![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম আদালত হলো মানুষের বিবেক।
বাদশাহ যুলকারনাইন ইয়াজুয মাজুযকে আটক করার জন্য এবং তাদের উৎপাত থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষার জন্য লৌহ-তামার সুউচ্চ প্রাচীর নির্মাণ করেছিলেন। পবিত্র কুরআনের ভাষায়, চলতে চলতে যুলকারনাইন যখন দুই পর্বত-প্রাচীরের মধ্যবর্তী স্থলে পৌঁছল তখন সেখানে সে এক সম্প্রদায়কে দেখতে পেল যারা কোনো কথা বুঝবার মত ছিল না। তারা বলল, হে যুলকারনাইন ইয়াজুয মাজুয পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করছে। আমরা আপনাকে খরচ দিবো যে, আপনি আমাদের এবং তাদের মাঝে এক প্রাচীর নির্মাণ করে দিবেন? সে বলল, আমার প্রতিপালক আমাকে যে ক্ষমতা দিয়েছেন তাই উৎকৃষ্ট। সুতরাং তোমরা আমাকে শ্রম দ্বারা সাহায্য করো। আমি তোমাদের ও তাদের মধ্যস্থলে এক মযবুত প্রাচীর নির্মাণ করে দিবো। তোমরা আমার নিকট লৌহপিণ্ডসমূহ আনয়ন করো। অতঃপর মর্ধবর্তী ফাঁকা স্থান পূর্ণ হয়ে যখন লৌহস্তুপ দুই পর্বতের সমান হলো তখন সে বলল, তোমরা হাঁপরে দম দিতে থাক। যখন তা আগুনের মত উত্তপ্ত হলো তখন সে বলল, তোমরা গলিত তাম্র আনয়ন করো। আমি তা এর উপর ঢেলে দেই । এরপর ইয়াজুয মাজুয এ প্রাচীর অতিক্রম করতে পারল না এবং ভেদও করতে সক্ষম হলো না। যুলকারনাইন বলল, এটা আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ। যখন আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হবে তখন তিনি তা চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিবেন। এবং আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি সত্য। সূরা কাহফ ৯৩-৯৮।
যুলকারনাইনের মহাপ্রাচীর সম্বন্ধে পবিত্র কুরআনে এতটুকুই বর্ণিত হয়েছে। কুরআনে বর্ণিত এ ঘটনা সম্বন্ধে সামান্যতম সংশয়ের অবকাশ নেই। কিন্তু এ প্রাচীরটি কোন দেশে এবং কোন দুই পাহাড়ের মাঝে অবস্থিত এবং তার দৈর্ঘ-প্রস্থ ও উচ্চতা-পুরত্ব কতটুকু- এসব ব্যাপারে কুরআন ও হাদীসে অকাট্য এবং সুনিশ্চিত কোনো প্রমাণসূত্র নেই। তবে এব্যাপারে ঐতিহাসিকদের কিছু তথ্য এবং গবেষকদের কিছু বিবরণ পাওয়া যায়। তা থেকে কেবল কিছুটা ধারণা লাভ করা যায়। কিন্তু সুনিশ্চিত ও অকাট্য কোনো তথ্যউপাত্ত আহরিত হয় না। নিম্নে যুলকারনাইনের প্রাচীর সম্বন্ধে নানা সূত্র থেকে কিছু তথ্য পরিবেশিত হলো :
