নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জানা ও জানানোর জন্যই বেচে থাকা। জীবন তো শুধুই কিছু মুহূর্তের সমষ্টি।
মানুষের মত পৃথিবীর প্রতিটি স্তন্যপায়ী প্রাণীর সাধারণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তারা সবাই তাদের শাবককে দুধ দিয়ে টিকে থাকার ব্যবস্থা করে। স্তন্যপায়ী প্রাণীর যখন থেকে এই জগতে অস্তিত্ব রাখছে এই প্রাকৃতিক চলও চলে আসছে । যেখানে ডিম থেকে বাচ্চা হওয়া প্রাণীরা জন্মের পূর্বে মার ভালোবাসার উপর নির্ভর করে, স্তন্যপায়ী প্রাণীরা জন্মের পর থেকে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মায়ের ভালবাসা ও সান্নিধ্য পায়। এই স্বাভাবিক নিয়মে ও প্রাণীদের স্বাভাবিক ভালবাসার বন্ধন ঝুঁকিগ্রস্থ হওয়া শুরু করলো যখন মানুষ বুঝতে পারলো যে খাদ্য প্রাণীদের শাবকরা খাচ্ছে; সেটা তাদেরও টিকে থাকার কাজে লাগতে পারে। কিন্তু সভ্যতার উন্নতির সাথে সাথে সেই খাবার আর টিকে থাকার উপায় না বরং সমাজের নতুন অস্বাভাবিক স্বাভাবিকত্বের রূপ নিলো। যদিও তখন মানুষ জানতো না, সাবালক মানুষ হয়ে নাবালক প্রাণীদের খাবার ভক্ষণ করার পরিণতি; কিন্তু আজ আমরা জানি। ভিগান বাংলাদেশ আজকে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরবে কেন আমাদের প্রাণীর দুধ ভক্ষণ করা উচিত না, অর্থাৎ দুধ না খাওয়ার নৈতিক ও স্বাস্থ্যগত কারণ। ব্লগটি পড়ার পড় কেউ দুধ ও দুগ্ধজাতীয় খাবার খাওয়ার ব্যাপারে কি ভাববে সেটা তাদের ব্যাপার তবে চিন্তার নতুন দিগন্ত আমাদের আরও বিবেগবান মানুষ হিসেবে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে বলে আশা করি।
নৈতিক কারণ
ধরুন, আপনার পোষা প্রাণী। আপনি দাবি করছেন সেই প্রাণীকে আপনি যথেষ্ট ভালবাসেন। তার খাবারের ব্যবস্থা করেন। অনেক সময় হাত বুলিয়ে দিয়ে আদরও করেন। কিন্তু আপনি তার সাথে এমন কিছু করছেন যা ধীরে ধীরে তাকে দুর্বল করে দিবে। দীর্ঘমেয়াদে তার পরিণতি হবে স্বল্প আয়ু আর জীবনভর পীড়া। তাত্ত্বিকভাবে এটাকে Slow Poisoning বলে। শুনতে খারাপ বা নিষ্ঠুর লাগলেও প্রাণীজ দুধের কৃত্তিম চাহিদা পূরণ করার জন্য কোটি কোটি স্তন্যপায়ী প্রাণীকে এই পরিণতিই বরন করে নেয়া লাগছে। মানুষের মত অন্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর যখন দুগ্ধগ্রন্থি সক্রিয় হয় তখন শরীরে দুধ উৎপাদনের জন্য বাড়তি পুষ্টির প্রয়োজন হয়। স্বাভাবিক ও পর্যাপ্ত খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমেই তারা শাবকদের জন্য উপযুক্ত দুগ্ধের ব্যবস্থা নিশ্চিত করে। এরপর যদি অতিরিক্ত দুগ্ধ নেয়া হলে, সেটা গাভীর স্বাস্থ্যের জন্য চরম বিপর্যয় নিয়ে আসে। স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়া, দুর্বলতা, অপর্যাপ্ত দুগ্ধ তৈরি হওয়া ইত্যাদি থাকে। ডেইরি ইন্ডাস্ট্রিগুলো এটার সমাধান করে, বেশ । তারা গরুর খাবারে মিনারেল, শুকনো-সবুজ খাবারের অনুপাত, পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা করে; কিন্তু এতে যে পরিমাণ বাড়তি দুধ তারা পায় সেটাও সবসময় সমান অনুপাতে আসে না, আর সেটা খুব বেশিও ব্যবধান তৈরি করে না। পশুর জন্য পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থা করা খরচের ব্যাপারও বটে। তাহলে কীভাবে তারা এই সমস্যা সমাধান করবে?
