নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার কারো কাছে নেই কোন অভিমানের দেনাপাওনা, নেই কোন কষ্টের হিসাব, তবুও লুকিয়ে থাকা হাহাকার পরম যতনে আগলে রাখি-- প্রথম পাওয়া চিঠির মত, আমি এই রকমই বন্ধু ।

জিএম হারুন -অর -রশিদ

আরেকটা জীবন যদি পেতাম আমি নির্ঘাত কবি হতাম

জিএম হারুন -অর -রশিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছয় বন্ধুর একজনই প্রেমিকা

০৮ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ১২:৪৯


অনেকদিন পর আজ
প্রায় পঁচিশ বছর হবে হয়তো,
আমাদের ছয় বন্ধুর দেখা হলো।
সবাই আমরা এখন কম বেশী পঞ্চাশ এর যুবক।

সবাই থাকি আমরা দেশের বাইরে।
অদ্ভুত মিল ছিলো আমাদের
সবাই যাত্রাবাড়ীর ওয়াসা গলিতে ভাড়া করা বাড়িতে থাকতাম,
আর আমরা সবাই মিলে প্রেমে পড়েছিলাম এক বাড়িওয়ালার কিশোরী মেয়ের।

কিশোরীটি নিজেদের দোতলা বাড়ীর বারান্দায় যখনই দাঁড়াতো-
আমরা ছয়জনই ক্ষুধার্ত লোভী বিড়ালের মতো নির্লজ্জ ভাবে তাকিয়ে থাকতাম একসাথেই।

‌অসংখ্য নির্ঘুম রাতের পর রাত পার করে,
চোখের নিচে কালো দাগ পড়ার পর
আমরা সবাই নির্ধিদ্বায় স্বীকারাক্তি দিয়েছিলাম পরস্পরের প্রতি,
'আমরা সবাই কিশোরীটির প্রেমে পড়েছি,
একেবারে সত্যিকারের প্রেম'।
তারপরই আমরা ছয় কিশোর বন্ধু নিজেদের আঙুল কেটে রক্ত ছুঁয়ে শপথ নিয়েছিলাম,
'আমাদের একজনকে অন্তত এই প্রেমে সফল হতেই হবে।
একজন সফল হলে
বাকী পাঁচজন তা মেনে নিবো'।

আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম,
'কিশোরীটির বারান্দার উল্টোদিকের রাস্তায় ছয়জন ছয়দিন একা একা দাঁড়াবো,
আর বাকী একদিন সবাই মিলে একসাথে দাঁড়াবো'।
এরপর থেকেই আমাদের সবার একসাথে দেখা হতো সপ্তাহে মাত্র একদিন।

আমরা ছয়জনই যখন একসাথে হতাম-
সেদিন বানিয়ে বানিয়ে সবাই ‌অনেক কথা বলতাম,
কিভাবে কিশোরীটি আজ তাকিয়েছিলো তার দিকে,
একটু হেসেছিলো,
আর কি কি কথা হয়েছে তার সাথে,
আরো কতো কি!
‌অথচ আমরা সবাই বুঝতাম,
সবই মিথ্যে,
সবই কল্পনা,
কিশোরীটি আমাদের কারো দিকে কখনো তাকিয়েও দেখতো না।

তবুও আমরা পরস্পরের মিথ্যা কথাগুলো বিশ্বাস করে আনন্দ পেতাম ,
আবার মনে মনে হিংসেও করতাম একজন আরেকজনকে।

‌অনেকদিন পর.
সে কিশোরীটি যখন নারী হলো
আর আমরা সবাই যুবক,
ছয় বন্ধু ঠিক একই জায়গায় দাঁড়িয়ে তাকে চলে যেতে দেখলাম বিয়ের শাড়িতে,
অসংখ্য রক্তাত ফুলে সাঁজানো একটি গাড়িতে চড়ে বিদায় নিতে।

সেদিন আমাদের সবারই
নিজস্ব আকাশ হারানোর মতো মন খারাপ হয়েছিলো ।
সারা রাত ওয়াসার মাঠে বসে
আমরা সবাই এক হারানো আকাশ খুঁজেছি।
সেই রাতে আমরা কেউই আর বাড়ি ফিরিনি।
একটার পর একটা সিগারেট টেনেছি,
দুঃখে গাঁজাও টেনেছি জীবনে প্রথমবারের মতো।

