নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জানা ও জানানোর জন্যই বেচে থাকা। জীবন তো শুধুই কিছু মুহূর্তের সমষ্টি।

জিএমফাহিম

জানা ও জানানোর জন্যই বেচে থাকা। জীবন তো শুধুই কিছু মুহূর্তের সমষ্টি।

জিএমফাহিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভিগান!! কেমনে কি? গাছের কি প্রান নাই!!

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:৩৫

২০১৫ সালের মাঝের দিকের নিজের প্রতিটা কাজে নিজের ও পরিবেশের প্রভাবের বিষয়গুলো নিয়ে গঠনমুলকভাবে প্রথম ভাবা ও প্রয়োজনে নিজের অভ্যাস, আসক্তিকে দূর করা নিয়ে চিন্তা শুরু হয়। প্রথমে যে চিন্তা মাথায় আসে সেটা হচ্ছে খাবার। কয়েকদিন ইন্টারনেট থেকে বিস্তারিতভাবে দেখা শুরু করলাম । একদিন চোখে পড়লো Veganuary নামের একটা ওয়েবসাইট। তারা দাবি করছে আমরা নাকি প্রানিজ খাবার ছাড়াও আমাদের সকল পুষ্টি উপাদান পেতে পারবো। প্রানিজ খাবার নাকি পরিবেশের অনেক ক্ষতি করে, উদ্ভিজ খাবারের তুলনায় প্রানিজ খাবার অনেক স্বাস্থ্য ঝুকিরও কারন। তাছাড়া প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতার ব্যাপার তো আছেই। জিনিসটা আমার কাছে অবাক লাগতো, কারন আমিও এমনই একটা সমাধান চেয়েছিলাম যেখানে এই বিষয়গুলো বিবেচনা করেই খাদ্য ও পণ্য চয়ন করা হবে। মনে মনে খটকা লাগছিল তাই আরও গভীরভাবে ভাবছিলাম। তার উপর মাংস খাওয়া চালিয়ে যাওয়ার একটা যথার্থ কারন খুজছিলাম। কয়েক মাস ধরে তাদের যুক্তিগুলো সাথে সাথে আরও বেশ কিছু খাদ্যাভ্যাস সম্পৃক্ত তত্ত্ব ছিল ফ্রুটিসিয়ান, র ভিগান, পেস্কেটেরিয়ানদের। সেগুলোর দেখলাম। ২০১৫ শেষের দিকে সিদ্ধান্ত নিলাম এখন থেকে মাংস খাওয়া কমাতে হবে। গত বছর শেষ কবে মাংসে হাত দিয়েছিলাম আমার মনে নেই। আমিও তাদের দলে সামিল হয়ে গেলাম। দেখলাম আমি একা না আলবার্ট আইনস্টাইন, লিওনারদো দ্য ভিঞ্চি, নিউটনের মত বিজ্ঞানি, মোহাম্মদ আলী, আর্নল্ড সয়াজনিগারের, বার্নি দু প্লেসিস এর মত অনেক বক্সার-হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন-মিস্টার ইউনিভার্স, আরও অনেক সেলেব্রেটি ছিল, সবচেয়ে ভাল লেগেছে আমার পছন্দের আমির খানকে এই দলে দেখে। যোগ হলাম সহানুভূতি, পরিবেশ রক্ষা, স্বাস্থ্যরক্ষা ও প্রাণীদের অধিকারের সংগ্রামে।

পটভুমি দেয়ার কারন ছিল । আমি চাচ্ছি না মানুষের মধ্যে এই ভুল ধারনা থাকুক যে আমার পরিবর্তনের ব্যাপারটা আবেগি বা হুজুগে ছিল। যথেষ্ট সময়, শ্রম, বিশ্লেষনের পর নিজের আসক্তিকে বিসর্জন করে এই সিদ্ধান্তে আশা লেগেছে।

এখন আসি যে কারনে আসলে নোটটি লিখলাম। যখনই আমি কাউকে বলি আমি উদ্ভিজভোজী তখন নয়তো ভ্রু কুচকিয়ে সাম্প্রদায়িকতার নজর দিয়ে আমার জাত পরীক্ষা করে অথবা চোখ বড় করে বুঝার চেষ্টা করবে যে এটা কি সারকাজম ছিল নাকি। অনেকে তো রীতিমত ছেলেমানুষী মনে করে মুচকি হাসি, প্রশ্ন করে জানতে চাওয়াও তাদের কাছে সময়নস্ট। যে যেভাবেই প্রতিক্রিয়া করুক না কেন কমন কিছু কথা থাকেই।

