![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
My name is Md. Kamrul Islam. I completed MBA from Stamford University of Bangladesh. Now I'm Officer of Eastern Bank Ltd.
চাচা কাহিনী
অনেকদিন পর আমার এক সহপাঠির কথা মনে পড়লো। বয়সের সাথে চাচা শব্দটির যে একটি বিশেষ সম্পর্ক আছে তা বুঝি ভবজগতে তার চেয়ে কেউ বেশী বুঝত না। আজ একাকীও তার কথা মনে পড়লে না হেসে পারি না। একদিন আমার সেই সহপাঠী কলেজে এসেছিল পায়জামা-পাঞ্জাবী ও টুপি পড়ে। কি কারণে জানি আমাদের আরেক সহপাঠী তাকে মশকরা করে ‘চাচা’ বলে ফেলল। সেইক্ষণেই সে চাচা শব্দটির প্রতি বেজায় বিরাগ ভাজন ভাব বিচ্ছিরীভাবে প্রকাশ করলো এবং সেইদিন থেকেই চাচা শব্দটি তাকে সম্মোধণ করতে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল। প্রথম প্রথম ব্যাপারটি আমরা কয়েকজন জানতাম। কিন্তু এনিয়ে প্রতিদিনই নতুন নতুন ঘটনার অবতারণা হলে সকলের মাঝে বিষয়টি কৌতুহলী হয়ে উঠল। আজ এ বলে চাচা, কাল ও বলে চাচা। এ নিয়ে মান-অভিমান, চেচামেচি লেগেই আছে। এসব ঘটিয়ে সকলে যেন তামাশা দেখে।
একদিন তিনবন্ধু হাটছি এমন সময় বিপরীত দিক থেকে ‘চাচা’ উপাধীর সেই বন্ধুটি আসছিল।
এক বন্ধু বলল- “দেখ, কি খেলা দেখাচ্ছি।”
“আরে চাচা, কেমন আছ ?”
‘চাচা’ শব্দটি শুনেই বড় বড় চোখ করে তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল। তারপর শুরু করল-
“এই তোরা এ ছাড়া আর কোন কথা খুঁজে পাছ না। এ কেমন আচরণ ? ‘চাচা’ কিরে ব্যাটা, চাচা কি ? আমাকে কি তোর চাচার মত দেখায়। বন্ধু, বন্ধুর মত আচরণ করবি। এ রকম বাজে আচরণ আমার সাথে করিছ কেন ?”
আমরা বার বার জিজ্ঞাসা করলাম- “বন্ধু কেমন আছ?” কোন উত্তরই পেলাম না।
আমাকে বলল, “দেখ বন্ধু, আমার সাথে এ ধরণের আচরণ করা ওদের সাজে ? বন্ধুর সাথে বন্ধু মশকরা করে তারও একটা সীমা আছে। এই ধরণের সম্মোধণ কেন! এটা কি কোন মশকরার মধ্যে পড়ে।
“তা ঠিক, এ ধরণের সম্মোধণ করা উচিত না। ভবিষ্যতে করবে না।”
“ঠিক আছে” বলে একটি পুরানো বাই- সাইকেল চালিয়ে কলেজ থেকে বের হয়ে গেল।
একদিন তিন বন্ধু কলেজের মাঠে বসে গল্প করছি এমন সময় আমাদের পাশ দিয়ে সেই ‘চাচা’ যাচ্ছিল। এক বন্ধু বলে উঠল- “আরে চাচা কেমন আছ ?”
