নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তুমি একটা খারাপ কাজ করেছো তার মানে তুমি একজন মানুষ; তুমি সেই খারাপ কাজটার জন্য অনুতপ্ত হয়েছো তার মানে তুমি একজন ভাল মানুষ। \n\nwww.facebook.com/bandar.khola

হাফিজ রাহমান

পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম আদালত হলো মানুষের বিবেক।

হাফিজ রাহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

আবেগ প্রবণ বঙ্গালীর তীর্থস্থান : মাজার দরগা ১

১৯ শে মে, ২০১৭ বিকাল ৩:৫৯

মাজার দরগার অর্থ

মাজার আরবী শব্দ। ব্যাকরণিক ভাষায় এটি ‘যরফে মাকান’ তথা স্থানাধিকরণ। ব্যবহারিক বাংলা অভিধানে এর অর্থ করা হয়েছে গুরুস্থানীয় সম্মানিত ব্যক্তির সমাধিস্থল বা কবর, যিয়ারতের স্থান। আর দরগা ফারসী শব্দ। অর্থ রাজসভা, আশ্রম, আস্তানা, পুণ্যবান ব্যক্তির সমাধি। সংসদ বাংলা অভিধানে এর অর্থ করা হয়েছে, পীরের কবর ও তৎসংলগ্ন পবিত্র স্মৃতিমন্দির। বাংলাপিডিয়াতে দরগার সংজ্ঞা উল্লেখ করে চমৎকার একটি মন্তব্য যুক্ত করে দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘দরগাহ ওলী-আওলিয়ার কবরস্থান। ইসলামী শরীয়ত মতে কবরের ওপর কোনরূপ ঘর ও গম্বুজ নির্মাণ নিষিদ্ধ। তবে কবরকে চিহ্নিত করার জন্য জমিনের স্তর থেকে ১০ ইঞ্চি পরিমাণ উঁচু করা যেতে পারে। দরগাহে আনুষ্ঠানিকভাবে বাতি জ্বালানো নিষিদ্ধ; তবে দরগাহ এবং গোরস্থান যিয়ারত করা সওয়াবের কাজ। (বাংলাপিডিয়া ৬/৬৮)

মাজার সংস্কৃতির গোড়ার কথা

আদম আ. থেকে নিয়ে নূহ আ. পর্যন্ত সকল মানুষ ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এক ও অভিন্ন ছিল। নূহ আ. এর পর শয়তানের প্ররোচনায় উম্মাহর মাঝে বিভক্তি সৃষ্টি হয়। স্রষ্টার উপাসনা থেকে সৃষ্টির উপাসনার ধারা প্রবর্তিত হয়। ইবনে আব্বাস রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, উদ্দ, সুওয়া, ইয়াউক, নাসর- এগুলো মূলত নূহ আ. এর সম্প্রদায়ভুক্ত বিশিষ্ট সৎকর্মশীল ব্যক্তিদের নাম ছিল। যখন তারা পরলোকগমন করেন তখন শয়তান তাদের সম্প্রদায়ের লোকদের কুমন্ত্রণা দেয়, তোমরা তাদের অধিষ্ঠানস্থলে তাদের প্রত্যেকের নামে একেকটি মূর্তি স্থাপন করো এবং তাদের নামে সেগুলোর নামকরণ করো। শয়তানের কুমন্ত্রণা মতে তারা তাদের প্রত্যেক সৎকর্মশীল ব্যক্তির নামে একেকটি মূর্তি তৈরি করে এবং তাদের নামে সেগুলোর নামকরণ করে। তখনো তাদের নামে এ মূর্তিগুলোর পূজা-অর্চনার সূচনা হয়নি। কিন্তু সে প্রজন্মের সকলে যখন পৃথিবী থেকে বিদায় গ্রহণ করে এবং মূর্তি স্থাপনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অজ্ঞাত হয়ে যায় তখন থেকে সে মূর্তিগুলোর পূজার ধারা সূচিত হয়। (সহীহ বুখারী; হা.নং ৪৬৩৬)