১। যুলকারনাইনের প্রাচীরের অবস্থান সম্বন্ধে তাফসীর গ্রন্থ মাফাতীহুল গাইব তথা তাফসীরে রাযীতে কয়েকটি উক্তি উল্লেখ করা হয়েছে। ১. এ প্রাচীরটি উত্তর মেরুতে অবস্থিত। ২. আজারবাইজান এবং আর্মেনিয়া এ দুটি রাষ্ট্রের মাঝে অবস্থিত। ৩. তুরস্ক থেকে পূর্ব দিকে অবস্থিত। প্রাচীরের দৈর্ঘ সম্বন্ধে প্রশিদ্ধ কুরআন ব্যাখ্যাতা ইমাম যামাখশারী বলেন, বলা হয় দুটি পর্বতের মধ্যবর্তী দূরত্ব হলো ১০০ ফারসাখ তথা ২৬০০ কিলোমিটার। আর প্রাচীরের পুরত্ব সম্বন্ধে বলা হয় ৫০ গজ। আর তার উচ্চতা সম্বন্ধে বলা হয় ১০০ গজ।
২। আব্বাসী খলীফা ওয়াসিক বিল্লাহ কর্তৃক যুলকারনাইনের প্রাচীর অনুসন্ধানে প্রেরিত বাহিনী প্রধান সালাম তারজুমান এর বিবরণ মতে প্রাচীরের দৈর্ঘ ছিল ২০০ গজ। এবং তার উচ্চতা ছিল দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত। তার বিবরণে প্রাচীরের গঠন শৈলির নানা তথ্য উপস্থাপিত হয়েছে।
৩। জর্ডানের গবেষক আব্দুল্লাহ শুরবাজী এ বিষয়ে একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। গ্রন্থটির আরবী নাম
রিহলাতু যিল কারনাইনি ইলাল মাশরিক (ইলা আরযি ইয়াজুয ওয়া মাজুয ওয়া ইকতিশাফুর রদম)। অর্থাৎ পূর্বদিগন্তে ইয়াজু মাজুযের দেশে যুলকারনাইনের অভিযাত্রা এবং তার প্রাচীর উদঘাটন। আর ইংলিশ নাম হলো, journey of thulkarnain (to the land of gog and magog)। তিনি তাতে
সালাম তারজুমানির বিবরণ ও সে বিবরণের মানচিত্র এবং বর্তমান গুগল আর্থ ও ভূগোল বিজ্ঞানের আলোকে মোটামোটি নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করে দেখিয়েছেন, যুলকারনাইনের প্রাচীর বর্তমান মধ্য এশিয়ার পশ্চিম কিরগিজিস্তান এবং পূর্ব উজবেকিস্তানে অবস্থিত। এবং তিনি এও প্রমাণ করে দেখিয়েছেন, যুলকারনাইনের প্রাচীরের উচ্চতা ২৬০ মিটার। অর্থাৎ প্রায় দুবাইস্থ বুর্জ খলীফার এক তৃতীয়াংশ উচ্চতার সমান।
৪। মুহাম্মদ মুহাম্মদ নামক জনৈক আরব গবেষকের মতে বাদশাহ যুলকারনাইনের প্রাচীর কাস্পিয়ান সাগর এবং কৃষ্ণ সাগরের মাঝে অবস্থিত।
৫। কাস্পিয়ান সাগর উপকূলে একটি প্রাচীর রয়েছে। একদল ইতিহাসবিদের মতে এ প্রাচীর তৈরি করেছিলেন বাদশাহ যুলকারনাইন বা ইসকান্দার বা আলেকজান্ডার। এ প্রাচীরটি তৈরি করতে লোহা ও তামা ব্যবহৃত হয়েছে। এ প্রাচীরের উচ্চতা ২০ মিটার। আর এর পুরত্ব ৩ মিটার।
তথ্যসূত্র : মাফাতীহুল গাইব ২১ /১৪৪, তাফসীরে কাশশাফ ৪/৫১, আললুবাব ফি উলূমিল কিতাব ১২/৫৬৭, রিহলাতু যিল কারনাইনি ইলাল মাশরিক (ইলা আরযি ইয়াজুয ওয়া মাজুয ওয়া ইকতিশাফুর রদম), আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া ৭/১২৫, তারীখুল ইসলাম লিল ইমাম যাহাবী ৪/৩৪০, https://www.youtube.com/watch?v=KGmSsZbIJK0
©somewhere in net ltd.