নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হাবিবুর রহমান জুয়েল

হাবিবুর রহমান জুয়েল

জীবন নদীর বাঁকে বাঁকে দুঃখ কতো লুকিয়ে থাকে কেউ তো জানে না....

হাবিবুর রহমান জুয়েল › বিস্তারিত পোস্টঃ

গা গতর দেইখা মানুষের গুনাগুন বিচার করা আহাম্মকি ছাড়া আর কিছুই না

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৫৮

কসাইর চেহারা দেইখা আমরা বাপ-পুতে ভীষণ খুশি। ইয়া পালোয়ানের মতন দেহ। গায়ের রঙও মাশাল্লা একেবারে তেল চিটচিটে। হয়তো বাসার থেইকা বাইর হওনের আগে পুরা গতরে খাঁটি সরিষার তেল মালিশ কইরা আসছে। ভিতরে ভিতরে আনন্দের বাতাস বইতে লাগল- যাক আল্লাহ তালার রহমতে কসাই একখান পাইছি বটে এইবার।

টকটকে লাল সেন্ডুগেঞ্জি পরিহিত কসাই কদম ফেলছে তো তার পদাঘাতে তলার মাটি খানিক কেঁপে কেঁপে ওঠছে।
আগের বছরের নাকানি-চুবানির কথা মনে করে প্রতি বছর কোরবানির আগে আব্বা আর আমি ওয়াদা করি, পার্টটাইম কসাই দিয়া আর না, এইবার ভালো মানের জাত-কসাই লাগামু। ট্যাকা কিছু বেশি গেলে যাক। কিন্তু শেষে পর্যন্ত ওয়াদা মতো জাত-কসাই আর আমাগো লাগানো হয় না। তয় এইবার বোধহয় ওয়াদা রক্ষা হয়েছে, জাত-কসাই একখান পাওয়া গেছে।

আমি মুখমণ্ডলে মৃদু হাসি ঝুলাইয়া কসাই সাহেবের সামনে হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়ায়া ধরলাম। "ভাইজান তো বহুদিন যাবত কসাই পেশায় নিয়োজিত আছেন, তাই না?"
আমার প্রশ্নের জবাবে খানিক হাসলেন তিনি।
হাসির ধরন দেইখা বুঝে নিলাম, ইনি সত্যিই কসাই বংশের পোলা এক্কেবারে ‍‍‌‌‌'জাত-কসাই'। "যদি কিছু মনে না করেন, আপনার নামটা জানা দরকার- আমরা নামের লিস্ট করবো তো তাই।"

"মোসলেম।" ঠোঁটে ঝুলন্ত হাসির সহিত জবাব দিলেন কসাই।

আমার গাড়ি চালক রাসেল এইবার কসাই ঠিক করার দায়িত্ব নিয়েছিল। আব্বা রাসেলকে কাছে ডেকে বললেন, "একটা কাজের কাজ করছো তুমি, অর মতোন জাত-কসাই বাইর কইরা নিয়া আসছ। তোমার পুরস্কার আছে।" দাড়োয়ান খবির উদ্দিন কসাই দেইখা বলল," এইবার হইবো। হেব্বি গরুর লাইগা হেব্বি কসাই।" আব্বার গাড়ি চালক সেকান্দর কসাইর জন্য এক খিলি পান জোগাড় কইরা নিয়া আসল। সাথে কাঁচা সুপারি ও বাবা জর্দা।

রাসেল দূর থেইকা এই সব কীর্তিকাণ্ড দেইখা মুচকি মুচকি হাসছে। আর বাকিদের বলছে, "ঐ ব্যাটারা তাড়াতাড়ি কর, তাড়াতাড়ি কর। দেরি হইয়া যাইতাসে সবার আগে আমগো গরু ফালাইতে হইব।" আমি বললাম, "একটু রাখো, মোসলেম ভাইর পানটা শেষ হওক। ওনাকে শান্তি মতোন পানটা একটু খাইতে দাও।"

গরুর গোসল পর্ব শেষ। এবার শোয়ানোর পালা। সবার দৃষ্টি মোসলেম কসাইর দিকে, কি কায়দা কানুন অবলম্বন করে সে গরু শোয়ায় এটাই এখন দর্শনীয় বিষয়। রসি দিয়ে গরু পেছানো হচ্ছে। মোসলেম একটু দূরে দাঁড়ায়ে দাঁড়ায়ে তা দেখতাছে। আব্বা বললেন, "যাও মোসলেম তুমি হাত লাগাও, তোমার হাত ছাড়া হইব না। গাঁধাগুলান ঠিক মতো রসি প্যাঁচাইতে পারতাছে না। তুমি ছাড়া এইখানে বাকি সবগুলা মনে হইতাছে জীবনে মুরগিও জবাই দেয় নাই।"

মোসলেম করুণ দৃষ্টিতে আব্বার দিকে তাকায় রইল। আব্বা মোলায়েম সরে জিজ্ঞেস করলেন, "কি মিয়া তুমি দাঁড়ায় আছ ক্যান? যাও হাত লাগাও।"

"আমার ডর করে ছার, গরু যদি উইট্টা গুতা মারে? হাতির লাহান গরু!" আমরা আসমান থেকে ধপাস করে মাটিতে পড়লাম।

"কও কি তুমি, তোমার ডর করে!"

"হ ছার।"

"তুমি একজন জাত-কসাই হইয়া গরুর গুতারে ডরাও?"

"জে না ছার, আমি কসাই না, আমি ব্যানগাড়ি চালাই।"

"তুমি ভ্যানগাড়ি চালাও?"

"জে ছার"

আব্বা রাগে থর থর করে কাঁপতে লাগলেন। রাসেলকে কাছে ডাকলেন।

"ঐ মিয়া বাটপারি পাইছ, ভ্যানগাড়ির ড্রাইভাররে কসাই সাজাইয়া নিয়া আসছ? এটা কি বাটপারির জাগা হ্যা?"

"আমার দোষ নাই ছার, অরে যে ভাও কইরা দিছে, হেয় কইছে অয় কসাই। আমার তে ট্যাকাও নিছে দুইশ।"

আমি হায় হায় করতে লাগলাম। মনে চাচ্ছিল মোসলেমরে ধইরা কোরবানি দিয়া দেই।

অবশেষে গরু জবাই শুরু হলো। অর্ধেক জবাইর পর গরু উইঠা দাঁড়ায় গেল। আমরা পরি মরি কইরা দিলাম দৌড়। আব্বা রাগে প্রায় কেঁদে ফেললেন। বহু চেষ্টায় আবার গরু শোয়ানো হলো।

দ্বিতীয় দফায় জবাই সম্পন্ন হলো।

বিদ্র: শাস্তি স্বরূপ রাসেল রে দুই গরু আর দুই ছাগলের ভুড়ি পরিস্কার করতে দেয়া হলো।


মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:১২

ভবোঘুরে বাউল বলেছেন: হুহাহাহাহাহাহাহা। খুব মজা পেলাম। হাসতে হাসতে জীবন গেল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.