একথা শুনেই তার দিকে তেড়ে এসে মুষ্ঠিবদ্ধ হাত নাকের কাছে এনে চেঁচিয়ে বলল- “আর কখনও আমাকে এ নামে ডাকবে না। মানুষের বাচ্চা হলে এ ধরনের শব্দ উচ্চারণ করতে পারতে না। তাছাড়া তুই ছোটকাল থেকেই একটা হারামির বাচ্চা। যাকে-তাকে যা-তা কয়ে বেড়াস। এগুলো কি ভাল মানুষের কাজ ? আজ বন্ধুত্ত্বের খাতিরে কিছু বললাম না, ভবিষ্যতে এ রকম করলে আর বন্ধুত্ত্বের পরিচয় থাকবে না।
বন্ধুটিকে অনুরোধ করলাম এ ধরনের সম্মোধণ থেকে ভবিষ্যতে বিরত থাকার জন্য । এতে চাচার কাছে আমার একটি আলাদা পরিচয় ফুটে উঠল। আমার কাছে অভিযোগের সুরে বলল- “দেখ দোস্ত, আমাকে রাস্তা-ঘাটে আরো অনেকবার এ ধরনের কথা ও বলেছে; আমি সে সময় কিছু বলি নাই। এখন দেখছি, আর না বলে পারা যায় না। এ ধরণের ছেলেদের সাথে ভাল ব্যবহার করলে এরা তার মূল্য দিতে জানে না।”
অনেক বুঝিয়ে-শুনিয়ে সেদিনকার মত চাচাকে বিদায় করলাম।
একদিন আমি আর আমার এক বন্ধু বাজারের ভিতরে হেটে যাচ্ছি। এরই মধ্যে দেখি ‘চাচা’ সাইকেল নিয়ে আমাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছে। বন্ধুটি চেচিয়ে বলল ‘চাচা, আসসালামু আলাইকুম’। সালামের সাথে ‘চাচা’ শব্দটি শুনেই আমাদের দিকে তাকাতে গিয়ে সাইকেল নিয়ে একজনের গায়ে উঠে গেল। লোকটি ব্যাথা পেয়ে চাচার গালে কষে বসিয়ে দিল এক থাপ্পর। বেঁধে গেল হাতাহাতি। এ ফাঁকেই আমরা পালিয়ে ‘চাচার’ হাত থেকে রেহাই পেলাম। তা না হলে সেদিন যে কি কান্ডটা হত তা কেবল আল্লাহ মালুম।
কয়েকদিন ধরে কলেজে গুঞ্জন ছড়িয়েছে ‘চাচা’ একটি মেয়ের সাথে প্রেম করছে। কে সে মেয়েটি, তা জানার জন্য সকলে মধ্যে বেশ কৌতুহল। প্রতিদিন কলেজের যে নির্জন স্থানে ‘চাচা’ বসে থাকে সে স্থানের দিকে সকলের বিশেষ নজর। কিন্তু অনেক দিন নজর রেখেও চাচার প্রেমিকার কোন হদিস পাওয়া গেল না। তবুও চাচার প্রতি বিশেষ নজর রেখে চললাম। একদিন কলেজের সকল ঘন্টা শেষে খবর পেলাম ‘চাচা’ তার প্রেমিকার সাথে কলেজের নির্জণ স্থানে বসে চুটিয়ে গল্প করছে। বেড়ার ফাঁক দিয়ে দেখে, আমরা সকলে একসাথে চেঁচিয়ে উঠলাম- “চাচা হচ্ছে কি?”
সেদিন ‘চাচা’ কলেজের প্রিন্সিপালের কাছে আমাদের বিরুদ্বে নালিশ দিল। প্রিন্সিপাল তাকে এনিয়ে আর বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করে দিল এবং সকলের সাথে মিলেমিশে চলাফেরা করতে উপদেশ দিল।
এ ঘটনার পর অনেকদিন চাচার সাথে আমাদের দেখা নাই। একদিন সকলে বসে গল্প করছি এরই মধ্যে দেখি ‘চাচা’। আজ এক বন্ধু একজনের সাথে বাজি ধরল- “যদি ওই ছেলেটার সামনে দাড়িয়ে ‘চাচা’ বলতে পার তাহলে পঞ্চাশ টাকা নগদ পাবে।”
ছাত্রগোত্রের একটি ছেলের সামনে দাড়িয়ে ‘চাচা’ শব্দটি উচ্চারণ করলেই যদি পঞ্চাশ টাকা আসে খারাপ কি! তাছাড়া ছেলেটি যে কোন বিষয়ে বেশ কৌতুহলী। তাকে চাচারে দেখিয়ে দিলাম। গিয়ে “চাচা আসসালামু আলাইকুম” বলতেই তার দিকে তেড়ে আসলো ‘চাচা’।
“এই তুই কি উচ্চারণ করলি?”
