নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হাবিবুর রহমান জুয়েল

হাবিবুর রহমান জুয়েল

জীবন নদীর বাঁকে বাঁকে দুঃখ কতো লুকিয়ে থাকে কেউ তো জানে না....

হাবিবুর রহমান জুয়েল › বিস্তারিত পোস্টঃ

বড় ঘৃণা হয়, বড় ঘৃণা হয়, বড় ঘৃণা.....

০৮ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:৪১

বেশ কয়েক বছর ধরে আমাদের গলিটায় একজন লোককে রিক্সা চালাতে দেখেছি আমি। গরম কালের বেশির ভাগ সময়ই তিনি উদোম গায়ে রিক্সা চালাতেন। গায়ের মলিন ফতুয়াটি খুলে কাঁধে ঝুলিয়ে রাখতেন। দেখে মনে হতো, পিঠের সাথে পেট লেগে গেছে যেন। প্যাডেলে চাপ মারার সময় পাঁজরের হাড়গুলো ভেসে উঠতো তার। পিঠের মেরুদণ্ডের হাড়টা কুঁজো হয়ে যেত।

একদিন জিজ্ঞেস করলাম, "চাচা আপনার কি ছেলেপুলে নেই? এই বয়সে এই শরীর নিয়ে রিক্সা চালাচ্ছেন?"

তিনি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, "আছে বাবা, আছে। দুইডা পোলা আছে। একটা মাইয়া। দুই পোলাই শাদি কইরা আলাদা সংসার পাতিছে। বউ বাচ্চা লই থাকে। আমি মাইয়া আর তোমার চাচিরে লইয়া থাকি।"

"ছেলেরা আপনাকে দেখে না? টাকা পয়সা কিছু দেয় না?"

বৃদ্ধ দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। তারপর বললেন, "পোলারা যা ইনকাম করে তাতে তাগোরই হয় না। আমারে কি দিবো? দোয়া করি তারা বউ বাচ্চা লই ভালো থাকুক। আমি নিজেরটা নিজেই চালাতি পারি। তিনটা মাত্র পেট, চইলা যায় কুনুমতে।"

বৃদ্ধের পরনের লুঙ্গিটার দিকে নজর গেল আমার। মলিন কটকটে সবুজ রঙের খাটো একটি লুঙ্গি। বললাম, "চাচা আমি আপনাকে দুইটা লুঙ্গি কিনে দিতে চাই, নিজ হাতে। আর একটা পাঞ্জাবিও দিবো। ঐ মার্কেটটার সামনে একটু রাইখেন।"

আমি তখন ছাত্র । অনার্স থার্ড ইয়ার চলছে। খরচের পয়সা থেকে বাঁচানো কিছু টাকা ছিল হাতে।

বৃদ্ধ আস্তে করে রিক্সাটা থামালেন। তারপর আমার দিকে বেশ কিছু সময় অদ্ভুত চাহনিতে তাকিয়ে থাকলেন। বললেন, "বাবাজি আমার পোলারাও কোনদিন আমারে এমন কথা কয় নাই। আমি সারাজীবন রিক্সা চালাইয়া তাগোরে খাওয়াইছি। বড় করছি। চৈত মাসের রইদ, মাঘ মাসের শীত, ভাদ্র মাইস্যা বিষ্টি- কোনদিন ঘরে থাকি নাই। রাস্তায় রিক্সা চালাইছি। চাইল কিইনা নিছি, তরকারি নিছি। তারপর পোলাগোরে খাওয়াইছি। তারা কোনদিন এমন কথা কয় নাই বাবাজি।"

মার্কেটের সামনে দাঁড়িয়ে দুইটা শশা কিনে লবণ মেখে একসাথে খেলাম দুজন। তারপর মার্কেটে ঢুকে একজোড়া নতুন লুঙি আর একটা পাঞ্জাবি কিনে এনে বৃদ্ধের হাতে দিলাম। নতুন লুঙ্গি আর পাঞ্জাবি হাতে পেয়ে বৃদ্ধ কেঁদে ফেললেন। ভাবলাম, কতো অল্পতেই সুখি কিছু মানুষ! যেই সুখে চোখে জল নেমে আসে তাদের।

বৃদ্ধের ছেলে দুটির জন্য আমার করুণা হলো। তাদের বাবার এই আনন্দাশ্রু দেখার সৌভাগ্য হয়নি তাদের।

একদিন জানতে পারলাম, এর মাস কতেক পরই বৃদ্ধ মারা গেছেন। অনেকদিন তাকে দেখতে না পেয়ে স্ট্যান্ড এর কয়েকজন রিক্সাঅলাকে জিজ্ঞেস করলে, তারা জানালেন, বৃদ্ধ মারা গেছেন। তার স্ত্রী ও কণ্যা কোথায় গেছে কেউ জানে না।

আমি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম।

বৃদ্ধের ছেলেরা মূর্খ আর অভাবী ছিল। কিন্তু আমাদের এই সমাজের অনেক শিক্ষিত সক্ষম সন্তানদের পিতা-মাতাকেও আমরা জীবনের শেষবেলায় বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নিতে দেখি। দেখি, বাবা-মা একসময় তাদের কাছে হয়ে ওঠেন বুড়া-বুড়ি। হয়ে ওঠেন অনেক ভারী বোঁঝা। যেই ভারী বোঁঝাটি মাথা থেকে নামাতে পারলেই যেন, চিরদিনের মতো বেঁচে যান তারা।

সেসব সন্তানদের জন্য আমার করুণ হয় না। বড় ঘৃণা হয়, বড় ঘৃণা হয়, বড় ঘৃণা.....

নিচে একজন বৃদ্ধ বাবার ছবি, এই গরমে কাজের ফাঁকে যিনি মাথা ঘুরে পড়ে যান, আরেকজন বৃদ্ধ বাবা তার মাথায় পানি ঢালছেন, ছবিটি অনেক কিছু বলছে আমাদের, কিন্তু আমরা কি তা শুনতে পাচ্ছি???

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:৪৭

নকীব কম্পিউটার বলেছেন: আবেগাপ্লুত হলেম।

২| ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:৪৮

হন্টক হিমু বলেছেন: শুনলেও বুঝতে পারিনা ভাই। ভালো লিখেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.