আয়িশা রাযি. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মৃত্যুশয্যায় শায়িত তখন উম্মে হাবীবা এবং উম্মে সালামা রাযি. খ্রিস্টানদের একটি গির্জা সম্বন্ধে কথা বলছিলেন। তারা আবিসিনিয়াতে (বর্তমান ইথিওপিয়া) গির্জাটি দেখেছিল। গির্জাটির নাম ছিল মারিয়া। তারা গির্জাটির সৌন্দর্য এবং তার মধ্যে রক্ষিত ছবি সম্বন্ধে কথা বলছিলেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা উঠালেন এবং বললেন, যখন তাদের কোন সৎলোক ইন্তেকাল করত তখন তারা তাদের কবরের উপর উপাসনালয় নির্মাণ করত। এরপর সেখানে সেসব ছবি রাখত। তারা আল্লাহ তা‘আলার নিকট সবচাইতে বেশি নিকৃষ্ট। (সহীহ ইবনে হিব্বান; হা.নং ৩১৮১)

কাজি ইয়ায রহ. বলেন, এ কবরপূজাই ছিল মূর্তিপূজার সূচনাপর্ব। পূর্বযুগে যখন কোন নবী বা সৎ লোক ইন্তেকাল করত তখন তার ভক্তরা তার মূর্তি তৈরি করত এবং তার কবরের উপর উপাসনাগার নির্মাণ করত। যাতে সে ছবি দেখে তারা প্রশান্তি ও ঘনিষ্ঠতা অনুভব করতে পারে এবং উপদেশ গ্রহণ করতে পারে। তারা সে মূর্তিগুলোর নিকট আল্লাহর ইবাদত করত। এভাবে কয়েক যুগ চলে যায়। পরবর্তী প্রজন্ম তাদের পিতা এবং পিতামহদেরকে মূর্তির নিকট উপাসনা করতে দেখেছে। কিন্তু তারা তাদের উদ্দেশ্য উপলব্ধি করতে পারেনি। এ সুযোগে শয়তান তাদের কুমন্ত্রণা দেয়, তোমাদের পূর্বপুরুষেরা এ মূর্তিগুলোর পূজা করত। ফলে তারা সেগুলোর পূজা করতে শুরু করে। মূর্তিপূজার এ সূচনা ইতিহাস যে একটি সত্য ইতিহাস সে ব্যাপারে নিম্নোক্ত হাদীসটিই প্রমাণ করে। আতা ইবনে ইয়াসার রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হে আল্লাহ! আমার কবরকে মূর্তিতে পরিণত করবেন না যেখানে ইবাদত উপাসনা করা হবে। ঐ সম্প্রদায়ের উপর আল্লাহ তা‘আলা মর্মন্তুদ অভিশাপ বর্ষণ করুন যারা তাদের নবীদের কবরকে সেজদার স্থলে পরিণত করেছে। (মুসনাদে আহমাদ; হা.নং ২৩৫২, মুয়াত্তা মালেক; হা.নং ৫৯৩, ইকমালুল মু’লিম শরহু সহীহি মুসলিম ২/২৫১, ইকাযুল আফহাম ফী শারহি উমদাতিল আহকাম ৩/৭০)

জুনদুব রাযি. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, সাবধান! তোমাদের পূর্ববর্তীরা তাদের নবী এবং সৎকর্মশীলদের কবরগুলোকে মসজিদ তথা সিজদার স্থলে পরিণত করেছিল। সাবধান! তোমরা কবরকে সিজদার স্থলে পরিণত করো না। আমি তোমাদেরকে এ থেকে নিষেধ করছি। (সহীহ মুসলিম; হা.নং ১২১৬)

