নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জানা ও জানানোর জন্যই বেচে থাকা। জীবন তো শুধুই কিছু মুহূর্তের সমষ্টি।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমি আর কলেজ সময় থেকে বন্ধু ব্লগার মহিউদ্দীন রুবেল ডেল্টা এর সাথে ঘুরে আসলাম ড্রাগন রাজ্য ভুটান ও ভারতের দার্জিলিং জেলায় অবস্থিত কালিম্পং শহর। এই ব্লগ সিরিজে চেষ্টা করবো আমাদের ভ্রমন কাহিনি ও ভ্রমনে নানা সমস্যা ও পরিস্থিতি থেকে পাওয়া টিপসগুলোও পাঠকদের জানানোর।
গত পর্বে বলেছিলাম কিভাবে আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছে। এই পর্বে যাত্রা শুরুর পর থেকে আমাদের প্রথম গন্তব্য থিম্পু যাওয়া ও সেখানে ঘুরা নিয়ে কথা বলবো আর প্রয়োজনে টিপসও তুলে ধরবো।
বুড়িমারী-চেংড়াবান্দা সীমান্ত পথ ও কাস্টম অফিস
ঢাকা থেকে বুড়িমারীর বাস গন্তব্যে পৌঁছিয়েছিল সকাল প্রায় ৮টা নাগাদ। নেমেই দেখি বাসের একজন লোক বারবার কাস্টমসের কাজগুলো করে দেয়ার কথা বলছে। আমরা তার কথায় কান না দিয়ে চায়ের দোকানে গিয়ে চা খেয়াল আর একটু ফ্রেশ হলাম। এরপর হাটা ধরলাম কাস্টমস অফিসে। ভিতরে গিয়ে দেখি অধিকাংশ মানুষই বাসের মাধ্যমে করাচ্ছে। হাই কমিশনে একজনের সাথে পরিচয় হয়েছিল সেও বললো আলাদা ৩০০ টাকা (ট্রাভেল ট্যাক্সসহ ৮০০ টাকা) দিয়ে তারা কাজ করছে। আমাদের না না শুনার পর আমাদের কাছে ৭০০ টাকা চেয়েছিল। আমাদের ট্রাভেল ট্যাক্স দেয়া না থাকার কারনে আমি আর ডেল্টা যাই সোনালি ব্যাংক এর শাখায়। নিজেরাই ট্যাক্স সংক্রান্ত কাজ শেষ করে আবার কাস্টমসে আসি। আবার দালালগুলো বিরক্ত করা শুরু করেছে। ইমিগ্রেশনের জন্য একটা ফর্ম পুরন করতে হয়। ফর্ম খোঁজার জন্য আশেপাশে দেখছিলাম। দেখি দালাল ছাড়া আর কারো কাছে ফর্ম নেই। ইমিগ্রেশন যেখানে করা হয় সেখানে বসে থাকা পুলিশকে জিগ্যেস করলাম এই ফর্ম দিতে ? উনি বললেন "বাসের মাধ্যমে আসতে"। আমারও মাথায় ব্যাপারটা ঢুকলো না। এটা আমাদের অধিকার ফর্মগুলো বিনামূল্যে পাওয়ার। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্তরাই সাহায্য করছে না। পরে এক দালালের কাছ থেকে ২০ টাকা দিয়ে ২টি ফর্ম নিয়ে নিজেরাই পুরন করে লাইনে দাঁড়ালাম। এরপর দেখি দালাল একটু পর পর তাদের মানুষকে লাইনে সামনে দিচ্ছে। ব্যাপারটা খুবই বিরক্তিকর ছিল। ডেল্টা একবার বিরক্ত হয়ে ইংরেজিতে প্রতিবাদ শুরু করলো "You have no rights to break discipline. Who the hell are you?" জবাবে ইংরেজি বলার চেষ্টা করায় আমতা আমতা করছিল। ইমিগ্রেসনে থাকা পুলিশও মনে হয় ভেবেছিল আমাদের সাথে ঝামেলায় না যাওয়াই শ্রেয় হবে, তাই লাইন তারা আবার ন্যায়সম্মতভাবে ঠিক করে দিল। যথাযথভাবে ইমিগ্রেশন শেষ করে গেলাম বাংলাদেশ পাড় হয়ে গেলাম ভারত সীমান্তে। ঢুকার পর যে লোক ভিসার উপর সিল দেয় সে সরাসরি বললো "আমাদেরও যদি একটু খুশি করতেন"। আমরা তার কথার পাত্তা না দিয়েই চলে আসলাম সামনে দিয়ে। এরপর শুরু হল আরেক ভোগান্তি।