"গাছেরও কিন্তু প্রান আছে"
"তোমার প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হয় কিভাবে?"
"আমাদের প্রানিজ ও উদ্ভিজ উভয় খাবারই প্রয়োজন"
"উদ্ভিদেরও ব্যথা আছে তারা বুঝাতে পারে না দেখে তোমার এই হিপোক্রেসি"


প্রতিটি বিষয়ই আমি চেষ্টা করবো রেফারেন্সসহ খন্ডন করার, তবে প্রথমে বেসিকে আসি।


১.১ বেচে থাকার নির্মম বাস্তবতা


আগে আমি আমার খাদ্যাভ্যাসের ব্যাপারে বলতে গেলে প্রথমে গাছের ব্যথা অনুভব না করার ক্ষমতা, প্রানিজ খাবারের ক্ষতি-নিষ্ঠুরতা ইত্যাদি নিয়ে বড় একটা লেকচার দিতাম। যা আসলে ভিগানবাদের মৌলিক তত্ত্ব সম্পর্কে শ্রোতাদের আরও দ্বিধান্বিত করতো। আসলে শুরুতেই ব্যাপারগুলো এভাবে পরিষ্কার করা উচিতঃ

প্রাণী হিসেবে বেচে থাকা মানেই অন্য জীবের অবস্থার পরিবর্তন করা ও প্রয়োজনে নাশ করা। ভিগান হওয়া মানে এই না যে তারা উদ্ভিদের প্রান থাকাকে অস্বীকার করছে। প্রাণী হিসেবে আমরা সবাই মন্দ, নাশের কারন। কিন্তু জৈবিকভাবে আমরা সহানুভূতিশীল। , তাছাড়া পৃথিবীর পরিবেশকে প্রভাব ফেলার মত ক্ষমতা আমাদের আছে। মানবতা বলে আমাদের অবশ্যই হত্যা, ক্ষয়ের বিপক্ষে থাকা উচিত। কিন্তু যখন জীবননাশ করা ছাড়া টিকে থাকার উপায় নাই,
তখন ?
তখন অবশ্যই চেষ্টা করতে হবে যতটা সম্ভব কম হত্যা, কষ্ট দিয়ে টিকে থাকা। ভিগানদের মুলমন্ত্রই এটা।


এটা সহজেই বুঝা যাচ্ছে ভিগানিজম সিদ্ধান্তগুলো কোন গোঁড়ামি না, বরং আপেক্ষিককোন স্থানে পুষ্টিকর খাবারের পর্যাপ্ততার উপর খাদ্য ও পণ্য চয়ন নির্ভর করে। এটা কোন ধর্ম কেন্দ্রিক না (মৌলিক ধর্মগুলোর নিষিদ্ধ খাবারকেও খাওয়া লাগছে না।), আধ্যাত্মবাদ চর্চা না, বরং শতভাগ প্রমান নির্ভর যৌক্তিক সিদ্ধান্ত। কোন প্রাণী আমার টিকে থাকাকে ঝুঁকিতে ফেললে বা আমাকে হত্যা করতে তেড়ে আসলে আমিও নিজেকে প্রতিরক্ষা করার চেষ্টা করবো, নিরুপায় হলে প্রয়োজনে দমনও করবো। কোন দুর্গম দ্বীপে আটকা পড়লে কোন উদ্ভিজ খাবার না পেলে অবশ্যই মাংস দিয়েই টিকে থাকার লড়াই করবো। তবে এই যুগের জন্য, স্বাভাবিক স্থানে বসাবসরত অবস্থায় হাতের কাছে বিকল্প থাকার পরও যদি আমি নিষ্ঠুরতার অংশীদার হই তাহলে মানুষ শুধু নামে হব, কর্মে না।

"A way of living which seeks to exclude, as far as is possible and practicable, all forms of exploitation of, and cruelty to, animals for food, clothing or any other purpose. "