উত্তর একটাই। বাছুরকে তার মা থেকে পৃথক করে দেয়া। অনেকে বাছুরকে দুধের বিকল্প হিসেবে ক্যামিক্যাল খাওয়ায়। আর যারা খুব বড় পরিসর দুধ আরোহণ করতে চায়, তাদের জন্য বাছুরকে আলাদাভাবে যত্ন করা “ব্যবসায়ের লাভকে কমিয়ে আনে। এই ঝুঁকি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তারা বাছুরকে হত্যা করে। বাছুর হত্যা করার প্রথা বর্তমান পুঁজিবাদী সমাজে যথেষ্ট কমন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চিত্রঃ নন-হিউম্যান প্রাণীদের মাতৃত্ব ও ভালবাসা
উল্লেখ্য যে, ডেইরী ফার্মগুলোর কোন প্রয়োজন নেই বাছুরের। তাদের শুধু প্রয়োজন দুধের। আর স্তন্যপায়ী প্রাণীদের দুগ্ধগ্রন্থি সক্রিয় হওয়ার জন্য তাদের প্রল্যাকটিন নামের হরমোনের কারণে হয়; যা সন্তান প্রসব করলে উদ্দীপনা পায়। ডেইরী ফার্মগুলো প্রসবের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নবজাতক বাছুরকে তার মা থেকে আলাদা করে এরপর জবাইখানাতে নিয়ে মেরে ফেলে। আর এই সবই হচ্ছে আমাদের কৃত্তিম চাহিদা পূরণ করার জন্য।
এরপরও শেষ নয়। গাভীদের থেকে দুধ বের করা যথেষ্ট সময় সাপেক্ষ কাজ। আর অনেক সময় এর ফলে ইনফেকশন হয়। যার কারণে মিল্কিং মেশিন ব্যবহার করে আধুনিক ফার্মগুলো। যে দুধ একজন ব্যাক্তির হাত দিয়ে বের করতে ১ ঘণ্টা সময় লাগে; একই জিনিস মিল্কিং মেশিন দিয়ে করতে সময় লাগে মাত্র কয়েক মিনিট। দ্রুত দুধ নেয়ার জন্য ফলপ্রুসু এই পদ্ধতি ব্যবসায়ীদের কাজ কমিয়ে দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু প্রাণীদের অবর্ণনীয় কষ্টের কারণ হয় দাঁড়িয়েছে।যা কিনা প্রতিদিন নিষ্পাপ নিরীহ প্রাণীদের সহ্য করতে হয়; প্রতিদিন, বারবার। তাদের স্তনবৃন্ত ভ্যাকিউমের চাপের কারণে ছিঁড়ে আসা, দুধের সাথে রক্তপাপ হওয়া ইত্যাদি খুবই কমন ব্যাপার। আর প্রাণীদের মাথা, পা দড়ি দিয়ে বেধে রাখার কারণে তারা এই কল্পনাতীত কষ্ট থেকে রেহাই পাওয়ারও কোন উপায় রাখে না। দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের ভোক্তারা তাদের কৃত্তিম চাহিদা সচল রেখে এই মানবতা বর্জিত প্রথাকে সচল রাখছে।
চিত্রঃ মিল্কিং মেশিন
মিল্কিংমেশিন এর ব্যবহার এখন আর পশ্চিমা দেশেই সীমাবদ্ধ না, বাংলাদেশের ডেইরি ফার্মগুলোতেও এর বহুত প্রচলন আছে; যা কিনা দেশের ডেইরী নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে মিল্কভিটা, প্রাণদুধ এর মত ব্যান্ডেড পণ্যেও জায়গা করে নিচ্ছি।
