![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম আদালত হলো মানুষের বিবেক।
‘তোমার প্রতিপালকের নির্দেশ, যদি তাঁদের কেউ অথবা উভয়ই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয় তবে তাদের উহ শব্দটিও বল না এবং তাদের সাথে ধমকের সুরে কথা বল না। তাদের সাথে শিষ্টাচারপূর্ণ বিনম্র ভাষায় কথা বলো। তাদের সামনে ভালবাসার সাথে নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বলো হে আমার প্রতিপালক ! যেভাবে তাঁরা শৈশবে আমাকে লালন পালন করেছে তেমনি তাঁদের প্রতি দয়ার আচরণ করো।’ সূরা বানী ইসরাঈল ২৪-২৫
জাহিমা সুলামী রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি যুদ্ধে যেতে চাই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন ‘বাড়িতে কি তোমার মা আছে ? জাহিমা রা. বললেন হ্যাঁ আছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যাও বাড়িতে গিয়ে তোমার মায়ের সেবা করো। কারণ তাঁর পদ তলে রয়েছে তোমার বেহেস্ত।’ সুনানুন নাসায়ী আলমুজতাবা ৩/৩০৯/৩১০৪
মা পৃথিবীর একটি শ্রেষ্ঠ উপহার। এযাবৎ পৃথিবীতে যত রকমের সম্বোধন সৃষ্টি হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ মধুর মম্বোধন হল মা। সবুজ এ পৃথিবীতে মায়ের কোন তুলনা হয় না। সবার জীবনের সর্ব শ্রেষ্ঠ সম্পদ হল মা।
পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যস্ত মানুষ হতে শুরু করে পরিবারের নির্দয় উদাসীন মানুষটিও মায়ের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠে। মা শব্দটি খুব ছোট হলেও এর উচ্চারণে রয়েছে স্বর্গীয় সুধা।
মা ! আহ্বানটি পৃথিবীর সকল আহ্বানের চেয়ে শ্রেষ্ঠ আহ্বান। সন্তানের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার মধ্যেই যিনি আনন্দ পান তিনি হলেন মা। মায়ের কাছেই সন্তান নিরাপদ। মায়ের কাছে সন্তানই সব। মাকে নিয়ে যত বেশিই বলা হবে ততই কম হবে।
এডগার অ্যালেন বো বলেন, স্বর্গের যত সব শব্দ নৈবদ্য বেশি যে শব্দটিতে তা-ই মা।
কবি রুডিয়ার্ড কিপলিং তার ‘মা ও আমার মা’ কবিতায় লিখেন,
‘যদি পাহাড় চূড়ায় আমার মৃত্যু হয়, আমাকে ঘিরে থাকবে তোমার দীর্ঘশ্বাস
যদি সাগর তলায় আমার মৃত্যু হয়, আমি জানি মা গড়িয়ে আসা এ পানি অশ্রু তোমার।’
অলিভার ওয়েন্ডেল হোমস লিখেন, যৌবন ম্লান হয়ে যাবে, বন্ধুত্যের পাতা ঝরে যাবে, কিন্তু তোমাকে নিয়ে মায়ের গোপন আশা সবাইকে ছাড়িয়ে বেঁচে থাকবে অনন্তকাল।
মা কেমন ?
প্রাচীন একটি ইংরেজি ব্যালাডে ফাঁসির পূর্ব মুহূর্তে যুবক জল্লাদকে বলছে, ফাঁসির দড়ি আলগা করে দাও, আমি দেখতে পাচ্ছি আমার সব স্বজন আমাকে ছাড়িয়ে নিতে মুক্তি পণ নিয়ে আসছে। ভাই, বন্ধু, প্রতিবেশি, প্রেমিকা সবাইকে যুবক জিজ্ঞেস করে তোমরা কেন এসেছ ? তাদের জবাব, তোমার ফাঁসিতে ঝুলা দেখতে এসেছি। শেষ মুহূর্তে মা এসে হাজির হয়। বলে, বাছাধন, তোমাকে আমি ফাঁসির কাষ্ঠে দেখতে আসি নি, আমার যা কিছু ছিল সব বেঁচে মুক্তিপণ দিয়ে তোমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে এসেছি।
মাকে নিয়ে ধ্রুপদ একটি গল্প
প্রেমিকা বলল, যদি আমাকে সত্যি ভালবেসে থাক তাহলে যাও তোমার মায়ের হৃৎপিণ্ডটি আমাকে এনে দাও। ছেলে মাকে প্রেমিকার দাবিটি জানাতেই মা বুক পেতে দিয়ে বলল, নে বাবা এক্ষণি খুলে নিয়ে যা। ছেলে যখন মায়ের হৃৎপিণ্ডটি নিয়ে প্রেমিকার প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে গেল ঠিক তখনই হোচট খেয়ে পড়ে গেল। সাথে হৃৎপিণ্ডটিও ছিটকে পড়ল। তখন হৃৎপিঁণ্ডটির ভিতর থেকে বেরিয়ে এলো একটি উদ্বিগ্ন বাক্য : ব্যথা পেলি খোকা ?
