নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার কারো কাছে নেই কোন অভিমানের দেনাপাওনা, নেই কোন কষ্টের হিসাব, তবুও লুকিয়ে থাকা হাহাকার পরম যতনে আগলে রাখি-- প্রথম পাওয়া চিঠির মত, আমি এই রকমই বন্ধু ।

জিএম হারুন -অর -রশিদ

আরেকটা জীবন যদি পেতাম আমি নির্ঘাত কবি হতাম

জিএম হারুন -অর -রশিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নীলা’পা

২৩ শে জুলাই, ২০২২ রাত ১০:০৯


বিশ বছর পর বিদেশ থেকে এসে
আমরা যেখানে ভাড়া বাড়িতে থাকতাম
সেই মহল্লায় ফিরলাম পুরনো বন্ধুদের খোঁজে।
সেই বাড়িরই লাগোয়া রাস্তায় বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারতে মারতে
তোমাকে দেখলাম নীলা’পা।

তোমাদের দোতলা বাড়ির আস্তর খসে পড়া দেয়ালের রং ঝলসে যাওয়া গ্রীল দেওয়া বারান্দায় দাঁড়িয়ে তুমি রাস্তার ফেরিওয়ালার সাথে দরদাম করছ।
পাচঁ টাকা কমাতে বারবার অনুরোধ করছ,
কিন্তু নাছোড় ফেরিওয়ালা কমাবেই না।

সত্যি কী তোমাকে দেখলাম!
একটা সময় টানটান ফর্সা শরীর ছিল তোমার,
মহল্লার সবচেয়ে বেশি লম্বা মেয়েটাও ছিলে তুমি;
অথচ এখন অনেকটা কুঁজো হয়ে গেছ মনে হলো বয়সের তুলনায়,
শরীরও অনেক ভারী হয়ে গেছে তোমার ।
মুখে মেসতার কালো দাগ আর কুচকানো কপাল দেখে
তোমাকে আর তোমাদের আস্তর খসে পড়া,
রঙ ঝলসে যাওয়া বাড়িটা একই রকম দেখতে লাগছে,
বাড়িটার মতো তোমাকেও যত্নহীন মনে হলো অনেকদিন ধরে।
আমাকে দেখে তুমি কি সত্যি চিনতে পারনি,
নাকি চিনেও না চেনার ভান করলে?

মহল্লার বন্ধুদের কাছে শুনলাম, এখনো বিয়েই করোনি তুমি,
একা একা থাক দোতালায়,
তোমার বাবা-মা মারা গেছেন কয় বছর হলো?
বিয়ে করলে না কেনো!

একসময় তোমার এমন দিন ছিল,
আশেপাশে সব পাড়ার ছেলেরা কতো যে তোমার জন্য পাগলামী করতো,
অথচ তুমি পাত্তাই দিতে না কখনো তাদের।
শুনতাম ‌অনেক ভালো ভালো বিয়ের প্রস্তাবও আসতো,
তুমি, কোন একটা খুঁত বের করে সেই প্রস্তাব নাকচ করে দিতে ‌অনায়াসে।

নীলা’পা,
কী চেয়েছিলে তুমি?
কোনো এক রাজপুত্র তোমাকে নিতে আসবে?
কী পেলে সারাজীবন একা থেকে,
অথচ তোমার প্রত্যাখ্যানে মহল্লার বাদল ভাই গলায় ফাঁস দিলো!
আহা সে কী ভয়ংকর দেখতে লেগেছিলো সেদিনের ঝুলন্ত বাদল ভাইকে,
জিহ্বা বের হয়ে লালা ঝরছিলো।
সেই দৃশ্য দেখে আমি অনেকদিন রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনি।

নীলা’পা,
তোমাদের নীচতলায় ভাড়া থাকতাম বলে,
কাউকে পাত্তা না দিলেও
আমাকে দিয়ে অনেক ফুটফরমাস খাটাতে,
দোকান থেকে এটা সেটা কিনতে বারবার পাঠাতে।

কতো বড় ছিলে তুমি আমার থেকে?
চার পাঁচ বছরের বেশি হবে না।
কিসের মোহে যেন
তোমার কাজ করে দেবার জন্য
সুযোগ পেলেই তোমার আশপাশে ঘুরঘুর করতাম।