ফারমিং এর আধুনিক চর্চাগুলোই যে শুধু নৈতিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে না নয়। বরং মুল প্রশ্নটা আসে প্রয়োজনীয়তার প্রসঙ্গে। আদৌ কি আমাদের প্রয়োজন গরুর দুধ পান করার বা দুগ্ধজাতীয় খাবার খাওয়ার? পুষ্টির ওজুহাতে প্রকৃতির স্বাভাবিক অবস্থার সাথে সংঘর্ষ করা কি আদৌ যৌক্তিক? আর দুধ ও দুধজাতীয় খাবারের সাথে যখন স্বাস্থ্যঝুঁকি নির্ভর করে তখন অপেক্ষাকৃত অধিক স্বাস্থ্যকর পুষ্টির উৎস খাদ্যতালিকায় যোগ না করে জেনে শুনে ক্ষতিকর দুধ যুক্ত করা কি অপচয় নয় ? অপ্রয়োজনীয় হয় ? আর অপচয় করা, অপ্রয়োজনে পরিবেশের অতিরিক্ত ব্যবহার করা কি নৈতিকতার সাথে সাংঘরসিক নয় কি ? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাঠক নিজেই সন্ধান করবে আসা করি। তার আগে স্বাস্থ্যগত ব্যাপারে যাতে কোন কনফিউশন না থাকে তাই সেটাও আলোচনা করা প্রয়োজন।
স্বাস্থ্যজনিত কারণ
পাঠকদের কাছে করা বেশ কিছু প্রশ্ন আসলে স্বাস্থ্যগত ব্যাপারের সাথে জড়িত। আর স্বাস্থ্যের ক্ষতির সাথে দুধের কি সম্পর্ক এটা না জানলে উত্তরগুলো পক্ষপাতগ্রস্থ ও অনুপদিষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। অধিকাংশ মানুষ মনে করে দুধ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ইত্যাদির অনেক বড় উৎস হচ্ছে প্রাণীজ দুধ। তাই খাদ্যতালিকায় দুধ খুবই সাধারণ ব্যাপার আমাদের সমাজে। ছোটবেলা থেকেই আমাদের পাঠ্যক্রমে দুধক সুষম খাদ্য তালিকায় রাখা হয়েছে। পশ্চিমা অনেক প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপনে দুধ খেতে অনুপ্রেরণা দেয়। তাই শৈশব থেকে দুধকে আমরা স্বাস্থ্যকর খাবারই মনে করি। ভিগানবাদ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে দুধের অপকারিতা নিয়ে কথা বলতে গিয়েও অনেক অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গিয়েছে। কিন্তু আদৌ কি দুধ আমাদের কোন “অপরিহার্য” পুষ্টির উৎস ? এর অপকারিতাগুলো কি আসলেই উপকারিতাগুলোকে কালিমা লাগিয়ে দেয়?
১, ক্যালসিয়াম মিথ
ক্যালসিয়াম নিয়ে মানুষের ভুল ধারনা হচ্ছে ক্যালসিয়ামের ফলে আমাদের হাড় শক্ত হয়। আর দুধ হচ্ছে আমাদের ক্যালসিয়ামের অনেক উত্তম উৎস। কিন্তু রিসার্চে দেখা গিয়েছে যে গরুর দুধ খাওয়ার সাথে হাড় ক্ষয় জনিত রোগের ধনাত্মক সম্পর্ক। এর কারন কি? মেডিকাল রিসার্চে জানা যায় যে, দুধ আমাদের হাড় ক্ষয় কমায় না, বরং আমাদের নানা হাড় ক্ষয় জনিত রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। দুধ যথেষ্ট এসিডিক একটা খাবার। আর এটায় ঋণাত্মকভাবে চার্জ উপাদান থাকে। যখন এটা আমাদের শরীরে যায় তখন ধনাত্মক চার্জ এর উপাদানগুলোর সংস্পর্শে আসে। এটাক বলা হয় মেটাবলিক এসিডোসিস। আর আমাদের শরীরে মিনারেলের সবচেয়ে প্রভূত উৎস হচ্ছে আমাদের হাড় । যেখানে ক্যালসিয়াম থাকে। এসিড আমাদের হাড়ের সংস্পর্শে এসে হাড়ের ক্ষয় করতে থাকে। তাই দুধ খাওয়ার সাথে হাড় ক্ষয়ের সম্পর্ক বেশি। তাই আমাদের উচিত অন্য উৎস থেকে আমাদের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করার; কারণ এটা উল্টো হিতে বিপরীত করছে। হার্ভার্ড এর একটা স্টাডিতে ৭৭ হাজার মহিলা যাদের বয়স ৩৪ থেকে ৫৯ তাদের মাঝে