নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হাবিবুর রহমান জুয়েল

হাবিবুর রহমান জুয়েল

জীবন নদীর বাঁকে বাঁকে দুঃখ কতো লুকিয়ে থাকে কেউ তো জানে না....

হাবিবুর রহমান জুয়েল › বিস্তারিত পোস্টঃ

সোনার হরিণ

২০ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:৩১

এক বড় ভাইর সাথে দেখা সেদিন কাঁটাবন কনকর্ড এম্পরিয়াম মার্কেটে। জানতে চাইলাম ভাই কোথায় আছেন?

বললেন, "কোথাও নেই। তবে বেঁচে আছি।"

২০১৪ সালের জুন মাসের এক সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর খিলগাঁও রেলগেইট এলাকা থেকে মাহবুব শাহীনের ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

মৃত্যুর আধ ঘণ্টা আগে নিজের ফেইসবুক পাতায় দেয়া শেষ স্ট্যাটাসে রেললাইনের ওপর শুয়ে থাকার কথা লিখেছিলেন ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সাবেক এই ছাত্র।

তিনি লিখেছিলেন, “বন্ধুরা, আমি এমন একটি অপরাধ করতে যাচ্ছি যা আমার পরিবার, আইন ও ধর্মের বিরুদ্ধে। আমি রেল লাইনের ওপর শুয়ে আছি, ট্রেন আসছে… … বিদায়, বিদায় চিরতরে। মহান আল্লাহ তোমাদের সবার মঙ্গল করুন।”

এর আগে তিনি লিখেছিলেন, “এই হতচ্ছাড়া নিজেকে দূরে সরিয়ে দিতে যাচ্ছে, যে অপদার্থ কি-না শুধু খেতেই জানে। আমি একটা কমেন্ট লিখেছিলাম, আমার যেতে হবে। তারপর তোমাদের কেউ একজন জানতে চেয়েছ, কোথায় থেকে কোথায় যাচ্ছ? আমি জানি না আমি কোথায় যাচ্ছি। কিন্তু আমি যাচ্ছি। এই অকর্মা নিজেকে ছেড়ে যাচ্ছে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টুরিস্ট সোসাইটির পরপর দুই বার সহসভাপতির দায়িত্বে ছিলেন মাহবুব।

মৃত্যুর পর তার পকেটে চারটি চিঠি ও ২ হাজার টাকা পেয়েছে পুলিশ।

চিঠিগুলোর মধ্যে একটিতে লেখা ছিল, ওই টাকা যেন আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে তার লাশ দাফনের কাজে ব্যয় করা হয়।

আরেকটি চিঠিতে মাহবুব তার বন্ধু ‘ডাক্তার রোমানের’ নাম উল্লেখ করে বলেছেন, ওই বন্ধুর কাছে তার ৪০ হাজার টাকা দেনা রয়েছে।

.....পড়াশোনা শেষ করে ভালো কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি না পেয়ে কিছুদিন ধরে হতাশায় ভুগছিলেন তারেক আজিজ। একসময় বেছে নেন আত্মহত্যার পথ। বিষপান করে রাষ্ট্রের বুকে কষে একটা লাথিমেরে নিজের জীবনের ইতি টানেন। মঙ্গলবার রাত ৩টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

তারেকের রুমমেট জুবায়ের আহমেদ পত্রিকাঅলাদের বলেন, ‘তারেক ভাই খুবই মেধাবী ছিলেন। মানুষ হিসেবেও ছিলেন খুব নম্রভদ্র। বর্তমান সমাজ ও সামাজিক অসংগতির নানা বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতেন তিনি।"

আজ যে বড় ভাইর সাথে গল্প করছিলাম। তিনি আমারও আগে পাশ করে বেরিয়েছেন। চাকরির বয়স শেষ। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, "তারেকের মতো চলে যেতে পারলে বেঁচে যেতাম রে ভাই।"

আমি দীর্ঘ নি:শ্বাস ছাড়লাম। আমার তপ্ত নি:শ্বাস বাতাসে মিলিয়ে গেল...