অদ্ভুতভাবে সেই বিবশ সারারাত আমরা একজনও একটি কথাও বলিনি।
অচেনা এক কষ্ট,
কাউকে বলতে না পারা এক ‌পরিচিত লজ্জা
আর দমবন্ধ হয়ে যাওয়া এক জংলী হাহাকারে
আমরা ছয় বন্ধু আর কখনোই গলির দোতালা বাড়িটির দিকে একবারও তাকাইনি।

আজ আবারও আড্ডায় তিরিশ বছর পর
কি ভাবে যেনো সেই কিশোরীটির কথা উঠলো!
আশ্চর্য,
তিরিশ বছর পরেও আমারা একজনও তার নামটি ভুলিনি।
সবাই একসাথেই হেসে উঠলাম এই কথা ভেবে।
সবার সেই হাসিতেই
আমি টের পেলাম
আমাদের সবাই এখনো বুকের ভিতরে
সেই কষ্ট, লজ্জা আর হাহাকার পালছি গোপনে।

তিরিশ বছর পর
মধ্য রাতের তারাহীন এক অ‌ন্ধকার আকাশ মাটিতে দেখছে,
ঢাকা শহরের যাত্রাবাড়ীর ওয়াসা গলিতে
পঞ্চাশ বছরের ছয় যুবক
একটি দোতলা বাড়িটির ঠিক উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে একসাথে সিগারেট টানছে,
আর সেই বাড়ির বারান্দার দিকে তাকিয়ে কি যেনো ভাবছে সবাই!

ছয়টি সিগারেটর আগুন বাতাসে জোনাকির মত জ্বলছে আর নিভছে।
আজ সবাই মিথ্যে চেষ্টা করছে
সেই কষ্ট, লজ্জা আর হাহাকার
যেভাবেই হোক এখানেই পুড়িয়ে রেখে যাবে,
আর বুকের ভিতর টানবেনা তারা এই ‌অদৃশ্য দহনের আগুন,
বুকের সব আগুন পুড়িয়ে ছাই করে ফেলবে আজই।

আমরা পঞ্চাশ বছরের ছয় যুবক ফিরছি যার যার ঠিকানায়,
শুধু ‌তিরিশ বছর ধরে বুকের ভিতরের গোপনে জমা এক অক্ষমতা আর মরা মনের ছাই
রেখে এসেছি সেই কিশোরীটির বাড়ির উল্টোদিকে।

আহ্
যদি কোন একদিন
এই পোড়া ছাইটুকুও অন্তত তার চোখে পড়তো।
—————————
রশিদ হারুন
০৭/০৯/২০১৯
(কবিতাটি নতুন করে কিছু পরিবর্তিত, সম্পাদিত)

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ১:০৫

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: সন্দর।+

০৮ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ৩:৪৭

জিএম হারুন -অর -রশিদ বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ০৮ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ১:৩১

সাসুম বলেছেন: অনিন্দ্য সুন্দর।

০৮ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ৩:৪৮

জিএম হারুন -অর -রশিদ বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ০৮ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ১:৪৪

ফাহিমা আক্তার বলেছেন: কষ্ট মানুষের জীবনের অতিমূল্যবান সম্পদ। মানুষ সুখের কোন কিছু মনে না রাখতে পারলেও কখনো তার কষ্টকে ভুলডে পারে না।ব্যাক্তিগত আভিমত

০৮ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ৩:৪৯

জিএম হারুন -অর -রশিদ বলেছেন: ঠিকই বলেছেন
ধন্যবাদ

৪| ০৮ ই আগস্ট, ২০২১ সকাল ১০:২৭

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: সে ওদের পাত্তা দেয়নি বলেই ওরা ৫০ বছর বয়সেও তার নাম মনে রেখেছে। সে যদি ধরা দিত তাহলে তাকে নিয়ে এত আগ্রহ ওদের থাকতো না। তবে ওদের মধ্যে কার কাছে ঐ মেয়ের ধরা দেয়ার সম্ভবান বেশী ছিল এটা কবি হয়তো ভালো জানেন। ভাব দেখালে মূল্য বাড়ে অনেক সময়।

০৮ ই আগস্ট, ২০২১ বিকাল ৩:০০

জিএম হারুন -অর -রশিদ বলেছেন: ধন্যবাদ

৫| ০৮ ই আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১:১৩

রাজীব নুর বলেছেন: খুব ভালো লাগলো।

০৮ ই আগস্ট, ২০২১ বিকাল ৩:০১

জিএম হারুন -অর -রশিদ বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.