১.২ নৈতিক কারন


একজন মানবিক চিন্তার মানুষ হিসেবে আমি মনে করি পরিবেশে যতটা সম্ভব কম নিষ্ঠুরতা দিয়ে আমার পৃথিবীতে বেচে থাকা উচিত। প্রানিজ খাবারের জন্য কোটি কোটি প্রাণীদের সারাজীবন অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্য দিয়ে যেতে হয়, তাও আমাদের কয়েক মিনিটের প্রশান্তির জন্য। এমনও না যে প্রানিজ খাবার ছাড়া আমার পুষ্টির চাহিদা পুরন হবে না। উদ্ভিজ খাবারের মাধ্যমেই আমাদের সকল প্রকার পুষ্টি চাহিদা (প্রোটিনসহ) পুরন সম্ভব এটা একাধিক নিরপেক্ষ বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমানিত । তাহলে কেন স্বাদ বা পুষ্টির অজুহাতে আমি প্রাণীদের অবর্ণনীয় নিষ্ঠুরতার অংশীদার হব।



অনেকে বলে উদ্ভিদের কি তাহলে ব্যথা নেই? জীববিজ্ঞান বলে, ব্যথার জন্য নার্ভাস সিস্টেম থাকা দরকার; যা শুধু প্রাণীরই আছে, উদ্ভিদের নেই। ফলে তারা ব্যথা অনুভব করে না। [1] যেমনটা আমাদের নখ বা চুল নার্ভাস সিস্টেমের আওতায় নেই বলে ব্যথা অনুভব করি না, তাছাড়া কোনভাবে শরীরের কোন অংশকে জমাট করে রাখলেও পেরিফেরাল নার্ভাস সিস্টেম সেখানে অকেজো হয়ে যায় আমরা ব্যথা অনুভব করি না। উদ্ভিদের যখন ব্যথা অনুভব করে না তখন এটাই উত্তম যে টিকে থাকার লড়ায়ই ব্যথাছাড়া বিকল্প হিসেবে উদ্ভিদের শরণাপন্ন হওয়ার। আর যদি তর্কের খাতিরে ধরে নেই যে উদ্ভিদও ব্যথা অনুভব করে তারপরও প্রানিজ শিল্পের জন্য আমাদের প্রায় ৩ গুন বেশি উদ্ভিজ নাশ করা লাগে, সেই হিসেবে চিন্তা করলে উদ্ভিদভোজীরা পরিবেশে সবচেয়ে কম নিষ্ঠুরতা দিয়ে টিকে থাকছে। যা যৌক্তিক ও মানবিক।


১.৩ পরিবেশগত কারন


একাধিক রিসার্চে প্রমানিত বৈশ্বিক উষ্ণতার জন্য প্রায় এক চতুরাংশ দায়ি হচ্ছে প্রানিজ শিল্প। কার্বন-ডাই-অক্সাইড বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়াতেও তার থেকে বেশি বিষাক্ত ও উস্নায়নের জন্য কার্যকরী হচ্ছে মিথেন গ্যাস (প্রায় ২0 গুন বেশি) [2] , যা প্রানিজ শিল্পের ফলে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে। যে পরিমান গ্রিন হাউজ এফেক্ট প্রানিজ শিল্পগুলো করছে সেটা পৃথিবীর সকল যানবাহনের একত্রিক প্রভাব থেকেও বেশি। রিসার্চে বের হয়েছে বর্তমানে পৃথিবীর কৃষিজ জমির প্রায় ৭০ ভাগ ব্যবহারের জন্য দায়ি প্রানিজ শিল্প [3] [4] । যা কিনা দক্ষিন আমেরিকা ও আফ্রিকার আয়তনের সময়। হিসেব অনুযায়ী যদি পৃথিবীর সবাই উদ্ভিজভোজী হত তাহলে শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের সমান আয়তনের জায়গাতেই পৃথিবীর সকল মানুষের পুষ্টি চাহিদা পুরন তো হতই সাথে আরও ৯ বিলিয়ন মানুষের খাবার বেশি থাকতো [5] ।



