নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জিআর রোমান

জিআর রোমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

নির্মমতার চরম পর্যায়, অভাব নৈতিক মূল্যবোধ

২১ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:৫৭

ইতিহাসের পাতায় পড়েছিলাম জাহেলি যুগের বর্বরতার কাহিনী। বর্তমানের প্রত্যক্ষ সাক্ষি আমরা। কতইনা সৌভাগ্য আমাদের! না জানি সে যুগটা কেমন ছিল! বর্তমান সভ্য সমাজের কৃত্তি-কলাপেই তা অনুমেয়! কেন যেন মনে হচ্ছে আমদের পৈশাচিকতা সে যুগকেও ছাপিয়ে যাচ্ছে না তো! সমায় এসেছে নতুন করে পর্যালোচনার। সে ভার না হয় ইতিহাসবিদদের কাছেই থাকলো!

সাম্প্রতিক নির্মম-নির্দয়তার সিরিজ শো গুলো আমাদের কোনদিকে নিয়ে যাচ্ছে, গন্তব্য কোথায়, কোন ইতিহাস রচনা করতে চাচ্ছি তাই ভাব্বার বিষয়! বিশ্বজিৎ, অভিজিত, নীলয়ের সাথে যোগ হয়েছে রাজন- রাহাতদের নাম! এমনকি গর্ভের মদ্ধের সন্তানটিও আজ নিরাপদ নয়!!
কি অমানবিক, অসভ্য, অশান্ত পৃথিবীতেই না আমাদের বসবাস! এসবের শেষ কোথায়, বিচার কোথায়, কে করবে, কখন করবে ? কেই বা দেবে এর সঠিক ও সত্য উত্তর ? সবই আই ওয়াস, ধোঁকা আর প্রতারণা! সবই এক, একই রকম সব। পার্থক্য করার মতো বিশেষ কোন বিশেষত্ব দেখিনা কারো মধ্যেই। কথার ফুল ঝুড়িতে সবাই ব্যস্ত। এভাবেই আসে যায়, ভাগ্যের পরিবর্তন আর আমাদের হয় না!

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত প্রথম ৬ মাসে সারা দেশে ২ হাজার ৮০ জন খুন হয়েছেন। তবে প্রকৃত খুনের সংখ্যা আরও বেশি। অনেক ঘটনায় থানায় মামলা হয় না। অজ্ঞাত মৃতদেহ, রহস্যজনক মৃত্যু বা পারিবারিক কলহের ঘটনায় যেসব লাশ উদ্ধার করা হয়, পুলিশ এগুলোকে অস্বাভাবিক মৃত্যু বলে মামলা নথিভূক্ত করে। ফলে এসব ঘটনায় হত্যা মামলা না হওয়ায় খুনের পরিসংখ্যানে তা উল্লেখও করা হয় না।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে অপহরণের শিকার হয়েছেন ৪ শতাধিক ব্যক্তি। এ ছাড়া গত জুলাই মাসেও প্রায় শতাধিক ব্যক্তি অপহরণের শিকার হয়েছেন। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও দস্যুতাও বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও দস্যুতার ঘটনা ঘটেছে ৫ হাজার ৩২৫টি। গত জুলাই মাসেই কেবল এর সংখ্যা প্রায় এক হাজারের মতো।

এ ছাড়া প্রথম ছয় মাসে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় সারা দেশে ১০ হাজারেরও বেশি মামলা হয়েছে। এসব মামলার উল্লেখযোগ্য অংশই হলো ধর্ষণের। মানবাধিকার সংস্থা অধিকার বলছে, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে সারা দেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় মারা গেছে ১৫৩ জন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন অন্তত সাড়ে ৪ হাজারেরও বেশি মানুষ। মানুষের মধ্যে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার প্রবণতাও বেড়ে গেছে আগের চাইতে অনেক বেশি। অধিকার বলছে, জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ৭৭ জন গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন।
দেশে শিশু নির্যাতনের চিত্র দিন দিন ভয়াবহ হয়ে উঠছে । বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে এ চিত্র পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খুন, ধর্ষণ ও অপহরণসহ নানাভাবে গত ছয় মাসে প্রায় তিন হাজার শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ৬ মাসে ১শ ৫৪ শিশুকে হত্যা করা হয়, ধর্ষিত হয়েছে ২শ ৩০ শিশু। ১শ ২৭ শিশু হয়েছে অপহরণের শিকার। অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে ২৩ শিশুকে। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে আরো ১৭ শিশুকে।

এক্ষেত্রে বিচার হীনতা বা বিচারের দীর্ঘ সূত্রতা এবং নৈতিক শিক্ষার অভাবকেই দায়ী করছে অনেকে। মানবাধিকার চেয়ারম্যান জনাব মিজানুর রহমান বলেন “আইনের শাসনের অভাবেই এসব হচ্ছে”।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা জনাবা রাশেদা কে চৌধুরী প্রথম আলোর সাথে এক সাক্ষাতে বলেন, “শিক্ষার বড় উদ্দেশ্য জ্ঞান ও আলোকিত মানুষ তৈরি করা। যদি তারা কূপমণ্ডূকতার মধ্যে থাকে, তাহলে সেটা শিক্ষা নয়। শিক্ষা মানুষের মনকে পরিশীলিত করে, কিন্তু সেখানে যদি তার মূল্যবোধই হারিয়ে যায়, সেই শিক্ষাকে শিক্ষা বলা যাবে না।
আমি মনে করি, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি এখন দৃষ্টি দেওয়ার সময় এসেছে। আমরা যদি পেছনে দৃষ্টি ফেরাই, আমাদের প্রজন্মে শিক্ষকেরা একটা বিশাল ভূমিকা পালন করতেন। ‘সদা সত্য কথা বলিব’, ‘সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি’ এমন সুবচনগুলো এখন নির্বাসিত হয়েছে। এখন মোবাইলের মাধ্যমে আপনি খুদে বার্তা পাঠাচ্ছেন। পাঁচ বছরের আগেই বাচ্চারা এসব পেয়ে যাচ্ছে এবং তা আমাদের শাশ্বত মূল্যবোধকে একেবারে নড়বড়ে করে দিচ্ছে। আমাদের মূল্যবোধের মধ্যে ছিল মুরব্বিদের কথা শোনা, শিশুদের ভালোবাসা। বাবা-মা ও শিক্ষকেরা যে তাদের মারধর করত, সেটা যদিও ছিল। কিন্তু তা এমন পর্যায়ে কখনো ছিল না”।

পরিবারের কর্তাদের, সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের, শিক্ষক সমাজ ও ধর্মীয় গুরুদের মাধ্যমে নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা জোরদার করা যেতে পারে। আর এই প্রশিক্ষণই হতে পারে সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের একমাত্র হাতিয়ার।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.