলেন (অর্থাৎ হানাফী মাজহাব অনুযায়ী) এবং হানাফী মাজহাব অনুযায়ী ফতোয়া দেন, তাহলে এই আলেমের ব্যাপারে আপনার ভাষ্য কি? জিহাদের জন্য তিনি কি নিজের মতামতকে কুরবানী দিয়ে অধিক সওয়াবের ভাগীদার হচ্ছেন না?বিভিন্ন ফুরুয়ী মাসয়ালায় নিজ এলাকার অধিকাংশ মানুষের মাজহাবের বিপরীত আমল করেন, সেগুলো প্রচার ও প্রসার করেন। উপরুক্ত আলেম ও এই আলেমের মাঝে আপনার দৃষ্টিতে কে বেশী প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন এবং কে বেশী হিকমতের অনুসারী?
এই সব ইখতেলাফী ফুরুয়ী মাসয়ালার বিভিন্ন মতের ব্যাপারে ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রঃ) বলেছেনঃ
ﻭَﻗَﺎﻋِﺪَﺗُﻨَﺎ ﻓِﻲ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟْﺒَﺎﺏِ ﺃَﺻَﺢُّ ﺍﻟْﻘَﻮَﺍﻋِﺪِ ﺃَﻥَّ ﺟَﻤِﻴﻊَ ﺻِﻔَﺎﺕِ ﺍﻟْﻌِﺒَﺎﺩَﺍﺕِ ﻣِﻦْ ﺍﻟْﺄَﻗْﻮَﺍﻝِ ﻭَﺍﻟْﺄَﻓْﻌَﺎﻝِ ﺇﺫَﺍ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﻣَﺄْﺛُﻮﺭَﺓً ﺃَﺛَﺮًﺍ ﻳَﺼِﺢُّ ﺍﻟﺘَّﻤَﺴُّﻚُ ﺑِﻪِ ﻟَﻢْ ﻳُﻜْﺮَﻩْ ﺷَﻲْﺀٌ ﻣِﻦْ ﺫَﻟِﻚَ ﺑَﻞْ ﻳُﺸْﺮَﻉُ ﺫَﻟِﻚَ ﻛُﻠُّﻪُ ﻛَﻤَﺎ ﻗُﻠْﻨَﺎ ﻓِﻲ ﺃَﻧْﻮَﺍﻉِ ﺻَﻠَﺎﺓِ ﺍﻟْﺨَﻮْﻑِ ﻭَﻓِﻲ ﻧَﻮْﻋَﻲْ ﺍﻟْﺄَﺫَﺍﻥِ ﺍﻟﺘَّﺮْﺟِﻴﻊِ ﻭَﺗَﺮْﻛِﻪِ ﻭَﻧَﻮْﻋَﻲْ ﺍﻟْﺈِﻗَﺎﻣَﺔِ ﺷَﻔْﻌِﻬَﺎ ﻭَﺇِﻓْﺮَﺍﺩِﻫَﺎ ﻭَﻛَﻤَﺎ ﻗُﻠْﻨَﺎ ﻓِﻲ ﺃَﻧْﻮَﺍﻉِ ﺍﻟﺘَّﺸَﻬُّﺪَﺍﺕِ ﻭَﺃَﻧْﻮَﺍﻉِ ﺍﻟِﺎﺳْﺘِﻔْﺘَﺎﺣَﺎﺕِ ﻭَﺃَﻧْﻮَﺍﻉِ ﺍﻟِﺎﺳْﺘِﻌَﺎﺫَﺍﺕِ ﻭَﺃَﻧْﻮَﺍﻉِ ﺍﻟْﻘِﺮَﺍﺀَﺍﺕِ ﻭَﺃَﻧْﻮَﺍﻉِ ﺗَﻜْﺒِﻴﺮَﺍﺕِ ﺍﻟْﻌِﻴﺪِ ﺍﻟﺰَّﻭَﺍﺋِﺪِ ﻭَﺃَﻧْﻮَﺍﻉِ ﺻَﻠَﺎﺓِ ﺍﻟْﺠِﻨَﺎﺯَﺓِ ﻭَﺳُﺠُﻮﺩِ ﺍﻟﺴَّﻬْﻮِ ﻭَﺍﻟْﻘُﻨُﻮﺕِ ﻗَﺒْﻞَ ﺍﻟﺮُّﻛُﻮﻉِ ﻭَﺑَﻌْﺪَﻩُ ﻭَﺍﻟﺘَّﺤْﻤِﻴﺪِ ﺑِﺈِﺛْﺒَﺎﺕِ ﺍﻟْﻮَﺍﻭِ ﻭَﺣَﺬْﻓِﻬَﺎ ﻭَﻏَﻴْﺮِ ﺫَﻟِﻚَ ﻟَﻜِﻦْ ﻗَﺪْ ﻳُﺴْﺘَﺤَﺐُّ ﺑَﻌْﺾُ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻟْﻤَﺄْﺛُﻮﺭَﺍﺕِ ﻭَﻳُﻔَﻀَّﻞُ ﻋَﻠَﻰ ﺑَﻌْﺾٍ ﺇﺫَﺍ ﻗَﺎﻡَ ﺩَﻟِﻴﻞٌ ﻳُﻮﺟِﺐُ ﺍﻟﺘَّﻔْﻀِﻴﻞَ ﻭَﻟَﺎ ﻳُﻜْﺮَﻩُ ﺍﻟْﺂﺧَﺮُ .