জনসংখ্যা বাড়ায় অতিরিক্ত চাহিদা মিটাতে অতিরিক্ত সামুদ্রিক মৎস্যচাষ ও নদীর মৎস্যচাষের ফলে সমুদ্র ও নদীর প্রাকৃতিক বাস্তুসংস্থান ও খাদ্যচক্র আমরা একেবারেই ভেঙ্গে ফেলছি যা লক্ষ লক্ষ বছরে ধরে ভারসাম্যে ছিল। আমাদের অক্সিজেনের একটা ভগ্নাংশই আসে স্থল থেকে আর অধিকাংশই আসে সমুদ্র থেকে। বিজ্ঞানিরা এতে আশংকাজনক ক্ষতির প্রমান পেয়েছে, যার প্রধান কারন হচ্ছে মৎস্যচাষ, দ্বিতীয়ত বর্জ্যনিক্ষেপ। প্রাণীজগতের ৯৮ ভাগ হচ্ছে এই সমুদ্রে। যদি এভাবে চলতে থাকে তাহলে পৃথিবী জীবের বসবাসঅযোগ্য হয়ে যাবে খুব শীঘ্রই।

১. ৪ স্বাস্থ্যগত কারন



প্রায়ই এই প্রশ্নটা শুনি “"তোমার প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হয় কিভাবে?" তাদের সাধারন একটা ধারনা হচ্ছে “মাছ-মাংস মানেই প্রচুর প্রোটিন, উদ্ভিজ খাবারে এটা পাওয়া যায় না।" ব্যাপারটা মোটেও সত্য না। বরং বেশ কিছু উদ্ভিজ খাবারে প্রোটিনের ঘনত্ব মাংস থেকেও বেশি সাথে সাথে ক্ষতিকর প্রভাবও অনেক কম। আমাদের দৈনিক প্রায় ৪৬ থেকে ৫৬ গ্রাম প্রোটিন দরকার হয়, যা কিনা তিন বেলা শুধু ডাল-ভাত খেলেও পূরণ করা সম্ভব। তাছাড়া অনেকে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিনের কথাও বলে, সঠিকভাবে উদ্ভিজ খাবার খেলে এর কোন কিছুর অভাবে পড়তে হয় না।

প্রোটিনসহ প্রায় সকল প্রকার পুষ্টি আমরা উদ্ভিজ খাবারেই পাই [6] । আর একই পুষ্টি প্রানিজ খাবারে পেতে হলে মাসুল গুনতে হয় রক্তচাপ, ডায়বেটিস, হ্রদরোগ, ক্যান্সার, স্ট্রোক, অস্ট্রেওপরোসিস আরও অনেক প্রানঘাতি রোগের [7] । যা উদ্ভিজ খাবারে পাচ্ছি প্রায় শূন্য স্বাস্থ্যঝুঁকিতে [8] । তাছাড়া পৃথিবীর সিংহভাগ মানুষ লেকটস হজম করতে পারে না, যা প্রানিজ দুধের মোক্ষম উপাদান [9] । ডিম সিগারেটের মত ক্ষতিকর। আমরা লক্ষ লক্ষ বছর ধরে বিবর্তিত হয়েছিল উদ্ভিজ খাবার খেয়ে, একটা সময় খাবারের অভাবে আমাদের প্রানিজ খাবারের শরণাপন্ন হতে হয়েছিল। কিন্তু আমাদের শরীর এখনো সেটার সাথে খাপ খায়নি। এখন যেহেতু আমাদের কাছে তুলনামুলক নগণ্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার প্রচুর উদ্ভিজ পুষ্টি বিকল্প হয়েছে, এখন প্রানিজ খাবার খেয়ে আমাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ানোর কোন মানে নেই।

( লিঙ্কঃ উদ্ভিজ খাবারের পুষ্টির ব্যাপারে বিস্তারিত বলা আছে এখানে ) তাছাড়া উদ্ভিজ খাবারে প্রতিটি পুষ্টি উপাদান কিভাবে প্রানিজ খাবার থেকে ভাল, কিভাবে বিশ্বজুড়ে ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও অন্য প্রাণঘাতী রোগের সাথে সম্পর্কিত সেটার বিস্তারিত Forks over Knives নামে ডকুমেন্টারি অব দ্য ইয়ার পুরস্কারপ্রাপ্ত ডকুমেন্টারিতে দেখতে পারেন,( লিঙ্কঃ ১৫ মিনিটের ছোট ভার্সন)

