![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাদা-সিধে গ্রামের মানুষ গুলো হঠাৎ করেই মাঝে মাঝে শহুরে আধুনিকতার ছোঁয়া আর বিলাসিতা দেখে কেমন যেন পালটে যায়। আজকে এমনি একটি মানুষের জীবনের গল্প বলব, যিনি ইতিপূর্বে কখনো শহর দেখেননি, অথচ কাজের সন্ধানে ঢাকায় এসে মেয়েলী ঝামেলায় নিঃস্ব হয়েছেন।
বেশ কিছুদিন আগের কথা, অভাবের তাড়নায় মারুফ তার ছোট ছেলে-মেয়ে দুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে বসে থাকতে পারেনি, গ্রাম ছেড়ে চলে এসেছে ঢাকায়। দুই ছেলে-মেয়ের মধ্যে ছেলে বড় – এবার সে মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে, চোখে মুখে তার অনেক স্বপ্ন। ছোট মেয়েটা এবার ক্লাস সেভেনে পড়ে।
মারুফের গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামে। গ্রামে থাকতে মারুফ একটা হার্ডওয়্যারের ওয়ার্কশপে কাজ করতো, তাতে ছেলে-মেয়ের খরচ যোগাতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছিলো তার। অভাবের সংসার, মারুফের বউ মেঘনা আক্তার গ্রামেই থাকে, মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করে যা পায় তাতে খাওয়া খরচ চলে যায়, আর মারুফের ওয়ার্কশপের টাকায় ছেলে-মেয়ের পড়াশুনার খরচ চলতো।
ঢাকায় যখন মারুফ নতুন আসে তখন হাতে ছিলো মাত্র ১৫০০ টাকা। সেটাকেই সম্বল করে নিয়ে কাজের সন্ধানে এখানে এসেছিলো মারুফ। প্রথমে এখানে সে এটিএম বুথের সিকিউরিটি গার্ড এর কাজ নেয়, ব্যস্ততম এলাকা মতিঝিলের একটা জরা-জীর্ণ পুরাতন অট্টালিকার নিচেই বিলাস বহুল অত্যাধুনিক এটিএম বুথ। ছেলে হিসাবে ভাল এবং অমায়িক ব্যবহারের কারণে অল্প কয়দিনেই বাড়ির মালিকের সাথে ভাল খাতির হয়ে যায় তার।
বাড়ির মালিক তৈমুর সাহেব দোতলা তে থাকেন, এ বাড়িতেই বুয়ার কাজ করে আমেনা নদী। বয়স ২০-২২ এর কাছাকাছি, হ্যাংলা পাতলা এবং মেপে মেপে কথা বলে মেয়েটা। মালিক তৈমুর সাহেবের বাসায় ভালো কিছু রান্না হলে তিনি সব সময় নদীকে দিয়ে মারুফের জন্য খাবার পাঠিয়ে দেন। তৈমুর সাহেবের ছেলে-মেয়ে এ বাড়িতে থাকেন না। ওরা বিদেশে পড়াশুনা করেন, দোতলার বিশাল ফ্ল্যাটে তৈমুর সাহেব এবং তার স্ত্রী এই দুজনই থাকেন।
মারুফের বয়স এখন চল্লিশের কোঠায়, একটা সময় তাকে আরো বেশি বুড়ো মনে হতো। তখন গ্রামের হাঁড় ভাঙ্গা খাঁটুনিতে জীবন ছিলো দুর্বিষহ। মারুফ এখানে ভালোই আছে, গ্রামের বাড়িতে সে এত ভাল-মন্দ খাবার সুবিধা কখনোই পেতো না।
মারুফ এখানে এসে নতুন নতুন এসএমএস করতে শিখেছে, কি করে বিকাশে টাকা পাঠাতে হয় সেটাও শিখেছে। আগে এসব কিছুই জানতো না মারুফ। হঠাৎ করেই তৈমুর সাহেবের কাজের বুয়া নদীর সাথে মারুফের একটা ভাল ভাব হয়ে গেলো। আগে যে ছেলেটা বেতনের শেষ টাকাটা পর্যন্ত নিজের ছেলে-মেয়ে আর বউ এর জন্য গ্রামে পাঠাতে কার্পন্য করতো না আজ সেই মারুফ হঠাৎ করেই কেমন যেন পালটে গেলো।
মারুফ আর নদীর প্রেম ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলো, আগে কখনো নদীর মুঠোফোন ছিলো না। দ্বিতীয় মাসের বেতনের টাকা দিয়ে মারুফ নদীকে তার সাথে কথা বলার জন্য নতুন মুঠোফোন কিনে দেয়। সে ভুলেই যায় যে গ্রামে তার পরিবার-পরিজন আছে, মাসের শেষে টাকা না পেলে ওদের চেয়ে দূর্গতিতে আর কেউই পড়বে না।
গেল ফেব্রুয়ারীর ১৩ তারিখ ছিল পহেলা বসন্ত; মারুফ আর নদী নতুন জামাকাপড়ে বলাকায় লেট নাইট প্রিমিয়ার দেখতে যায়, মারুফের খুব আনন্দ লাগে। নিজের কাছে মনে হয় এটাই তো জীবন! ক্ষনিকের জন্য নিজের অস্তিত্ব ভুলে গিয়ে রাতারাতি ধনী সাজতে মোটেই খারাপ লাগে না তার! ১৪ই ফেব্রুয়ারী ছিলো বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, মারুফ-নদী পুরো ঢাকা শহর চোষে বেড়ায়, ঘুরে ফেলে বাহাদুর শাহ পার্ক, টিএসসি, হাকিম চত্ত্বর আরো কত কি!
