নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার জন্য ভালোবাসা।

গেছো দাদা

গেছো দাদা › বিস্তারিত পোস্টঃ

রম্যঃ আমার স্কুল বেলা

০৬ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:৪৯

ক্লাস ফাইভের রেজাল্ট হাতে পেয়ে আমি খুব একটা অবাক হয়িনি। ফেল করারই কথা ছিল, ফেলই করেছি। অবাক হয়েছিল আমার বাবা। অংকের মাস্টারের ছেলে শুধু অংকে না, বাকি সব বিষয়েই ফেল করাটা শুধু আশ্চর্যের না, শকিংও।
রেজাল্ট বেরোনোর দিন সকালে জিগেস করেছিল কি খাবি আজ? মিষ্টি দই আমার প্রিয়, তাই বলেছিলাম। ফেল করে রেজাল্ট নিয়ে আসার সময় মিষ্টি দই নিয়েই বাড়ি ঢুকেছি দুজনে। পুরো রাস্তায় একবারও বকেনি।
আমি অবাক হয়নি কারণ হাফ ইয়ারলি পরীক্ষাতেও ফেল করেছিলাম। অংকে ১১, ইংরেজিতে ১৮। বাবা জানতোনা। বাবাকে খাতা দেখাইনি। বাবার সই জাল করে নিজে সই করে দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম সামলে নেবো, সে আর হয়নি। ছমাস বাদে কি হবে তা কি ভেবেছিলাম? কি জানি? সই জাল করার বয়েস হলেও, ছমাস পর কি হবে তা ভাবার মতো দূরদর্শিতা মনে হয় হয়নি।
তারপর যে আমার প্রতি বাবার ব্যবহারে খুব একটা পরিবর্তন হয়েছিল, তা নয়। শুধু আমাকে রোজ কিছুক্ষন পড়াতে বসতো। টিউশন কিছু কমিয়েছিলো তার জন্য। তবে তেমন কিছুও না, বেশ কিছু লোন ছিল বাড়িটা করতে গিয়ে। টাকার দরকার ছিল। পরিবর্তন হয়েছিল মায়ের ব্যবহারে। কথায় কথায় বাজে ব্যবহার। অবশ্য হবে নাই বা কেন। মা'ই বলেছিলো ফেল করার রাতে নাকি বাবা কেঁদেছিল। আমি দেখিনি অবশ্য।
তবে সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন হয়েছিল আমার বন্ধুদের, বলা ভালো তাদের বাবা মায়েদের। নিজেই শুনেছি "ওর সঙ্গে খেলবি না, ও ফেল করা ছেলে", "ভালো ছেলেদের সঙ্গে মেশ, ফেল করা ছেলেদের সঙ্গে মিশলে তুমিও ওরকম হবে"। তাদের দরজা পর্যন্ত গিয়েও শুনেছি "ও এখন পড়ছে বা ঘুমোচ্ছে, তোর সঙ্গে বেরোবে না।"
যারা সব পরীক্ষায় পাস করে উঠেছেন, তারা জানেন না, ফেল করার পর নতুন করে স্কুলে ভর্তি হতে হয়। একটা লাইন হয় অফিসঘর থেকে সেদিন ফেল করা ছেলেদের আবার ভর্তি করার জন্য। সরকারি স্কুলে আবার ভর্তি হতে তেমন পয়সা লাগে না, তবে ফ্রিতে পাওয়া যায় মাস্টারমশাই দিদিমণিদের বেঁকা মিচকি হাসি। মাঝে মাঝে মন্তব্য, কিরে তুই ফেল করেছিস? তোর বাবা অংক পড়ায়না?
ফেল করা ছেলেরা ভর্তি হতো ক্লাস D তে। সেখানে বেশিরভাগ ছেলেরাই ফেল করা বা অন্য সেকশনে জায়গা না পাওয়া "মেরিট লিস্টে" সবচেয়ে নিচের গাধা গরুর দল। সেখানে ক্লাস ফাইভএ আবার ভর্তি হলাম। ক্লাসে অবাধে আসতো পর্নোগ্রাফির বই, পিস্তল। প্রথমবার হাতে পিস্তল নেওয়া সেই ক্লাস ফাইভেই। সিঙ্গেল শট পিস্তল। গুলিও পিস্তল থেকে খুলে দেখিয়েছিলো অমিত। পরে সেই অমিত বড় হয়ে এলাকার নামকরা গুন্ডা হয়েছিল। প্রথম পর্নোগ্রাফির বই দেখায় তুহিন। ডেবনিয়ার আর কসমোপলিটন। ওদের বেশ পয়সা ছিল। বাংলা পানু, মানে বটতলার বই আনতো সুজিত। গোল হয়ে বসে পড়তাম সবাই। বই পড়তো অরিন্দম। পড়ার মাঝে মাঝে কিছু অদ্ভুত শব্দ করতো মুখ দিয়ে। পরে জেনেছি, সেটাকে শীৎকার বলে।
