নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আরেকটা জীবন যদি পেতাম আমি নির্ঘাত কবি হতাম
বেলী রোডের বিখ্যাত একটি কফি হাউজে ছয়জন পড়তি বেলার যৌবনের পুরুষ বসে কফি খাচ্ছে আর গল্প করছে। বয়স সবারই পঞ্চাশের কিছুটা কম বেশি। বাহির থেকে যে কেউ দেখলেই ভাববে মানুষগুলো বোধহয় প্রায়ই এভাবে আড্ডা মারে, গল্প করে। বাস্তবতা হচ্ছে আজ প্রায় পঁচিশ বছর পর ছয় বন্ধু একসাথে হয়েছে। একজন বাদে বাকি সবাই বিভিন্ন দেশে প্রবাসী।
সবাই বাল্যকালের বন্ধু। আর সেই আশির দশকের শেষ থেকে নব্বই এর প্রায় শেষ পর্যন্ত সবাই উত্তর যাত্রাবাড়ির ওয়াসা রোডের আশেপাশের গলিতে ভাড়া থাকতো।
এখন কামরুল থাকে আমেরিকায় ,মিল্টন কানাডায়, জুয়েল অস্ট্রেলিয়াতে , জামান ব্রিটেনে আর শাকিল ফ্রান্সে, শুধু হারুন বাংলাদেশে।
হারুন উদ্দ্যোগ নিয়ে সব বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করে ,আজকের এই আড্ডার জন্য প্রায় ছয়মাস সময় লেগেছে। সবারই একই সময় ছুটি ম্যানেজ করা একটু কষ্টের ছিলো। যাক তবুও হয়েছে।
সবাই খুবই আশ্চর্য এবং আনন্দিত হয়ে নিজেদের দিকে তাকিয়ে বুঝতেই পারছে না কি ভাবে পঁচিশ বছর চলে গেলো,
মনে হয় এইতো সেদিন শেষবার সবার দেখা হয়েছিলো, আর সবাই যেনো আগের মতোই আছে শুধু শরীর বয়সটা বেড়েছে, চুল দাঁড়িতে কিছুটা সাদা রং লেগেছে, কিছুনা কিছু অসুখ সবার শরীরে কড়া নাড়ছে মাঝে মাঝে। কিন্তু মনটা সেই আগের মতোই যেনো রয়েছে।
তাদের কথাবার্তার শব্দে আশেপাশের মানুষজন কিছুটা বিরক্ত হয়ে তাকাচ্ছে,
আবার অবাক হচ্ছে এই ভেবে এই বয়সের মানুষগুলো গল্প করছে কিশোরদের মতো।
গল্প করতে করতে আর রাতের খাবার খেতে খেতে রাত প্রায় দশটা বেজে গেছে কেউ বুঝতেই পারেনি।
তাদের বন্ধুদের মাঝে সবচেয়ে কমন হলো সবাই সিগারেট একই বয়সে ধরেছে আর ছাড়তে পারেনি ।
কফির দোকানের স্মোকিং জোন এলাকায় বসে ছয়টি সিগারেট যখন একসাথে জ্বলে উঠলো
হঠাৎ করেই শাকিল বলে উঠলো
-শিউলির খবর কেউ কি জানিস?