পরীক্ষা করে দেখা যায় যে যারা অধিক দুধ খায় তাদের নিতম্ব, বাহুর হাড়ে ক্ষয় তুলনামূলক প্রচুর বেশি থাকে [১] । সুইডেনের আরেকটি নিরপেক্ষ রিসার্চ একই ফলাফল পেয়েছে [২] । তাই কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউট্রেশন্যাল বাইয়োকেমেস্ত্রির প্রফেশন টি, কেম্বেল তাই বলেছেন “প্রাণীজ প্রোটিনের সাথে ফ্যাকচারের হার; সিগারেটের সাথে ফুসফুসে ক্যান্সার হওয়ার হারের মতই শক্ত”
এইবার আসি বাড়ন্ত বয়সে দুধের ব্যাপারে। এটা একাধিক স্টাডিতে পাওয়া গিয়েছে যে বাড়ন্ত বয়সে বেশি ক্যালসিয়াম গ্রহণ করলে পরবর্তী বয়সে অষ্টিওপরোসিস হবার সম্ভাবনা কম থাকে। বাড়ন্ত বয়সে যারা দুধের মাধ্যমে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করে তার অধিকাংশই ৭ বছরের ব্যবধানে হারিয়ে ফেলে, ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার পরও [৩]। তাই শিশুদের জন্য ক্যালসিয়ামের ভিন্ন উৎসই সুবিবেচিত হবে।
আরেকটা ব্যাপার দুধে প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকে; বেশি খেলে সেই অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম আমাদের গুরুতর ক্ষতি করতে পারে। আমাদের শরীরের ভিটামিন ডি, কে এর মাত্রা কমিয়ে আনে। অনিদ্রা, হাড়ে ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য, উচ্চ রক্তচাপ, ইত্যাদির কারণ হয়ে দ্বারায়। বিস্তারিত জানতে হাইপাক্যালসিমিয়া নিয়ে বিস্তারিত পড়তে পারেন।
২, প্রোস্টেট ক্যান্সার
পুরুষদের সবচেয়ে কমন ক্যান্সারগুলোর একটা প্রোস্টেট ক্যান্সার। আর দুধ ও দুগ্ধজাতীয় খাদ্য এখানে গুরুত্বরভাবে জড়িত। আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল সাইন্সের মতে যারা ২.৫ সারভিং দুধ খায় তাদের ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা ৩৪% বেশি থাকে, যারা ০.৫ সারভিং দুধ খায় তাদের থেকে। আর যারা দুধ খায় না তাদের থেকে? যারা দুধ খায় না তাদের থেকে যারা দুধ খায় তাদের প্রোস্টেট ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা থাকে ৬৮% বেশি[৪] । সহজে বুঝা যাচ্ছে ব্যাপারটা কতটা গুরুতর। কিন্তু এটা পূর্ণবয়স্ক সাবালকদের ক্ষেত্রে করা। কিন্তু দুধ খাওয়ার চল সবচেয়ে বেশি থাকে বাড়ন্ত বয়সে। আমেরিকান জার্নাল অব এপিডেমোলজির মতে, বাড়ন্ত বয়সে তারা দৈনিক প্রাণীজ দুধ খায় তাদের ৩২০% বেশি সম্ভাবনা থাকে প্রোস্টেট ক্যান্সার হবার [৩] । জাপান এখানে একটা ভাল নজির[৫]। ১৯৫০ সাল থেকে ২০০০ সালের মধ্যে প্রোস্টেট ক্যান্সার বেড়েছে প্রায় ৬ গুন, এই সময়ে কোন খাদ্য তাদের খাদ্যতালিকায় বড় অংশে জায়গা করে নিয়েছে? দুধ আর দুগ্ধজাত পণ্য। তাছাড়া ৩০টির বেশি দেশে প্রোস্টেট ক্যান্সারের সাথে দুধ গ্রহণের সরাসরি সম্পর্ক পাওয়া গিয়েছে[৬]। দুধে