নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জীবন নদীর বাঁকে বাঁকে দুঃখ কতো লুকিয়ে থাকে কেউ তো জানে না....
বিয়ের আগে আমার শ্বশুর বললেন, "বাবা তোমাদের বড় সংসার। আমার মেয়ে সেখানে গিয়ে কিভাবে সামাল দিবে? সে কোন দিন ভাতও রান্না করে দেখে নি।"
একই কথা বললেন শাশুড়িও। তাদের আত্মীয় স্বজন সবার আশংকা এত বড় সংসার তাদের মেয়ে সামাল দিতে পারবে তো!
আমার মেজ খালা-শাশুড়ি আরো এক ধাপ এগিয়ে বললেন, "ঐ ছেলে হইলো গাঁধা (থিওরি মতে সংসারের বড় ছেলে চিরকাল গাঁধা) তার সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের এত আদরের ছোট মেয়েটা চলবে কীভাবে!"
তারা খোঁজ নিয়ে জানলেন, আমার বাসায় বৃদ্ধ নব্বই বছর বয়সি দাদিজান আছেন। প্রায় সময়ই দৌড়ে বাথরুম অবধি যাবার ফুরসত না মেলাতে বিছানাতেই ছোট কম্ম সম্পাদন করে থাকেন।
আমার মা আলাভোলা টাইপ হলেও বাবা অতন্ত রাগি মানুষ। তার রাগ আগ্নেয়গিরিরি লাভার চেয়েও ভয়ঙ্কর।
দুজন ড্রাইভার এবং দারোয়ানকে বাসা থেকে নিয়মিত খাবার দেয়া হয়। এ ছাড়া গ্রাম থেকে প্রতি নিয়ত বিদেশগামী, চাকরি প্রত্যাশী, চিকিৎসা সেবার জন্য বিভিন্ন লোকজন বাসায় আসা-যাওয়া করেন।
তাদের ভাষ্য, "সংসার তো নয় যেন বাজার!"
আমি তাদেরকে বললাম, " সে যদি রান্না-বান্না করতে না চায় কোন অসুবিধা নেই। আমার মা আছেন। আমি আছি....।"
"তুমি আছো মানে?"
"জ্বি ভারি রান্না-বান্নাগুলো অনেক সময় মায়ের সাথে আমিও করে থাকি। আমার মা আমাকে শিখিয়েছেন। বলতে পারেন ঠেকে শিখেছি। সংসারে বড়বোন নেই। মা অসুস্থ হলে আমাকেই মায়ের কাজগুলো করতে হতো। এখনও হয়।"
খালা-শাশুড়ি কাঁদে কাঁদো গলায় বললেন, "বলে ছিলাম না! বড় ছেলেগুলো আস্ত গাঁধা। এরা গাঁধার মতো বিনা বাক্য-ব্যয়ে আজীবন বোঝা টেনে যায়। এ্যাহহহ... রান্না-বান্নাও করে! হায় খোদ! ঐ সংসারে গেলে আমাদের মেয়েটার জীবন বরবাদ হয়ে যাবে।"
অনেক হিসেব-নিকেশ শেষে কোন এক ঝুম বৃষ্টির দিনে সেই ছোট মেয়ের সাথে আচমকা আমার বিবাহ কর্ম সম্পাদিত হলো।
বিয়ের পর জানতে পারলাম, তার খালা ও আত্মীয়-স্বজনদের অনেকে শিখিয়ে দিয়েছেন, "ভুল করেও তুই রান্না ঘরে যাবি না। একবার গেছিস তো জীবন শেষ! রান্না করিয়ে তোকে মারবে।"
আমি শুনে হাসলাম ও দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লাম।
তিন দিন পর নতুন বউ বলল, "শুনো আমার লজ্জা লাগছে। সবাই কাজ করছে আমি রুমে শুয়ে আছি। আমাকে কেউ ডাকছেও না।"
পঞ্চম দিনে সে বলল, "তুমি আমাকে কোন কাজই করতে বলো না। সব কিছু নিজে নিজে করো।"
বললাম, "তুমি কিছু করেছ শুনলে তোমার খালা-মামিরা কষ্ট পাবে। তাছাড়া আমি তাদেরকে কথা দিয়েছি, তোমাকে কিছুই করতে হবে না।"
৬ষ্ঠ দিন সে নিজ থেকে রান্না ঘরে গেল। হাত-টাত পুড়িয়ে কি যেন একটা রান্না করলো। তারপরও তার আনন্দ ধরে না।
এর পর কিভাবে কিভাবে যেন সে বড় রাঁধুনী বনে গেল। তার বানানো পুডিং আর ফালুদা খেয়ে আমার বিস্ময় জাগে। সেদিন বাসার কাছের মসজিদে তাবলিগের মেহমান এসেছে। আব্বা তাদেরকে তার পুত্রবধুর হাতে বানানো পুডিং আর ফালুদা খাবার দাওয়াত করলেন।
পুত্রবধু আনন্দচিত্তে তাদেরকে পুডিং ফালুদা বানিয়ে খাওয়ালো। রান্না-বান্না শিল্পে কোন অংশেই এখন সে তার শাশুড়ির চে কম নয়। মাছের একটা তরকারি থাকলে বলে, "তোমার জন্য ঐ মাছটা রান্না করি? মুরগি খেতে চাইলে বলো, ছাদে মুরগি আছে জবাই করে রান্না করে দেই- বেশি সময় লাগবে না। না-কি ফ্রিজ থেকে একপোটলা গরুর মাংস বের করবো?"
রাত দশটা বাজেও কোন কিছু খেতে চাইলে সে মহানন্দে রান্না করে সামনে এনে হাজির করে।
আর বৃদ্ধ দাদিজানের খেদমতও সে হাসিমুখে করে যাচেছ....। দাদিজানকে সময় মতো খাবার দেয়া। মাথার চুল আঁচড়ে দেয়া। গোসলের গরম পানি দেয়া। কাপড় পাল্টে দেয়া... কোন কিছুতেই তার আলসেমি নেই।
এরই নাম সংসার। এখানে কেউ ঠেকে শেখে (যেমন আমি) আর কেউ ভালোবেসে(যেমন আমার স্ত্রী)....
২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৪৮
হাবিবুর রহমান জুয়েল বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪২
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: হাউ সুইট
২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৪৮
হাবিবুর রহমান জুয়েল বলেছেন: ধন্যবাদ
৩| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৫
এইচ আর খান বলেছেন: মাশাল্লাহ। আপনি সুখি হোন। আল্লাহ আপনাদের মঙ্গল করুন। খুব মনোযোগ দিয়ে পড়লাম কারন আমিও পরিবারের বড় ছেলে। দোয়া রাখবেন।
২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৪৮
হাবিবুর রহমান জুয়েল বলেছেন: ধন্যবাদ
৪| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:২৬
শরাফত বলেছেন: ভাই আমিতো পরিবারের ছোট ছেলে
আমার ব্যাপারে কি সব উল্টা হবে নাকি?
দোয়া করি ভাবীকে নিয়ে ভালো থাকুন ।
৫| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:৩৬
জাহিদ হাসান মিঠু বলেছেন: শুভ কামনা।
©somewhere in net ltd.
১| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩৭
চাঁদগাজী বলেছেন:
ভালো, আপনার সুখের সংসার