কবরপূজার সূচনাকারী লোকগুলো থেকে ইয়াহুদীরা লুফে নেয় তাদের পঙ্কিল চিন্তাধারা। ফলে তারাও আম্বিয়ায়ে কেরামের কবরকে পূজা করে আল্লাহ তা‘আলার অভিশম্পাত কুড়িয়েছে। আর তাদের থেকে খ্রিস্টান জগত কবরপূজায় অংশগ্রহণ করে তাদের আনুগত্যের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেছে। হযরত আয়িশা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুশয্যায় বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা ইয়াহুদী এবং খ্রিস্টানদের ধ্বংস করে দিন। তারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদ তথা সিজদার স্থলে পরিণত করেছে। আয়িশা রাযি. বলেন, যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটি না বলতেন তবে তাঁর কবরকে দৃশ্যমান করে রাখা হতো। কিন্তু আশঙ্কা করা হয়েছিল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরকে সিজদার স্থলে পরিণত করা হবে। (সহীহ বুখারী; হা.নং ৪৩৭, সহীহ মুসলিম; হা.নং ১২১২)

ব্যক্তিপূজা থেকে মাজারপূজার সূচনা

ভক্তি, শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা এগুলো ইসলামী শরীয়ার অন্যতম একেকটি অনুষঙ্গ। কোন ব্যক্তির মাঝে যদি এসব সৎগুণের অভাব থাকে তবে তার ঈমানের মাঝেও ঘাটতি দেখা দেয়। কুরআন-হাদীসে ভক্তি, শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসার রূপরেখা এবং পরিসীমাকে বেশ স্পষ্ট করেই নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। এ সীমারেখা অতিক্রম করলেই শিরক-বিদআতের মত অমার্জনীয় অপরাধের জন্ম হয়। উদ্দ, ইয়াগুস, ইয়াউক নামের সৎলোকগুলোকে তাদের স্বজাতির লোকেরা ভালোবেসেছিল। কিন্তু এ ভালোবাসা ছিল লাগামহীন। মানুষকে ভালোবাসতে হলে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং ভালোবাসাকে মাধ্যম বানাতে হয়। এ মাধ্যম বা মিডিয়া উঠে গিয়ে যদি মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা ডাইরেক্ট হয়ে যায় তখনই বাধে যত্তসব বিপত্তি। সূচিত হয় অমার্জনীয় অনাচার-অবিচার। আজ আমাদের সমাজে যে কবরপূজা বা মাজারপূজার প্লাবন দেখি তার বীজ বপিত হয় ব্যক্তির প্রতি সীমাতিরিক্ত ভক্তি ভালোবাসা থেকেই। লাগামহীন এ ভালোবাসার নৈতিকতার দিকটি আমরা তলিয়ে দেখতে চাই না। কারণ আমরা যে হুজুগে বিশ্বাসী। কেউ একজন বলল, ঐ মাজারে এই হয় সেই হয়। ব্যস, দে ছুট। পেছনে ফিরে দেখার সুযোগ আর হয় না। ঐ মাজারে গিয়ে নানা রকম অনাচারমূলক কীর্তিকলাপে বুঁদ হয়ে অর্থ-সম্পদসহ সাধের ঈমানটিকে বলি দিয়ে তবেই কেবল ক্ষান্ত দেই। এই হল আমাদের হুজুগেপনা চরিত্রের পরিণতি। অথচ হাদীসে মাজারকেন্দ্রিক উৎসব উপাসনার ব্যাপারে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা এসেছে। হযরত আবূ হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা আমার কবরকে উৎসব-অনুষ্ঠানে পরিণত করো না। (সুনানে আবূ দাউদ; হা.নং ২৫০৪৪) আতা ইবনে ইয়াসার রহ. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হে আল্লাহ! আমার কবরকে মূর্তিতে পরিণত করবেন না যেখানে ইবাদত-উপাসনা করা হবে। ঐ সম্প্রদায়ের উপর আল্লাহ তা‘আলা মর্মন্তুদ অভিশাপ বর্ষণ করুন যারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদে পরিণত করেছে। (মুসনাদে আহমদ; হা.নং ২৩৫২, মুয়াত্তা মালেক; হা.নং ৫৯৩)