১. ৫ প্রাণীদের অধিকার

আমি নিজেকে খুবই সৌভাগ্যবান মনে করি মানুষ হয়ে জন্ম হওয়ায়। জ্ঞানের সন্ধান করা, প্রকৃতির শৃঙ্খলা-বিশৃঙ্খলা দেখে আশ্চর্য হওয়া। আমরা সবাই বিবেগবোধ, বুদ্ধিমত্তার দাবিদার। জৈবিকভাবে আমাদের মাঝে আছে সহানুভূতি আর মানবতাবোধ। যার কারনে আমরা নিজেদের অন্যের জায়গায় রেখে চিন্তা করতে পেরেছি। ফলে আমাদের মধ্যে মূল্যবোধ, নৈতিকতা এসেছে। সেই সুত্র ধরেই চুরি করা, মিথ্যা বলা, হত্যা করাকে খারাপ বলি। কারন আমরা ভাবি যদি আমাকে কেউ মিথ্যা বলতো, বা আমার কষ্টের সম্পদ কেউ লুট করতো তাহলে কেমন লাগতো। সবার মধ্যে এটার প্রভাব কম বেশি থাকেই। সবচেয়ে খারাপ লোকেই মাঝেও। এখন একবার প্রাণীদের দিকে চিন্তা করে দেখি। কি হত যদি আমি মানুষ না হয়ে সারাজীবন খাচায় বন্দি থাকা একটা ফার্মের প্রাণী হতাম? শরীরে সীল দেয়া হত, ঠোট পুড়িয়ে ফেলা হত, সারাজীবন দুই কদম হাটা যায় না এমন জায়গায় থাকতে হত, সন্তানকেও কখনো দেখার সুযোগ হত না। আর এইসব করা হত মানুষ নামের একটা প্রাণীর কয়েক মিনিটের প্রশান্তি আর কিছু মানুষের আয়ের জন্য। এমনকি খেলে তাদের আবার নানা রোগবালাইও হবে। তাদের কাছে শতশত বিকল্প আছে কিন্তু তারা সেটা চিন্তা করে না, স্বাদের অজুহাতে আমাকে সারাজীবন কষ্ট দিতে হবে। “With Great Power, Comes Great Responsibility” কিন্তু হচ্ছে একেবারে উল্টো।



প্রতি বছর কয়েক বিলিয়ন প্রাণীদের জীবনের কাহিনী এমনই। জন্মই তাদের আজন্ম পাপ। একটা স্বাভাবিক গরু প্রায় ২০ বছরের আয়ু থাকে, ডেইরি ফার্মে দুধের জন্য ব্যবহৃত গরুর আয়ু থাকে গড়ে প্রায় ৫ বছর [10] অনেক ডেইরী ফার্ম গরুর বাচ্চা প্রসবের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বাচ্চাকে মা’র থেকে আলাদা করে কেটে হত্যা করে। দুধ খাওয়ার মাধ্যমে এমন পৈশাচিক কাজের চাহিদা সচল রাখার অংশীদার হতে চাই না আমি। অনেক মাংসভোজীরা বলে ফারমিং করায় এইসব কোটি কোটি প্রাণীর জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রন করছি আমরা, তাদের খেয়ে?। ব্যাপারটা বরং উল্টো, ফারমিং এর মাধমে আমরা প্রাণীদের প্রজননক্ষমতার পুরোদমে ব্যবহার করছি যার ফলে জনসংখ্যা এত বেড়েছে।

ব্যাপারটা অনেকটা এমন, একটা মেয়ের প্রজননক্ষমতা আসার পর থেকে বয়স হয়ে প্রজননক্ষমতা হারিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতিবছর জোর করে তার ভিতর বীজ দিয়ে জোরপূর্বক প্রজনন করা। দেখা যাবে ৩০ বার বাচ্চা দিবে জীবনে, তাদের বাচ্চাদের এমনই ভাগ্য। এভাবে কয়েক প্রজন্মে যেখানে প্রাকৃতিকভাবে ২০-৩০ জন বাড়ার কথা সেখানে হাজারে চলে যাবে সংখ্যাটা। পরে বলা বলে যে এদের অনেক তারাতারি জনসংখ্যা বাড়ে, মেরে ফেলা আমরা উপকার করছি।