প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকে, (অতিরিক্ত), যা কিনা আমাদের শরীরে নানা প্রকার সমস্যার তৈরি করে; (যা আগের পয়েন্টে বিস্তারিত বলেছি); রিসার্চে পাওয়া গিয়েছে যে অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম প্রোস্টেট ক্যান্সারের সম্ভাবনা ২৯৭% বাড়িয়ে দেয়। অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম আমাদের ভিটামিন ডি মাত্রা কমিয়ে দেয় যা আমাদের মুত্রথলির কোষকে নিয়ন্ত্রিত রাখতে সাহায্য করে। আর যখন সেটা সঠিক মাত্রায় থাকে না তখন তখন ক্যান্সার কোষগুলো বিস্তার লাভ করে।
৩, গরুর পুজ
ডেইরী ফার্মে প্রাণীদের নানা রকম ব্যাধির সম্ভাবনা থাকে ফলে ব্যবসায়ীরা তাদের নানা প্রকার হরমোন আর ঔষধের উপর রাখে। ব্যাক্তিরিয়ার সংস্পর্শে এসে শ্বেত রক্তকণিকা পুঁজ হয়ে শরীরের বাইরে যায়। আর ডেইরী ফার্মে প্রাণীর সবচেয়ে বেশি ইনফেকশন হয় তার স্তনে। ফলে প্রাণীজ দুধে প্রচুর পুঁজ থাকে। মাত্র এক গ্লাস গরুর দুধে প্রায় ১৩ কোটি পুঁজ কোষ থাকতে পারে। তাছাড়া আছে বোভাইন গ্রোথ হরমোন
৪, ডিম্বাশয় ক্যান্সার
মেয়েদের ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের পিছনেও দুধ দায়ী। সুইডিশ একটা বিস্তারিত মেডিক্যাল রিসার্চে প্রায় ৬১ হাজার মহিলার উপর পর্যবেক্ষণ করে জানা গিয়েছে যে, যেসব মহিলারা অধিক দুধ খায় তাদের ডিম্বাশয়ে ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে কম সারভিং দুধ খায় যারা তাদের থেকে[৭] । ১৯৮৯ সালে জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি রিসার্চে ২৭টি দেশে ডিম্বাশয় ক্যান্সারের সাথে দুধ খাওয়ার ধনাত্মক সম্পর্ক আছে।
৫, ল্যাকটস ইনটোরালেন্স
নবজাতক শিশুর শরীরে ল্যাকট্যাঁস নামে একটা এনজাইম থাকে যা মায়ের দুধ থেকে ল্যাকটশসকে হজম করতে সাহায্য করে। কিন্তু আমরা একটু নির্দিষ্ট সময় পর অধিকাংশ মানুষ এই ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ফলে তারা আর দুধে থাকা ল্যাকটসকে হজম করতে পারে না। এটাকে বলে ল্যাকটস ইনটোরারেন্স। স্থানভেদে ৯০ ভাগ মানুষের এই বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে[৮] । এটার ফলে নানা প্রকার সমস্যা দেখা দেয়। অসুস্থতা, বদহজম, গ্যাস্ট্রিক ইত্যাদি। দীর্ঘমেয়াদে আরও জটিল ব্যাধি দেখা দিতে পারে।
৬, এন্টিবাইয়োটিকস
ডেইরী ফার্মগুলো অধিকাংশই খুবই সীমিত জায়গার মধ্যে গরুকে রাখে। তাছাড়া রক্ষনাবেক্ষন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে করা হয়; ফলে নানা রকম ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ দেখা যায় গরুর মাঝে। উপযুক্ত পরিবেশের ব্যবস্থা করা যথেষ্ট ব্যয় সাপেক্ষ; তাই ডেইরী ফার্মগুলো এন্টিবাইয়টিক ব্যবহার করে। সম্প্রতি এই প্রচলন অনেক বেড়ে গিয়েছে, আর এন্টিবাইয়োটিক বান্ধব ব্যাকটেরিয়ার দেখা দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ক্যান্সার সোসাইটি এটার ভয়াবহতা নিয়ে বেশ কিছু জার্নাল প্রকাশ করেছে। এন্টিবাইয়োটিক বান্ধব ব্যাকটেরিয়ার কারণে আমারা যে প্রাণীজ খাবার খাচ্ছি সেটার কারণে আমাদের শরীরে এন্টিবাইয়টিকের ফলপ্রসূতাও ফলে যাচ্ছে।
