নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হাবিবুর রহমান জুয়েল

হাবিবুর রহমান জুয়েল

জীবন নদীর বাঁকে বাঁকে দুঃখ কতো লুকিয়ে থাকে কেউ তো জানে না....

হাবিবুর রহমান জুয়েল › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার বাবার কথামালা..

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১০

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পর একদিন বাবা ডেকে বললেন, "তুই দেশের সেরা বিদ্যাপীঠে পড়তে যাচ্ছিস। আমার বংশের কিংবা আশপাশের তিন-চার গ্রামের ভেতর তুই প্রথম শিক্ষার্থী যে কি-না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সৌভাগ্য অর্জন করতে পেরেছিস। আমার বয়স যখন পনের-ষোল তখন থেকে ওখানে গিয়ে খুব আড্ডা দিতাম। বকশি বাজারে তোর ছোট ফুফুর বাসায় থাকতাম। তোর ফুফা তখন ঢাকা মেডিক্যালের কর্মচারি। তোর ফুফুর তখন পাঁচ ছেলে মেয়ে। অভাবের সংসার। তারপরও আমাকে তাদের বাসায় থাকতে দিয়েছে। বকশি বাজারে একটা ছোট্ট মুদি দোকান দিয়ে দিয়েছে। আমি সারা দিন সেই দোকান চালাতাম। রাতের দিকে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঘুরতে যেতাম। সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের আশ-পাশ দিয়েই বেশি ঘুরতাম। ঘুরতাম আর অবাক চোখে দেখতাম।"

একটু থেমে বাবা আবার বলতে লাগলেন, "আমি আড়াই বছর বয়সে পিতৃহীন হয়েছি। জীবনে কঠিন সংগ্রাম করে বড় হতে হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গেলে বুকের ভিতরটা হাহাকার করে উঠতো। ভাবতাম, আমি যদি এখানটায় পড়তে পারতাম! আজ তুই আমার সেই হাহাকার পূরণ করতে যাচ্ছিস। তোর কাছে আমার একটাই চাওয়া থাকবে, একজন প্রকৃত মানুষ হয়ে সেখান থেকে বের হয়ে আসবি। এর চে' বেশি কিছু আর আমার চাওয়ার নেই। তোর শরীরের প্রতি ফোঁটা রক্ত আমার হালাল রুজির অর্থে গড়া। আমি চাইবো না সেই হালাল রক্ত বিন্দুর সাথে কোনদিন ভুল করেও হারাম রক্তবিন্দুর সংমিশ্রণ হোক। হয়তো তুই একদিন অনেক বড় হবি। সেদিন আমি থাকবো কিনা জানি না। শুধু এইটুকুই বলবো, আজ থেকে তুই আর আমার একার সন্তান নয়। দেশ, মানুষ ও সমাজেরও সন্তান। আশা করি জীবনে একজন আদর্শ সন্তান হয়ে তুই বেঁচে থাকবি....। তোর জন্য আমার দোয়া রইলো।"

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বের হয়েছি আজ প্রায় অর্ধযুগ হলো। কর্মজীবনও শুরু করেছি প্রায় অর্ধযুগ হলো। বাবার একটি কথা আমি সবসময় মনে রাখার চেষ্টা করি, আমি শুধু আমার বাবা-মায়ের সন্তানই নই। দেশ মানুষ ও সমাজেরও সন্তান।

প্রতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এত এত শিক্ষার্থী পাশ করে বের হন। এবং রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে যোগদানের মধ্য দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। তাদেরও একটি কথাই মনে রাখা উচিত যে, তারা এই দেশ মানুষ ও সমাজেরও সন্তান।

একবার এক মেধাবী বড় ভাইকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, বিসিএস এ প্রথম পছন্দ হিসেবে তিনি কেন "কাস্টমস" দিয়েছেন। তিনি হেসে বললেন, ধুর মিয়া তুমি কি বুঝবা! সেখানে অনেক টাকা! না চাইতেই ব্রিফকেস বাসায় চলে আসে।

আমিও হাসলাম। হাসলাম তার অসুস্থ চিন্তাধারা দেখে। সেই বড় ভাইয়ের জন্য আমার ভীষণ করুণা হতে লাগলো। তিনি ঢাবির ক্লাসরুমে আসা যাওয়া করেছেন ঠিকই। কিন্তু ঢাবি থেকে প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করতে পারেন নি।........

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:২৪

হতাস৮৮ বলেছেন: এইটা তো এখন হরহেমাশায় হচ্ছে। এইটাই এখন ট্রেন্ড। বাংলাদেশের প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ের একই অবস্থা। আমাকে একজন বলেছিল, তিনি কী কারণে যেন একবার ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তাই তার জীবনের লক্ষ্যই ঠিক করে ফেলেছিলেন। ঘুষখোর হবেন।কাউকে কোন ছাড় দিবেন না।

মাঝে মাঝে উচ্চ শিক্ষিত সমাজের এমন আচরণ দেখলে আসলেই অনেক কষ্ট লাগে। আমরা আসলে শিক্ষিত হচ্ছি, কিন্তু সুশিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছি না।

২| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:২৪

হাবিবুর রহমান জুয়েল বলেছেন: ঠিক বলেছেন ভাই ৮৮, ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.