নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন বাঙ্গালি। বাংলা আমার ভাষা, নিভৃত আবাস ও অহংকার। বিঃ দ্রঃ- ব্লগে ছন্দ নামে দ্বন্দ্ব নাই।

কবি হাফেজ আহমেদ

অসাধারণ মানুষগুলো সাধারণ হয়, অতিসাধারণ মানুষগুলো মানুষ হ্য়, মানুষ হতে হলে সাধারণ হতে হয়। হাফেজ আহমেদ

কবি হাফেজ আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন দিনমজুর পিতার হোম কোয়ারেন্টিন। (ছোট গল্প)

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ রাত ৩:১৫

ফাঁকা শহরের অলিগলি আজকাল ঝিমিয়ে পড়েছে। চারদিকে সুনসান নীরবতা। থমকে গেছে পৃথিবী থমকে গেছে জনপদ। কোথাও নেই কোন সরব হাঙামা। এমন শান্ত শহর আর কখনো দেখেনি হারুন। সে আজ সরকারের নির্দেশ একটুও অমান্য করেনি। মহল্লার আট দশজন সুখী মানুষের মত আরাম আয়েশে ঘরে বসে সময় কাটানোর স্বপ্ন লালন করেই ঊনিশ বছর আগে রিক্সার পেন্ডেলে হাত দিয়েছিলেন সে। কিন্তু এতবছর ধরে কত ঈদ উৎসব আর রাসের মেলা চলে গেলো ধা ধা করে তবুও সুস্থ থাকাকালীন জীবনে একদিনও কর্মবিরতি পায়নি সে। গতকাল হোম কোয়ারেন্টিনে থাকায় আজ আর সকালে পান্তা ভাতের নাস্তাও জোটেনি তাঁর। যে জীবন যুদ্ধে বাঁচে যুদ্ধে মরে সে জীবন কী আর কোনোদিন নাস্তার পরোয়া করে! কিন্তু দুই সন্তান আর স্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে আর স্থির থাকতে পারেনি সে। লুঙ্গির গিটে পনেরো টাকাই ছিলো তার শেষ সম্বল। চারদিকে দোকানপাট বন্ধ থাকায় অনেক দূর হেঁটে গিয়ে স্ত্রী সন্তানের মুখে রুটি আর পানি দিতে সক্ষম হলো সে। রাস্তায় দেখে এলো নিরীহ দিনমজুরের উপর পুলিশের লাঠিচার্জ আর সেনা টহল। করোনা আতঙ্কিত এই শহরে হারুনের মত মৃত্যুর ভয় নেই অনেক ক্ষুদার্ত দিনমজুরের। যারা দিনে এনে দিনে খায়।

হারুনের মাথায় শুধু ঘুরপাক করছে দুপুরের খাবারের চিন্তা। বড় ছেলে প্রশ্ন করে বাবা, দুপুরে কী খাবো? ঘরে বসে না খেয়ে মানুষ কি বাঁচতে পারে? কোনো উত্তর না দিয়ে চুপচাপ মাথায় গামছাটি বেঁধে নিলেন হারুন। মহামারিতে যে মৃত্যু হতে বাঁচার জন্য সরকার সবাইকে ঘরে থাকতে নির্দেশ দিলেন অথচ না খেয়ে সে মৃত্যু হতে বাঁচতেই আজ হারুন ঘর ছেড়ে রাস্তায় নেমে পড়লেন। ক্ষুদার্ত হারুনের কাছে রাস্তা হতে ঘরই এখন বেশি অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। তাই আরামের বিছানা হারাম করে জেনেশুনে পুলিশের লাঠিচার্জ খেতেই নেমে পড়লেন সে। লোক শূন্য লোকালয়ে ১ কেজি চাল আর তরকারি টাকা রোজগার করতেই বেলা ২ টা পার হয়ে গেলো। চাল আর সবজি রিক্সার হুডের নিচে রেখে ছোট একটি মাছ কেনার আশায় আরো ঘন্টাখানেক অপেক্ষা করলো সে। ছোট ছেলে রাহাত মাছ ছাড়া ভাত মুখে নেয় না। কিন্তু রাস্তায় মানুষের আনাগোনা না থাকায় ঘড়ির সেকেন্ডের কাটার সাথে তালমিলিয়ে হারুনের মুখমন্ডলে মেঘের ছায়া ঘনীভূত হচ্ছে। হঠাৎ সেনা বহর দেখে রিক্সা নিয়ে ছোট গলিতে পালাতে গেলো সে। কিন্তু নিয়তির কী নির্মম পরিহাস! ছোট গলির মুখেই ছিলো পুলিশ ফোর্স। ওরা কিছু জিজ্ঞেস না করেই এলোপাতাড়ি লাঠি চার্জ শুরু করলো তাঁর উপর। পুলিশের কেউ কেউ মাস্কের কথা জানতে চাইলেও পেটে ভাত আছে কিনা তা জানার সময় ছিলোনা কারো। লাঠিচার্জের পর দশবার কান ধরিয়ে ছেড়েছেন তাকে। তারপর রিক্সার বাঁকা হওয়া সামনের চাকাটি শূন্য করে তুলে টেনে টেনে গ্যারেজের দিকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে পা বাড়ালেন সে।

ঘরে ঢুকার আগে মাথার গামছা দিয়ে শরীর ঢেকে নিলেন হারুন। তারপর চাল ডাল তুলে দিলেন স্ত্রীর হাতে। কিন্তু কেউই জানতে চায়নি যে মাথার গামছাটি পিঠে এলো কী করে? সারাদিন উপবাস থাকায় দ্রুত খেতে বসলেন সবাই। তবে রাহাত এখনো মাছ ছাড়া ভাত খাবেনা বলে কাঁদছে। সারাদিন না খেয়ে থাকায় রাহাতের শরীরের তাপমাত্রা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। অসহায় পিতা জানালার ফাঁকে তাকিয়ে দেখলো একটি মানুষও নেই রাস্তায়। জনশূন্য এই শহরে খাঁচার বন্ধি পাখিরা আজ মুক্ত বিহঙ্গে প্রানখুলে উড়ছে দিক হতে দিগন্তে আর মানুষগুলো বন্দী খাঁচার পাখির মত ঘরে ঘরে বন্দী হয়ে আছে। মসজিদে মসজিদে মাইকিংএ ঘোষণা করা হচ্ছে যে, আগামী ১৪ দিন সবাই ঘরে থাকুন। রাস্তায় কারফিউ চলছে। ধীরে ধীরে হারুনের শরীরের তাপমাত্রাও বৃদ্ধি পেতে শুরু করলো।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ ভোর ৬:২৮

চাঁদগাজী বলেছেন:


সমসাময়িক বাংলাদেশ, গলাকাটা ক্যাপিটেলিজমের বাংলাদেশ।

২| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৯:১৩

নেওয়াজ আলি বলেছেন: এই হলো ক্ষমতাবানদের দেশ

৩| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:১৪

রাজীব নুর বলেছেন: বাস্তব গল্প।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.