পাঁচ বন্ধু আশ্চর্য হয়ে শাকিলের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ,
শাকিল খুব বিব্রত বোধ করছিলো সবার দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে
আরো অবাক হলো পাঁচজনই যখন একসাথে হেসে উঠলো,
মিল্টন বললো- শাকিল দেখি শিউলির প্রেমের জালে এখনো আটকে আছে,
বলেই সবার দিকে তাকালো।
সবাই উচ্চস্বরে হেসে উঠলো, রাতে নিরব হতে থাকা বেলীরোডের রাস্তা যেনো সেই হাসিতে নড়েচড়ে উঠলো,
শাকিল বললো - সব শালা ভাব ধরেছে,
মনে মনে সবাই শিউলির খবর জানতে চায় আর দোষ দিচ্ছে একা আমার।
সবাই চুপ হয়ে গেলো কিছুক্ষণের জন্য।
হারুন বললো চল ওয়াসা গলি থেকে ঘুরে আসি। আবার কবে সময় হবে কেউ জানিনা।আজ আকাশ ভরা আগুন চাঁদ।
একজনও হারুনের কথার বিরোধিতা করলো না, যেনো সবাই মনে মনে প্রস্তুত ছিলো,
কেউ একজন বললেই ছুটে যাবে উত্তর যাত্রাবাড়ির ওয়াসা রোডের সেই গলিতে,
যেখানে তাদের বাল্যকাল ,কিশোর কাল আর যৌবনের শুরু হয়েছিলো আর ছয় বন্ধুর মনে মনে একজনই প্রেমিকা ছিলো শিউলি।
রাত এগারোটার দিকে হারুনের জিপ গাড়িতে ঠেলাঠেলি করে ছয়জন রওনা দিলো যাত্রাবাড়ির ওয়াসা রোডের সেই গলির উদ্দেশ্যে। সবাই কেমন যেনো চুপ মেরে ভাবছে, কেনো ফিরছে সেই মহল্লায়,
শিউলির খবরের জন্য না নিজেকে খুঁজতে?
তাদের সবারই মনে হলো এইতো সেদিনের ঘটনা,
কলেজের প্রথম বর্ষে পড়ে সবাই , বিকেলে ওয়াসার বাউন্ডারি এরিয়ায় বসে বন্ধুরা আড্ডা মারছে। শুধু জামান এখনো এসে পৌছেনি। হঠাৎ জামান অনেকটা দৌঁড়ে হাঁপাতে হাঁপাতে আড্ডায় হাজির। সবাই জামানের দিকে কৌতুহলে তাকিয়ে,
নতুন কিছু ঘটনা হয়তো জামান জানে যা বাকি সবাই এখনো জানে না
-শালারা তোরা এখনও আসল খবরই জানিস না, ১০৭ নং গলির শেষ নতুন দোতালা বাড়িতে বাড়িওয়ালা উঠেছে,
বাড়িওয়ালার এক মেয়ে , দেখতে জোস মাল,
ক্লাস টেনে পড়ে হয়তো। নাম শিউলি।
সবাই খুবই আশ্চর্য হলো জামান একদিনে এতো খবর কি ভাবে জোগার করলো!
শাকিল জামানকে একটু ধমক দিয়ে বললে
-জামান মেয়েটাকে মাল বলছিস কেনো?
জামানের উত্তরের আগেই বাকি চারজন চিৎকার করে বলে উঠলো
-চলে এক্ষুনি মালটাকে দেখে আসি।
কে কার কথা শুনে, সবাই ১০৭ নং গলির শেষ বাড়ির দিকে রওনা দিলে।
পাঁচ মিনিটের মধ্যেই সবাই দোতালা নতুন বাড়িটার উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে। নতুন সাদা রঙ করা বাড়ি, বাড়ির বাহির থেকেই বুঝা যায়না ভিতরে কি হচ্ছে। প্রথম দিনই জানালায় পর্দা লাগানো হয়ে গেছে।
সব বন্ধুরা খুব আগ্রহ নিয়ে দোতালার বারান্দার দিকে তাকিয়ে। বারান্দার দরজা আটকানো, সেখানে কিছু কাপড় ঝুলছে , তার মাঝে একটা লাল রঙের ওড়নাও আছে।
অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে থেকেও যখন কাউকেই দেখা গেলোনা
মিল্টন জামানের দিকে তাকিয়ে বললো
-শালা সবাইকে বোকা বানাইছে,
ওর জরিমানা হবে, আজ সবার সিগারেটের টাকা ও দিবে।