“কেন কি হয়েছে?”
“তোকে কে শিখিয়ে দিয়েছে আমাকে চাচা ডাকতে?”
“তোমাকেতো সকলেই চাচা বলে জানে।”
এই উত্তর শুনে চাচার মাথায় আরো রক্ত চেপে গেল।
“এই ব্যাটা তুই আমার কোথাকার ভাতিজা যে আমাকে চাচা বলে ডাকবি ? তুই আমার কোন ভাইয়ের ব্যাটা? আজ তোকে বলেই যেতে হবে আমাকে ‘চাচা’ বলতে কে শিখিয়ে দিয়েছে। তার চেহারাটা একবার দেখব। এত সাহস কার, আমাকে ‘চাচা’ বলতে শিখিয়ে দেয়?”
কথাগুলো বলছিল বেশ চেঁচিয়ে। এত উচ্চস্বরে কথা বলার কারণে, সেখানে অনেক ছেলে-মেয়ে জড়ো হয়ে গেল। প্রথমে ব্যাপারটা কি কেউ বুঝে উঠতে পারে নাই। কি হয়েছে জানার জন্য একজন আরেক জনের কাছে জিজ্ঞাসা করছে। শিক্ষক এসে ক্লাস নিবে কিন্তু এ কি অবস্থা! অনেকে জড়ো হয়ে কি যেন দেখছে।
কি হয়েছে জানতে চাইলে চাচাই বলল-
“কিছু হয় নাই স্যার।”
“তাহলে তোমরা এখানে কি করছো?”
“কিছু না, আবার একটা কিছু হয়েছে স্যার।”
“যা হয়েছে তা পরে সমাধান করো। এখন ক্লাসে চলো।”
এই বলে স্যারে ক্লাসে চলে গেল।
তারপরও কিছু সময় এনিয়ে কথাবার্তা চলে। শেষে চাচা, ছেলেটিকে শাসিয়ে দিল যেন আর কখনও এই শব্দটি তার সামনে উচ্চারণ না করে।
অনেকে আছে যারা মানুষকে ক্ষেপিয়ে আনন্দ পায়। আমার এক বড় ভাই এবং তার সাথের কয়েকজন , এক মহিলাকে ‘শুধু বেল চাই’ এই বলে ক্ষেপিয়ে তামাশা দেখত। ক্ষেপে যাওয়ার পেছনে আসল ঘটনাটি হল-
একটি রেজিষ্ট্রি প্রাইমারী স্কুলের ঘন্টি বা বেল মহিলার বাড়িতে রাখা হত। স্কুলটি ছিল সদ্য প্রতিষ্ঠিত। স্কুলের চালা ছিল কিন্তু বেড়া ছিল না। স্বাধীনপ্রিয় বাঙ্গালীরা শাসিতের শাসন এক মুহূর্তের জন্য মানে না কিন্তু স্কুলের বেল চুরি করে কেজি ধরে বিক্রি করতে তাদের বিবেকেও বাঁধে না। থাক এসব কথা, চোরে কি আর শোনে ধর্মের কাহিনী। রমজানে স্কুল দীর্ঘ ছুটি থাকার কারণে চোর সুযোগ পেয়ে মহিলার ঘর থেকে ঘন্টি নিয়ে গেল। স্কুল খুললো, ঘন্টিরও খোঁজ পড়ল কিন্তু ঘন্টি গেল কোথায়? ঘন্টি খোঁজ করে পাওয়া যাচ্ছে না। এর একটা রফা-দফা করতে স্কুলের প্রধান শিক্ষক উপস্থিত হল মহিলার বাড়িতে। এতদিন স্কুলের বেয়াড়া দিয়েই ঘন্টি আনা নেওয়ার কাজটি হত। আজ শিক্ষক এসে দেখল ঘরের যে অবস্থা তাতে ইচ্ছা করলেই মুহূর্তের মধ্যে চোরের নতুন একটি দরজা তৈরি করে ঘরে প্রবেশ করা কঠিন কোন ব্যাপার নয়। শিক্ষক প্রথমেই মহিলাকে জিজ্ঞাসা করল- “ঘন্টি যেতে পারে কোথায়?”