হৃদয় স্পর্শ করা একটি বিদেশী গল্প
আমার মা
আমার মায়ের চোখ মাত্র একটি। অন্যটি গোলাকার ফাঁপা। গর্তটা দেখতে ভয়ঙ্কর। মাকে বিভৎস দেখাত। আমি আমার মাকে খুব ঘেন্না করতাম। আমার মায়ের একি চেহারা ! মা যে আমার জন্য কি বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি করেছে কাকে বলি। সংসারটা অবশ্য মা-ই চালাত। আমাদের খাবারের টাকা যোগাড় করার জন্যই মাকে স্কুলের শিক্ষক ও ছাত্রদের রান্না করে খাওয়াতে হত। আমি তখন কেবল স্কুলে যেতে শুরু করেছি। বাবা কেমন আছো ? এ কথাটা বলতে মা একদিন স্কুলে চলে এলো। তাকে দেখে আমি যে কি ভীষণ বিব্রত হয়েছি। ছিঃ আমাকে একটা ঝামেলায় ফেলতে কেন যে মা স্কুলে এলো। মা হয়ে তুমি কেমন করে এই চেহারাটা আমাকে দেখাতে এলে ?
আমি স্কুলে মাকে দেখেও এড়িয়ে গেলাম। তার দিকে ঘৃণার দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম এবং দ্রুত পালিয়ে গেলাম।
পরদিন যখন স্কুলে এলাম আমার সহপাঠীদের একজন বলল, ওই ব্যটা তোর মায়ের এক চোখ কানা। এটা শুনে মনে হল এক্ষণি কবরে ঢুকে যাই। আমি মনে মনে চাই কেউ যদি মাকে নিরুদ্দেশ করে ফেলত ! আমার মা যদি হঠাৎ গায়েব হয়ে যেত !!
একদিন বলেই ফেললাম, আমাকে বিব্রত করতে তোমার এত ভাল লাগে ! তার চেয়ে তুমি মরে যাচ্ছ না কেন ? তুমি মরে গেলে আমি বেঁচে যাই। আমার বেহায়া মা একটি কথারও জবাব দেয় নি। আমি রেগে মেগে মাকে পৃথিবীর সবচেয়ে নোংরা কথাগুলো একটার পর একটা বলে চলেছি। তবুও কোন কথা বলে নি। আমার কথায় মা যে আঘাত পেতে পারে আমার তখন মনে হয় নি।
আমি আর এ বিভৎস মহিলার সাথে কোন সম্পর্ক রাখতে চাই না। আমি এ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে চাই।
সুতরাং আমি খুব মনোযোগ দিয়ে লেখা পড়া করে একটি ভাল বৃত্তি পেয়ে আরও বেশি পড়া শুনা করতে বিদেশ চলে গেলাম। পড়া শুনা করে বড় চাকরি পেলাম। চাকরি পেয়ে বিয়ে করলাম। সুন্দর একটা বাড়ি কিনলাম। আমার নিজের ছেলে হলো। মেয়ে হলো। ছেলে মেয়ে নিয়ে বেশ আরামেই জীবন যাপন করতে লাগলাম।
আমার ছেলে মেয়রাও পড়া শুনা শুরু করে দিয়েছে। অনেক দিন হয়ে গেল, কানা মা শুধু আমার কথা ভাবে আর ভাবে। আমি তো আর আমাদের ঠিকানা তাকে দেই নি। কেমন করে হাজার জনকে জিজ্ঞেস করে আমার ঠিকানা বের করলো। অনেক বছর না দেখার কষ্ট সহ্য করতে না পেরে আমার মা একদিন চলেই এলো। আমাকে দেখে না কত বছর ! আর তার নাতি নাতনীদের তো দেখেই নি।