বাকি সবাই একসাথে সম্মতি দিয়ে দিলো।
জামানের মনে হচ্ছিলো জীবনে বড়ই বোকামি করে ফেলেছে। শুধু শুধু বন্ধুদের বলতে গেছে। ও যেহেতু প্রথমে দেখেছে- ওর অধিকার বেশি। মেয়েটাকে আগে প্রেমে রাজি করিয়ে তারপরই বলা উচিত ছিলো বন্ধুদের ।
সূর্য ডুবে ডুবে এই সময় , ঘরে ফিরতে হবে সবারই। জামানকে বকতে বকতে সবাই যখন আশা ছেড়ে ফিরে যাবে ঠিক সেই সময় আকাশের মায়াবী মন খারাপ করা লাল আলোতে নীল ফ্রগ পরা এক কিশোরী বারান্দার দরজা খুলে ঝুলানো কাপড়গুলো ঘরে ফিরিয়ে নিতে বারান্দায় আসলো।
সবাই কেমন যেনো থমকে দাঁড়ালো, তাদের বুকের স্পন্দন বোধহয় অনন্তকালের জন্য থেমে গেলো। রাস্তায় দাঁড়ানো ছয় কিশোরের দিকে এক ঝলক তকিয়ে কিশোরিটি ঘরে চলে গেলো ।মেয়েটি চলে যাবার পরও সবাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলো কিছুক্ষণ।
তারপর এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটলো তাদের বন্ধুত্বের জীবনে। কেউ কারো কাছ থেকে বিদায় না নিয়েই চুপচাপ যে যার মতে বাড়ি ফিরে গেলো।
সারারাত করো চোখেই বোধহয় ঘুম ছিলোনা সেদিন। নীল ফ্রগ পরা সেই কিশোরীর এক ঝলক চাহনি সারারাত ধরে তাদের বিরক্ত করেছে, একবারের জন্য ঘুমোতে দেয়নি কাউকে।
খুব সকালে মাত্র চারিদিকে তখন মাত্র আলো ফুটছে, শাকিল সেই বাসার উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে আছে, এমন ভাব করছে সে সকালে ব্যায়াম করছে। কিছুক্ষণ পর পর আঁড় চোখে দোতালার জানালা আর বারান্দার দিকে তাকাচ্ছে চাতক পাখির মতো.
কিছুক্ষণ পরই কামরুল এসে হাজির, শাকিলকে দেখে সে খুবই আশ্চর্য আর হতাশ হয়ে গেলো,
বললো- সকালে হাঁটা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো , আমি প্রায়ই হাঁটি, তোদের বলা হয়নি কখনো, তোদের তো আবার সকালে ঘুমই ভাঙে না। কামরুলের নির্দ্ধিধায় বলা মিথ্যে কথা শাকিল বুঝতে পেরেও কিছুই বললো না
উল্টো বললো- ঠিকই বলেছিস, আমি প্রায় সকালেই হাঁটি, ওদের বলিনি, এখন থেকে তুই আর আমি হাঁটবো নিয়মিত।
কিছুক্ষণের মাঝেই মিল্টন , হারুন, জামান, জুয়েল সেই একই ভংগিতে হাঁটতে হাঁটতে হাজির।সবাই এমন একটা ভাব ধরলো যেনো প্রতিদিনই খুব ভোরে তারা হাঁটতে বের হয়। তারা সবাই সবার চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো সারারাত কেউই ঘুমায়নি,
সবার চোখের নিচে একদিনেই অঘুমের কালো দাগ ।
জামান বন্ধুত্বের কথা ভুলে লজ্জাহীন ভাবে বলেই ফেললো
-তোরা সবাই সকাল সকাল এখানে কেনো এসেছিস আমি বুঝতে পেরেছি। দেখ শিউলির খবর আমি প্রথম এনেছি তাই শিউলির দিকে তোরা আর নজর দিস না, আমি প্রথম বুকড করলাম।ওর সাথে আমার প্রেমটা হয়ে যাবে দেখিস।
তারা বাকি সবাই হতাশা, বিরক্ত আর কষ্ট নিয়ে প্রায় একসাথেই বলে উঠলো,
শিউলি তোর প্রেমে পড়তে ঠেকেছে।
জামানের গলার জোড় কমে গেলো হঠাৎ করেই। সে মিনমিন কন্ঠে বললো - না পড়লে তোদের কি?