এ জন্যই গরু বলি, মুরগি বলি; এদের স্বাভাবিক আয়ুর অর্ধেকও তারা বাচছে না। ফলে আরও কৃষিজ জমি লাগছে তাদের খাবারের জোগান দিতে। পৃথিবীতে যদি ধীরে ধীরে সবাই উদ্ভিজভোজী হয়ে যায় তাহলে বর্তমান জমির ৩০ ভাগেই সকল মানুষের পুষ্টি চাহিদা তো পূরণ হবেই সাথে সাথে প্রাকৃতিকভাবে এইসব প্রাণীরা স্বাধীনভাবে চলাচল করার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা পাবে। আমাদের উচিত প্রাণীদের জন্য এমন একটা পরিবেশ তৈরি করা যে তারা প্রকৃতির নিয়মে স্বাভাবিক প্রজননে, স্বাভাবিক জনসংখায় স্বাভাবিকভাবে চলতে পারে।

শেষ কথা



অনেকই বলে “তুমি এটা পরিবর্তন হলে কি সব থেমে যাবে?”। মোটেই না। অনেক মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই পরিবর্তন সম্ভব। কিন্তু এই না যে সব জানার পরও আমি কিছু করবো না। আমার জীবনের উদ্দেশ্য হচ্ছে, যেভাবে আমি এই পৃথিবীকে পেয়েছি তার থেকে আরও সুন্দর অবস্থায় আমি এই পৃথিবীকে দেখতে চাই, আর অবশ্যই সেখানে যেন আমারও অংশগ্রহণ থাকে।

“I want to be remembered for what i did when i was on this planet, NOT for the trash that i left behind” - Lauren Singer



Reference



[1] Harrison, P., 1991. Do animals feel pain?. Philosophy, 66(255), pp.25-40.

[2] Ro, S. and Riahi, K., 2006. The role of Non-CO₃ greenhouse gases in climate change mitigation: long-term scenarios for the 21st Century. The Energy Journal, pp.177-200.

[3] Steinfeld, H., Gerber, P., Wassenaar, T., Castel, V., Rosales, M. and De Haan, C., 2006. Livestock's long shadow (p. 229). Rome: FAO.

[4] Herrero, M., Thornton, P.K., Gerber, P. and Reid, R.S., 2009. Livestock, livelihoods and the environment: understanding the trade-offs. Current Opinion in Environmental Sustainability, 1(2), pp.111-120.

[5] Godfray, H.C.J., Beddington, J.R., Crute, I.R., Haddad, L., Lawrence, D., Muir, J.F., Pretty, J., Robinson, S., Thomas, S.M. and Toulmin, C., 2010. Food security: the challenge of feeding 9 billion people. science, 327(5967), pp.812-818.

[6] Millward, D.J., 1999. The nutritional value of plant-based diets in relation to human amino acid and protein requirements. Proceedings of the Nutrition Society, 58(02), pp.249-260.

[7] TJ Key, PN Appleby , EA Spencer , RC Travis , NE Allen , M Thorogood and JI Mann, 2009. Cancer incidence in British vegetarians. British Journal of Cancer, [Online]. 1, 1. Available at: Click This Link [Accessed 24 October 2016].

[8] Tuso, P., Stoll, S.R. and Li, W.W., 2015. A plant-based diet, atherogenesis, and coronary artery disease prevention. Perm J, 19(1), pp.62-7.

[9] Suarez, F.L., Savaiano, D.A. and Levitt, M.D., 1995. A comparison of symptoms after the consumption of milk or lactose-hydrolyzed milk by people with self-reported severe lactose intolerance. New England Journal of Medicine, 333(1), pp.1-4.

[10] Glenn, C.B., 2004. Constructing consumables and consent: A critical analysis of factory farm industry discourse. Journal of Communication Inquiry, 28(1), pp.63-81.

