নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন ভাল পাঠক।ব্লগ শিক্ষণীয় এবং ইনফরমেটিভ।তাই ব্লগ পড়ে আনন্দ পাই।প্রায় সবার লেখাই মনোযোগ দিয়ে পড়ার চেষ্টা করি এবং মুগ্ধ হই।

নোয়াখাইল্ল্যা

আমার প্রায় সব লেখাই সংগৃহীত,পরিবর্তিত ও পরিমার্জিত।

নোয়াখাইল্ল্যা › বিস্তারিত পোস্টঃ

--নোয়াখালী ভাষা ও সংস্কৃত..... ১ম পর্ব

০১ লা জুন, ২০১৪ দুপুর ১:০৯

ভাষা ও সংস্কৃতি

প্রথমে বলি আমাদের নোয়াখালীর ভাষা নিয়ে যত নাটক হয়েসে, অন্য কোন ভাষা নিয়ে এত নাটক হয়েসে কিনা আমার জানা নেই.।



ভাষা আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক-ভৌগোলিক বহুবিধ অনুষঙ্গের কারণে অঞ্চলবেধে সংস্কৃতি ভিন্ন ভিন্ন মাত্রা রুপ পরিগ্রহ করে। তাই একটি দেশের সামগ্রিক লোকসংস্কৃতি এবং একটি বিশেষ অঞ্চলের লোকসংস্কৃতিতেও অনেক পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। নোয়াখালী জেলা প্রাচীন সমতট জনপদের একাংশ। তাই স্বাভাবিকভাবেই জেলার লোকসংস্কৃতিতে তার একটি পরিচ্ছন্ন ছাপ পরিলক্ষিত হয়। বহু ভাঙ্গা-গড়া, চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আজকের নোয়াখালী যা এক সময় সম্ভাবনাময় সমৃদ্ধ জনপদ ছিল। এ অঞ্চলের লোক সংস্কৃতির প্রতি একটু ঘনিষ্ট হলে সহজেই অনুমান করা যায় যে, এ অঞ্চলের একটি সমৃদ্ধ লোক সংস্কৃতির পরিমন্ডল রয়েছে। লোক সংস্কৃতির একটি প্রধানতম শাখা লোকসাহিত্য। নোয়াখালীর লোক সাহিত্য এ দেশের অন্যান্য অঞ্চলেরতুলনায় অনেকটা সমৃদ্ধ এবং জীবন ঘনিষ্ঠ; তা এ অঞ্চলের প্রবাদ-প্রবচন, আঞ্চলিক গান, ধাঁ-ধাঁ, ছড়া থেকে সহজেই অনুমেয়। নিম্নেরআলোচনায় এর স্বরুপ কিছুটা উম্মোচিত হবে।



প্রবচনের কথাই ধরা যাকঃ“মাইনষের কুডুম আইলে গেলে, গরুর কুডুম লেইলে হুঁইছলে”এ প্রবচনটি গুঢ়ার্থ হলো মানুষের কুটুম্বিতা তথা আতিথেয়তা বুঝা যায় পরস্পরের আসা যাওযার মাধ্যমে আর গরুর তা বোঝা যায় লেহনের মাধ্যমে। এ প্রবচনের অর্থের সাথে এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ যে ঐতিহ্যগতভাবেই আত্মীয় বৎসল তা বুঝতে বাকী থাকার কথা নয়।“ ঝি থাইকলে জামাইর আদর, ধান থাইকালে উডানের আদর”-এ প্রবচনটির সরল অর্থ হচ্ছে কন্যার কারণেই মানুষ কন্যা জামাতাকে খাতির করে আর ধান প্রক্রিয়াজারকরণের প্রযোজনীয়তা হেতুই মানুষ উঠানের যত্নকরে।