জুয়েল বললো- শোন একটা কথা আছে না, মিলে মিশে করি কাজ - হারি জিতি নাই লজ্জা,
কামরুল সাথে সাথে বলে উঠল- নাই লজ্জা না হবে নাহি লাজ।
মিল্টন বললো ঐ একই কথা, আসল কথা হলো আমরা বন্ধু, যা করার এক সাথেই করবো।
হারুন সাথে সাথে বলে উঠলো - তোরা সবাই দেখছি বেকুবের মতো আচরন করছিস এক মেয়ের জন্য। একজন মেয়ে কি ছয়জনের সাথে প্রেম করবে?
জামান আবারো বললো - শুধু আমিই প্রেম করবো।
সবাই হতাশ ও অভিমান নিয়ে জামানের দিকে তাকালো,
জামান কিছুটা বিব্রত হয়ে গেলো সবার দৃষ্টিতে,
তারপর খুব গম্ভীর কন্ঠে বললো - যা বন্ধুদের জন্য আমার প্রেম সেক্রিফাইস করে দিলাম,
মনে রাখিস সারাজীবন।
সবাই যেনো একটু হাঁপ ছাড়লো।
সবাই মিলে সেই সকালে ওয়াসা মাঠে চলে গেলো
খালি পেটে সিগারেট টানতে টানতে
তারা সবাই নির্ধিদ্বায় স্বীকারাক্তি দিলো পরস্পরের প্রতি,
'আমরা সবাই শিউলির প্রেমে পড়েছি,
একেবারে সত্যিকারের প্রেম'।
মিল্টন বললো -চল আমরা আঙুল কেটে রক্তের শপথ নেই শিউলির ব্যাপারে।
তারপরই ছয় কিশোর বন্ধু নিজেদের আঙুল কেটে রক্ত ছুঁয়ে শপথ নিলো,
শপথের কথা ঠিক করলো কামরুল।
শপথ পড়ালো জামান
-আমাদের রক্তের শপথ, আমাদের বন্ধুত্বের শপথ
আমাদের বন্ধুদের মধ্যে একজনকে অন্তত শিউলির প্রেমে সফল হতেই হবে।
আমাদের মধ্যে যদি একজন সফল হয়
বাকী পাঁচজন শিউলিকে ভাবী বলে মেনে নিবো'।
তারপর সেদিনই কলেজ ফাঁকি দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা আলোচনা করে ছয়জনে মিলে সিদ্ধান্ত নিলো -
‘শিউলিদের বাসার বারান্দার উল্টোদিকের রাস্তায় ছয়জন ছয়দিন আলাদা ভাবে একা একা দাঁড়াবো,
আর বাকী একদিন শুক্রবার সবাই মিলে একসাথে আড্ডা দিতে দাঁড়াবো'।
সেদিন থেকেই তাদের বন্ধুদের
ছয়জনের একসাথে দেখা সাক্ষাত আর আড্ডা কমে গেলো,
সপ্তাহে মাত্র একদিন শুক্রবার সবার সাথে সবার দেখা হতো।
বন্ধুরা ছয়জন শুক্রবার যেদিন একসাথে হতো -
সেদিন বানিয়ে বানিয়ে সবাই অনেক কথা বলতো,
কেউ বলতো
-জানিস শিউলি আজ আমার দিকে হাসি মুখে তাকিয়েছিলো,
কেউ বলতো - আজ শিউলির সাথে আমার কথা হয়েছে, আমার নাম জানতে চেয়েছে,
আরেকজন বলতো- আমার সিগারেট খাওয়ার স্টাইল শিউলির খুব পছন্দ, এই জন্য ওকে দেখিয়ে দেখিয়ে দু’টো সিগারেট টেনেছি।
আরো কতো কি আবোল তাবোল গল্প বলতো তারা,অথচ তারা সবাই বুঝতো সবার সবই মিথ্যে, সবার সবই কল্পনা,
শিউলি তাদের কারো দিকে কখনো তাকিয়েও দেখতো না।
