নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জানা ও জানানোর জন্যই বেচে থাকা। জীবন তো শুধুই কিছু মুহূর্তের সমষ্টি।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমি আর কলেজ সময় থেকে বন্ধু ব্লগার মহিউদ্দীন রুবেল ডেল্টা এর সাথে ঘুরে আসলাম ড্রাগন রাজ্য ভুটান ও ভারতের দার্জিলিং জেলায় অবস্থিত কালিম্পং শহর। এই ব্লগ সিরিজে চেষ্টা করবো আমাদের ভ্রমন কাহিনি ও ভ্রমনে নানা সমস্যা ও পরিস্থিতি থেকে পাওয়া টিপসগুলোও পাঠকদের জানানোর।
আগের পর্বগুলো মিস করবেন না্
ড্রাগন রাজ্য ভুটানে গোপী-বাঘা (পর্ব-১)ঃ জটিলতা ও যাত্রাশুরু
ড্রাগন রাজ্য ভুটানে গোপী-বাঘা (পর্ব-২)ঃ ২৯ ঘণ্টার সফর > ঢাকা থেকে থিম্পু
থিম্পু ঘুরা শুরু
গতরাতে থিম্পু পৌঁছানোর পর বেশ মজার একটা ঘুম দিয়ে সকাল প্রায় সাড়ে ৮টা নাগাদ ঘুম থেকে উঠলাম। দুইজনই ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে পড়লাম ড্রাগন রাজ্যে দেখতে। তবে বড় একটা সমস্যা হয়ে গেল। আমাদের মুল পরিকল্পনার সব কিছু লেখা ছিল Google Doc এর একটা ফাইলে যেটা আমার মোবাইল এ নেই। আর ডেল্টার মোবাইলেও নেই। প্রথমে ভেবেছিলাম ভুটানের সিম কিনবো, পরে ভাবলাম এখানে আশেপাশে ফ্রি ওয়াইফাই থাকতে কেন শুধু শুধু খরচ বেশি করবো।
হাটতে হাটতে একটা ফ্রি ওয়াইফাই রেস্তোরা পেলাম। বিজি বিন ক্যাফে। ব্রেকফাস্টটা সেখানেই করে নিলাম। ওয়াইফাই দিয়ে সেখান থেকেই বাসায় যোগাযোগ করলাম, আর আমাদের পরিকল্পনার ফাইলটা ডাউনলোড করে নিলাম। খাবার হিসেবে ছিল আমার জন্য ভেজ মম, আর ডেল্টার জন্য বিফ মম। খুবই মুখরোচক ছিল খাবারগুলো। খাওয়া দাওয়া শেষে ঘুরা শুরু করবো। তারাতারি হোটেলে গিয়ে ডেল্টা ক্যামেরা নিয়ে আসলো। আমরা ক্লক টাওয়ার এর সামনে বসে তখন ভাবছি কিভাবে এতগুলো স্পট শেষ করা যায়। কারন দেরিতে উঠার কারনে তখন প্রায় সাড়ে ১০টা বাসে। একদিনে পুরো থিম্পু হেটে শেষ করা সম্ভব না। ক্লক টাওয়ার এর পাশে একজন ট্রাফিক মহিলা পুলিশ পেলাম। উনি খুবই কম খরচে একটা ট্যাক্সির ব্যবস্থা করে দিলেন। দাম পড়লো ১৫০০ রুপি। সময় কম থাকায়, আর আমাদের বাজেটের একটা বড় অংশ বেচে যাবে এই ভেবে রাজি হলাম। তারপর ট্যাক্সি করে সুন্দরমত সবগুলো জায়গায় ঘুরলাম।
মেমোরিয়াল চোরতেন
প্রথমে ঘুরলাম মেমোরিয়াল চোরতেন, এটা বুদ্ধ ধর্মালম্বিদের উপসনালয়, তারা এই চারপাশে ঘড়ির কাটার মত ঘুরতে থাকে। তাদের বিশ্বাস এটা করলে তাদের Negative Force গুলো দূর হবে। যেমন লোভ-লালসা, কুপ্রবৃত্তি, হিংসা ইত্যাদি। এই নেতিবাচকতা দূর করার জন্য থিম্পু, পারোতে নানা জায়গায় আবার বড় ছোট Wheel রয়েছে।
বুদ্ধ স্ট্যাচু (Buddha Dordenma statue)
এরপর গেলাম বুদ্ধ পয়েন্ট এ। এটা পৃথিবীর সবচেয়ে উচু বুদ্ধের মূর্তি। সোনালি রঙে তৈরি করা বুদ্ধকে থিম্পুর যেকোন জায়গা থেকে দেখা যায়। রাতে তখন সোনালি রঙের উপর আলো দেয়া হয় তখন দূর থেকে দেখলে মনে হয় দূর আকাশের নক্ষত্রের মত। এখনো যদিও মূর্তি তৈরি সমাপ্ত হয়ে গিয়েছে কিন্তু এখনো নির্মাণ কাজ দেখলাম কিছুটা বাকি, আশা করি ভবিষ্যতে গেলে আরও অসাধারন দেখা যাবে।
থিম্পু তাকিন প্রিজারভ (Motithang Takin Preserve)
এরপর গেলাম ভুটানের জাতীয় পশু দেখতে। তাকিন বলা হয় একে। বিরল প্রজাতির এই প্রাণী দেখতে গেলাম থিম্পু তাকিন রিসার্ভ এ। টিকেট খরচ লাগলো জনপ্রতি ১০০ রুপি।
তাশিচো জং (Tashichho Dzong)
এরপর গেলাম থিম্পুর তাশিচো জং এর সামনে। অসাধারন জায়গা। তাছাড়া যেখানে যেখানে সুন্দর ছবি তোলা যায় এমন যায়গায় গাড়ি থামিয়ে থামিয়ে দেখেছি সবকিছু। ছবি তুলেছি
সিমতোখা জং (Simtokha Dzong)
এরপর গেলাম Simtওkha Dzong এ। এটা থিম্পুর সবচেয়ে প্রাচীনতম Dzong বা প্রাসাদ। তাদের মুদ্রার মধ্যেও এর ছবি দেয়া আছে।। এই স্থাপত্য গঠনে এটিই প্রথম প্রাসাদ। বানানো হয়েছে ১৬২৯ সালে, ভুটানের রাজা যাবদ্রুং এর মাধ্যমে, জিনি সমগ্র ভূটানকে একত্রিত করেছিলেন। খুবই সুন্দর একটা জায়গা। আমরা ঘুরে ঘুরে দেখলাম আসেপাশে।
এরপর...
