নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মোদি ভক্ত ! এটা জেনে আপনি দুঃখ পেলে আমি আনন্দিত হব।

গেছো দাদা

গেছো দাদা › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প--সুখের ঘ্রাণ

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:৪৬

কলিং বেলটা অনেকক্ষণ ধরে বাজছে।
.
অন্ধকার আমার ভাল লাগে।
ছোটবেলায় রান্নাঘরে পাশে বসিয়ে মা রান্না করছিল। কখন জ্বলন্ত স্টোভের কাছে চলে গিয়ে গায়ে আগুন লাগিয়ে ফেলেছিলাম। লম্বা চিকিৎসার পর প্রাণে বাঁচলাম কিন্তু মুখটা পুড়ে বীভৎস হয়ে গেল।
তারপর থেকে আলোকে আমি ঘেন্না করি, আলো আমার শত্রু।
.
বাবা-মা পরপর চলে গেল। দাদা-বৌদির সংসারে আমি পুরানো ম্যাগাজিনের মতো এক ধারে পড়ে রয়েছি। আমার বিয়ে হবে না। এমন কদর্য মুখ যার তার বিয়ে হয় না সবাই জানে। বাবাও জানত। বাড়িটা আমার নামে করে দিয়েছিল। তাই এখনও পুরানো পত্রিকার মতো ওজন দরে বিক্রি হয়ে যাইনি। এক কোণে পড়ে আছি ধুলো-ঝুল মেখে।
.
দাদা-বৌদি এক আত্মীয়ের বিয়েতে গেছে। বাড়িতে আমি একা। দিন তিনেক একাই থাকতে হবে। তিনদিনের বাজার দাদা করে রেখে দিয়ে গেছে। আমি অল্প কিছু রেঁধে নিই। ঠিকে কাজের মেয়েকে ছুটি দিয়ে দিয়েছি।
সন্ধ্যে হয়েছে। চা করছি এমন সময় কলিং বেলটা বেজে উঠল।
এখন আবার কে এলো? এই তিনদিন কেউ না এলেই বাঁচতাম। অচেনা মানুষের মুখোমুখি হতে ভয় পাই বড়।
.
দরজা খুলতেই হল। ওড়নায় মুখ যথাসম্ভব ঢেকে দরজা খুললাম। একজন আমার বয়সি ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। জিম করা সুন্দর চেহারা।
বলল, "অরুণদা আছে?"
তারপর আমি কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই বলল, "আমি আর অরুণদা একই অফিসে কাজ করতাম। এই কিছুদিন আমি দুর্গাপুরে ট্রান্সফার হয়ে গেছি। আজ এসেছিলাম, ভাবলাম দেখা করে যাই।"
অরুণদা মানে আমার দাদা। বললাম, "দাদা তো নেই। বাইরে গেছে। দুদিন পর ফিরবে।"
ছেলেটা বলল, "যাহ্ তাহলে আর দেখা হবে না। আচ্ছা একটু জল খাওয়াবেন? খুব তেষ্টা পেয়েছে।"
বেশ ঝামেলা তো। এখন কী করি! দরজা বন্ধ করে ঘরে ঢুকে জল আনব? সেটা খুব খারাপ দেখায়। আবার খুলেই বা যাই কী করে। একজন অচেনা ছেলে, আমি একা ঘরে।
আমি একা! ভাবতেই হাসি পেল আমার। আমার কিসের ভয়? কারুর যদিই বদ মতলব কিছু থাকে ওড়নাটা সরিয়ে মুখটা দেখিয়ে দিলেই হল। চোঁ চা দৌড়ে পালাবে।
আমি বললাম, "ভেতরে এসে বসুন। জল দিচ্ছি তারপরে চা করি খেয়ে যাবেন।"
দাদার অফিসের কলিগ। এটুকু আমাকে করতেই হবে। নইলে আবার দাদার কাছে বিপুল ঝাড় খেতে হবে।
জল দিতে ঢক ঢক করে পুরো গ্লাসের জলটা খেয়েই তার সুন্দর ভাসা ভাসা চোখজোড়া নাচিয়ে বলল, "আচ্ছা যদি কিছু না মনে করেন, একটা কথা বলব? আপনি এমন মুখ ঢেকে আছেন কেন? মুখে ফেসপ্যাক-ট্যাক মেখে আছেন নাকি?"
আমি ও কথার উত্তর না দিয়ে বললাম, "আপনি বসুন, আমি চা করে আনছি।"
.
চা আর স্ন্যাক্স নিয়ে গেলাম। দেখলাম বাবু বসে বসে পা নাচাচ্ছেন।
চায়ে চুমুক দিয়ে বলল, "আহ্ দারুণ। তা আপনি অমন মুখ ঢেকেই থাকবেন? খুব অস্বস্তি হচ্ছে আমার।"
আমি চুপ করে রইলাম। কী উত্তর দেব?
-- "আমার নাম মিলন। আপনি বসুন না। একটু গল্প করি। হোটেলে উঠেছি। কিছু করার নেই। কিন্তু আপনি আগে মুখের কভার সরান প্লিজ।"
এক আচ্ছা নাছোড়বান্দার পাল্লায় পড়েছি তো!
আমি বললাম, "কিছু খাবেন? বানিয়ে দেব?"
ছেলেটা পা নাচিয়ে বলল, "ডিমের ওমলেট খেতে খুব ইচ্ছা করছে। খাব। কিন্তু একটাই কন্ডিশান, আপনাকে মুখের ওড়না সরাতে হবে।"
হঠাৎ আমার কান্না পেয়ে গেল।
কেন? কেন আমায় মুখ ঢেকে থাকতে হচ্ছে। কী অন্যায় করেছি আমি? কেন আমি আর পাঁচ জন মেয়ের মতো সেজেগুজে থাকতে পারি না। কেন কোনও মানুষকে আমি আমার মুখ দেখাতে পারি না। কেন লুকিয়ে থাকতে হয় আমায়। কেন?
হঠাৎ কী যে হয়ে গেল আমার, আমি এক ঝটকায় মুখ থেকে ওড়না সরিয়ে দিলাম।
.
ছেলেটা তার জীবনে এত বড় ধাক্কা খায়নি বোধহয়। কিছুক্ষণ বিস্ময়াবিষ্ট হয়ে আমায় দেখল। মুখের হাসি মিলিয়ে গেল।
আমি ধীরে ধীরে বললাম, "কেন ঢেকে রেখেছিলাম এবার বুঝলেন তো?"
তাড়াতাড়ি চায়ের কাপটা রেখে দিয়ে ছেলেটা উঠে দাঁড়াল।
পালাবে। এই ভয়ই আমি পেয়েছিলাম। এই ভয়ই আমি পাই।
কিন্তু আমায় অবাক করে দিয়ে আমার সামনে এসে ও বলল, "আমি ভাত খেয়ে একদম যাব। ডিম আছে তো? দেখি ডিমের কারি কেমন বানান আপনি। আমি হেব্বি পেটুক কিন্তু। আর অনেক গল্প করব।"
গল্প করবে? আমার সাথে? এই মুখ দেখার পরেও?
একটু থেমে বলল, "আমি এমন মুখ দেখতে অভ্যস্ত। আমার মায়ের মুখ অ্যাসিডে পোড়া। অন্য কেউ নয় আমার বাবারই কীর্তি। সন্দেহ থেকে। নিয়ে যাব আপনাকে মায়ের কাছে।"
সব কেমন ওলট-পালট হয়ে যাচ্ছে। এসব কী শুনছি! সত্যি তো? স্বপ্ন নয় তো?
আমি ওড়না দিয়ে মুখটা ঢাকতে যাচ্ছিলাম, কিন্তু ও আমার হাত ধরে বলল, "না আর নয়।"
'না আর নয়'.. 'না আর নয়'...শব্দগুলো আমার কানে কী অপূর্ব সুরে-ছন্দে বেজে উঠল। সাতাশ বছরের দীর্ঘ জীবনে আজই প্রথম সুখের সুবাস পেলাম..
ঘরে কত আলো.. আলোকে ঘেন্না করলাম না.. জীবনে এই প্রথমবার...