বাংলাদেশে মাজার দরগার পরিসংখ্যান

বাংলাদেশে ঠিক কয়টি মাজার বা দরগা রয়েছে আমাদের জানামতে এ নিয়ে সুপুঙ্খ কোন জরিপ এখনো হয়নি। ‘বাংলাদেশের মাজার ইনসাইক্লোপিডিয়া’ শিরোনামে মাজার বিষয়ক বিশ্বকোষ প্রস্তুতির উদ্দেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিজম বিভাগ অনলাইনকেন্দ্রিক একটি উদ্যোগ নিয়েছে এবং তথ্য সংগ্রহের জন্য এ সংক্রান্ত একটি ঘোষণাপত্র যথারীতি প্রচারিত হচ্ছে। জানি না কী উদ্দেশে তাদের এ উদ্যোগ। মাজারচর্চাকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতেই কি তাদের এ গবেষণা আয়োজন, না নিছক গবেষণার জন্যই গবেষণা তাদের উদ্দেশ্য? কিন্তু এখনো তাতে কোন সাড়া মেলেনি। তবে চট্টগ্রাম জেলার চান্দনাইশ থানায় অবস্থিত মাজারগুলোর একটি তালিকা আমরা হাতে পেয়েছি। এ থানায় পৌরসভাসহ নয়টি ইউনিয়ন রয়েছে। তালিকাটিতে ইউনিয়ন ভিত্তিক মাজারের পরিসংখ্যান দেয়া হয়েছে। সেখানে মোট মাজারের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে ১৩৬টি। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে জরিপ করা হলে কোন কোন থানার মাজারের সংখ্যা উক্ত সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে যাবে। এটা স্বতঃসিদ্ধ কথা, অন্যান্য বিভাগের তুলনায় সিলেট এবং চট্টগ্রাম বিভাগে মাজার দরগার সংখ্যা তুলনামূলক অনেক বেশি। বাংলাদেশে মোট ৫৫০টি থানা রয়েছে। আনুমানিক হিসেবে প্রতিটি থানার মাজার সংখ্যা গড়ে ২০টি করেও ধরা হলে বাংলাদেশের মাজার দরগার আনুমানিক সংখ্যা দাঁড়ায় ১১০০০।

কিম্ভূতকিমাকার মাজার দরগার পসরা

মাজারস্থ মাটিতে যে ব্যক্তিটি শায়িত আছেন তার সম্বন্ধে না জেনে আমরা কোন ধরনের বিরূপ মন্তব্য করতে পারি না। কারণ আজকের পৃথিবীর নানা প্রান্তে বিশ্ববরেণ্য আওলিয়ায়ে কেরামের অসংখ্য মাজার-দরগা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। যেখানে সকাল-সন্ধ্যা শিরক বিদআতের উন্মাতাল আয়োজন চলে। যেগুলো একসময় পবিত্র কবর ছিল আজ সেগুলো মাজার নামের শিরক বিদআতের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। অনৈতিক এ আয়োজনের কারণে শায়িত মনীষীদের ব্যাপারে আমরা কোন মন্তব্য করতে পারি না। কিন্তু যখন আমরা মাজারের নেমপ্লেটে অদ্ভূতুড়ে নাম প্রত্যক্ষ করি তখন আমাদের মনে বিষম রকমের সংশয় জাগ্রত হয়, আসলেই কি এখানে কেউ শায়িত আছেন? শায়িত থাকলেও তিনি কি কোন ভালো মানুষ ছিলেন, নাকি সেটা নিছক কোন ইকোনোমিক সেন্টার? ইত্যকার হাজারো রকমের প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে। সংশয়াকুল এ জাতীয় কিছু বিচিত্র মাজারের নাম নিম্নে তুলে ধরা হলো।