চেংড়াবান্দায় ভারতের ইমিগ্রেসন অফিসে গিয়ে দেখি পাসপোর্ট এর বিরাট লাইন। যাদের পাসপোর্ট লাইনে আছে তাদের ১-২ ঘণ্টা লাগছে ফর্ম নিতে। কিন্তু যারা ১০০ টাকা দিচ্ছে তাদের সাথে সাথেই সব করে দিচ্ছে। আমাদের কাছে সময় না থাকায় ২টা ফর্মের জন্য ১০০ টাকা খরচ করলাম। এরপর দ্রুত কাজ শেষ করলাম। ইমিগ্রসনে এমন সমস্যা দেখে আসলেই খুব খারাপ লাগছিল। এরপর দুইজন সেখান থেকে ডলার বদলে রুপি নিলাম।
টিপসঃ ট্রাভেল ট্যাক্স এর জন্য সীমান্তে ঝামেলা না করে, ঢাকা থেকেই ট্রাভেল ট্যাক্স এর কাজ সেড়ে নিবেন, তাহলে বাড়তি ঝামেলা করা লাগবে না। হাতে সময় থাকলে দালালের দিকে তাকাবেনও না। ইমিগ্রেসন অফিসার যদি জিগ্যেস করে কোন বাসের, আপনি বলবেন "আমরা নিজেরা করছি"। এরপর তাদের কিছু বলার থাকবে না। ফর্ম না দিলে বলবেন এটা আমাদের অধিকার বিনামূল্যে ফর্ম পাওয়ার। দালালের সাথে কোন প্রকার লেনদেন করবেন না। ভারতেও একই নিয়ম। কেউ চা-পানি চাইলেও আপনাকে জোড় করার অধিকার কারো নেই। মুখ ঘুড়িয়ে চলে আসবেন। সময় থাকলে লাইন ধরে পাসপোর্ট রাখুন, না হলে আলাদা টাকা আর দালালের শরণাপন্ন হওয়া লাগে। ডলারের মান ইন্টারনেট থেকে পরখ করে এরপর কিনুন।
চেংড়াবান্দা থেকে ময়নাগুড়ি
সীমান্তের কাজ সেড়ে আমরা ব্যাগ নিয়ে ভ্যানরিক্সায় গেলাম চেংড়াবান্দা বাজারে। খরচ পড়লো জনপ্রতি ১০ রুপি। সেখান থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে হচ্ছে ময়নাগুড়ি। চেংড়াবান্দা থেকে সরাসরি জয়গাও (ভারত-ভূটান সীমান্ত) যাওয়ার কোন বাস নেই। চেংড়াবান্দা থেকে ময়নাগুড়ি গেলাম একটা লোকাল বাসে। খরচ পড়লো দুইজনের ৩০ রুপি। প্রায় ৪০ মিনিট পর পৌঁছলাম "ময়নাগুড়ি বাই পাস" (নিচের ছবি)। এখান থেকেই জয়গাও এর বাস যায়।
ময়নাগুড়ি থেকে জয়গাও
আমরা পানি-জুস কিনে রাস্তার পাশে দাঁড়ালাম। কিছুক্ষণ পর বাস আসলো আমরা উঠে পড়লাম। লোকাল বাস হলেও সুন্দর ছিল বাসটা, ছিল টিভি। টিভিতে Sholay ছবি ছাড়া ছিল। মজা করে দেখতে দেখতে আসলাম। দুইজনের খরচ পরলো ৯০ রুপি করে। ময়নাগুড়ি থেকে জয়গাও প্রায় একশত কিলোমিটারের রাস্তা। সময় লাগলো ৩ ঘণ্টার মত। পথে দেখলাম সমতলের চা বাগান, দূর থেকে ভুটানের পাহাড় দেখা যাচ্ছিল।
