নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার কারো কাছে নেই কোন অভিমানের দেনাপাওনা, নেই কোন কষ্টের হিসাব, তবুও লুকিয়ে থাকা হাহাকার পরম যতনে আগলে রাখি-- প্রথম পাওয়া চিঠির মত, আমি এই রকমই বন্ধু ।

জিএম হারুন -অর -রশিদ

আরেকটা জীবন যদি পেতাম আমি নির্ঘাত কবি হতাম

জিএম হারুন -অর -রশিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মানুষ ও আকাশ দেখা

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:০১

অনেকদিন পর শাহেদকে দেখলাম,
কমপক্ষে বাইশ বৎসর হবে,
আশ্চর্য্য, এক দেখাতেই কি ভাবে যেন চিনে ফেললাম,
গাড়ী থেকে নেমে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে,
খুব দামী গাড়ী হবে হয়তো,
সাদা বক এর মতো রং ,
আমার কাছে সব গাড়ী একই মনে হয়
ছাদ দেওয়া, আকাশ দেখা যায় না
আমার আবার আকাশ না দেখলে
মনে হয় চলন্ত জেলখানা,
শুধু ট্রাককে মনে হয় নিজের গাড়ী
আকাশ দেখতে দেখতে ঘুরাঘুরি করা যায়।

শাহেদ ,আমাকে চিনতেই পারলো না,
ওর চোখে কালো সানগ্লাস.
সূর্য্যের আলো বোধহয় সহ্য হয় না,
আমার বন্ধু, শাহপরান হলের রুমমেট ছিলো ও।

পুজিবাদী সমাজ ও খুব ঘৃনা করতো,
কথায় কথায় শ্রেনীহীন, শোষনমুক্ত সমাজের কথা বলতো,
সবাইকে চমকে দিয়ে চিৎকার করে বলতো
“বিপ্লব দীর্ঘজীবি হোক”।
দামী দামী গাড়ী ,বাড়ী দেখলেই ও পুড়িয়ে দিতে চাইতো
ধনী মানুষদের ও সহ্য করতেই পারতো না,
অথচ,অসাধারন ভালো বিপ্লবী কবিতা লিখতো।

শাহেদ আকাশ দেখতে খুবই ভালোবাসতো
খোলা মাঠে শুয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা
আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতো
প্রায়ই রাতে হলের ছাদে চলে যেত আকাশ দেখতে,
“আকাশে এতো কি দেখিস?”
আমি একবার জানতে চেয়েছিলাম.
“আমি দেখি আমার আকাশের মায়া
সবারই একটা আকাশ আছে,
মায়াটা খুঁজে নিতে হয়”
আকাশ দেখার নেশা ওর কাছ থেকেই পেয়েছিলাম।

আমরা দু’জনই একেবারে সাধারন পরিবারের ছিলাম,
অথচ, বিপ্লবী শাহেদ সবার কাছেই অসাধারন হয়ে উঠলো,
আর আমি ওর ছায়া হয়ে গিয়েছিলাম,
আমিও ওর মতো বিপ্লবী কবিতা লিখবো বলো
সারারাত ছাদে শুয়ে আকাশ দেখেছি অনেকদিন,
আমি লিখতে গেলেই ভালোবাসার কবিতা হয়ে যেতো,
শাহেদ রাগ করে বলতো
“তোকে দিয়ে বিপ্লব হবে না
তুই মেয়েদের কথা বেশী ভাবিস”।

তারপর একদিন রাতে শাহেদ হলের ছাদে
আকাশ দেখতে গিয়ে আর ফিরলো না,
শুধু দু'লাইন ছিলো আমার জন্য.
“আমাকে আর খুঁজিস না,
শ্রেনীহীন, শোষনমুক্ত সমাজে আবার দেখা হবে”।

তারপর সবাই হয়তো শাহেদের কথা ভুলে গিয়েছিলো
আমি খুব আশায় থাকতাম
শ্রেনীহীন, শোষনমুক্ত সমাজে
শাহেদের সাথে আবার দেখা হবে একদিন।

আমি অনেক বছর ধরে
দিনের বেলা ফুটপাতে বসে
কবিতার বই ফেরি করি
সবই বিপ্লবী কবিতা,
আর রাত হলেই ছাদে গিয়ে আকাশ দেখি,
আর ভাবি শাহেদ একদিন আসবেই।

আজ অনেকদিন পর শাহেদকে দেখে
আমার বুকে একটুও আনন্দ হলো না,
তবুও কেনো যেনো অদ্ভূত ভাবে
চিৎকার করে হাসলাম একটুও বুঝলাম না,
সবাই পাগলের হাসি মনে করে ভয় পেলো,
শুধু শাহেদ কালো সানগ্লাস খুলে আমার দিকে তাকালো,
“আপনাকে কেমন যেনো পরিচিত মনে হচ্ছে,
কোথায় দেখেছি মনে পরছে না ?”
আমি নির্বিকার ভাবে বললাম
“আপনার সাথে আমার কখনোই দেখা হয়নি,
ফুটপাতের সবাইকেই একরকম দেখা যায়”।

আমি এখন শুধুই
ভালোবাসার কবিতার বই ফেরি করি,
আর আকাশ দেখা এখনো ছাড়তে পারিনি।
______________
রশিদ হারুন
২৭/০২/২০১৮

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:১৬

রাজীব নুর বলেছেন: দশে ছয় দিলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.