কিন্তু এসব প্রবচনের মূলে যে সুক্ষ্ম দার্শনিক কার্যকারণবাদ রয়েছে তা কি আমরা ভেবে দেখার অবকাশ পাই।“মাছ ধোঅন হিঁড়া, গোস্ত দোঅন মিড়া”এ প্রবচনের মধ্য দিয়ে নবীন কোন রাঁধুনীকে শেখানোর চেষ্টা করা হয় যে, রান্নার আগে মাছটা খুব ভালোভাবে ধুতে হয় এবং মাংসটা অপেক্ষাকৃত কম ধুতে হবে। সাধারণ গার্হস্থ্য শিক্ষা ছাড়াও এ প্রবচন এটাই প্রমাণ করে যে, এ অঞ্চলেরমানুষ সুদীর্ঘ সময় ধরেই মাছ, মাংস খেয়ে অভ্যস্থ।“না হাইত্তে খায় হুরি, না হাইত্তে করে চুরি”এ প্রবচনের শিক্ষা হচ্ছে পারত পক্ষে মানুষ অসম্মানজনক কাজ করে না এবং সংরক্ষিত খাবার খায় না। মাছের সংকট বলেই মানুষ যেমন বাধ্য হয়েই শুটকি খায় তেমনি নিতান্ত বাধ্য হয় বলেই মানুষ চুরি করে। দার্শনিক এ শিক্ষার পাশাপাশি এ প্রবচনে চাটগাঁর মত শুটকি যে এ অঞ্চলের নৈমিত্তিক খাবার নয় তাও কিন্তুবুঝতে কষ্ট হয় না। এমনি“ হৈল হোনা গজার হোনা, যার যার হোনা তার তার হোনা”এ প্রবচনে সন্তান বাৎসল্যের সাথে সাথে আত্মমুখী ভালোবাসার মজ্জাগত বোধটি সরলভাবেই বিধৃত হয়। শোল মাছ, গজার মাছ যেগুলি কিনা রাক্ষুসে মাছ, যারা অন্য মাছের পোনা অবলীলায় খেয়ে সাবাড় করে। কিন্তু তারা নিজ নিজ পোনাকে সোনা যেমন মূল্যবান ধাতু হিসেবে মানুষ আগলে রাখে তেমনি আগলে রাখে। উপরিউক্ত প্রবচন পাঁচটির মত হাজারো প্রবচন এখানকার লোকমুখে প্রতিনিয়তই ফিরছে। শুধু আমরা তা মনোযোগী হয়ে আমলে নিইনি, নেইনা। আঞ্চলিক গানের ক্ষেত্রে যদি একটি দৃষ্টি দেই- আঞ্চলিক গানের কথা বলছি এ কারণে যে, লোকগীতি বললে তা আমাদের জেলা ছাড়িয়ে পুরো ভাটি অঞ্চলকে যুক্তকরে ফেলে। তবে ভাটিয়ালী গানে যে এ জেলার মৌলিকত্ব নেই তা নয়। ভাটিয়ালী গান-গীতির ভৌগোলিক সীমা অনেক বেশি প্রসারিত। কাজেই একটি ছোট অঞ্চলের গানই বোধ হয় প্রাধান্য পাওয়া প্রয়োজন। যেমন-“ ইদ্দুরিতান মাইজদী শঅর এত্ত লাগে বালা, যদিও নাই এ শঅরে হাঁচ তালা দশ তালা”জাতীয় গান যখন গীত হয় তখন কোট প্যান্টালুন পরা সাহেব পথচারী শিল্পীর দিকে না তাকালেও কানটাকে যে অনেকক্ষণ সেদিকে দিয়ে রাখেন তা দৃঢ়চিত্তে বলা যায়।“আঙ্গো বাড়ি নোয়াখালী রয়েল ডিস্টিক ভাই”এ গান আঞ্চলিকসাহিত্য সম্ভারে নোয়াখালী যে সঙ্গিতোপযোগী তারই স্বাক্ষর রাখে শ্রোতার শ্রুতিতে স্মৃতিতে। এ অঞ্চলেরআঞ্চলিক গান ও শ্লোক যা নোয়াখালীর গ্রামে-গঞ্জে এখনো দারিদ্র পীড়িত অধিকার বঞ্চিত মানুষকে ক্ষণিকের আয়েসী-আড্ডায় বুদ্ধিদীপ্ত ও চিন্তামগ্ন করে কিংবা কিঞ্চিত বিনোদিত করে এগুলোও তারই প্রমাণ।



“আঁডে গুড় গুড়, ছাঁড়ে মাডি ছ চোক তিন হুগুডি”-এ ধাঁ-ধাঁ টির উত্তর হলো হাল বা লাঙ্গল চালানো। জীবনের প্রত্যাহিকতাকে রসসিত্তু উপস্হাপন কারার ক্ষেত্রে আমাদের নিরক্ষর পুর্বসুরীরা যে মোটেই অদক্ষ ছিলেন না, এ ধাঁ-ধাঁ তারই উৎকৃষ্ট প্রমাণ।“আষ্ট ঠেং হোল আঁডু, তার নাম রাম টাডু, মাছ ধইত্তে যায়রে টাড়ু, হুউনাত হাতি জাল, মাছ খায় চিরকাল”মাকড়শাকে নিয়ে রচিত এ ধাঁ-ধাঁ আট পা বিশিষ্ট এ জীবের জীবন সমীক্ষণে যে গভীর পর্যবেক্ষণের পরিচয় ফুটে উঠে তাতে আমাদের পুর্বসুরীদের মেধার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাবনতই হতে হয়। এরকম“ উডান ঠন ঠন হিঁড়াত বাড়ী, ধলা হিরিসতার হোন্দে দাঁড়ি”।“ কেরে ভাই চৈতি রাঙ্গা, গাছের আগাতহৈল হো'না”।“ বনের তোন্ বার অইল ভুতি, ভাত বেড়াই দিল মুতি”যথাক্রমে- রসুন, খেজুর, লেবু।



