নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হাবিবুর রহমান জুয়েল

হাবিবুর রহমান জুয়েল

জীবন নদীর বাঁকে বাঁকে দুঃখ কতো লুকিয়ে থাকে কেউ তো জানে না....

হাবিবুর রহমান জুয়েল › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইয়াসমিন থেকে সোহাগী

২৬ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১:৩২

১৯৯৫ সালের ২৩ আগস্ট। আমার বয়স তখন প্রায় চোদ্দ বছর। আমার বয়সীই এক কিশোরী সেদিন ঢাকা থেকে দিনাজপুরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল। ঢাকা থেকে সরাসরি দিনাজপুরের বাসের টিকিট না পেয়ে ঠাকুরগাঁওগামী একটি নৈশকোচে যাত্রা শুরু করে। পরদিন ভোরে ওই বাসের সুপারভাইজার তাকে দিনাজপুরের দশমাইল মোড়ে নামিয়ে দেন। দশমাইলে যখন নামে তখন ঘড়িতে রাত সাড়ে ৩টা। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। যাত্রাপথের সংযোগস্থল বলে সেখানকার কিছু দোকান সারারাত খোলা থাকে। গাড়ির সুপারভাইজার একজন চা দোকানদারকে অনুরোধ করেন তাকে দিনাজপুরের কোন বাসে তুলে দেয়ার জন্য।

কিছুক্ষণ পর সেখানে কোতোয়ালি থানা পুলিশের একটি টহল দল আসে। তারা কিশোরীকে দিনাজপুর শহরের রামনগরে তার মায়ের কাছে পৌঁছে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের পিকআপে তুলে নেয়। পথিমধ্যে এই ভালো মানুষী চেহারার পশুগুলোর আসলরূপ উন্মোচিত হয়। তারা দশমাইলের আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাকে নিয়ে যায়। সেখানে উপর্যুপরি ধর্ষণ শেষে হত্যা করে কিশোরীটিকে।

তারপর দিনাজপুর শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে ব্র্যাক অফিসের পাশের রাস্তায় তার মরদেহ ফেলে রেখে যায়।

সেই কিশোরীর নাম ইয়াসমিন। এখনকার অনেকেই হয়তো তার নাম শুনে নি।

ভোরে ইয়াসমিনকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে জনগণ। কিশোরী ইয়াসমিনের কথা জানাজানি হলে হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ জনতা শহরে প্রতিবাদ মিছিল করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। কিন্তু তৎকালীন পুলিশ প্রশাসন ঘটনাটি সম্পূর্ণরূপে ধামাচাপা দিতে যেয়ে উল্টো কিশোরী ইয়াসমিনকে 'পতিতা' হিসেবে প্রচারণা চালায়।

এ কথায় বিক্ষোভে ফেটে পড়ে দিনাজপুরসহ সর্বস্তরের মানুষ। হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ জনতা কোতোয়ালি থানার প্রাচীর ভেঙ্গে ফেলে। ২৭ আগস্ট বিক্ষুব্ধ জনতা রাস্তায় নেমে এসে সব প্রশাসনিক কর্মকর্তার বদলি এবং দোষী পুলিশ কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবিতে জনতার বিশাল মিছিল বের করে। এই বিশাল মিছিল দেখে পুলিশ মারমুখী হয়ে শহরের বিভিন্ন স্থানে নির্বিচারে গুলি চালায়।

১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট রংপুর বিশেষ আদালতে ইয়াসমিন হত্যা মামলার সাক্ষ্যপ্রমাণ শেষে দোষী প্রমাণিত ৩ পুলিশ সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বরে রংপুর জেলা কারাগারের অভ্যন্তরে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় নরপশুদের।

সেই সময় ফেসবুক ছিল না। ব্লগ ছিল না। প্রতি সেকেন্ড এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়তো না। তবুও পেরেছিল দিনাজপুরের মানুষ। ইয়াসমিনের জন্য জীবন দিয়েছিল তারা। এক হতদরিদ্র গৃহকর্মী কিশোরী ইয়াসমিনের জন্য নিহতের খাতায় নাম ওঠে সামু, কাদের ও সিরাজসহ নাম না জানা ৭ জনের এবং আহত হয় প্রায় তিন শতাধিক মানুষ।

জানিনা, আমাদের বোন সোহাগীর জন্য আমরা কী করতে পারবো! রাষ্ট্রই বা এ হত্যাকাণ্ডের বিচার পেতে কতটুকু সহযোগিতা করবে আমাদের। কিংবা আদৌ করবে কি-না। আমরা কিছুই জানি না।



মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৩:৫৩

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: কুমিল্লা কি পারবে দিনাজপুর হতে?? প্রতিবাদের ভিত্তিতো দিনাজপুরের মতই কুমিল্লায় হওয়া উচিৎ।।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.