সবকিছু ঘুরা শেষে ক্লক টাওয়ারের সামনে গিয়ে নামলাম। সেখানে ফুটবল নামের এক রেস্তোরাতে দুপুরের খাবার সাড়লাম। ওখানে ছিল বুফে। আর বাঙালিবাবুদের জন্য বুফে নামে যত পারো লুফে নাও। ইচ্ছামত খেলাম। এমনেও অনেক ক্ষুধার্ত ছিলাম দুইজনই। আমি খেলাম, রাইস, খিচুড়ি, এমা ডাতসি, চাট, সালাদ, ডাল আর dessert হিসেবে ছিল পায়েশ।
ঘুরা শেষ, এখন ক্লক টাওয়ারের নিচে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম দুজন। তখন দেখি ভারতীয় এক কাপলের সাথে আমাদের "আবার" সাক্ষাৎ হল। এই দুজনের সাথে আমাদের এই দিনেও আরও ৩ বার দেখা হয়েছে ৩টা ভিন্ন ভিন্ন জায়গায়। তাদেরও ঘুরা শেষ, আমাদের আমন্ত্রন জানালো একসাথে রেস্তোরায় বসার। এরপর আমরা প্রায় ৩ ঘণ্টা একসাথে আড্ডা দিলাম। আড্ডা দিতে দিতে তখন রাত ৮টা বেজে গিয়েছিল। এরপর একটা রেস্তোরার সামনে গিয়ে ফ্রি ওয়াইফাই দিয়ে বাসায় ফোন দেই।
ভেবেছিলাম রাতের খাবার হোটেলই খাব। ডেল্টার আবার রন্ধনে অনেক মন। কিভাবে এমা দাতসি বানায় ওরা সেটা সে দেখবে। তাই দুইজন একেবারে হোটেলের রান্না ঘরে ঢুকে গিয়ে দেখবো কিভাবে সব বানাচ্ছে। ভুটানিরাও অনেক ভদ্র, আমাদের বারন করলো না।
খাওয়া দাওয়া শেষে আবার বের হলাম ক্লক টাওয়ার এর সামনে। থিম্পুতে আমাদের শেষ রাত। পূর্ণিমার রাত, কিছু মেঘ দেখে সেটা বুঝাই যাচ্ছে না। একটু পরপর গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। আবার ঠাণ্ডা বাতাস একেবারে হাড়ে গিয়ে লাগে। তারপরও বসেছিলাম কিছুক্ষণ আর বিমুগ্ধ হয়ে দেখছিলাম সবকিছু। অনেক মিস করবো থিম্পুকে।
টিপসঃ যদি হাতে সময় থাকে তাহলে আর খরচ কম করার ইচ্ছা থাকে তাহলে চেষ্টা করবেন হেটে থিম্পু ঘুরার সবকিছু হাতের কাছেই আছে। শুধু অনেক হাটা লাগবে, উচু-নিচু জায়গায়। আমাদের সময়ের স্বল্পতার কারনে ট্যাক্সি নেয়া লেগেছে। তবে ঝামেলা কম করতে গেলে বা পরিবার সাথে থাকলে ট্যাক্সিই সবচেয়ে ভাল উপায়। সারাদিনের জন্য ট্যাক্সি ভাড়া করে নিবেন। তাশিচো জং এর খরচ লাগে জনপ্রতি ৩০০ রুপি, আর তাকিন প্রিসার্ভে আগে জনপ্রতি ১০০ রুপি। এছাড়া বাকি জায়গায় ফ্রিতে ঘুরতে পারবেন। আর সামতোখা জং এর একেবারে ভিতরে যাওয়ার জন্য ভুটানের পোশাক পড়ে নিতে হয়। আমরা সেটা করিনি তাই দামের ব্যাপারে বলতে পারছি না। থিম্পু থেকে ভুলেও স্মরণিক পণ্য কিনবেন না, প্রচুর দাম। পারো বা পুনাখাতে কম দামে পাবেন। কেনাকাটার জন্য ভুটান নয়। তাদের জাতীয় জামার কাপড়ও বাংলাদেশ থেকে আসে। অনেক পণ্য আসে ভারত থেকে, ওদের অরিজিন পণ্য খুবই কম। তাই যতটা সম্ভব কিনাকাটা থেকে বিরত থাকুন।
২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৫০
জিএমফাহিম বলেছেন: আরও আসছে।
২| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:৪২
অদৃশ্য বলেছেন:
শর্টকাটে থিম্ফুও দেখা হয়ে গেলো সাথে স্পেশাল খাবারও খেলাম...
শুভকামনা...
২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:৪০
জিএমফাহিম বলেছেন: ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৩:১১
রক্তিম দিগন্ত বলেছেন:
পর্ব কি আরো আসছে?
ভাল লাগলো এই পর্বের ঘুরাঘুরির বর্ণনা। +