পরপর দুদিন যে কাজে বাঁধা পড়ে গেছে সেদিকে যেন মারুফের খেয়ালই নেই! অফিস থেকে দুবার তাকে ফোন করে বলা হলো, “এভাবে যদি বারবার কাজে বাঁধা দাও তবে সামনের মাস হতে তোমাকে আর কাজে এসো না!”
মারুফ সেদিকে খুব একটা মনোযোগ দেয় না, কারণ মারুফের কাছে তার থেকেও বেশি আকর্ষনীয় এখন তৈমুর সাহেবের কাজের বুয়া নদী। ফেব্রুয়ারীর ১৬ তারিখ মারুফ জানতে পারে আমেনা নদী আগেই দুবার বিবাহ করেছে, প্রথম স্বামী তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলো এবং দ্বিতীয়বার বিয়ের পর সেই ঘরে তার দুটো ছেলে-মেয়েও আছে।
কথা শুনে মারুফ বিশ্বাস করতে পারে না। মারুফের বুক কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। মারুফ-নদীর প্রেম হয়তো আরো বেশ কিছুদিন এভাবেই চলতে পারতো কিন্তু হঠাৎ আকাশে উড়তে থাকা মারুফ যেন সম্ভিত ফিরে পায়। কিন্তু ততদিনে হয়তো বড্ড বেশি দেরি হয়ে গিয়েছে, এদিকে বারবার কাজে বাঁধা দেওয়ায় চাকরিটাও চলে যায় তার।
মারুফ বুঝতে পারে না কি করবে সে? নতুন চাকরির সন্ধানে নেমে পড়ে মারুফ, কিন্তু অচেনা শহর ঢাকায় নতুন চাকরি খুঁজে পাওয়া এতটাই সহজ নয়। একবার ভাবে আবার গ্রামে ফিরে যাবে, কিন্তু গ্রামে ফেরা হয় না তার। গ্রাম থেকে খবর আসে, টাকার অভাবে মারুফের বউ ভিটে মাটি বেচে দিয়েছে। ফিরে যাবে গ্রামে? কিন্তু কোথায় যাবে সে?
এতকিছু ভেবে পায়না সে, মনে মনে মারুফ ভাবে, “ঢাকায় এসে আমি এ কি করলাম? এর থেকে তো মরে গেলেও ভালো হতো!” পকেট থেকে একটা জং ধরা জিলেট ব্লেড দিয়ে আস্তে আস্তে বাঁ হাতের অনেকখানি কেটে ফেলে মারুফ!
হয়তো মরেই যেত মারুফ, কিন্তু জীবন বড়ই নিষ্ঠুর! সকাল বেলা চায়ের দোকানি মারুফ কে তৈমুর সাহেবের বাড়ির দরজায় পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয়, পুলিশ এসে দেখে এখনো বেঁচে আছে মারুফ। ওকে নিয়ে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের ইমার্জেন্সি ইউনিটে!
মারুফ বেঁচে আছে, এবং হয়তো আবারো সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে খুব তাড়াতাড়ি কিন্তু এবার হয়তো সে পূর্বের মত এতটাই সাদা-সিধে হবে না। তার ভেতরে হয়তো ভালবাসা থাকবে না - থাকবে শুধুই ঘৃণা!
২| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:০৯
বিজন রয় বলেছেন: তবে ভালবাসা হলো বমির, মতো জোর করে বন্ধ করা যায়।
৩| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:১৭
নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন বলেছেন: ভালোবাসার কষ্টও কিন্তু মধুরই হয়।
৪| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:৩১
বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: এই টা তো ভালোবাসা না পরকীয়া...
৫| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:৫৬
কানিজ রিনা বলেছেন: অপকর্ম মানুষকে কঠিন বাস্তবের সম্মুখিন হতে হয়। অথচ বাস্তবতা তকদির বলে মানুষ দেয় আল্লার দোশ। মারুফের মত লোক গুলর হাতে থাকে স্ত্রী সন্তানের তগদীরের
ভার,আর মারুফরাই নষ্ঠ হয়ে স্ত্রী সন্তানের কঠিন বাস্তবতার সম্মুখিন করে।
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:০৮
বিজন রয় বলেছেন: হা হা হা .............. হ্যাঁ ভালবাসা সব সময়ের জন্য আনন্দের।