![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হাজারো লেখকের ভিড়ে আমি এক ক্ষুদ্র,অতি-নগণ্য,হে প্রভু দাও-গো শক্তি,হতে পারি যেন তাদের তুল্য।
ডাক্তারের চেম্বারে বসে আছে রফিক সাহেব।মাথায়
হাজারো টেনশন ঘুরপাক খাচ্ছে।ডাক্তার টেস্ট এর
রিপোর্ট গুলো পড়ছে,কপালে চিন্তার রেখা ফুটে
উঠছে।রফিক সাহেবের আরো মনটা খারাপ হয়ে যায়
.
-আপনার সাথে কি আর কেউ আসেনি?
.
-না ডাক্তার,আমি একাই এসেছি।
.
-কিছু কথা বলার ছিল,অন্য কেউ হলে খুব ভাল হত।
.
রফিক সাহেবের ভিতরটা আবার মোচর দিয়ে উঠে।
'
-কি ডাক্তার?খারাপ কিছু?আপনি আমাকেই বলতে
পারেন,আমি সবকিছু শুনার জন্য প্রস্তুত আছি।
.
-রফিক সাহেব,আপনাকে কথা গুলো সরাসরি বলা
উচিৎ না,তারপরেও অন্য কেউ না থাকার কারনে
কথা গুলো আপনাকেই বলতে হচ্ছে।
.
-ডাক্তার,যা বলবেন প্লীজ তাড়াতাড়ি বলে ফেলুন।
.
-রফিক সাহেব,আপনার ব্রেণ টিউমার হয়েছে এবং
বর্তমানে তা খুবই নাজুক অবস্থায় পৌছে গেছে।
'
ডাক্তারের কথা শুনার পর রফিক সাহেবের মাথা
ঘুরতে লাগলো।চাঁরপাশে অন্ধকার দেখতে লাগলো।
'
রফিক সাহেব বললো...
.
-এর কি কোন প্রতিকার নেই?
.
-একমাত্র অপারেশন এর প্রতিকার,কিন্তু বর্তমানে
আপনার টিউমারের যে অবস্থা তাতে অপারেশনে
আপনার বাঁচার সম্ভাবনা মাত্র ৫%।আর এই
অপারেশনে প্রচুর টাকা প্রয়োজন।
.
রফিক সাহেব আর কিছু বললেননা,ডাক্তারের সাথে
হ্যান্ডসেক করে চেম্বার থেকে বেরিয়ে পড়লেন।আর
বাসার দিকে হাটা দিলেন।
'
.
বাইরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে,সাথে হালকা বাতাস।
সাথে ছাতা নেই,তাই বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য একটা
চায়ের দোকানে আশ্রয় নেয় রফিক সাহেব।
.
-এক কাপ চা দাওতো
'
-কি চা দিমু স্যার?রং চা না দুধ চা?
.
রফিক সাহেব পকেটে হাত দেয়,খুচরো টাকা খুব
বেশি নেই।তাই রং চা দিতে বললো।
.
রফিক সাহেবের হাতে ধুমায়িত চা,চায়ের ধুয়া গুলো
বাতাসের সাথে মিশে যাচ্ছে।রফিক সাহেব আয়েশ
করে চা-য় চুমুক দেয়।ভাবতে থাকে অনেক কিছু।
.
২৫ বছর আগে....
.
নতুন বিয়ে করেছে রফিক সাহেব,খুব সুন্দর একটা
মেয়ে।আগের দিনে আজকের মত অবস্থা ছিলনা।
বিয়ের দিন কণের মুখ দেখেছিল,এর আগে আর
দেখেনি।প্রথম দেখাতেই পছন্দ হয়ে গিয়েছিল।খুব
সুন্দর ভাবেই তাদের সংসার চলছিল।কোন কিছুর
অভাব ছিলনা তাদের।ভালবাসায় ভরপুর ছিল
তাদের দুজনের ছোট্র সংসার।
.
কিন্তু এত সুখের মাঝেও একটা ছোট্র কষ্ট তাদের
দুজনকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল।তাদের বিয়ের ৬ বছর
পূর্ণ হয়ে গেছে অথচ তাদের কোন সন্তান এখনো
তাদের মুখ আলো করেনি।অনেক ডাক্তার দেখিয়েও
এর কোন সুফল পায়নি রফিক সাহেব।
.
একদিন সকালে রফিক সাহেব অফিসে যাচ্ছেন।
অফিস বাসা থেকে খুব কাছে।তাই হেটে হেটেই
যাচ্ছিলেন।রাস্তার পাশে এক জায়গায় অনেক মানুষ
জড়ো হয়ে দাড়িয়ে আছে।দূর থেকে দেখলে মনে হবে
হয়তো তারা সার্কাস দেখছে।রফিক সাহেব নিজের
কৌতুহল মেটানোর জন্য ভিড় ঠেলে সামনে গেলেন।
.
রফিক সাহেবের ধারণা সম্পূর্ন ভুল প্রমাণিত হল।
তিনি মনে করেছিলেন হয়তো সার্কাস বা ম্যাজীক
দেখানো হচ্ছে।কিন্তু না,এখানে সাদা কাপড় জড়ানো
একটি বাচ্চা শুয়ে আছে।রফিক সাহেবের মনটা
মোচর দিয়ে উঠে।কষ্টে তার বুক থেকে আহ শব্দ
বেরিয়ে আসে।যারা এমন কাজ করতে পারে তারা
মানুষ নয়।মানুষ নামের অমানুষ।
.