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১৪

লর্ড অফ দ্য ফ্লাইস বলেছেন: চালিয়ে যান। অন্যদেরকেও উতসাহিত করুন। বাজারে মাংসের যা দাম! নিরামিষাশীদের সংখ্যা বাড়লে দাম যদি কিছুটা কমে।

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:২৯

জিএমফাহিম বলেছেন: চাহিদা কমলে ধীরে ধীরে প্রানিজ শিল্পের আউটপুটও কমবে। প্রাথমিকভাবে দাম কমলেও চাহিদা ক্রাস পাওয়ার প্রভাব বাজারে পড়তে থাকলে পরবর্তীকে বাজারে যোগান না থাকায় দামও আকাশচুম্বী হবে।

২| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৭:৩১

মুন্সি পালোয়ান বলেছেন: সুপার মিট সম্ভবত ২০২০ এর পরে বাজারে আসবে। প্রাণী হত্যা কমে আসবে।

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:৪৫

জিএমফাহিম বলেছেন: সেটাও একটা ভাল অপশন হবে ভবিষ্যতে, বলে আশাবাদি। নিষ্ঠুরতাহীন, পরিবেশসম্মত ও স্বাস্থ্যসম্মত হলে সেটাকেও ভিগান ফুডই বলা যাবে। তবে প্রাথমিকভাবে কিনার সামর্থ্য কয়জনের থাকবে সন্দেহ আছে। ইতমধ্যে টফু, সয়া ইত্যাদি দিয়ে ভিগান মিট বানানো হয়। এগ রিপ্লেসার ও উদ্ভিজ দুধও আছে। যতদিন সুপারমিট সামনে না আসছে অন্য আরও মুখরোচক ভিগান খাবার হতে পারে ভাল বিকল্প। ততদিন নিষ্ঠুরতা তো চালিয়ে যেতে পারি না :)

৩| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:৩৬

কালীদাস বলেছেন: লেখাটা যথেষ্ট লজিকাল, ভাল পয়েন্ট তুলে ধরেছেন ভেগানদের সাপোর্টে। আমি মাংশাসী প্রাণী, তবে আমার বেশ কয়েকজন ফ্রেন্ড আছে যারা ভেগান। এরা সবাই যে আপনার উল্লেখ করা প্রাণীহত্যার লজিক থেকে ভেগান হয়েছে তা না, কয়েকজন কারণ ছাড়া হয়েছে এরকমও দেখেছি। এক এক্সট্রিম ভেগানের ঘটনা শুনলাম গত বছর, এক ভেগান পোলিশ কাপল সদ্যজাত শিশুকে ভেগান বানানোর জন্য ব্রেস্টফিড না করানোয় বাচ্চাটা মারা যায়। এটা বাড়াবাড়ি বলব। তবে এমনিতে এখন ভেগানদের জন্য যথেষ্ট অল্টারনেটিভ ফুড আইটেম পাওয়া যায়, সেটা আগে এত সহজলভ্য ছিল না।

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:০৬

জিএমফাহিম বলেছেন: এমন ঘটনা আমি শুনিনি। ব্রেস্টমিড না করানো মোটেই ভিগান আদর্শের সাথেও মানানসই না। কোন নির্ভরযোগ্য লিঙ্ক থাকলে অবশ্যই শেয়ার করবেন। সদ্যজাত শিশু লেক্টস হজম করতে পারে তবে সময়ের সাথে সাথে প্রায় ৭৫ ভাগ মানুষই এই ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তাছাড়া যে নৈতিক কারনে ভিগানরা গরু বা অন্য কোন প্রানিজ দুধ খায় না সেটার সাথে প্রাণীদের exploitation জরিত। মায়ের দুধ অবশ্যই exploitation নয়, বরং শিশুর জন্য অপরিহার্য, তার জন্য এটা দায়িত্ব হিসেবে বর্তায়, এটা অবশ্যই ভিগান খাবার (শিশুর জন্য)।

৪| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:০৬

কালীদাস বলেছেন: আসলেই তো। এক পোলিশ কলিগের কাছে শোনা ঘটনাটা, নিউজ আর তখন চেক করিনি নেটে। আপনি বলার পর আমার কাছেও এক্সট্রিম মনে হচ্ছে, কারণ আমার ভেগান ফ্রেন্ডদেরকেও দুধ খেতে দেখেছি রেগুলার।
দাড়ান আবার ধরব বেটাকে।

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ২:৩১

জিএমফাহিম বলেছেন: ভিগানরা Plant-Based Milk খায়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.