মহিলা বলল- “বেল যে চোরে নিয়েছে তা কি আপনার বিশ্বাস হয় না? একটু চিন্তা করে দেখেন আমি বেল দিয়ে কি করব?”
“চোরে যে সময় বেলটি নিয়েছে সে সময় আপনি কোথায় ছিলেন? সে সময় কি নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়েছিলেন?”
“আমি সে সময় কোথায় ছিলাম তা যদি জানতাম, তবে কি বেল চুরি হত?”
আমি কোন কথা শুনতে চাই না, “আমি শুধু বেল চাই”।
এই কথা শুনেই মহিলা তেলে-বেগুনে রেগে গেল। রেগে গিয়ে বলল- “আমি কি সারাদিন বেল নিয়েই থাকবো ? বেলকে কি আমি বিয়ে করেছি ? যে একে আমার স্বামীর মত নজরে নজরে রাখতে হবে। এত যদি সন্দেহ করেন তবে আমার ঘরে বেল রাখতেন কেন ? আমি এখন এর কিছুই জানি না। বিশ্বাস হয়তো করেন, না হয়তো আমার করার কিছুই নাই।”
এই ঘটনার পর থেকেই কেউ যদি বলে- ‘শুধু বেল চাই’ এবং এই কথা যদি তার কানে যায় তা হলেই শুরু হয় বিচ্ছিরী খিস্তি আওড়ানো।
কলেজের কয়েকটি বন্ধু মিলে সিদ্বান্ত নিল , চাচার নামে একখানা চিঠি পাঠাবে। একদিন পাঠিয়েও দিল চিঠি। চিঠির ভাষা ছিল এরকম,
শ্রদ্বেয় চাচা,
প্রথমে কলেজের আপনার সকল ভাতিজা-ভাতিজির শত-সহস্র সালাম গ্রহন করেন। আশা করি কলেজে আপনার প্রেমিকাকে নিয়ে বেশ ভালই আছেন। পর সমাচার চাচা-
আমরা আপনার চিন্তায় চিন্তিত। আমাদের হবু চাচী যে আপনাকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করতে চায় না এবং কেন যে চায় না এতেই আমরা চিন্তিত। আপনাকে যে কোন কাজে সহায়তা করার জন্য আমরা আমাদের জান কোরবান করতে দ্বিধাবোধ করব না। এখন আপনার আদেশের অপেক্ষায় আছি। আদেশ পেলেই কাজ হাসিলের কাজে লেগে যাব।
পরিশেষে কলেজের সকল ভাতিজা-ভাতিজির পক্ষ থেকে আপনার সকল উদ্দেশ্য সফল হোক, এই কামনা করে পত্রের ইতি টানলাম। ইতি,
কলেজের সকল ভাতিজা-ভাতিজিরা।
এই পত্র যার মাধ্যমে পাঠানো হয় সে চাচার খয়ের খাঁ লোক। প্রথমে তার কাছ থেকে চাচার হবু স্ত্রী অথাৎ আমাদের চাচী পত্রখানা ছোঁ মেরে নিয়ে পাঠ করল। হাসতে হাসতে পত্রখানা চাচার নিকট দিল।
পত্রের প্রথমে ‘চাচা’ শব্দটি লেখা দেখেই সে তেলে-বেগুনে রেগে গেল। “এই চিঠি লিখেছে কে? এই চিঠি তুই আনলি কেন ? কার এত বড় সাহস আমার কাছে এধরনের চিঠি লিখে।”
