![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম আদালত হলো মানুষের বিবেক।
দুর্নীতির কথা শুনলে আপনার মনটা বিষিয়ে উঠে। রাগ ও ক্ষোভে অফিসারদের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করেন। আপনার কথা শুনলে মনে হয়, আপনি একজন একনিষ্ঠ দেশপ্রিমক। মনে হয় হৃদয়ের মণিকোঠায় দেশপ্রেমের পরাকাষ্ঠা লালন করেন। অথচ আপনার ফাইলটা যখন নিথর পড়ে থাকে টেবিলের এক কোণে তখন আপনি টেবিলের নিম্নাঞ্চল দিয়ে এক মুঠি নোট ধরিয়ে দেন অফিসার মহাশয়ের হাতে। নিজ হাতে টাকা ধরিয়ে দিয়ে এসে অফিসারের নামে অশ্লীল খিস্তিখেউড় করেন। চার কাপে ধোঁয়া তুলে দুর্নীতি বিষয়ক বক্তৃতা দেন। আপনাকে যখন বলা হলো, ভাই তুমিই তো অফিসারকে দুর্নীতিবাজ হওয়ার পথ করে দিলে। সে তুমি আবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলছ কেন ? আপনি দাঁত কেলিয়ে বলছেন, আরে ভাই ! টাকা না দিলে তো ওই হারামীরা ফাইল ছাড়বে না। আমি তো বাধ্য। আসলেই কি আপনি বাধ্য ? কে বলেছে আপনি বাধ্য ? আপনি কি কোনো দিন বলেছেন, স্যার, এ বাড়তি টাকাটা আপনি কেন নিচ্ছেন ? আপনার শ্রমের বিনিময় তো সরকার আপনাকে দিচ্ছে। মাস শেষে আপনি যে বিশাল অঙ্কের মাইনে পাচ্ছেন ওটা তো আমারই ঘাম ঝরানো টাকা। এরপর আবার বাড়তি টাকা নিচ্ছেন কেন ? আপনি তো আমাদের সেবক। সেবক হয়ে শোষক হচ্ছেন কেন ? এত বড় শিক্ষিত মানুষ হয়ে এমন অনৈতিক ও বেআইনী কাজটি আপনি কেন করছেন ? এ কথাগুলো তো আপনি কোনো দিন তাকে বলেন নি। কেন বলেন নি ? কথা না বলে ভিজে বিড়ালের মত উৎকোচ দিয়ে এবং একজন মানুষকে দুর্নীতিবাজ হওয়ার পথ করে দিয়ে আমাদের দেশের বারোটা বাজাচ্ছেন। বিশ্ব দরবারে আমাদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করছেন। আপনিই তো আসল দুর্নীতিবাজ। দুর্নীতির লৌহ কপাট তো আপনিই উন্মুক্ত করে দিচ্ছেন। আপনার ঘাম ঝরানো টাকা আপনি কেন দিবেন একজন চরিত্রহীন ও নীতিহন অফিসারকে ?