৭, আসক্তিকর উপাদান কেসিন-মরফিন
প্রাণীজ দুধ বিশেষ করে গরুর দুধে প্রচুর পরিমাণ কেসিন প্রোটিন থাকে। কেসিন প্রোটিন মূলত দুই প্রকারের হয়। এ১ আর এ২। গরু মূলত দুধে কেসিন এ২ প্রোটিন থাকত, কিন্তু জেনেটিক মিউটেশনের এখন গরুর দুধে এ১ কেসিন প্রোটিন পাওয়া যায়। এই এ১ কেসিনে আছে বিসিএম৭ নামের এক প্রকার অপিওয়েড পেপটাইড। এই উপাদান আমাদের স্নায়ুতন্ত্রে সেভাবেই কাজ করে সেভাবে মাদকদ্রব্য অপিয়াম, হিরোইন আর মরফিন কাজ করে। যার কারণে যারা দুধ খায় বেশি তারা দুধের প্রতি আসক্ত থাকে[৯] ।
৮, ব্রণ
দুধ খাওয়ার সাথে ব্রণের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক একাধিক স্টাডিতে প্রমাণিত। দুধে মাত্রাতিরিক্ত হরমোন যেকোনো লিঙ্গের ব্রণের প্রাদুর্ভাব আর প্রখরতার জন্য দায়ী [১০] [১১] । বয়ঃসন্ধি সময়ে প্রতিরোধযোগ্য ব্রণকে সহজে দূর করা আর কমিয়া আনা সম্ভব আমাদের খাদ্যাভাসকে নিয়ন্ত্রণ করলে।
৯, অন্যান্য
চিত্রঃ শিশুদের মিল্ক এলারজির প্রভাব
তাছাড়া শিশুদের মিল্ক এলারজি, অস্বাস্থ্যকর সেচুয়েটেড ফ্যাট, অপ্রয়োজনীয় অতিরিক্ত কোলেস্টেরল ইত্যাদি দুধ ও দুগ্ধজাতীয় খাবারের সাথে জড়িত।
কিছু বেসিক প্রশ্ন-উত্তর
(১) প্রাণীজ দুধের বিকল্প হিসেবে কি হতে পারে?
উত্তরঃ কাজুবাদাম, নারিকেলের দুধ, চালের দুধ, জই দুধ, হেজ্যালনাট দুধ, ইত্যাদি খুব ভাল বিকল্প হতে পারে। উদ্ভিজ উপাদান দিয়ে সহজেই দই, মিষ্টান্নও বানানো যায়। সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর বিকল্পও বটে। সয় দুধ একটা উত্তম বিকল্প হতে পারে যেখানে গরুর দুধ থেকেও অধিক প্রোটিন থাকে, ফাইবার থাকে আর কম কোলেস্টেরল।
চিত্রঃ উদ্ভিজ দুধ ও তাদের বৈশিষ্ট্য
(২) প্রাণীজ দুধ স্কিম করলে কি সেটা উপকারী হবে?
উত্তরঃ দুধ স্কিম করলে কিছু কিছু ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব হলেও দুধে উপাদানের ভারসাম্য ভিন্ন হয় ফলে অনেক নতুন ও ভিন্ন ব্যাধি সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। ইউরোপিয়ান জার্নাল অব নিউট্রিশন, স্কিম দুধে স্থূলতা, বহুমূত্রএর সম্ভাবনা বেশ পেয়েছে সাধারণ দুধ থেকে.। এমনকি রিসার্চে পাওয়া গিয়েছে কম-ফ্যাট প্রাণীজ দুধ আর সাধারণ প্রাণীজ দুধের উপকারিতায় কোন উল্লেখযোগ্য পার্থক্য নেই। টাইপ ২ ডাইবেটিকস আর হৃদরোগেও কোন উল্লেখযোগ্য পার্থক্য পায়নি বিশেষজ্ঞরা [১২] ।
(৩) যদি গরুর দুধ এমন উৎস থেকে আসে যেখানে গরুকে মনুষ্যত্বপূর্ণভাবে রাখা হচ্ছে; তাহলে কি নৈতিকতার প্রশ্নটা থাকবে?