একদিন না বুঝেই জানতে চেয়েছিলাম,
তোমার নাকি বিয়ে?
আমার আজও মনে আছে তোমার সেই উত্তর,
কী রকম ভয়ংকর উত্তর ছিল সেটা আমার জন্য,
তুমি বুঝতেই পারনি!
“ তুই আরেকটু বড়ো হ,
তোকেই একদিন বিয়ে করবো।"

নীলা’পা,
আমি ভয় পেয়েছিলাম সেই কথায়,
সেই বারও আমি অঘুমে ছিলাম অনেকদিন।
তারপর থেকে তোমাকে দেখলেই আমার অস্থিরতা বেড়ে যেত।
কমিয়ে দিয়েছিলাম তোমাদের দোতলায় ওঠা,
অথচ সারাদিন তোমার কথাই ভাবতাম।
বন্ধুদের কাউকেই বলতে পারিনি এই গোপন অসুখের খবর।

তারপর যখন কলেজ পাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য দিনরাত পড়ছি,
তুমি একদিন ঠিক সন্ধ্যে বেলা আমাকে ডেকে নিলে ছাদে,
সিঁড়ির ঘরে,
আচমকা আমাকে জড়িয়ে ধরে বললে,
“ চল পালিয়ে যাই, বিয়ে করবো তোকে।"
আমার সারা শরীর থরথর করে কাঁপছিলো তখন,
ভয়ে, নাকি জীবনে প্রথম কোন নারীর স্পর্শে
আজও বুঝতে পারিনি।
আমি শুধু বলেছিলাম,
“নীলা’পা,
আমার অনেক পড়া বাকি
বাবা আমাকে এখনই খুঁজবে।"

কোনোমতে দৌড়ে পালিয়ে এসেছিলাম সেদিন।
আর দেখা হয়নি তোমার সাথে কোনোদিন,
কিছুদিন পরই বাসা বদল করে অন্য শহরে চলে গিয়েছিলাম।
বিদায় নেবার সময় তোমাকে বলে যাবার জন্য কতো চেষ্টাই না করেছিলাম,
তবুও দেখা দিলে না একবারের জন্য।
কষ্ট পেয়েছিলে
না অপমান বোধ করেছিলে
আমি আজও বুঝিনি?
নাকি শুধু আমাকে নিয়ে একটু দুষ্টুমি করেছিলে?
“নীলা’পা বলে একবার ডাকতে গিয়েও ডাকলাম না,
যদি আসলেই না চিনে থাকো।

“নীলা’পা
সেই দিন থেকে আমার নিজের উপর প্রচণ্ড রাগ আর অভিমান হতো,
আমার বুকের আস্তরও প্রতিনিয়ত খসে পড়ে তোমার কথা ভাবতেই;
কেন আমি তোমার চেয়ে বয়সে বড়ো হলাম না।
সেদিন সেই সিঁড়ির ঘরে সাহস করে বললেই পারতাম,
“ঠিক আছে চল পালিয়ে যাই,
তোমাকেই বিয়ে করবো”।

দেশের কতো কিছু বদলে গেলো সেদিন থেকে,
রাষ্ট্র ক্ষমতা বদল হলো কয়েকবার,
মুদ্রাস্ফীতি ‌অনেক বেড়েছে,
ঢাকা শহর চারদিকে বাড়ছে,
আমার শরীর আগের চেয়ে তিন ইঞ্চি লম্বা হয়েছে,
শুধু আমার বয়স তোমার চেয়ে একটুও বাড়েনি বলে-
আমার আজও বিয়ে করা হয়ে উঠেনি।

“নীলা’পা
কেনো আমি তোমার চেয়ে বয়সে বড় হলাম না।
——————
র শি দ হা রু ন
২৩/০৭/২০২২

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে জুলাই, ২০২২ রাত ১:৩৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
গল্পের আদলে সুন্দর কাব্য!
আমার ভালো লেগেছে, আপনাদের?

২৪ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ১০:৩৩

জিএম হারুন -অর -রশিদ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে

২| ২৪ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ৯:৩২

রানার ব্লগ বলেছেন: ভালো লেগেছে!!

২৪ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ১০:৩৩

জিএম হারুন -অর -রশিদ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে

৩| ২৪ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ১০:১৭

সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: সুন্দর হয়েছে।

২৪ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ১০:৩৩

জিএম হারুন -অর -রশিদ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.