![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মায়াময় পৃথিবী! ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মায়াগুলো চেতনে বা অবচেতনে কুড়িয়ে যাচ্ছি।
প্রচন্ড জ্যাম ঠেলে ধীরগতিতে রিকশা এগুচ্ছে । সমস্ত ঢাকাবাসি কি রাস্তায় আজ? শুক্রবার আর তার উপর দেশের এই পরিস্থিতিতে একটা দিনই আছে বাজার-সদাই, দরকারি কাজ সারা কিংবা ভালোবাসার মানুষের সান্নিধ্য পাবার। এইরকম সময় এই জায়গায় পারতপক্ষে আসতে চায় না শফিক, এই জ্যামের জন্য এক খ্যাপেই দুই/তিনটার মত সময় লেগে যায়। গেলেও চড়া দাম চায়। তবে আজ ঘটনা ভিন্ন। আজ তার রিকশায় বউ রিপা আর একমাত্র কলিজার টুকরা মেয়ে টুকটুকি। টুকটুকি তার ডাক নাম। ভালো নাম রোশনারা বেগম।
ওরা থাকে লক্ষ্মীপুর। মেয়ের তার বড় শখ ঢাকার থেকে কেনা একটা জামা পরবে। তাই শফিক এতদিন ধরে টাকা জমিয়েছে। গত ঈদে নিজেই কেনাকাটা করে নিয়ে যাবে ভেবেছিল, কিন্তু ঈদে ঢাকায় নাকি রিকশাভাড়া বেশি চাওয়া যায়। তাই কুরবানির ঈদে আর বাড়ি না গিয়ে আরো কয়টাদিন অপেক্ষা করে, মেয়ের আর মেয়ের মায়ের মান ভাঙ্গাতে তাদেরই ঢাকা আনার ব্যবস্থা করেছে। নিজেরও কি কষ্ট কম হয়েছে প্রিয় মুখগুলো না দেখে এতদিন বসে থাকতে।
কেনাকাটা শেষে চোখমুখ উজ্জ্বল তাদের! আজই যেন ঈদ ঈদ লাগে। অনেক কেনার সময় রিপার এর ওর কথা মনে পড়ে। এমন করে বেশ অনেকটা টাকা চলে গেছে যদিও।
এখন ভেবেছিল একটানে ঢাকা শহর ঘুরে দেখিয়ে ফিরে যাবে। শফিকের খুব শখ মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে বড় করবে। তাই বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মেয়েকে নিয়ে দেখাতে চেয়েছিল। কতটা কি বুঝবে জানে না, তবে দেখে রাখুক!
নিউমার্কেট পার হয়ে সামনে একটু খালি পেয়ে রিকশায় টান দিল শফিক। নীলক্ষেত মোড়ের সিগন্যাল। সিগন্যালের সামনে দাঁড়াতে গিয়ে কিছুটা বেশিই সামনে গিয়ে পড়েছিল সে। আচমকা ট্রাফিক পুলিশের আগমন। “পাশের গাড়ি কই দাঁড়াইসে আর তুই কই? পিছে যা” বলতে বলতে সজোরে গালের উপর সশব্দ চড় কসিয়ে ট্রাফিক পুলিশের নিজস্থানে গমন। মাথা ঝিমঝিম করতে লাগল শফিকের। কিছু চিন্তা করতে পারে না।
টুকটুকির কন্ঠ, রিপার কন্ঠ কানে আসে। কিন্তু কি বলছে বুঝতে পারে না। দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়। নাহ, শারীরিক আঘাত অতটা লাগে নি। পুলিশের কাছে এর চেয়ে ঢের বেশি হেনস্থা হতে দেখছে মানুষকে, যদিও তার সাথে কখনো হয় নি। রিপার পানে চাইতে পারে না। তার চেয়েও বড় কথা মেয়ের দিকে তাকাবে কি করে সে?
তার দাদার বাবা মসজিদের ইমাম ছিলেন। বিচক্ষণতার জন্য অত্যন্ত সম্মানিত ছিলেন। সেই সূত্র ধরে হতদরিদ্র হওয়ার পরও গ্রামের লোকে এখনও তাদের বংশকে আলাদা চোখে দেখে। এইজন্যই পেরেছে রিপার মত এত ভালো একটা মেয়েকে বউ করে পেতে।
কিন্তু এ কি হল? মাটিতে মিশে যেতে পারত যদি?
শফিক তার গ্লানি লুকানোর জায়গা পায় না। মেয়ের কাছে তার অবস্থান আকাশ সমান, নাকি তার চেয়েও কিছুটা উপরে ছিল? তীব্রভাবে কামনা করে এর পুরোটাই দুঃস্বপ্ন হোক, কিন্তু বাস্তবতা বোধকরি ভয়াবহতাকে দুঃস্বপ্নের চেয়েও ছাড়িয়ে যায় কোন কোন সময়।
ওদেরকে বাসে উঠিয়ে দিতে যায় শফিক। পরিচিত এক ছোটভাই যাবে তার সাথে পাঠিয়ে দেবে। সেদিন হরতাল যদিও, কিন্তু কিছু করার নেই। টাকা পয়সার অবস্থা সঙ্গিন। যাওয়ার পথে টুকটুকি হঠাৎ চিৎকার দিয়ে ওঠে! “বাবা! দ্যাহো!” মেয়ের আঙুল লক্ষ করে তাকিয়ে দেখে এক পুলিশ সার্জেন্ট মাটিতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে কাতরাচ্ছে। পাশে পড়ে থাকা তার মোটরসাইকেল। “বাবা, এট্টু পানি দিয়া আহি?” শফিকের মনে পড়ে যায় সেদিনকার কথা। সব পুলিশকে এক মনে হয়। বলে, “দিনকাল ভালা নারে মা। বাস ছুইট্টা যাইবো।”
বলে সামনে এগিয়ে চলে। কিছুদূর গিয়ে কি ভেবে মোড় ঘুরে আবার ফিরে আসে। আহত পুলিশের সামনে রিকশা থামায়। পুলিশটাকে রিকশায় তুলে নিয়ে ছোট ভাইটার হেফাযতে স্ত্রী, কন্যাকে রেখে “আইতাছি” বলে সামনের হাসপাতলের খোঁজে যায়।
বাস কি ছেড়ে যায় ততক্ষণে? ককটেল ফাটার মত শব্দ কি কানে আসে তার? হয়ত।
প্যাডেল করতে থাকে শফিক। সর্বশক্তি দিয়ে।
১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:১৮
প্রবল প্রবাহী বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:১৭
এম হাবিব আহসান বলেছেন: vai eta jite jaoar golpo
১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৪
প্রবল প্রবাহী বলেছেন:
৩| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:২৪
ব্লকড বলেছেন: চমৎকার ভালো লাগা রইল।
১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:১১
প্রবল প্রবাহী বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ ভোর ৪:৪২
স্নিগ্ধ শোভন বলেছেন:
ভাল লাগল +++++