নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভজহরিদাকে এত উদ্বিগ্ন কখনও দেখিনি আমি।
বললাম, "কী হয়েছে ভজহরিদা?"
ভজহরিদা বলল, "খুব মারাত্মক একটা টর্নেডো ধেয়ে আসছে। এখন বাঁচি কী করে সেটাই ভাবছি!"
বুন্টা চুইংগাম চিবুতে চিবুতে বলল, "কই ওয়েদার রিপোর্টে কিছু বলল না তো?"
ভজহরিদা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, "রাখ তোর ওয়েদার রিপোর্ট! এসব টর্নেডোর হদিশ তোর ওয়েদার রিপোর্ট দিতে পারবে না। কেসটা হল, বউয়ের মামা আসছে। খুড়তুতো মামা। মামার নাম মাখনলাল। মাখনমামা আর্মিতে কাজ করতেন। কিছুদিন আগে রিটায়ার্ড করেছেন। এখন খুঁজে খুঁজে আত্মীয় বাড়ি ঘুরছেন মাইমাকে সঙ্গে নিয়ে নিজের গাড়িতে। ছেলে বিদেশে থাকে। ঘরে তালা ঝুলিয়ে আজ এর বাড়ি কাল ওর বাড়ি করে কাটাচ্ছেন। কাল আমাদের বাড়িতে আসছেন।"
আমি অবাক হয়ে বললাম, "তাতে অসুবিধাটা কী?"
ভজহরিদা বলল, "অসুবিধা হল মাখনমামা ইংরেজিতে কথা বলেন সব সময়। তিনি চান সবাই তাঁর সঙ্গে ইংরেজিতেই কথা বলুক। না বললে যখন তখন ট্রানস্লেশন জিগ্যেস করবেন। তুই হয়তো বললি, বাজার থেকে কাঁকুড় কিনে এনেছি। উনি বলবেন, ট্রানস্লেট ইট ইনটু ইংলিশ। শুধু ট্রানস্লেশনই নয় গ্রামারও। এক্ষুনি বলবেন, অমুক ভার্বের পাস্ট পার্টিসিপল বলো। আর আমার ইংরেজির জ্ঞান তো শোচনীয়! এতকাল কোনো অনুষ্ঠানবাড়ি-টাড়িতে দেখা হলে একশো এগারো হাত দূরে থেকেছি। কিন্তু এবার কী হবে! বউ বলেছে, ইজ্জত কা সওয়াল। ভুলভাল বললেই সারা আত্মীয় সার্কেলে অশিক্ষিত বলে ঢ্যাঁড়া পিটে দেবে। এখন কিভাবে ম্যানেজ দেব তাই ভাবছি।"
.
কথা শেষ হতেই বুন্টা হন হন করে কোথায় চলে গেল। একটু পরে ফিরে এল একটা চটি বই নিয়ে। বইটা ভজহরিদার হাতে দিয়ে বলল, "এটা পড়ো। চল্লিশ টাকা দিয়ে 'পণ্ডিত বুক স্টল' থেকে নিয়ে এলাম।"
বইটার নাম 'সহজে ইংরাজি কথা বলুন'।
ভজহরিদা রেগে গিয়ে বলল, "তুই আমার সঙ্গে মশকরা করছিস? কাল সকালেই মাখনমামা ল্যান্ড করছেন। আর আজকে আমি বই পড়ে ইংরেজি বলা শিখে নেব?"
বুন্টা বলল, "কালকেই আসছেন? তাহলে এক রাতে শেখা একটু চাপের আছে। যাই তাহলে বইটা ফেরত দিয়ে আসি।"
ভজহরিদা বলল, "হুহ্ এইসব বই পড়ে যদি সব শিখে নেওয়া যেত তাহলে তো আর কথাই ছিল না। 'সহজে বিমান চালানো শিখুন' তারপর 'সহজে হার্ট অপারেশন শিখুন' এইসব বইও আছে। চল্লিশ টাকা দিয়ে একটা করে কেন আর শিখে নে। যত্তসব হাঁদামি! এখন আমাকে একটু চিন্তা করতে দে।"
.