আমার এক চোখা মা যখন দরজায় এসে দাঁড়ালো, আমার ছেলে মেয়েরা আঁতকে উঠে চিৎকার করলো। কেউ তাকে নিয়ে ঠাট্টা শুরু করলো। হৈচৈ শুনে এগিয়ে এসে দরজায় তাকে দেখে আমার মাথায় রক্ত চড়ে গেলো। আমি চৎকা করে বললাম, বিনা দাওয়াতে এখানে কেন এসেছো ? আমি আরো জোরে চিৎকার করে বললাম, তোমার কত বড় দুঃসাহস আমার বাচ্চাদের ভয় দেখাতে এসেছো।
আমার মা এক চোখ দিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। আমি বললাম, এখন বেরিয়ে যাও। গেট আউট। আমার মা বললো, দুঃখিত, আমি একটা ভুল ঠিকানায় এসে পড়েছি। তার পর আমাদের দৃষ্টির আড়ালে চলে গেলো।
আমার সেই ছোট্ট বেলার স্কুলে পুনর্মিলন অনুষ্ঠান হবে। আমাকেও নিমন্ত্রণ করেছে। ছোট্ট বেলাটা খুঁজে পেতে পুরনো স্কুলে পুরনো বন্ধুদের সাথে অনেক মজা করলাম। তারপর ভাবলাম আমাদের পুরনো বাড়িটা দেখে যাই। তাছাড়া কানা বুড়িটা তো ওখানেই থাকে। আমি যেতেই শুনলাম, আমার মায়ের মৃত্যু হয়েছে। শুনে আমার একটুও কান্না পেল না। প্রতিবেশীরা বলল, মরার আগে মা আমাকে একটি চিঠি লিখে গেছে। তারা আমাকে চিঠিটা দিলো। কি লেখা আছে সেই চিঠিত ?
প্রিয়তম সোনালক্ষ্মী আমার,
আমি সব সময় তোমার কথা ভাবি। বাছাধন, আমি খুব দুঃখিত যে তোমার বাড়িতে গিয়ে তোমার আদরের সন্তানদের ভয় দেখিয়েছি। গ্রামের লোকদের কাছে শুনেছি তুমি স্কুলে পুনর্মিলন অনুষ্ঠানে আসবে। শুনে আমার খুব আনন্দ হয়েছে। কিন্তু আমার শরীরটা এত খারাব যে বিছানা থেকে নেমে তোমাকে যে দেখে আসব আমার সে শক্তিও নেই।
যখন তুমি বড় হয়ে উঠেছিলে আমি বারবার তোমাকে বিব্রত করেছি বলে সত্যিই দুঃখিত।
তুমি যখন খুব ছোট ছিলে এক দুর্ঘটনায় তোমার একটি চোখ নষ্ট হয়ে গেল। তুমি বাঁচবে এক চোখ নিয়ে আর আমার থাকবে দুটি চোখ তা কি হয় ? তখন আমার একটা চোখ তোমাকে দিয়ে দিলাম। আমি তোমাকে নিয়ে খুব গর্বিত। আমার সে চোখ দিয়ে তুমি নতুন পৃথিবীটাকে আমার হয়ে দেখতে পাচ্ছ- এর চেয়ে বড় আনন্দ আর কি হতে পারে!
তোমার জন্য সকল ভালবাসা।
তোমার মা।
১২ ই মে, ২০১৭ বিকাল ৪:৪২
হাফিজ রাহমান বলেছেন: মায়ের অকৃত্রিম স্নেহ মমতায় সিক্ত হোক আপনার পৃথিবী। ভাল থাকুন।
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই মে, ২০১৭ রাত ৯:৪৯
ধ্রুবক আলো বলেছেন: মা আছে বলেই, পৃথিবী এতো সুন্দর। পৃথিবীর সুন্দরতম ভালোবাসা মায়ের জন্য।