আপনি বলছেন, ওসব কথা বললে তো আমাকে মেরে ফেলবে। জীবনের মায়া তো সবারই আছে। কে বলেছে আপনাকে মেরে ফেলবে ? আপনাকে ক্ষতি করবে ? অফিসারের বাবার ক্ষমতা আছে আপনার গায়ে টাচ করার ? আপনি দেশের স্বার্থে ভয়কে জয় করতে পারলেন না। আবার আয়েশী ভঙ্গিতে সুর তুলেন, আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি। মিথ্যা কথা। কে বলেছে, আপনি দেশকে ভালবাসেন ? আপনি তো দেশের শত্রু। আপনি দেশের স্বার্থে একটুখানি ভয়কে জয় করতে পারেন না। আবার বলেন আমি দেশকে ভালবাসি। আপনি যদি দেশপ্রেমের শপথ নিয়ে অফিসারকে মুখ ফুটিয়ে কথাগুলো বলতেন তাহলে অফিসারের বাবার ক্ষমতা ছিল না আপনার কাছ থেকে ঘুষ দাবি করার। আপনি মুখে স্বাধীনতার কথা বলেন। ৭১ এর জয়গান গান। সুর তুলে বলেন, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনল যারা......। লজ্জা করে না ? এসব গান এসব কথা আপনার মুখে সাজে না। বাংলার দামাল ছেলেরা ৭১ এ দেশের স্বার্থে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে পবিত্র এ মাটি ও মানুষকে স্বাধীন করেছে। পাক বাহিনীর মারণাস্ত্রের সামনে বুক চেতিয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁরা ভয় শঙ্কার কবর রচনা করে এ দেশকে স্বাধীন করেছে। আর আপনি দেশের স্বার্থে একজন অফিসারকে এ সত্য কথাগুলো বলবেন তাতে আপনার বুক কাঁপে। ধিক আপনাকে শত ধিক। এ দেশের আলো বাতাস ভোগ করার অধিকার আপনার নেই। এ দেশের মাটিতে ঘর বেধে বসবাস করার অধিকার আপনার নেই। আপনি দেশের একজন চরম শত্রু। যে ভয় শঙ্কায় দেশর ভাল চায় না, দেশের কল্যাণ চাইতে জানে না সে কাপুরুষ। তার এ দেশে থাকার অধিকার নেই। দুর্নীতিতে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের মাথা নিচু হয়ে যায়। এতে আপনার কিছু যায় আসে না। আপনার স্বকীয়তাবোধ ও বিবেকে বাধে না। আপনি শুধু ভয়ের অজুহাত দেখান। আসলে আপনার মাঝে দেশপ্রেম বলতে কিছু নেই। আপনি একজন কাপুরুষ। আপনার নামের আগে বা পরে কাপুরুষ অভিধাটি সংযুক্ত করে দেয়া প্রয়োজন। আপনি কখনো দেশের ভালবাসার কথা বলবেন না। আপনি কখনো জাতীয় সঙ্গীত গাইবেন না। এগুলো আপনার মুখে সাজে না।
আপনি কত বড় দুর্নীতিবাজ তা কি কখনো লক্ষ করেছেন ? দেশের স্বার্থে আপনার বাড়ি ঘর আপনার জমি জমা অধিগৃহীত হলো। আপনি কতটা দেশপ্রিমক বা কতটা দুর্নীতিবাজ তার পরীক্ষা এখনই হয়ে যাবে। প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার সাথে সাথে আপনি আপনার ফসলী জমি জুড়ে গাছ লাগিয়ে দিবেন। দৃষ্টিকটু হলেও ফসলী জমিতে ঘর বসিয়ে দিতেও আপনার বিবেকে বাধবে না। আপনার বাড়িতে যত খালি জায়গা রয়েছে সবখানে ঘর বসিয়ে দিবেন। কারণ এগুলো দেখিয়ে বেশি বিল করা যাবে। অফিসাররা নতুন ঘর ও ফসলী জমিতে বাচ্চা বৃক্ষ দেখে কাচুমাচু করবে। আপনি দাঁত কেলিয়ে গোপন হাতে ওই বদমাইশটার কাচুমাচু বন্ধ করে দিবেন। ফলে দুই ঘরের জায়গায় দশ ঘরের বিল উঠালেন। এক গাছের জায়গায় শত গাছের বিল উঠালেন। এ কাজটি করে আপনি কি বুঝতে পারছেন আপনি কত বড় একজন দুর্নীতিবাজ ?