উত্তরঃ অবশ্যই থাকবে। পুরো বিষয়বস্তু হচ্ছে আমাদের আদৌ কি এটা প্রয়োজন নাকি? যদি এমন পরিস্থিতি আসে যখন প্রয়োজন তখন নৈতিকতার প্রশ্নটা থাকবে না। কিন্তু যেহেতু আমাদের কাছে স্বাস্থ্যসম্মত, উত্তম বিকল্প আছে; তখন গরুকে উপযুক্ত পরিবেশ দেয়ার পরও যদি তার শরীরে কোন কনসেন্ট ছাড়া স্পর্শ করা হয় বা তার শাবকের অধিকারে হস্তক্ষেপ করা হয়; সেটা হবে অপ্রয়োজনীয়।
রেফারেন্স
[১] Feskanich, D., Willett, W. C., Stampfer, M. J., & Colditz, G. A. (1997). Milk, dietary calcium, and bone fractures in women: a 12-year prospective study. American journal of public health, 87(6), 992-997.
[২]Pritchard, R. S., Baron, J. A., & De Verdier, M. G. (1996). Dietary calcium, vitamin D, and the risk of colorectal cancer in Stockholm, Sweden. Cancer Epidemiology and Prevention Biomarkers, 5(11), 897-900.
[৩]Torfadottir, J. E., Steingrimsdottir, L., Mucci, L., Aspelund, T., Kasperzyk, J. L., Olafsson, O., ... & Jonsson, E. (2011). Milk intake in early life and risk of advanced prostate cancer. American journal of epidemiology, 175(2), 144-153.
[৪]Snowdon, D. A., PHILLIPS, R. L., & Choi, W. (1984). Diet, obesity, and risk of fatal prostate cancer. American journal of epidemiology, 120(2), 244-250.
[৫]Sonoda, T., Nagata, Y., Mori, M., Miyanaga, N., Takashima, N., Okumura, K., ... & Takahashi, A. (2004). A case‐control study of diet and prostate cancer in Japan: possible protective effect of traditional Japanese diet. Cancer science, 95(3), 238-242.
[৬]Qin, L. Q., Xu, J. Y., Wang, P. Y., Tong, J., & Hoshi, K. (2007). Milk consumption is a risk factor for prostate cancer in Western countries: evidence from cohort studies. Asia Pacific journal of clinical nutrition, 16(3), 467-476.
[৭]Larsson, S. C., Bergkvist, L., & Wolk, A. (2004). Milk and lactose intakes and ovarian cancer risk in the Swedish Mammography Cohort. The American journal of clinical nutrition, 80(5), 1353-1357.
[৮]Davis, A. E., & Bolin, T. (1967). Lactose intolerance in Asians. Nature, 216(5121), 1244-1245.
[৯]Truswell, A. S. (2005). The A2 milk case: a critical review. European journal of clinical nutrition, 59(5), 623-631.
[১০]Adebamowo, C. A., Spiegelman, D., Berkey, C. S., Danby, F. W., Rockett, H. H., Colditz, G. A., ... & Holmes, M. D. (2008). Milk consumption and acne in teenaged boys. Journal of the American Academy of Dermatology, 58(5), 787-793.
[১১] Adebamowo, C. A., Spiegelman, D., Berkey, C. S., Danby, F. W., Rockett, H. H., Colditz, G. A., ... & Holmes, M. D. (2006). Milk consumption and acne in adolescent girls. Dermatology online journal, 12(4).
[১২]Scott, F. W., Norris, J. M., & Kolb, H. (1996). Milk and type I diabetes: examining the evidence and broadening the focus. Diabetes Care, 19(4), 379-383
©somewhere in net ltd.