১. কালু শা’র মাজার।

২. বারো আউলিয়ার মাজার। সুনামগঞ্জ, রাজশাহী, চট্টগ্রাম এবং মুন্সিগঞ্জে এ নামে ছয়টি মাজার রয়েছে। প্রশ্ন হলো, এক সাথে বারোজন ওলীর সমন্বয় কি করে হলো? তারা কি যৌথভাবেই ইন্তেকাল করেছিলেন নাকি পর্যায়ক্রমে ইন্তেকাল করেছিলেন? এরপর যে প্রশ্নটি সৃষ্টি হয় তা হলো, তাদের মাজার একাধিক জায়গায় হলো কী করে? নাকি প্রত্যেক বারোজন ওলীই স্বতন্ত্র। এক বারোর সাথে আরেক বারোর কোন সংশ্লিষ্টতা নেই?

৩. গাজি কালু চম্পাবতির মাজার। এরা কারা? এ নামে কোনো মানুষ কি এ দেশে ছিল, নাকি এরা রূপকথার নায়ক নায়িকা? এ নিয়ে রয়েছে অজেয় রহস্য। কিন্তু এদের নামে বাংলাদেশের আনাচে কানাচে অসংখ্য মাজারের দেখা মিলে। শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পাহাড়ি টিলায় এ নামে একটি মাজার রয়েছে। স্থানীয় একজনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, এ নামের মাজার তো বাংলাদেশের নানা জায়গায় দেখা যায়। এর কারণ কি? তিনি বলেছিলেন, তারা বাংলাদেশের যেখানে যেখানে গিয়ে বসেছেন সেখানেই একেকটি মাজার তৈরি হয়েছে। ভাগ্যিস কোন কারিশমা-কারামাতের কথা বলেননি! উত্তরটা কিছুটা হলেও যুক্তিতে ধরে। সেই সাথে এটাও প্রতীয়মান হয় যে, ঐ মাজারস্থ মাটির তলায় কিছুই নেই। ওখানে একখানা হাড়গোড়েরও হয়তো সন্ধান পাওয়া যাবে না। এ নামে ঝিনাইদহে একটি মাজার রয়েছে। জেলা পরিষদের অর্থানুকূল্যে ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে ১৪২৪৯৩/- টাকা ব্যয়ে মাজারটি নির্মাণ করা হয়। প্রশাসনের এ কেমন মাজার প্রীতি? মানুষ খেতে পায় না। অথচ কল্পিত মাজার নির্মাণে ব্যয় হয় খেটে খাওয়া মানুষের লাখ টাকা!

৪. চাষনী পীরের মাজার।

৫. কলন্দর শাহের মাজার।

৬. বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার। এটা যে একটি অলীক মাজার এ ব্যাপারে সামান্যতম সংশয়ের অবকাশ নেই। কারণ এটা ইতিহাস স্বীকৃত একটি বাস্তবতা, তিনি ইরানের বিস্তাম (বর্তমানে বস্তাম; তবে বিশুদ্ধ বিস্তাম) নগরীতে ইন্তেকাল করেছেন এবং সেখানেই তাকে সমাহিত করা হয়েছে। এখন চট্টগ্রামে বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার নামে যা হচ্ছে তা সবই মিথ্যার বেসাতি বৈ কিছুই নয়। যাকে চুরির উপর সিনা জুরি বলা চলে। একটি মিথ্যা কবরকে কেন্দ্র করে শিরক বিদআতের মহাযজ্ঞ চলছে।

৭. খিজির আ. এর খলীফার মাজার। মাজারটি আজিমপুর গোরস্তানেই রয়েছে। কি অদ্ভুত কা-। শায়িত ব্যক্তিটি খিজির আ. এর খলীফা হলেন কি করে? উন্মাদনারও একটি সীমানা থাকা চাই।

