নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হাবিবুর রহমান জুয়েল

হাবিবুর রহমান জুয়েল

জীবন নদীর বাঁকে বাঁকে দুঃখ কতো লুকিয়ে থাকে কেউ তো জানে না....

হাবিবুর রহমান জুয়েল › বিস্তারিত পোস্টঃ

নি:সঙ্গতা....

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:১৪

একজন বৃদ্ধ বাবার সাথে দেখা হলো আজ ব্যংকের ভেতর।

তাঁর দুটি হাত ও মুখমণ্ডল কাঁপছে। চোখ মুখে দারুণ অস্থিরতা। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। আঙ্গুলের কম্পনের কারণে ভালো মতো স্বাক্ষর করতে পারছেন না। যতবার স্বাক্ষর করছেন। একটির সাথে আরেকটি মিলছে না।

হঠাৎ কর্মকর্তাদের সাথে উত্তেজিত হয়ে উঠেছেন। চিৎকার করছেন।

কাছে গিয়ে সালাম দিয়ে পাশে বসলাম আমি। শান্ত করার চেষ্টা করলাম। শান্ত হবার পর অনেক সময় ধরে কথা বললাম। বললাম, এ বয়সে অসুস্থ শরীর নিয়ে কেন এসেছেন। ছেলে মেয়েরা কী করছে? আপনি কেন?

বৃদ্ধ বাবা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। বললেন, তিন ছেলে বিদেশে থাকে। দুজন লন্ডনে থাকে পরিবার নিয়ে। একজন অস্ট্রেলিয়ায়। কোন মেয়ে নেই। তারা বুড়ো-বুড়ি দুজন ঢাকা থাকেন। ব্যাংকে এসেছেন কিছু টাকা তুলবেন। আর একটি এফডিআর করে রেখেছেন। সেটির বিষয়েও একটু খোঁজ-খবর নিবেন।

কথার ফাঁকে নিজেই বললেন, ছেলেদের যদি কখনো প্রয়োজন হয় তবে এই এফডিআর টি ভেঙ্গে তাদেরকে দিবেন।

জানতে চাইলাম, ব্যংকে কিভাবে এসেছেন? বললেন, কেউ একজন রিক্সা ঠিক করে দিয়েছে। তারপর সেই রিক্সায় করে এসেছেন।

অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠানে ভালো ভালো পোস্টে চাকরি করলেও গাড়ি-বাড়ি কিছুই করতে পারেন নি। ছোট্ট একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। জীবনের সব অর্জনই ছেলেদের পেছনে ব্যয় করেছেন।

একসময় বললেন, ছেলেদের মানুষ করতে পেরেছেন এটিই জীবনের বড় সান্ত্বনা। এতেই তিনি সন্তুষ্ট।

আমি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। ছেলেরা সত্যিই মাুনষের মতো মানুষ হয়েছে। অনেক বড় মাপের মানুষ হয়েছে তারা!

এই বাবার জন্য কেমন যেন মমতা বোধ হতে লাগলো আমার। খুব আগ্রহ নিয়ে বললাম, চলেন আপনাকে আমি বাসায় নামিয়ে দিবো।

আমার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে আলতো করে কাঁপাহাতে পিঠে হাত বুলিয়ে দিলেন। তারপর একটি হাত আমার কাঁধে রেখে আরেক হাতে লাঠিতে ভর করে উঠে দাঁড়ালেন। বললেন, কেন অযথা কষ্ট করবে বাবা। আমি বরং একটা রিক্সায় করেই চলে যাবো। আমাকে তুমি একটা রিক্সা ঠিক করে দাও।

এক প্রকার জোর করেই ব্যাংকের একজন কর্মকর্তার সহযোগিতায় আমার গাড়িতে তুললাম তাঁকে। আমার অফিসে যাবার পথেই উনার বাসা।

বাসায় পৌছে দরজার কলিং বেল বাজাতেই গোলগাল চেহারার একজন বৃদ্ধা মা বেড়িয়ে এলেন। বৃদ্ধ বাবার স্ত্রী। হাত ধরাধরি করে দুজন ভেতরে ঢুকলেন।

বৃদ্ধা মা তার স্বামীর কাছে আমার গল্প শুনে অনেকটা ধরা গলায় বললেন, "বাবা আজ দুপুরে আমাদের সাথে তুমি খেয়ে যাও না...। অনেক দিন হলো আমরা দুজন একাকী বসে খাই। আমাদের সাথে বসে এক বেলা খাবার মতো তেমন মানুষ নাই। আজ তুমি আমাদের সাথে খেলে খুব খুশি হবো।"

আমার চোখের পাতা ভারি হয়ে এলো। চোখের কোণে খানিক আদ্রতা অনুভক করলাম। এই বৃদ্ধ দম্পতির হতভাগা ছেলেদের কথা খুব মনে পড়লো। সত্যিই বড় হতভাগা তারা। সত্যি।


তারপর তিনজন গল্প করতে করতে দুপুরের খাবার খেতে লাগলাম........

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৩৬

চাঁদগাজী বলেছেন:


ভালো

২| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:৫২

অন্ধবিন্দু বলেছেন:
তার ওই সান্ত্বনাই তার সবচাইতে বড় হতাশা হয়তো।

৩| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:০২

আমিনুর রহমান বলেছেন:



সত্যিই ভীষণ হতভাগা তারা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.