চাচার বন্ধুটি বলল- “একটি ইন্টারমিডিয়েটের ছেলে তোকে দেওয়ার জন্য এই চিঠিটি দিল। আমি ভাই ছেলেটিকে ভাল করে চিনি না। আর ভাই, কারো ব্যক্তিগত চিঠি পড়া ঠিক না ভেবে খুলেও দেখি নাই। এসব লেখা দেখলে সেখানেই ছিড়ে ফেলে দিতাম। এই পর্যন্ত আনতাম না।”
চাচা আরো খেপে গিয়ে বলল- “কি ! একটি ইন্টারমিডিয়েটের ছেলে আমার কাছে চিঠি লিখে ইয়ার্কি মারবে এ কিছুতেই সহ্য করব না। ছেলেটি কে? আমাকে চিনিয়ে দিতে হবে। যদি না দিস তোকে আমি ছাড়ব না।” ক্রমে ক্রমে চাচার উচ্চকন্ঠে সেখানে অনেক লোক জড়ো হয়ে গেল । সকলেরই কি হয়েছে জানার জন্য বেশ আগ্রহ এবং জানা হয়ে গেলে কেউবা এ নিয়ে হাসছে, কেউবা এ রকম কাজের নিন্দা প্রকাশ করছে।
আমরা তিন-চার জনে গেলাম কি হয়েছে জানতে। সরাসরি চাচার কাছেই জিজ্ঞাসা করলাম- “কি হয়েছে ?”
চাচা বলল “দেখ দোস্ত কোন হারামজাদা জানি চিঠিতে কিসব লিখে আমার সাথে ইয়ার্কি মারছে। যার কোন মানে হয় না। এর একটি বিচার তোরা কর। এই বলে চিঠিটি আমার হাতে দিল।”
পড়ে বললাম, “এর বিচার নিশ্চয়ই হবে। এ রকম বাজে কথা লিখে ইয়ার্কি মারবে এটা কোন ক্রমেই সহ্য করা যায় না।”
“দেখ, তাও আবার জুনিয়র ছেলেরা। এ কি সহ্য করার মত?”
আমার সবাই বললাম, “হ্যাঁ, এটা সত্যই সহ্য করা যায় না। এর একটি উচিত বিচার হবে।” এই বলে চলে আসলাম। সেই দিন থেকে চাচাকে ‘চাচা’ বলে উপদ্রব করার মাত্রা আরো বেড়ে গেল।
চাচা কয়েকদিন অপেক্ষা করে দেখল এর কোন সমাধানই আমরা দিচ্ছি না। তাই সে নিজেই উদ্যগী হয়ে তার কয়েকজন শুভাকাক্সক্ষীকে নিয়ে আসলো কলেজে, এর একটি রফা-দফা করতে। যে ছেলেটি তার কাছে চিঠিটি এনে দিয়েছিল তাকে প্রথমে ধরল। জানতে চাইল, চিঠিটি কে পাঠিয়েছিল এবং কেন পাঠিয়েছিল? লোকটি কে চিনিয়ে দিতে হবে। যদি না বলে এবং না চিনিয়ে দেয় তবে তাকে উত্তম-মাধ্যম দিবে। খবর পেয়ে আমাদের মধ্যে কয়েকজন গিয়ে ধরলো চাচাকে।
“চাচা, কোথায় তোমার সেই ছোকড়া বাহিনী ? দেখি তাদের একবার , তারা কোন বাপের ব্যাটা। কলেজের ভিতরে ঢুকে কারা মেরে যায় আমাদের কলেজের ছাত্রদের।”
একথা শুনে চাচার সাথে যে কয়জন লেলিন ছিল তারা পালাই পালাই ভাব। চাচাও কোন কথা বলছে না। সেদিন চাচাকে, যে যা পারল বলে অপমান করল।
চাচা কোন প্রতিউত্তর না করে, সেদিনের মত কলেজ ছাড়ল।
আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য ডাকে চাচার নিকট ‘চাচা’ সম্মোধন করে চিঠি পাঠান। একদিন পোস্টকার্ডে চাচাকে উদ্দেশ্য করে একটি সুন্দর চিঠি লিখে পাঠালাম।