একটু পরে ভজহরিদা শূন্যে দুবার হাত ছুঁড়ে বলল, "পেয়ে গেছি।"
তারপর আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল, "যা তো, তোর ঘরে যা, ফ্রিজ থেকে বরফ নিয়ে আয়।"
আমি বরফ নিয়ে আসতে ভজহরিদা নিজের গলায় চেপে ধরল বরফ। কিছুক্ষণ পরে ভজহরিদার গলা পুরো বন্ধ হয়ে গেল। আর কথা বলতে পারছে না। গলা পুরো চোক্ড। ভিকট্রি সাইন দিয়ে ভজহরিদা চলে গেল।
.
পরদিন রাত্রে আমি আর বুন্টা বসে গল্প করছিলাম। আজ নির্ঘাত ভজহরিদা আসবে না। মাখনমামাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকবে।
এইসব বলছি এমন সময় ভজহরিদা হাজির। বলল, "যা দৌড়ে আবার বরফ নিয়ে আয়।"
আমরা অবাক হয়ে গেলাম ভজহরিদার গলা শুনে। বন্ধ হয়ে যাওয়া গলা প্রায় ক্লিয়ার।
বলল, "আর বলিস না, মাখনমামা সারাদিন আমায় গরম-জলে নুন দিয়ে গার্গল করিয়েছে। আর মাঝে মাঝে গলাটা কতটা ছাড়ল দেখার জন্য 'পুসি ক্যাট পুসি ক্যাট, হোয়ার হ্যাভ ইউ বিন' বলতে হচ্ছে। সারাদিন একটা ওভেনে গরম জল হচ্ছে। উফফ কী গেরোয় পড়েছি রে বাবা! গলা ঠিক হয়ে গেলে কী আর গলা বসে যাওয়ার ভান করা যায়! যা যা বরফ নিয়ে আয়।"
.
পরদিন সন্ধেবেলায় শেডের তলায় আমাদের নির্দিষ্ট বেঞ্চে বসে আমি আর বুন্টা ভ্যাটাচ্ছি। ভজহরিদা হাজির হল। দেখে মনে হল মেজাজ ঠিক নেই। কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইল।
আমি নীরবতা ভেঙে বললাম, "বরফ আনব?"
ভজহরিদা বলল, "না রে আর বরফ চলবে না। মাখনমামা বলেছে গলা আজ না ঠিক হলে কাল ইএনটির কাছে নিয়ে যাবে। শালা ঝামেলার শেষ নেই! বলে, গলা ধরে থাকা ভাল না। ক্যানসার হতে পারে, দরকার হলে গলার মাংস নিয়ে বায়োপসি করতে হবে। কী কেলো বল তো! নাহ্ আর গলা নিয়ে কিছু করা যাবে না।"
বুন্টা বলল, "মামাকে নিয়েই ঘেঁটে আছ, ওমিক্রনের খবর রাখছ ভজহরিদা? থার্ড ওয়েভ এসে গেল তো! কী যে হবে!"
ভজহরিদা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, "আর ওমিক্রন! এই ওমিক্রন-মামার হাত থেকে আমি যে কীভাবে রেহাই পাই সেটাই ভাবছি!"
তারপর একটু চুপ করে কী ভাবল।
হঠাৎ লাফিয়ে উঠে বলল, "হয়ে যাবে। বুন্টা তোকেই করতে হবে কাজটা। ফোন বের কর।"
এরপর বুন্টাকে কাকে ফোন করতে হবে, কী বলতে হবে সব বুঝিয়ে দিল ভজহরিদা।
.
বুন্টা ফোন স্পিকারে দিয়ে মাখনমামাকে ধরল, "হ্যালো মিস্টার মাখনলাল ব্যানার্জি বলছেন?"