তবুও তারা বন্ধুরা পরস্পরের মিথ্যা কথাগুলো বিশ্বাস করে আনন্দ পেতো,
এমনকি মনে মনে হিংসেও করতো একজন আরেকজনকে যদি কোন ঘটনা একটুও সত্যি হয়ে থাকে।বিশ্বাস করতেও কষ্ট হয় এভাবে তারা প্রায় চার বছর ধরে ক্রমাগত চেষ্টা করে যাচ্ছে একজন কিশোরি থেকে নারী হয়ে উঠা শিউলি নামের একজনের প্রেমিক হওয়ার জন্য তাদের ছয় বন্ধুর কিশোর কাল আর যৌবনের শুরুটা ব্যায় করে দিচ্ছে অনায়াসে, কোন ক্লান্তি নেই। প্রচন্ড একাগ্রতা সহ লেগে আছে ছয়জনই।
হঠাৎ এক বুধবার সেই বাড়ি আলোক সজ্জায় সাঁজলো, ১০৭ নং এর পুরো গলিই যেনো আলোয় আলোকিত,
তারপর শুক্রবার সেই দেতালা বাড়ির দরজা জানালা পার হয়ে ভেসে আসা সানাইয়ের নির্মম সুরে ছয় বন্ধুর বুক এফোঁড় ওফোঁড় করে ছয় বন্ধু দোতালা বাড়ির উল্টোদিকের দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে একটার পর একটা সিগারেট পুড়াতে পুড়াতে দাঁড়িয়ে শিউলিকে চলে যেতে দেখলো বিয়ের শাড়িতে, অসংখ্য রক্তাত ফুলে সাঁজানো একটি গাড়িতে চড়ে ।শিউলি ১০৭ নং গলির ছেড়ে চলে গেলো তার বরের বাড়িতে তাদের ছয় বন্ধুর জীবনের প্রায় চার বছর নিয়ে।
সেদিন তাদের ছয় বন্ধুরই নিজস্ব একটা আকাশ হারানোর মতো মন খারাপ হয়েছিলো । তারা সারা রাত ওয়াসার মাঠে বসেই তাদের হারানো আকাশ খুঁজেছে মাটিতে শুয়ে মেঘে আর চাঁদের দিকে তাকিয়ে।
সেই রাতে তারা একজনও বাড়ি ফিরেনি।
একটার পর একটা সিগারেট টেনেছে,
দুঃখে গাঁজাও টেনেছে জীবনে প্রথমবারের মতো। অদ্ভুতভাবে সেই বিবশ সারারাত তারা একজনও একটি কথাও বলিনি , এমন কি শিউলির নামটুকুও না! অচেনা এক কষ্ট,
কাউকে বলতে না পারা এক অপরিচিত লজ্জা, আর দমবন্ধ হয়ে যাওয়া এক জংলী হাহাকারে তারা ছয় বন্ধু আর বাকি জীবন কখনোই গলির দোতালা বাড়িটির দিকে একবারও তাকাইনি।
সবারই ঘোর ভাঙলো গাড়ি যখন
আটাশ বছর পর ওয়াসা গলিতে এসে থামলো।রাত প্রায় বারোটা বেজে গেছে।
রাতের আকাশে আজ পুরো চাঁদ জ্বলছে, সারা মহল্লাই যেনো আলোতে ভেসে যাচ্ছে যেভাবে সেদিন ভেসে গিয়েছিলো শিউলির বিয়ের আলোর স্বজ্জায়।
ঢাকা শহরের যাত্রাবাড়ীর ওয়াসার ১০৭ নং গলিতে প্রায় পঞ্চাশ বছরের যৌবনের পড়তি বেলার ছয় পুরুষ একটি পুরোনো দোতলা বাড়ির ঠিক উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে একসাথে সিগারেট টানছে,
আর সেই বাড়ির বারান্দার দিকে তাকিয়ে তারা কি যেনো ভাবছে সবাই!
