নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার জন্য ভালোবাসা।

গেছো দাদা

গেছো দাদা › বিস্তারিত পোস্টঃ

রম্য: একটি সফল, ও একটি ব্যর্থ আবিষ্কারের গল্প

১৩ ই মে, ২০২২ বিকাল ৩:৫৪


প্রসাধনী বিষয়টা খুব শিশুকাল থেকেই এড়িয়ে চলি আমি।
সে আমার মামাবাড়ির কথা। কোলিয়ারি; সুতরাং যত্রতত্র কয়লাগাদা, ছাইগাদা। সদ্য হাঁটতে শেখা কৌতূহলী বয়েসে একদিন মাসির বোতল থেকে খানিকটা তুহিনা মেখে কয়লাগাদায় কিঞ্চিৎ প্রমোদবিহার করেছিলাম। ধানবাদের শীতকাল। মাসি হিড়হিড় করে টানতে টানতে ঝিঙ্গাচোপা, বাটি সাবান, ও চৌবাচ্চার বরফ শীতল বালতি বালতি জল সহকারে যে ধোলাই দিয়েছিল, তা আজও ভুলতে পারিনি। সেই থেকে স্নো-ক্রিমের সঙ্গে আমার দা-কুমড়ো।
আরেকবার একটু বড় হয়ে একবার পাউডার মেখেছিলাম। এমনিতে আমার গাত্রবর্ণে একটা জেল্লা আছে, মা বলে উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ, আমার এক বন্ধু দোয়াত কিনতে গেলে বরাবর আমাকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে বলত, ঠিক এর গায়ের রঙের মতো কালি দিন। তা, পাউডার মেখে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ওই বয়েসেই টের পেয়েছিলাম, আমাকে ঠিক শাগপোস্তুর মতো লাগছে। সেই থেকে আমার প্রসাধন বলতে কেবলই সাবান; ব্র্যান্ডের বালাই নেই। বিকেলবেলা মাঝে মধ্যে ওই সাবান দিয়েই মুখটা একটু মেজে নিই।
এইখানে গিন্নি মাঝেমধ্যে ছোটখাটো কেরামতি করে থাকেন। টিউবাকৃতি দুএকটা ফেশওয়াশ নামক বাজারু বস্তু বেসিনের ওপর রেখে দেন, এবং আমি সেগুলি কদাচিৎ হাতের কাছে পেলে ব্যবহার করে থাকি।
সেরকমই একদিন, দেখি একটি সাদা, বেঁটে, এবং মোটা টিউব শীর্ষাসনে বেসিনের পাশে দাঁড়িয়ে। পেট টিপে খানিকটা বের করে মুখে রগড়ে নিলাম। গ্রীষ্মের দিন; দারুণ একটা শীতল অনুভূতি পেলাম। নেশা ধরে গেল। পরদিন আবার। তৃতীয়দিন মাখতে গিয়ে খানিকটা ক্রিম জিভে লেগে গেল; দেখি মিষ্টি লাগে। এই স্বাদ পেয়েই আমার মাথায় বিদ্যুৎ চমকের মতো উত্তর পেলাম, রাত্তিরে আমার বালিশে লাল পিঁপড়াগুলো কিসের টানে আসে! টিউবটা উল্টে পাল্টে দেখি সেটা গিন্নির দাঁতের ব্যথার একটা বিশেষ টুথপেস্ট!
আমি আবিষ্কার করে ফেললাম, টুথপেস্ট ফেসোয়াশ হিসেবে মন্দ নয়; তবে পিঁপড়ে এড়াতে ভালো করে জল, সম্ভব হলে সামান্য কেরোসিন বা ফিনাইল দিয়ে মুখটা ধুয়ে নিতে হবে।
কিছুদিন আগে আমার এক বন্ধু একটা পুরুষালি প্রসাধনী সেট উপহার দিল, গালভারী একটা নাম তার - মেন'স গ্রুমিং কিট, অর্থাৎ বর সাজার যন্ত্রাবলী। গিন্নি ওটা আমার বাইরে যাওয়ার ব্যাগে সেট করে দিল। তাতে সুবিধেই হল; প্যান্ডোরার বাক্সের মতো এক জায়গায় সব কিছু পাওয়া যায়। বাইরে গেলে যে সবসময় ফাইভস্টার জোটে তার তো মানে নেই - জঙ্গলে তাঁবু খাটিয়েও থাকতে হয় আমাদের, সেসব কথা ফার্নেসের সামনে শখের সেলফি তোলা কর্পোরেটরা বুঝবেনা।
তা বাড়িতে একদিন চশমার কাঁচ মোছার লিকুইডটা খুঁজে পাচ্ছিনা; সেট থেকে আফটার শেভ লোশনটা হাতিয়ে বের করলাম। আরেকদিন, সাবান শেষ হয়ে গিয়েছিল - সাবানটা বের করে ফেললাম। এইভাবে বের করতে করতে আসল সময়ে বাইরে গিয়ে আবিষ্কার করলাম, দাড়ি কাটার ক্রিমটা নেই। তৎক্ষণাৎ আমার আবিষ্কারটার কথা মাথায় এল; এবং অঙ্ক কষে ভাবলাম, ইফ টুথপেস্ট ইজিকেল্টু ফেসোয়াস, হোয়াই নট ইকুএল্টু শেভিং ক্রিম?
যেই ভাবা সেই কাজ! খানিকটা টুথপেস্ট ব্রাশে নিয়ে গালে ঘষতে থাকলাম - কিন্তু উঁহু! তার আচরণ অদ্ভুত। যদিবা ঘষাঘষি করে খানিকটা ফেনা ফেনা ভাব এনেছেন, সেই সময়েই যে আপনার একটা ফোন আসবে - আর সেই সময়েই ফেনা শুকিয়ে গাল খটখট। অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে নোট নিলাম; আ টুথপেস্ট ক্যান বি ফেসোয়াস, বাট নট বি দা শেভিং ক্রিম!
কিন্তু গল্পের সারকথা হল, আমার এই সফল আবিষ্কারের সম্পূর্ণ কৃতিত্ব আমার পূজনীয়া স্ত্রীর, আর ব্যর্থতার সম্পূর্ণ দায় আমার; আর উপদেশ হল, টুথপেস্ট কেউ শেভিং ক্রিম হিসেবে ব্যবহার করবেন না।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই মে, ২০২২ বিকাল ৪:৫০

