নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন সাধারন..

ভাবী জিওলজিস্ট

Back to the pavilion

ভাবী জিওলজিস্ট › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইসলামপুরের কান্ন!!!!!!!!!!!!!

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৩০

লেখাটি কয়েকদিন আগে লিখেছিলাম আজ শেয়ার করলাম ......।

গত ৪/৯/২০১৪ তারিখে একটি জাতীয় দৈনিকের প্রথম পাতায় একটি খবরের শিরোনাম ছিল “ ত্রান কর্মকর্তার অপেক্ষায় বন্যাদুর্গতরা” এবং আশরাফুল বিবির কন্দনরত যে ছবি প্রকাশ করা হয়েছে তা শুধুমাত্র আশারফুল বিবির নয় তা পুরো ইসলামপুর উপজেলাবাসীর দীর্ঘদিনের কান্না। সরকারি তথ্য মতে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা বিধৌত এই উপজেলার আয়তন ৩৫৩ বর্গ কিলোমিটার এবং শিক্ষার হার ৩৪.৪৩ শতাংশ, যার বেশিভাগ অধিবাসীই সল্প আয়ের কৃষিজীবী। আমি যখন এই লেখাটি লিখছি তখন হয়তো বন্যা কবলিত এলাকার অনেকেই আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে চলে যেতে শুরু করেছে। প্রায় প্রতি বছরই বন্যা আসে আর এই রকম হাজারো আশরাফুল বিবির ত্রানের জন্য হাহাকার শুরু হয়, এটা যেন এই এলাকার বন্যার্ত মানুষের নিয়তির বিধান। বন্যা আর নদী ভাঙ্গনের সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে যাচ্ছে এই এলাকার মানুষ, গত ৩৬ বছরে নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে ৮৯.৬১ বর্গ কিলোমিটার এলাকা যা সমগ্র উপজেলার ২৫.৩৮ শতাংশ । মার্কিন মহাকাশ সংস্থা “নাসা” ও মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা থেকে প্রাপ্ত স্যটেলাইট ইমেজের তথ্য ও উপাত্ত বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায় ১৯৭৭-১৯৮৯ সাল পর্যন্ত এই উপজেলার ২৬.৪১ বর্গ কিলোমিটার ভুমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এছাড়া ১৯৮৯-২০০০, ২০০০-২০০৫, ২০০৫-২০১১ এবং সর্বশেষ ২০১১-২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত নদীগর্ভে হারিয়ে গিয়েছে যথাক্রমে ৩১.৩৭, ৬.১২, ১৩.৭৬ ও ১.৯৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকা। নদী ভাঙ্গনে ইসলামপুর উপজেলার ১২ টি ইউনিয়নের মধ্যে পশ্চিমে অবস্থিত পাঁচটি যথাক্রমে কুলকান্দি, বেলগাছা, চিনাডুলী, সাপধরী ও নোয়ারপাড়া সম্পুর্নরুপে ক্ষতিগ্রস্থ হয়, যার মধ্যে সাপধরী ইউনিয়ন চিরতরে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় এবং বাকি ইউনিয়ন গুলের ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ এলাকা নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে ।