রফিক সাহেব সেখান থেকে বাচ্চাটাকে তুলে বাড়িতে
নিয়ে আসে।রফিক সাহেবের স্ত্রী বাচ্চাটাকে পেয়ে
অনেক খুশি।বাচ্চাটার নাম রাখে আনন্দ।ছেলেটাকে
কুড়িয়ে আনার তাদের সংসার আনন্দে ভরে উঠছিল
.
কিন্তু তাদের খুশি বেশিদিন স্থায়ী হলনা,আনন্দের
বয়স যখন ৪ বছর,হঠাত একদিন রাত্রে প্রেসার উঠে
মারা যায় রফিক সাহেবের স্ত্রী।ভেঙে পড়েন রফিক
সাহেব।কষ্টে চুরমার হয়ে যায় তার মন।
.
কিন্তু ছেলের দিকে চেয়ে তার ভবিষ্যতের চিন্তা করে
নিজেকে সামলে নেন রফিক সাহেব।রফিক সাহেবের
স্ত্রীর ইচ্ছে ছিল ছেলেকে অনেক বড় ডাক্তার
বানাবেন।স্ত্রীর ইচ্ছেকে পূরণ করার জন্য কাজে
লেগে যান রফিক সাহেব।ছেলেকে ভাল করে পড়াতে
শুরুকরেন রফিক সাহেব।তার ছেলে অনেক মেধাবী।
.
বৃষ্টি থেমে গেছে,রফিক সাহেব চায়ের বিল মিটিয়ে
হাটতে শুরু করেন বাসার দিকে।বাসায় আসা মাত্র
আনন্দ জড়িয়ে ধরে তার বাবাকে।
.
-কি ব্যাপার?আজ তোর এত খুশি কেন?
.
-বাবা,তোমার স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে।
.
-তাই নাকি?কোন স্বপ্নের কথা বলছিস?
.
-বাবা,আমি মেডিকেলে চান্স পেয়েছি।তোমার ছেলে
ডাক্তার হবার জন্য এক ধাপ এগিয়ে গেছে।
'
রফিক সাহেবের মনটা আনন্দে নেচে উঠে।পরক্ষনেই
সেটা বিষাধে রূপ নেয়।
.
-বাবা তুমি এই সংবাদে খুশি হওনি?
'
রফিক সাহেব বিষাধ লুকিয়ে মুখে হাসিয়ে ফুটিয়ে
বলেন,আমার ছেলে ডাক্তার হবে,আমি খুশি না হলে
আর কে খুশি হবে?আজ আমি অনেক খুশি।এই
কথা বলে রফিক সাহেব তার ছেলেকে জড়িয়ে ধরেন
.
গভীর রাত,এক খাটে বাবা আর ছেলে শুয়ে আছেন।
আনন্দ ঘুমুচ্ছে।আর রফিক সাহেবের ঘুম আসছেনা।
অনেক চেষ্টা করেও ঘুমুতে পারছেননা।এই মুহুর্তে
কি করবেন ঠিক বুঝে উঠতে পারছেননা তিনি।
.
রফিক সাহেব বিছানা থেকে নেমে ড্রয়ার থেকে টেস্ট
এর রিপোর্ট গুলো বের করলেন।আর ভাবতে শুরু
করলেন।আমার অপারেশন করলে বাঁচার চান্স মাত্র
৫%।আর অপারেশন করতে অনেক টাকা দরকার।
.
এদিকে ছেলেকে মেডিকেলে ভর্তি করাতে হবে।
এখানেও ভর্তি করতে অনেক টাকার দরকার।এখন
নিজের অপারেশন করবেন নাকি ছেলেকে ভর্তি
করাবেন?গভীর ভাবনায় হারিয়ে যান রফিক সাহেব।
.
অবশেষে ছেলেই জয়ী হল,ছেলের জন্য নিজের
জীবনকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিলেন রফিক সাহেব।
টেস্ট এর রিপোর্ট গুলো ছিড়ে টুকড়ো টুকড়ো করে
বাতাসের সাথে উড়িয়ে দিলেন।
.
রফিক সাহেব বিছানায় চলে এলেন,আনন্দ এখনো
ঘুমুচ্ছে।সে ঘূর্ণাক্ষরেও জানতে পারলনা তাকে
ডাক্তার বানানোর জন্য নিজের জীবনকে বিসর্জন
দিলেন তার বাবা।
.
এখন আর কোন টেনশন নেই রফিক সাহেবের।
নিশ্চিন্তে ঘুমের দেশে হারিয়ে গেলেন তিনি।একদিন
হয়তো এমন ভাবেই মৃত্যুর দেশে চলে যাবেন সবকিছু
মহানির্বাণ করে,মানে সবকিছুর বন্ধন ত্যাগ করে।
১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৪৮
হাঁফীজ আনোয়ার হোসাইন বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৪৮
কানিজ রিনা বলেছেন: এমন বাবা কয়জনই বা হয়। এক অসাধারন বাবার
কাহিনী, বুকের ভিতর হুম হুম করে উঠল। আমার
ছেলে মেয়ের বাবা বেঁচে থেকেও নাই। বাবার উচ্ছৃংল
জীবন ওরা মেনে নিতে পারে নাই এটাই ওদের দোশ।
১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৬
হাঁফীজ আনোয়ার হোসাইন বলেছেন: জন্ম-তো সব সব বাবাই দেয়,আদর্শ বাবা কজন হতে পারে?ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৩৩
প্রামানিক বলেছেন: সুন্দর গল্প। মানুষ একসময় এভাবেই চলে যায়।