শায়মা বলেছেন: হা হাহা পূজনীয়া ভাবিজীর লিপস্টিক নেইলপলিশ এসব দিয়ে ভুল ওয়াস হলে কি হবে ভাবছি।

১৩ ই মে, ২০২২ বিকাল ৫:৫৮

গেছো দাদা বলেছেন: হা হা হা

২| ১৩ ই মে, ২০২২ রাত ৯:২০

গরল বলেছেন: আমার গল্পটা আর একটু করুন। সেদিন কাপ বোর্ডে দুইটা টুথপেষ্ট এর সাইজের বক্স দেখলাম, নাম লেখা Ice cream. খুলে দেখি দুই রং এর দুইটা টিউব, বেগুনী ও বাদামী। আমি তো খুশিতে ভাবলাম হয়ত আইস ক্রিম বানানোর জন্য বউ কোন কালার এনেছে। যাই হোক ভাবলাম একটু টেস্ট করা যাক, মুখে দিয়েই ভুলটা বুঝতে পারলাম। বমি চলে এলো, বউ দৌরে এসে বলল কি হল, তুমি তো খনও বমি করো না। চিৎকার করে বলল করেছ কি, আমার চুলের কালার তুমি খেয়ে ফেলেছ? তাড়াতাড়ি হসপিটাল এ চল.....।
বউ ব্যাস্ত থাকায় কাপ বোর্ডে রেখে ভেবেছিল পরে সরাবে কিন্তু ভুলে গিয়েছিল। এটা কিন্তু রম্য না দাদা, সত্যি কাহিনী। যাই হোক অনেক দিন পর আসলেন মনে হচ্ছে, স্বাগতম আপনাকে।

৩| ১৩ ই মে, ২০২২ রাত ১০:২৪

আহমেদ জী এস বলেছেন: গেছো দাদা,




হা...হা.... "পূজনীয়া স্ত্রী" !!!!!!!!

স্ত্রীরা পূজনীয়ই হয় নইলে মা কালীর খড়গ থেকে স্বামীদের কল্লা বাঁচায় কার সাধ্যি!!!!!!!!!!!!!!!!!!!! ;)

৪| ১৩ ই মে, ২০২২ রাত ১০:২৪

বিজন রয় বলেছেন: হা হা হা ....... মজার মজার কাহিনী।

আমারো এরকম কিছু আছে গল্প।

একদিন লিখবো হয়তো।

তবে সে লেখা আপনার মতো এত আকর্ষনীয় হবে না।
আপনার লেখা একবার পড়া শুরু করলে মেষ না করে ওঠা যায় না।

৫| ১৪ ই মে, ২০২২ সকাল ৮:২০

জুল ভার্ন বলেছেন: ব্যাপক বিনোদন!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.