ইমিগ্রেশন ও সীমান্তপাড়ে ফুন্টশলিং
জয়গাও পৌঁছলাম ২টা নাগাদ। এরপর পাশে একটা দোকান থেকে দুপুরের নাস্তা সেরে নিলাম। অদ্ভুত জায়গা, দক্ষিণ বাংলায় পড়েছে কিন্তু বাংলায় ছাপ নেই বললেই চলে। অধিকাংশই চিকন চোখের মানুষ। দোকানের সাইনবোর্ডেও নেই বাংলা। যাইহোক দুপুরের খানা শেষে গেলাম ভারতের ইমিগ্রসন অফিসে। সেখান থেকে ভারতের Departure সিল লাগিয়ে পাড় হলাম ভারতের সীমান্ত।
অবশেষে পৌঁছলাম ভুটানে। এখন আমরা ফুন্টশিলং এ। বাড়িগুলো ভিন্ন, মানুষের বেশভুষাও ভিন্ন। গেলাম ইমিগ্রেসন অফিসে। বেশি সময় লাগলো না ভিসা দিতে। তবে ততক্ষণে বিকাল ৫টা বেজে গিয়েছে। মানে ফুন্টসিলিং থেকে থিম্পু যাওয়ার শেষ বাসও পেলাম না আমরা। এরপর সামনে থেকে একটা শেয়ার ট্যাক্সি করে রওনা দিলাম থিম্পুর উদ্দেশ্যে।
টিপসঃ ফুন্টশলিং থেকে থিম্পু যাওয়ার শেষ বাস বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। প্রায় ২০০ রুপির মত খরচ যায়। চেষ্টা করবেন। আগেভাগে সব কাজ শেষে ফেলার। আমাদের খাওয়া দাওয়া ও কিছু ফটোগ্রাফি না করা হলে আমরা মিস করতাম না। না হলে প্রায় আড়াই-৩গুন টাকা খরচ করে শেয়ার ট্যাক্সিতে যেতে হবে। সেটাও রাতে পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
ফুন্টশিলিং থেকে থিম্পু
ট্যাক্সিতে সাথে ছিল এক ভুটানের আইনজীবী, আমি, ডেল্টা, একজন ভারতীয় বাঙালি আর ড্রাইভার। পুরো সময়টা সেই আইনজীবীর সাথে কথা বলতে বলতে আসলাম। উনি অনেক তথ্য দিয়ে সাহায্য করলেন। গল্প করতে থাকতাম। এভাবে কেটে গেল প্রায় ৫ ঘণ্টা। পাহাড়ের উপর দিয়ে ৬০-৭০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি যাচ্ছে। পাহাড়ের উপর দিয়ে দেখছিলাম ফুন্টসিলিংকে। অসাধারন সুন্দর। মাত্র বৃষ্টি শেষ হয়েছিল তাই কোন কুয়াশা নেই; সব পরিস্কার দেখা যাচ্ছিল। সে রাত ছিল আবার পূর্ণিমা। এতই সুন্দর ছিল সবকিছু যে ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। অন্ধকার হওয়ায় ছবিও তুলতে পারিনি। তবে চোখ জুড়ে সব দেখেছি।
পথে একজায়গায় রাতের খাবারও সেরে নিলাম। প্রথমবার ভুটানের ট্র্যাডিশনাল খাবার খেলাম। Ema Datsi, Brown Rice, Dal ।
এমা ডাতসি মরিচের তরকারি, ভয় পাওয়ার কিছু নাই কারন এই মরিচে কোন ঝাল নেই। খাবার ভালই ছিল। খেয়ে আবার রওনা দিলাম। পথে দেখলাম ভুটানের একটা বিশ্ববিদ্যালয়; পাহাড়ের বুকে। গেদু নামের ছোট একটা শহর। এক ব্রিজের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় দেখি পাহাড় থেকে ঝর্নার পানি পড়ছে ব্রিজের পাশ দিয়ে। অসাধারন একটা দৃশ্য।
