নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অতি সাধারণ এক মহা-মানব

হাঁফীজ আনোয়ার হোসাইন

হাজারো লেখকের ভিড়ে আমি এক ক্ষুদ্র,অতি-নগণ্য,হে প্রভু দাও-গো শক্তি,হতে পারি যেন তাদের তুল্য।

হাঁফীজ আনোয়ার হোসাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

উড়ো চিঠি

১৫ ই জুন, ২০১৭ রাত ১০:১৫

দুপুরের তীব্র রোঁদে একটি সবুজ পাঞ্জাবী পড়ে
রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে শুভ্র।উদ্দেশ্য একটা চাকরী।
ঢাকা শহরে চাকরী পাওয়া মামার হাতের মোয়া
নয় এই কয়েকদিনেই বুঝে গেছে শুভ্র।
.
শুভ্রর পরিচিত বলতে কেউ নেই,একদম যে নেই
তাও না।গলির শেষ মাথায় বিল্লাল মিয়ার চায়ের
দোকানের লোকটা খুব পরিচিত।সারাদিন চাকরীর
খোজ করার পর যখন সন্ধ্যা নেমে আসে তখন শুভ্র
আস্তে আস্তে ওই দোকানটায় হেটে গিয়ে এক গ্লাস
পানি খায়।বিল্লাল মিয়া প্রতিদিন জিজ্ঞেস করে
ভাইজান কিছু একটা উপায় হইলো?উত্তরে শুভ্র তার
দিকে তাকিয়ে একটা মলিন হাসি দেয়।যার অর্থ
দাড়ায় আজকেও অসফল।তারপর শুভ্র একটা
বনরুটি আর কয়েকটা সিগেরেট নিয়ে মেসের
দিকে হাটা দেয়।
.
মেসের সামনে আসতেই ডাস্টবিনের পচাঁ দুর্গন্ধে
তার দম বন্ধ হয়ে আসে,তারপরেও শুভ্র সেখানে
কিছুক্ষন দাড়িয়ে থাকে।এই কয়েকদিনে ডাস্টবিনে
পড়ে থাকা একটা কুকুরের সাথে তার খুব বন্ধুত্ব
হয়ে গেছে।কুকুরটার ও কোন সঙ্গী নেই।
.
প্রতিদিন সন্ধ্যার সময় কুকুরটার সাথে ওর দুঃখের
কথা শেয়ার করে আরো শেয়ার করে ওর ভালবাসা
ওর প্রিয়তমা নুপুরের কথা।যার জন্য সে ঢাকায়
এসে হন্যে হয়ে চাকরী খুজতে খুজতে পায়ের তলার
মাটি সরিয়ে ফেলেছে।
.
খুব স্বপ্ন ছিল নুপুরকে নিয়ে ভালবেসে সুখের ঘর
বাধার।কিন্তু বাস্তবতা তার পুরো উল্টো।শুভ্র সবে
মাত্র অনার্সে ভর্তি হয়েছে,এখন তার পড়া শুনা
করার সময়,কিন্তু ঐ দিকে নুপুরের বিয়ের আয়োজন
পুরোদমে চলছে।যে কোন সময় বিয়ে হয়ে যেতে পারে
তার ভালবাসা নুপুরের।কিন্তু শুভ্র হেরে যাওয়ার পাত্র
নয়।তাই সে একটা চাকরীর জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছে
ভালবাসা বিহীন এই কংক্রিটের শহরে।
.
সন্ধ্যা নেমে এসেছে।মসজীদ থেকে মুয়াজ্জীনের কন্ঠে
ভেসে আসছে আজানের সুমধুর সুর।শুভ্র আস্তে আস্তে
মেসের দিকে পা বাড়ায়।মাথায় হাজারো চিন্তা ঘুরপাক
খাচ্ছে।রুমে এসে শরীরটা এলিয়ে দেয় বিছানায়।
.
একটু পরেই দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ পেয়ে অনিচ্ছা
স্বত্তেও দরজার দিকে এগিয়ে যায় সে।দরজা খুলে
দেখে পাশের রুমের আফজাল ভাই তার সামনে
দাড়িয়ে আছে।হাতে দুটো চিঠির খাম।আফজাল ভাই
চিঠির খাম দুটো শুভ্রর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে
আজকে আপনার নামে এই দুটো চিঠি এসেছে বলে
তার হাতে ধরিয়ে দেয়।
.
শুভ্র ছাদের এককোণে দাড়িয়ে আছে।হাতে জলন্ত
সিগেরেট।সিগেরেটের ধূয়া তার নাকে মুখে প্রবেশ
করছে।হাতে আফজাল সাহেবের দেওয়া দুটো
চিঠি।একটা চিঠির খামের ভিতর তার চাকরীর
এপয়নমেন্টলেটার।কয়েকদিন আগেই সে ইন্টারভিউ
দিয়েছিল।চাকরীটা যে হয়ে যাবে সে কল্পনাও করতে
পারেনি।আরেক হাতে নুপুরের বিয়ের চিঠি।
কালকে সন্ধায়ওর বিয়ে।চিঠিতে লেখা নুপুরের
বর একটা মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে জব করে।
শেষে লিখা আমি তো তোমার জন্য অনেক অপেক্ষা
করলাম আর পারতেছিনা,আমাকে ক্ষমা করে দিও।
ভাল থেকো।
.
ঢাকা শহর রাতের সাজে সজ্জিত হয়েছে একটু
আগেই।সারাদিন ছাদের এই পাশটায় কয়েকটি
কাক খাবারের আশায় কা কা করে।তারাও হয়তো
নিজ নিড়ে ফিরে গেছে।শুভ্র দৃঢ় পায়ে ছাদের
রেলিংয়ের দিকে হেটে যায়।
.
শুভ্র ছাদের রেলিংয়ে দাড়িয়ে একহাতে সিগেরেট
টানছে আরেক হাতে চিঠির খাঁম দুটো ছিড়ে টুকরো
টুকরো করে শুন্যে উড়িয়ে দেয়।চিঠি গুলো উড়ছে
বাতাসের সাথে পাল্টা দিয়ে।শুভ্রর বুকেরর বাম পাশ
থেকে একটা আহ্ শব্দ বেড়িয়ে আসে।সেই সাথে
দু-চোঁখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরে।শুভ্র বুঝতে পারেনা
জল গুলো চাকরী পাওয়ার আনন্দের নাকি নুপুরকে
চিরতরে হারানোর বেদনার।
.
শুভ্র এখনো তাকিয়ে আছে শুন্যে উড়িয়ে দেওয়া
চিঠি গুলোর দিকে।একটা সময় খেয়াল করলো
চিঠি গুলো একত্র হয়ে নুপুরের অবয়ব ধারন করে
তার দিকে তাকিয়ে কান্না করছে,আর ওকে ডাকছে।
নুপুরকে দেখে শুভ্র আর কিছু ভাবতে পারেনা।
ওর ভাবনা জুড়ে ভর করে নুপুরকে যে কোন ভাবেই
ফিরিয়ে আনতে হবে।ওকে ছাড়া ওর জীবন মূল্যহীন।
ওকে সে কোন ভাবেই মাটিতে পড়তে দিবেনা।শুভ্র
আস্তে করে তার পা দুটো শুন্যে ছেড়ে দেয়।নুপুরকে
কোন ভাবেই মাটিতে পড়তে দিবেনা।শুভ্রর জীবন
তো নুপুর।জীবন ছাড়া কেউ বেঁচে থাকতে পারে??

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.