অফিসার আর আপনি মিলে দেশের সম্পদ লুটে খেলেন। একটু লজ্জা করে না ! আবার বড় বড় কথা বলেন। গায়ে কোর্ট হাঁকিয়ে মাথার চুলে শিথি কেটে সদম্ভে ঘুরে বেড়ান। একটু লাজ শরমের তো প্রয়োজন ছিল। সে আপনি আবার অফিসারদের বিরুদ্ধে দুর্নাম রটনা করেন। আপনার এলাকায় চোর ধরা পড়লে আপনাকেই সবার আগে এগিয়ে আসতে দেখা যায়। কখান চড় থাপ্পড় আপনিই বসিয়ে দেন সর্বাগ্রে। বকা ঝকার তো মা বাবাই নেই। চোর বেচারা তো একজনের কাছ থেকে খুব সামান্য সম্পদই চুরি করেছে। কিন্তু আপনি যে রাষ্ট্রের সম্পদ তথা কোটি মানুষের অঢেল সম্পদ চুরি করলেন তার কি বিচার হবে। চোরকে চড় থাপ্পড় মারার আগে আপনাকেই তো চড় থাপ্পর মারা প্রয়োজন। চোরকে জুতা পেটা করার আগে আপনাকেই তো জুতা পেটা করা প্রয়োজন। কারণ আপনিই তো বড় চোর। আপনিই তো বড় ডাকাত। দেশের সম্পদ লুটে পুটে খায় যারা তারা কি এ দেশের নাগরিক হওয়ার যোগ্য ?
ডিসি অফিস থেক অধিগ্রহণের টাকা উঠাবেন। আর বলবেন অফিসারদের কিছু দিতেই হয়। এটা দেশের নিয়ম। এটা না দিয়ে পারা যায় না। তার পরিমাণ কত ? টেন পার্সেন্ট। তুমি যত টাকা পাবে তার দশ ভাগের এক ভাগ তাদেরকে দিতেই হবে। না দিয়ে কোনো উপায় নেই। কারণ এখানে মন্ত্রীদেরও ভাগ আছে। সুতরাং না দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। ব্যাস আপনি ভয় পেয়ে গেলেন। হায় হায় অফিসার ! ডিসি ! সে তো জেলার বাবা ! মন্ত্রী !! ওরে বাবা ! টু শব্দ ও করা যাবে না। হাসি মুখেই দশ পার্সেন্ট দিয়ে আসতে হবে। কেউ কথা বলতে চাইলে, চুপ চুপ কোনো কথা নেই। কথা বললে শেষ করে ফেলবে। উপরন্তু ডিসি অফিসের অফিসাররা তো আপনার জানের জান। আপনাকে কত টাকার বিল করে দিয়েছে খেয়াল করেছেন ? হোক না কিছুর টাকার বিনিময়ে। এত টাকা তো আপনি স্বপ্নেও দেখন নি। সুতরাং এত বড় উপকার যারা করতে পারল তাদের মত প্রিয়জন কি এ পৃথিবীতে আর কেউ আছে ?
দেশের সকল আপনিরা যদি এক হয়ে যেতেন তাহলে ডিসি বা ঊর্ধ্বতন কোনো অফিসারের বাবার কি ক্ষমতা ছিল আপনার কাছ থেকে দু টাকা উৎকোচ গ্রহণ করার ? স্বেচ্ছায় চোরের হাতে টাকা বুঝিয়ে দিয়ে এসে বলছেন আমার এত টাকা নিয়েছে ! আপনার দেয়াতে দোষ নেই নেয়াতেই সব দোষ ! এ দুর্নীতির জন্য আপনিও সমানভাবে দায়ী। ভয়ে টাকা দিয়ে আসেন আবার নিজেকে মুসলিম বলে পরিচয় দেন। মুসলিম সংবিধানে ভয় বলে কোনো শব্দ নেই। মুসলিম কাউকে ভয় করে না এক আল্লাহ ছাড়া। সুতরাং ভয় এবং মুসলিম পরিচয় এক হতে পারে না। হয় ভীতু নয় মুসলিম। ভীতু মুসলিম বলে কোনো শব্দ নেই। মুসলিম সদা নির্ভিক। অন্যায়ের সাথে সে কোনো আপস করতে জানে না। কোনো অন্যায়কে সে মাথা পেতে নিতে পারে না। সুতরাং আপনি ভেবে দেখুন, আপনি মুসলিম না ভীতু কাপুরুষ। ভীতু কাপুরুষ দেশ ও জাতির বোঝা। এরা দেশ জাতি ধর্মের কোনো কাজে আসে না।
©somewhere in net ltd.