প্রায় ১২টার দিকে থিম্পুর ক্লক টাওয়ারের সামনে আমাদের নামিয়ে দিল। এখানেই হোটেল পাওয়া যায়। ভুটানের এই লোককে অনেক ধন্যবাদ দিলাম। এরপর ট্যাক্সির বিল দিলাম। জনপ্রতি ৬০০ রুপি। এরপর হোটেল খোঁজা শুরু করলাম। দুইজন বাংলাদেশির সাথে দেখা হল। উনারা একটু সাহায্য করতে চেয়েছিল তাদের হোটেলে উঠার। কিন্তু তাদের হোটেলে আর রুম বাকি ছিল না। পরে আরও কিছুক্ষণ খুজার পর "হোটেল দিয়া" নামে একটা হোটেলে একটা রুম পেলাম। ৫০০ রুপি লাগবে। হোটেলের ব্যবস্থা ভাল না লাগলেও, আমাদের তেমন কোন সমস্যা হল না। কারন আর কোন উপায় ছিল না এত রাতে। তাছাড়া যে টাকা লাগবে ধরেছিলাম তার থেকে অনেক কমই লাগছে।
টিপসঃ পারলে বাসায় বসেই হোটেল বুকিং করে রাখবেন।
২৯ ঘণ্টার দীর্ঘ সফর শেষে ড্রাগন রাজ্যের রাজধানি থিম্পুতে আসলাম। ক্লাস্ত আমাদের বিছানায় মাথা রাখার ৫ মিনিটের মধ্যে ঘুম চলে আসে। আগামি পর্বে থিম্পু ঘুরার অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো। পরের দিনের একটা ছবি অগ্রিম দিলাম
আরও পড়ুন
ড্রাগন রাজ্য ভুটানে গোপী-বাঘা (পর্ব-৩)ঃ থিম্পু সফর
২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:২২
জিএমফাহিম বলেছেন: জি। ধন্যবাদ।
২| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৩:১০
রক্তিম দিগন্ত বলেছেন:
বাহ! ভালোই ঘুরাঘুরি চলছে। সেই সাথে কাহিনী বর্ণনাও। ভাল লাগলো পড়তে।
যাওয়া পড়লে টিপসগুলো ভালরকমের কাজেই লাগবে।
প্রথম ছবিটা অতিরিক্ত বেশি সুন্দর।
২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:১৮
জিএমফাহিম বলেছেন: ধন্যবাদ
৩| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:১৭
অদৃশ্য বলেছেন:
হুমমম, কিছুটা সময় নষ্টের কারনে আপনাদের মোটামোটি ৪০০ রুপি করে অতিরিক্ত গচ্চা দিতে হলো... যদিও ভ্রমণে এসবই মজার অভিজ্ঞতা... আমরাও জানলাম ও শিখলাম...
শুভকামনা...
২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:০২
জিএমফাহিম বলেছেন: চোর পালাইলে বুদ্ধি বাড়ে। নিজের মাল তো ধরা, অন্যের মাল যাতে সহিসালামত থাকে তার জন্য লিখতাসি
©somewhere in net ltd.
১| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৫৫
পুলহ বলেছেন: বর্ডার/ ইমিগ্রেশনের এই জাতীয় ভোগান্তিগুলা ঘোরাঘুরির আনন্দ অনেকটুকুই মাটি করে দেয়।
চলুক। আপনার এই সিরিজটা ফলো করার ইচ্ছা রাখি, কারণ ড্রাগন রাজ্য ঘোরার শখ আমারো বহুদিনের।
শুভকামনা ভাই!
আরেকটা প্রশ্ন- প্রথম ছবিটা কি আপনাদের তোলা? প্রথম পর্বেও সম্ভবত ছিলো ছবিটা... অসম্ভব, অসম্ভব জাদুময় ! চোখে মায়াকাজল পরিয়ে দেবার মতন সুন্দর !!