যমুনা পৃথিবীর দীর্ঘতম নদী গুলোর একটি যা প্রচণ্ড খরস্রোতা, অস্থিতিশীল ও বহু আইল্যান্ড চর নিয়ে গঠিত। উজান হতে আসা নদীবাহিত পলল, আইল্যন্ড চর, নদীর ঢাল ও এর ভূতাত্ত্বিক গঠন এই নদীকে আরো বেশি অস্থিতিশীল করে তুলেছে যার কারনে এখানে নদী ভাঙ্গন রোধে কুলকান্দি ইউনিয়ন ও চিনাডুলী ইউনিয়নের গুঠাইলে ১৯৯৬ ও ২০০০ সালে বিদেশি দাতা সংস্থার অর্থায়নে নির্মিত হার্ডপয়েন্ট দুটির বেশিভাগ অংশই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সম্প্রতি এক গবেষণায় আমরা দেখতে পেয়েছি এই এলাকায় প্রতিবছর নদী ভাঙ্গনের হার গড়ে ৯৭.৩২ মিটার অন্যদিকে বহুল আলোচিত বগুড়ার সারিয়াকান্দি,ধুনট ও সিরাজগঞ্জের কাজিপুর এলাকার ভাঙ্গনের হার যথাক্রমে ৫৯.০২, ৫৭.৬৮ ও ৪৬.৩৯ মিটার। নদী ভাঙ্গনের শিকার এই এলাকার ভিটেমাটি সহায়সম্বলহীন মানুষ জীবন বাঁচানোর আশায় পাড়ি জমাচ্ছে ঢাকা, চট্রগ্রাম সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন শহর এলাকায়। ফলে প্রতিনিয়ত শহরমূখী অসহায় এই সব মানুষের ঢল ক্রমেই বাড়ছে, যার বেশিভাগই মানবেতর ভাবে জীবন যাপন করছে বিভিন্ন বস্তি এলাকায়। জীবনের তাগিদে শহরে আসা এইসব মানুষের বেশি ভাগই বেছে নিচ্ছে নিম্ন আয়ের পেশা যেমন রিকশা চলানো, ঠেলাগাড়ি চালানো, ভিক্ষাবৃত্তি, ময়লা পরিষ্কার করা, গৃহকর্মী, ছাই বিক্রেতা ইত্যাদি। আবার কেউবা জড়িয়ে পড়ছে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক চোরাচালান সহ বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপে, ফলে ক্রমেই শহর অঞ্চলের সামাজিক অবস্থার অবনতি লক্ষ্যকরা যাচ্ছে । এভাবে নদীভাঙ্গন চলতে থাকলে জাতিসংঘ ঘোষিত “সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা- ২০১৫”র অর্জিত সাফল্য ম্লান হয়ে যেতে পারে।



বর্তমানে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড জিওব্যাগ দিয়ে ভাঙ্গন প্রতিরোধের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তবুও কোন কার্যকরী ভুমিকা পালন করতে পারছে না। এই বিষয়ে জাপানের আম.আই.ই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে কিছু গুরুত্বপুর্ন তথ্য যার মধ্যে আছে যে সব আর্থ ম্যাটারিয়েল দিয়ে বাধ তৈরি করা হচ্ছে তার প্রতিরোধ শক্তি খুবই কম, জিওব্যাগ সঠিক জায়গায় স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ অপ্রতুল । বন্যার পানি কমে যাওয়ার সাথে সাথেই বেড়ে যায় নদী ভাঙ্গনের হার এর একটি কারন হচ্ছে ভূগর্ভস্থিত ও ভূ উপরিস্থিত পানির চাপের তারতরম্যের কারনে। প্রতি বছরই যমুনার চর সমূহের আয়তন ও সংখ্যা বেড়েই চলছে ফলে নদীর গভীরতা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে যার ফলশ্রুতিতে বন্যার তীব্রতা প্রকোট আকার ধারন করছে। এভাবে চলতে থাকলে আমগামী দিনগুলোতে দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কবলে পড়বে এই এলাকার অসহায় মানুষ গুলো। গতকাল অনেক সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন গুলো ত্রান নিয়ে ইসলামপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে, যা কিছু হলেও এই এলাকার মানুষের সহায়তায় কাজ করবে।সরকারি-বেসরকারি, সামাজিক, রাজনৈতিক ও ব্যাক্তি পর্যায়ের ত্রান সামগ্রী হয়তো কিছুদিনের জন্য কান্না লাঘব করবে কিন্তু বছরের পর বছর বুকের মাঝে চেপে রাখা কান্না কে লাঘব করবে?



আমরা ত্রান চাই না চাই দীর্ঘমেয়াদী টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন যা এই এলাকার মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটাবে। আমরা আশরাফুল বিবির মতো লাখো নারীর চোখে-মুখে কান্না দেখতে চাইনা দেখতে চাই হাঁসি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.