শ্রদ্বেয় চাচা,
আমাদের সালাম নিবেন। অনেকদিন হল আপনার দেখা পাই না। তাই আমরা খুবই উদ্বিগ্ন আছি। আপনার খোঁজ-খবর নেয়ার জন্য এই পত্রখানা লেখা।
আপনি বর্তমানে কেমন আছেন তা জানিয়ে আজই আপনার ভাতিজা-ভাতিজিগো খোলা চিঠি লিখবেন।
ইতি,
কলেজের সকল ভাতিজা-ভাতিজিরা।
চিঠিখানা পাঠালাম আমাদের পরিচিত এক পোস্টমাস্টার দিয়ে। এই কাজের জন্য তার হাতে একশত টাকার একটি নোট গুজে দিলাম এবং বলে দিলাম এই চিঠি যে আমরা দিয়েছি তা যেন কোন ক্রমেই প্রকাশ না হয়। চিঠি দেখে চাচার প্রতিক্রিয়া কি দেখার জন্য এমন এক জায়গায় দাড়ালাম যেখানে দাড়ালে চাচাকে দেখা যায় কিন্তু চাচার আমাদের দেখতে পায় না।
চাচা পোস্ট কার্ডে চোখ বুলিয়েই লোকটির দিকে একবার কড়াদৃষ্টিতে তাকাল। পরক্ষণেই তার গালে কষিয়ে মারল এক চড়। লোকটি প্রথমে আশ্চর্য হয়ে পরক্ষেণে নিজেই এর প্রতিবাদ স্বরুপ চাচার গালে মারলো এক ঘুসি। বেঁধে গেল দুজনের মধ্যে তুমুল মারামারি। অবস্থা বেগতিক দেখে আমরা দৌড়ে গেলাম মার ছাড়াতে।
চাচা কাঁদ-কাঁদ স্বরে বলল, “দেখ দোস্ত, এই ব্যাটা কার জানি দালাল হয়ে আমার কাছে কিসব লেখা একটি চিঠি নিয়ে এসেছে। আমাকে সবাই পাগল পেয়েছে।”
পোস্টমাস্টার ব্যাটা বলল, “দেখেন ভাই, আমি হলাম পোস্টমাস্টার। আমার কাছে কত ধরনের, কত লোকের চিঠি আসে। আমি সেগুলো ঠিক-ঠিক বিলি করি। সেরকমই তার কাছে আসা একটি চিঠি পৌছে দিতে এলাম। সে, এখানে দাড়িয়ে চিঠিটি পড়েই আমাকে কি মারটাই না মারল।”
আমরা উভয় পক্ষের কথা শুনে, চাচাকে তার এ ধরনের কাজের জন্য বেশ শাসালাম। ভবিষ্যতে এ ধরনের আচরণ থেকে বিরত থাকার জন্য পরামর্শ দিলাম এবং এটা যে কোন ব্যাপার নয় শুধু মেনে নিলেই আর কোন সমস্যা না তাও বুঝালাম।
পোস্টমাস্টারকে ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের পোস্টকার্ড না পড়ে চাচার মত কারো নিকট না দেয় সে জন্য সতর্ক করে দিলাম।
এই ঘটনার পর চাচার অনেকদিন আর কলেজে দেখা নাই। হঠাৎ একদিন চাচাকে কলেজে দেখে সকলে একসাথে ‘চাচা’ বলে চিৎকার দিলাম। আশ্চর্য, চাচা এবার মিষ্টি হাসি দিয়ে ‘চাচা’ শব্দটিকে উপহাস করে আমাদের সাথে গল্পে মজে গেল। চাচার এই পরিবর্তন সত্যই বেশ মজার। এখন আমরা চাচাকে দেখলে দোস্ত কলিম বলে ডাকি।
©somewhere in net ltd.