দূর থেকে দেখলে মনে হবে ছয়টি সিগারেটর আগুন যেনো বাতাসে জোনাকির মত জ্বলছে আর নিভছে।ছয় বন্ধুর সবাই মিথ্যে চেষ্টা করছে সেদিনকার সেই কষ্ট, লজ্জা আর হাহাকার যেভাবেই হোক আজ এখানেই পুড়িয়ে রেখে যাবে, আর বুকের ভিতর টানবেনা তারা এই অদৃশ্য দহনের আগুন,
বুকের সব আগুন যে ভাবেই হোক পুড়িয়ে ছাই করে ফেলবে আজই।
হারুনের গাড়িতেই ফিরছে সবাই যার যার ঠিকানায়,
সবাই এমন ভাব ধরেছে আটাশ বছর ধরে তাদের বুকের ভিতরের গোপনে জমা এক অক্ষমতা আর মরা মনের ছাই রেখে আসতে পেরেছে তাদের কল্পনার প্রেমিকা শিউলির বাড়ির উল্টোদিকে।
ছয় বন্ধু অনেকদিন পর আজ আবার অঘুমে পার করছে দীর্ঘ এক রাত আলাদা আলাদা বাড়িতে আর ভাবছে - যদি কোন একদিন তার সিগারেটের পোড়া এই ছাইটুকুও অন্তত শিউলির চোখে পড়তো। যদি একবার শিউলির চোখে পড়তো।
——
রশিদ হারুন-
মন্ট্রিয়াল, কানাডা
১১/১২/২০২৩
১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ ভোর ৫:৫৯
জিএম হারুন -অর -রশিদ বলেছেন: ভালোবাসা নিবেন
২| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ৭:০৫
আহমেদ জী এস বলেছেন: জিএম হারুন -অর -রশিদ,
চমৎকার গল্প। লেখাও সাবলীল।
উঠতি যৌবনে এরকম গল্পগুলোই হয়তো সবারই গল্প হয়ে ওঠে। পড়ন্ত যৌবনে সেসব নিয়ে জাবরও কাটা হয়। হয় একাকী নয়তো হারুনদের মতো দলেবলে।
১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ৭:৩৪
জিএম হারুন -অর -রশিদ বলেছেন: সুন্দর বলেছেন
ধন্যবাদ
৩| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:৫০
বাকপ্রবাস বলেছেন: আপনার গল্পও যেন কবিতা পড়ছি, আপনার কবিতাও যেন গল্প পড়ছি। আপনি লিখলেই ভাল লাগছে
১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:২৭
জিএম হারুন -অর -রশিদ বলেছেন: ভালোবাসা নিবেন
৪| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৪:১৬
শেরজা তপন বলেছেন: দারুন এক আড্ডার গল্প। এক শিউলিকে নিয়ে এত ফিলিংস!!
১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:২৮
জিএম হারুন -অর -রশিদ বলেছেন: ধন্যবাদ
৫| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৪:৪০
রাজীব নুর বলেছেন: দারুন লিখেছেন।
১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:২৮
জিএম হারুন -অর -রশিদ বলেছেন: ধন্যবাদ
৬| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:৫১
বিদ্রোহী পুরুষ বলেছেন: বাহ, বাহ !! এরকম জীবন্ত লেখা খুব কম দেখা যায়।
২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১২:১৩
জিএম হারুন -অর -রশিদ বলেছেন: ধন্যবাদ
৭| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:০৮
কল্পদ্রুম বলেছেন: "Our sweetest songs are those that tell of saddest thought.'' সামঞ্জস্যপূর্ণ কী না জানি না। তবে গল্পটা পড়ে এই পঙতিটিই মনে এসেছে। বেশ ভালো গল্প।
২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১২:১৪
জিএম হারুন -অর -রশিদ বলেছেন: ধন্যবাদ
৮| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:২৯
বিজন রয় বলেছেন: সুন্দর।
২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১২:১৪
জিএম হারুন -অর -রশিদ বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ ভোর ৪:২৯
মিরোরডডল বলেছেন:
এতোদিন রশিদের কবিতায় মুগ্ধ হয়েছি।
গল্প লেখাও সেরকম হয়েছে।
যদিও কবিতা এগিয়ে আছে।