৮. ঠাণ্ডা শাহের মাজার। বাগেরহাট খানজাহান আলীর মাজারের সন্নিকটেই মাজারটি অবস্থিত।

৯. হযরত পীরু শাহের মাজার।

১০. তোতা শাহের মাজার।

১১. চেহেল গাজীর মাজার।

১২. গায়েবী পীরের মাজার। মাজারটি সিলেটে নতুন আবিষ্কৃত হয়েছে। বাংলাদেশে অসংখ্য গায়েবী মাজার রয়েছে। অদৃশ্যভাবে নাকি রাতারাতি মাটি ফুঁড়ে মাজার বেরিয়ে আসে। কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, সবাই শোনা কথা বলে। কেউ সচক্ষে দেখেছে, এমন ব্যক্তির সন্ধান মেলা ভার। মসজিদও নাকি গায়েব থেকে উত্থিত হয়। কিন্তু যখন এসব গায়েবী মাজার-মসজিদ নিয়ে গবেষণা হয় তখন থলের বিড়াল বেরিয়ে আসে। তখন দেখা যায়, এগুলো গায়েব টায়েব কিছু নয়; মুগল আমলের স্থাপনা। গায়েবী টায়েবী সব রূপকথার অলীক গুজব। গুজবে-হুজুগে মানব নির্মিত স্থাপনাও গায়েবী হয়ে যায়!

১৩. জংলী পীরের মাজার।

১৪. পুতুন শা’র মাজার।

১৫. সর্বকাজীর মাজার।

১৬. কম্বলী শা’র মাজার।

১৭. ফুল শা’র মাজার (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে অবস্থিত)।

১৮. মাক্কু শা’র মাজার (ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে অবস্থিত)।

১৯. তেল শা’র মাজার (কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন)।

২০. হযরত আব্দুল কাদের জিলানীর মাজার। কি অদ্ভুত ব্যাপার! ইরাকের আব্দুল কাদের জিলানী রহ. বাংলাদেশে কি করে এলেন? তার মাজার তো ইরাকেই বর্তমান রয়েছে! মাজারের আধিক্যকরণ তো শিয়া সম্প্রদায়ের বৈশিষ্ট্য। তারা ইরাক, সিরিয়া এবং মিশরে হুসাইন রাযি.এর নামে মাজার তৈরি করে পূজা করে। এমনকি তারা আফগানিস্তানের মাজার-ই-শরীফে আলী রাযি.এর অলীক মাজার তৈরি করে কবরপূজার পসরা বসিয়েছে। সেখানে লাখ লাখ মানুষের সমাগম ঘটে। মিথ্যার কি শক্তি!

২১. হযরত বন্দি শাহের মাজার।

২২. পহর বাংলার মাজার।

২৩. পাঁচপীর মাজার।

২৪. খন্ডখুই মাজার।

২৫. লেংটা বাবার মাজার।

২৬. কল্লা শা’র মাজার (বি.বাড়িয়ার কসবায় অবস্থিত)।

২৭. গরম বিবির মাজার (মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন)।

এখানে উপমা হিসেবে কয়েকটি বিচিত্র মাজারের নাম দেয়া হলো। নতুবা ডাল চাল আর ঘোড়া শা’র মাজারসহ আরো কত ধরনের মাজার যে বাংলাদেশে রয়েছে তার কোনো পরিসংখ্যান নেই!


মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে মে, ২০১৭ সকাল ১১:০৪

টমাটু খান বলেছেন: পড়েছি

২৩ শে মে, ২০১৭ দুপুর ২:৩২

হাফিজ রাহমান বলেছেন: গরিবের ঘরে হাতির পাড়া। উপরন্তু দীর্ঘসময় অধ্যয়ন। আপনাকে এক প্লেট সংবর্ধনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.