এক বছর ছিলাম সেকশন D তে। সেই একবছরে যত কিছু শিখেছি, যত আনন্দ করেছি, তত মনেহয় পুরো স্কুল জীবনেও করিনি। আর পেয়েছিলাম কিছু বন্ধু। যারা জীবন দিতে পারে বন্ধুর জন্য।
একবছর পর যখন পাস করে সিক্সে উঠলাম, আমার নম্বর A সেক্শনে যাবার মতো। অংকে ১১ থেকে ৮১। বাবা বলেছিলো ৮০র ওপর পেলে সাইকেল কিনে দেবে। জাস্ট ৮১। সাইকেলটা পেতে অবশ্য ক্লাস সেভেন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল। টানাটানির সংসার।
আমার মতো আরো কয়েকজন ছিল। আমরা এলাম A সেকশনে। এসেই শুনি A সেকশনে নাকি মনিটর থাকে। আমাদের D সেকশনে থাকতো না। মনিটর আবার ভোট দিয়ে নির্বাচন হয়। দুজন মনিটর হবে। সবচেয়ে বেশি ভোট পেলো শান্তিগোপাল, ক্লাসের ফার্স্ট বয়। ২৮টা ভোট। দ্বিতীয় আমি - ১৫ টা ভোট। D সেকশন থেকে A সেকশনে এসেই ক্লাস মনিটর? মাস্টারমশাই অবাক হলেও, ভোটতো চোখের সামনে। আসলে আমাদের D সেকশনের প্রায় আট নয় জন সবাই আমাকে ভোট দিয়েছে, এবং কিছু প্রক্সিও মেরেছে। বাজে ছেলেতো আমরা। বাজে কাজ করতে ছোটথেকেই পারি।
প্রথমবার প্রক্সি দিতে হলেও আর কোনোদিন প্রক্সি লাগেনি। শান্তিগোপাল আর আমি মনিটর ছিলাম যতদিন মনিটর কনসেপ্ট ছিল। প্রায় সমান সমান ভোট পেয়ে। মনিটর ব্যাপারটা ছিল মনেহয় ক্লাস এইটের এর আদ্দেক। তারপর আমরা আর মনিটর রাখিনি।
ক্লাস ফাইভএ অংকে ১১টা একবছরে হলো ৮১। আর মাধ্যমিকে হলো ১০০য় ১০০। পুরো স্কুলে দুজন পেয়েছে ১০০য় ১০০। হেড স্যারের ছেলে আর আমি। হেড স্যারের ছেলে পুরো স্কুলেও ফার্স্ট, আমি ফোর্থ। কিছু স্যার যারা D সেকশনে পড়াতেন, তারা এসে জিগেস করছিলেন, তুই D সেকশনে ছিলি না একসময়? তুই অংকে ১০০ পেয়েছিস? খুব ভালো। তবে মার্কসীটটা হাতে পেয়ে নে আগে, যদি কিছু ভুল থাকে লিস্টে।
তারপরের গল্প? তারপরের গল্প অন্য সময়। তবে ওই D সেকশনের একটা বছর অনেক কিছু শিখিয়েছে। A সেকশনে এলেও তথাকথিত ভালোছেলে তারপর আর কোনোদিনই হইনি।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১২:২৫

চাঁদগাজীর সমর্থকগোষ্ঠী বলেছেন:

ডি সেকশনে থাকার সময়ই মনে হয় আপেল গাছের দিকে বেশি নজর ছিলো।

২| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০২২ ভোর ৫:৫৯

রংবাজপোলা বলেছেন: জব্বর লেখছেন ! এক্কেবারে ফাটাফাটি।


কদমবুসি লইয়েন

৩| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০২২ ভোর ৫:৫৯

সোবুজ বলেছেন: রম্য ভাল লেগেছে।

৪| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১০:২৭

ইসিয়াক বলেছেন: বান্ধবীদের গল্প কিছু বললেন না!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.