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ৭:৩৯

গেছো দাদা বলেছেন: তোমার দেখা নাই রে ... তোমার দেখা নাই !!

২| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ৮:৫২

হাবিব বলেছেন: গেছো দাদা, কার দেখা নাই?

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:৩৭

গেছো দাদা বলেছেন: জ্বী স্যার ... আপনার !!

৩| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:২৫

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর গল্প।

দেখা হবে। অপেক্ষা করুন।

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:৩৬

গেছো দাদা বলেছেন: জীবনের আর এক নাম অপেক্ষা .....

৪| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:৫০

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: দারুন লাগলৌ :)

+++

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১:২২

গেছো দাদা বলেছেন: ধন্যবাদ । আপনাকেও +++

৫| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:৪৯

মিরোরডডল বলেছেন: ভীষণ ভালো লাগলো
অল্প কথায় গল্পটা দারুন

৬| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১:২২

ফয়সাল রকি বলেছেন: চমৎকার, ভাল লাগা রইলো।

৭| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ৭:০৭

মলাসইলমুইনা বলেছেন: দাদা --সুন্দর ।
পিনার এই গল্প ভালোবাসার সুখের গল্পের চেয়েও মানবিকতারই গল্প হয়ে উঠেছে বেশি । খুব সুন্দর ।

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ৮:১৬

গেছো দাদা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.