ওদিক থেকে ভারী কন্ঠস্বর ভেসে এল, "ইয়েস ব্যানার্জি স্পিকিং।"
বুন্টা খুব উত্তেজিত হয়ে বলল, "শুনুন খুব জরুরি দরকারে ফোন করছি। কোভিডের থার্ড ওয়েভ এসে গেছে জানেনই তো। শিলিগুড়িতে আপনার বাড়ি অনেকদিন ধরে বন্ধ পড়ে আছে। আমরা ঠিক করেছি ওটাকেই সেফ-হাউস বানাব। আক্রান্ত মানুষকে ওখানে রাখব।"
ফোনের উল্টো দিক থেকে একটা আর্ত চিৎকার ভেসে এল, "অ্যাঁ! এসব কী বলছেন! আপনি কে? আমার বাড়িতে সেফ-হাউস! মানে আমার বাড়ির দিকেই আপনাদের নজর পড়ল কেন মশাই? না না, আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।"
ভজহরিদা আমার কানে কানে বলল, "দেখেছিস, উত্তেজনার চোটে 'বাটার'মামা বাংলায় কথা বলছে! নো ইংলিশ!"
বুন্টা বলল, "আমি কর্পোরেশনের অফিসার। আপনার বাড়ি খুব বড় আর দীর্ঘদিন তালা বন্ধ আছে আর আপনি তো বাইরেই থাকেন তাই আপনার বাড়িটাকেই আমরা সেফ-হাউসের জন্য সিলেক্ট করেছি। এছাড়া আপনি হলেন এক্স-আর্মি। দেশের জন্য আপনি এগিয়ে আসবেন আমরা জানি। আপনার ফোন নম্বর আমরা আপনার প্রতিবেশীর কাছ থেকে কালেক্ট করে ফোন করছি।"
মাখনমামা বলল, "সেফ-হাউস! না না আমরা ফিরছি মানে কালকেই ফিরছি। কাল ফিরেই আপনাকে এই নম্বরে ফোন করে জানিয়ে দেব। আমার বাড়ি নেওয়া যাবে না। আমরা গিয়ে থাকব কোথায়?"
বুন্টা বলল, "ওহ কালই ফিরছেন! তাহলে আর কী করা যাবে! দেখি আর কোন বাড়ি নেওয়া যায়! আচ্ছা রাখছি।"
বুন্টা ফোন কেটে দেওয়ার পরেই ভজহরিদার ফোন বেজে উঠল, ভজহরিদা তড়বড় করে বলল, "গলা ঠিক আছে, দেখবেন? পুসি ক্যাট পুসি ক্যাট... ও আচ্ছা, যাচ্ছি।"
মাখনমামার ফোন! ফোন পকেটে পুরে ভজহরিদা বলল, "ওষুধে কাজ হয়েছে বুঝলি। এক্ষুনি বেরিয়ে যাবে মনে হচ্ছে। যাই, অন্তত আজকের রাতটা থেকে যেতে বলি।"
০৯ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:৪১
গেছো দাদা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ দাদা।
২| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২২ ভোর ৬:২৯
রংবাজপোলা বলেছেন: গল্পটা বহুত মজার।
সত্যই ভালালাগছে।র্আরও লেইকখেন।
কদমবুসি লইয়েন
০৯ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:৪৩
গেছো দাদা বলেছেন: ধন্যবাদ দাদা।
কদমবুসি মানে কি? মানে টা সত্যিই জানি না।
৩| ১১ ই জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:১৯
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: হা হা হা
অনেক দিন পর আপনার স্বাদ পেলাম।
কারণ আপনি নন। আমিই যে ছিলুম না ব্লগে বে----শ দীর্ঘ সময়
আপনার দারুন রম্য গুলো মিস হয়েছে।
বেড়ালের পেছন হাটা দিয়ে দেখি পুষীয়ে নেয়া যায কিনা
হা হা হা
১১ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:০৪
গেছো দাদা বলেছেন: আপনাদের মতো পাঠকদের ভালবাসাই লিখতে অনুপ্রেরনা যোগায়। ভালো থাকবেন দাদা।
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ২:০২
সোবুজ বলেছেন: একটু লম্বা হলেও আকর্ষণীয় হওয়ায় সবটাই পড়লাম।পড়ে ভাল লাগলো।