ফল ফসল সংক্রান্তধাঁধা ছাড়াও প্রত্যাহিক জীবনের নানা উপকরণ নিয়ে রয়েছে হাজারো বৃদ্ধিদীপ্ত মুখরোচক ধাঁধাঁ। এছাড়াও বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে জীবনের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাকে নিয়ে দেখা যায় শত শত ছড়া, পদ-পদ্য এমনি প্রশ্নোত্তর ভিত্তিক একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত ছড়া হচ্ছে-আচ্ছালামালাইকুম এয়, দুলা আইছে বিয়া কইত্তো আন্নেরা আইছেন কেয়া। উত্তরে-“ওআলাইকুম আচ্ছালাম ওবা, দুলা আইছে কিয়া কইত্তো আমরা আইছি শোবা”। রয়েছে ছেলে ভুলোনো ছড়া-“ঝিঁঅ ঝিঁঅ মাগো হেঁএলা খাইতাম গেলাম গো/কাঁডা হুঁড়ি মইল্যাম গো/ কাঁডায় লইল শুলানী/ বুড়িয়ায় লইল দৌড়ানি“। এ সকল থেকে এটা সহজেই বুঝা যায় যে, এ অঞ্চলের মানুষ ঐতিহ্যগতভাবেই রসপ্রিয় এবং তাদের রসবোধ জীবন ঘনিষ্ঠ এবং একান্ত নিজেদেরই মত। আজকের আকাশ সংস্কৃতির বদৌলতে আমরা বহু বিষযেই বিস্মৃত হচ্ছি। যাত্রা, পালাগান এসবই আজ সেকেলে ও অনাধুনিক। কিন্তু সেল্যুলয়েডে বন্দী জীবনাংশের তুলনায় এ অঞ্চলেরনট-নটীদের নান্দনিক উপস্থাপনায় এখনো গ্রামে গঞ্জে মানুষকে পুরোরাত জেগে যাত্রা পালা শুনতে কম বেশি দেখা যায় বৈকি। রঙমালা চৌধুরীর পালা, বেদের মেয়ে ইত্যাদি এ অঞ্চলের মৌলিক রচনা ও উপস্থাপনা। কিং এডওয়ার্ড আর সিম্পসনের প্রণয় “চৌধুরী রঙমালা” র প্রণয় অপেক্ষা শক্তিশালী বলে বিশ্বাস করার কোন কারণ নেই। লোক-সাহিত্যের কথা বাদ দিলেও এ অঞ্চলের জন জীবনে যে ঐতিহ্য লালিত তার শিল্প বোধ ঈর্ষণীয় বলতে হবে। আপনি যদি নাগরিক সংস্কৃতির বলয় থেকে বেরিয়ে গ্রামে ঘুরেতে যান, আতিথ্য গ্রহণ করেন, আপনার দৃষ্টিতে গেঁয়ো কোন মানুষের আতিথ্যে মুগ্ধহবেনই। শুরু থেকে ফেরা পর্যন্ত আপনি পাবেন নানা ঐতিহ্যের স্বাক্ষর। দেখবেন আপনাকে বসার জন্য যে পাটি বা বিছানা দেয়া হয়েছে তাতে রয়েছে যত্নে বোনা কারুকর্ম। হয়তো তারই ওপর বিছিয়ে দেয়া হয়েছে একখানা চাদর যাতে যতেণ করা সুচিশিল্প কিংবা এককোণে সুই সুতায় আঁকা বিচিত্র বনফুল আপনাকে আকৃষ্ট করবে। ক্ষণিকের জন্য আপনি হযতো ভাববেন বাহ্ বেশতো। আমাদের মায়েদের-মেয়েদের ঐতিহ্যগত শিল্পবোধ আপনাকে আড়োলিত করবে। হয়তো কেবল পাটালী গুড় আর শুকনো মুড়িই দেয়া হলো আপনাকে তাৎক্ষণিকভাবে; দেখবেন যে টুকরিতে বা সাজিতে তা দেয়া হবে তাতে রয়েছে নিপুণ কারুকাজ খচিত। ধাতব পানদানে কিংবা বেত, আতি, সুতো ইত্যাদি সমন্বয়ে বানানো পানদানে আপনাকে দেয়া হবে পান। দৃষ্টি থাকলে আপনি খুঁজে পাবেন আমাদের হাজারো বছরের লালিত ঐতিহ্য। লাঙ্গল-জোয়াল, কোদাল-কাস্তে, টুকরি-সাজি, যেটার দিকেই তাকান না কেন আমাদের ঐতিহ্যগত শিল্পরসের একটি নমুনা আপনাকে আকৃষ্ট করবেই। গোপাল হালদারের কথায় তাই একমত পোষণ করে বলতে হয় “চারু ও কারু কলা দু'ই সংস্কৃতির পরিচয় দেয়”। আর এ পরিচয়ের দিক থেকে আমাদের লোক ঐতিহ্য লোকসংস্কৃতি হাজারো বছরের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ ও শোভন।



বিঃদ্রঃ ভাষা নিয়ে মজার গল্প পরে বলব[/sb্ব (চলবে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.