“এ বিষয়ে আমাদের নীতি, আর এটাই বিশুদ্ধতম নীতি, এই যে, ইবাদতের পদ্ধতির বিষয়ে (যেসব ক্ষেত্রে মতভেদ রয়েছে তাতে) যে পদ্ধতি সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য আছার রয়েছে তা মাকরূহ হবে না; বরং তা হবে শরীয়াত সম্মত। সালাতুল খওফের বিভিন্ন পদ্ধতি, আযানের দুই নিয়ম : তারজীযুক্ত বা তারজীবিহীন, ইকামতের দুই নিয়ম : বাক্যগুলো দুইবার করে বলা কিংবা একবার করে, তাশাহহুদ, ছানা, আউযু এর বিভিন্ন পাঠ, কুরআনের বিভিন্ন কিরাআত, এই সবগুলো এই নীতিরই অন্তর্ভূক্ত। এভাবে ঈদের নামাযের অতিরিক্ত তাকবীর-সংখ্যা (ছয় তাকবীর বা বারো তাকবীর), জানাযার নামাযের বিভিন্ন নিয়ম, সাহু সিজদার বিভিন্ন নিয়ম, কুনুত পাঠ, রুকুর পরে বা পূর্বে, রাব্বানালাকাল হামদ, ওয়াসহ অথবা ওয়া ছাড়া, এই সবগুলোই শরীয়াতসম্মত। কোনো পদ্ধতি কখনো উত্তম হতে পারে কিন্তু অন্যটি মাকরূহ নয়”। (মাজমূউল ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া ২৪/২৪২-২৪৩; আল-ফাতাওয়া আল কুবরা ১/১৪০)
ইবনুল কাইয়্যিম (রঃ) যাদুল মাআদ গ্রন্থে’ ফজরের সালাতে কুনুত পড়া প্রসঙ্গে বলেছেনঃ
ﻭﻫﺬﺍ ﻣﻦ ﺍﻻﺧﺘﻼﻑ ﺍﻟﻤﺒﺎﺡ ﺍﻟﺬﻱ ﻻ ﻳﻌﻨﻒ ﻓﻴﻪ ﻣﻦ ﻓﻌﻠﻪ ﻭﻻ ﻣﻦ ﺗﺮﻛﻪ ﻭﻫﺬﺍ ﻛﺮﻓﻊ ﺍﻟﻴﺪﻳﻦ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻭﺗﺮﻛﻪ ﻭﻛﺎﻟﺨﻼﻑ ﻓﻲ ﺃﻧﻮﺍﻉ ﺍﻟﺘﺸﻬﺪﺍﺕ ﻭﺃﻧﻮﺍﻉ ﺍﻷﺫﺍﻥ ﻭﺍﻹﻗﺎﻣﺔ ﻭﺃﻧﻮﺍﻉ ﺍﻟﻨﺴﻚ ﻣﻦ ﺍﻹﻓﺮﺍﺩ ﻭﺍﻟﻘﺮﺍﻥ ﻭﺍﻟﺘﻤﺘﻊ
“এটা ওইসব মতভেদের অন্তর্ভূক্ত যাতে কোনো পক্ষই নিন্দা ও ভর্ৎসনার পাত্র নন। এটা ঠিক তেমনই যেমন সালাতে রাফয়ে ইয়াদাইন করা বা না করা, তদ্রূপ আত্তাহিয়্যাতুর বিভিন্ন পাঠ, আযান-ইকামাতের বিভিন্ন ধরন, হজ্বের বিভিন্ন প্রকার – ইফরাদ, কিরান, তামাত্তু বিষয়ে মতভেদের মতোই”। (যাদুল মায়াদ, ১/২৫৬)
দেখা যাচ্ছে, এই দুই সম্মানিত ইমামের (রঃ) মতে আমাদের সমাজে বর্তমানে যে সকল ফুরুয়ী ইখতিলাফী মাসয়ালা নিয়ে প্রচুর সময় ব্যয় করা হচ্ছে, তার বেশীরভাগকেই তাঁরা মুস্তাহাব পর্যায়ের বলছেন। যেমনঃ
– রাফে ইয়াদাইন করা বা না করা।
– ইকামাতের কথাগুলো দুইবার বনাম একবার বলা।
– ঈদের নামাজের ৬ তাকবীর বনাম ১২ তাকবীর।
– সিজদা সাহুর বিভিন্ন নিয়ম।
– দুয়া কুনুত রুকুর আগে বনাম রুকুর পরে। ইত্যাদি।
অর্থাৎ এগুলো করলে কিংবা না করলে নামাজের কোন ক্ষতি হবে না। নামাজ পুরোপুরিই আদায় হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। এসব বেশীরভাগ মাসয়ালায় এক ইমামের মতে এক পদ্ধতি উত্তম এবং অন্য ইমামের মতে অপর কোন পদ্ধতি উত্তম।
এই দুই সম্মানিত ইমামের (রঃ) কথাকে সামনে রেখে, ফিকহের ফুরুয়ী মাসয়ালায় কোন পদ্ধতি উত্তম, সেটা নিয়ে বাহাস-বিতর্ক করাকে, এই ব্যাপারে আলাদা বক্তৃতা দেয়াকে, এই ব্যাপারে খুতবাহ দেয়াকে, এই ব্যাপারে বারংবার কথা বলাকে, এই ব্যাপারে বিভিন্ন আলোচনা করাকে আপনি কোন দৃষ্টিতে দেখেন?
©somewhere in net ltd.