ক'দিন আগে ইডেন থেকে পাশ করা এক দরিদ্র বাবার কণ্যার চাকরির সুপারিশের জন্য আমাকে ধরা হলো। তৃতীয় শ্রেণীর চাকরি। কোন রকম ঘুষ ছাড়া পরীক্ষায় সে শেষ ৩২ জনের ভেতর এসেছে। ভাইভার সময় আমাকে ধরা হলো। আমি সেই অফিসে কর্মরত আমার বিসিএস ক্যাডার বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করলাম। সে খোঁজ-খবর নিয়ে জানালো মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন জায়গা মিলিয়ে সাড়ে চার লাখ টাকা দিলেই হবে।

দরিদ্র বাবা কীভাবে কীভাবে যেন কিছু টাকার ব্যবস্থা করলেন। আমি একলাখ টাকা ধার দিলাম। বন্ধুর হাতে দিয়ে বললাম, "চেষ্টা করিস দোস্ত, যেন মিস না হয়।"

ভাইবার রেজাল্ট হবার পর বন্ধু লজ্জিত ভঙ্গিতে আমাকে বলল, "তোর টাকাটা নিয়ে যাইস। ওর চাকরিটা হয় নি। প্রায় ডাবল টাকা দিয়ে অন্যজন নিয়ে নিয়েছে।"

আমি "ঠিক আছে" বলে বন্ধুর অফিস থেকে বের হয়ে এলাম। বের হয়ে খোলা আকাশের দিকে তাকালাম। টপটপ করে আমার দুচোখের কোণ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগলো।

মেয়েটির বাবা বললেন, "দেখতে তো তেমন একটা সুবিধার নয়, চাকরিটা হলে ওর ভালো একটা বিয়ে দিতে পারতাম।"

আমি মাথানিচু করে তার সামনে থেকে চলে এলাম।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:৫২

বিদ্রোহী সিপাহী বলেছেন: দুর্বৃত্তায়িত রাষ্ট্রের চিত্রটি খুবই ভয়ংকর
(মাথা নিচু করে চোখের জল ফেলা নয় ভাই চাই কয়লার আগুনের মত অঙ্গার চোখের জ্বলন্ত চাহনি

২১ শে মার্চ, ২০১৬ ভোর ৪:০৪

হাবিবুর রহমান জুয়েল বলেছেন: ঠিক বলেছেন দাদা ধন্যবাদ

২| ২০ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৫:০৩

ফ্রিটক বলেছেন: ভাই সহমত। খুব কষ্ট লাগে বর্তমান অবস্থা যা চলছে। এর শেষ কোথায়,?

২১ শে মার্চ, ২০১৬ ভোর ৪:০৪

হাবিবুর রহমান জুয়েল বলেছেন: এর শেষ আমাদের জানা নেই সত্যি

৩| ২০ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৫:৪৩

বটপাকুড় বলেছেন: যতদিন পর্যন্ত সাধারণ মানুষ তাদের নিজের ভালো না বুঝতে শিখবে, ততো দিন এই দুষ্ট চক্র চলতে থাকবে। আমরা নিজেরা চাকরির কথা না চিন্তা করে, দেশের ব্যবসা করার কথা ভাবি, নিজে ছোট খাট ব্যবসা শুরু করি, চাকরি না নিয়ে বরং অন্যকে চাকরি দেয়ার উৎস সৃষ্টি করি। আজ থেকে ১২ বছর আগে, দেশে দেখতাম, ঢাবি এর ৪ ছাত্র মিলে নীলক্ষেতের গাউসুল আজম মার্কেটে সাইবার ক্যাফে ব্যবসা শুরু করে। তারপর আস্তে আস্তে উপরে উঠে আসে।
আপনি কি জানেন, দেশের এখন প্রধান কম্পুটার সোর্স এক সময় চার বন্ধু মিলে শুরু করেছিল। এলিফ্যান্ট রোডের আল্পানা প্লাজাতে এক অন্ধকারচ্ছন্ন রুমে বসে থাকতো। আমি বিদেশে চলে আসার আগেই শুনেছি তারা ময়মনসিং এর ভালুকার কাছে কম্পোজীট টেক্সটাইল মিল কিনেছে।
বলেন, নিজে বসে না থেকে না আগালে, আপনি বরং হতাশ হবেন। পৃথিবীতে এমন কোন সমস্যা সৃষ্টি হয় না, যার কোন সমাধান নেই

২১ শে মার্চ, ২০১৬ ভোর ৪:০৬

হাবিবুর রহমান জুয়েল বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মূল্যবাণ মন্তব্যের জন্য। আপনি যথার্থ বলেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.