নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যিকারের স্বাধীনতার খোঁজ কোথায় পাব!!

নিজের সম্পর্কে নিজে না বলাই ভালো।

ভুমিহিন জমিদার

নিজের সম্পর্কে না হয় নাই বললাম

ভুমিহিন জমিদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

লুতোপুতো প্রেমিক-প্রেমিকার “ ভালোবাসা দিবস” নাকি “স্বৈরাচার-প্রতিরোধ দিবস”?

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৩৮

১৪ ফেব্রুয়ারি। বিশ্ব ভালবাসা দিবস। তরুন-তরুণীদের “তুমি-আমি” ভালবাসার হিসাব নিকাশের বহুল গুরুত্ব পূর্ণ দিন। আজ হয়ত এমন কোন যুবক বা যুবতি কে খুঁজে পাওয়া যাবে না যারা ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন’স ডে কে না জানে।

পশিচমাদের এই ভ্যালেন্টাইন’স ডে কে আমাদের দেশে জনপ্রিয় করে তুলেছে কে জানা আছে? অনেকেই তাকে চেনে।

শফিক রেহমান

এই দিন টির উদজাপন নিয়ে আমাদের দেশের তরুন প্রজন্মের উৎসাহের কমতি যে নেই তা আমরা সবাই জানি। আর তাদের উৎসাহের মাত্রাও সকলেরই জানা আছে।

যে দিনটিতে টি এস সি তে হয়ত পা ফেলার ও জায়গা থাকে না।

আমরা একটু পিছনে ফিরে তাকাই। আমরা ফিরে যাব মাত্র দের দশক আগে ১৪ ফেব্রুয়ারি কে আমাদের দেশের তরুন সমাজ কিভাবে পালন করত।

তারও আগে আমরা তাকাই ১৯৮৩ সালের দিকে।

জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এক রক্তপাতহীন অভুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন। রাজনৈতিক দলগুলো মেনে নিলেও ছাত্ররা মেনে নেননি এই সামরিক অভ্যুত্থান।

এরশাদ ক্ষমতায় ছিল প্রায় নয় বছর। এ সময় দেশের হাজার হাজার মানুষ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে কারাবরণ করেছে। হত্যা-গুমের শিকার হয়েছে অসংখ্য নারী-পুরুষ। সেটা আমরা সকলেই জানি।

সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে উঠেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ছাত্র নেতারা কর্মসূচি ডাকেন। শান্তি পূর্ণ কর্মসূচি।



সুশৃঙ্খল, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে খুবই শান্তিপূর্ণ ভাবে মিছিলে যোগ দেয় ছাত্ররা। উৎসবের মতো অনেকটা। মিছিলের সামনে থাকে আনুমানিক একশত মেয়ে।

মিছিলটি হাইকোর্টের গেট ও কার্জন হল-সংলগ্ন এলাকায় এসে ব্যারিকেডের সামনে বসে পড়েন। নেতারা তারকাঁটার ওপর উঠে বক্তৃতা দিতে শুরু করেন। কিন্তু কোনো উসকানি ছাড়াই তারকাঁটার একদিক কিছুটা সরিয়ে রায়ট কার ঢুকিয়ে রঙিন গরম পানি ছিটাতে শুরু করে পুলিশ। এরপর বেধড়ক লাঠিচার্জ শুরু করে। সাধারণ ছাত্ররা তখন এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করে পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল ছুড়তে শুরু করেন। পুলিশ তখন ছাত্রদের ওপর গুলিবর্ষণ করে।

গুলিবিদ্ধ হন “জয়নাল”। সেদিন জয়নালকে গুলিবিদ্ধ করেই ক্ষান্ত হয়নি, তাঁর শরীর বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে পুলিশ। বেয়নেট ফলা আর জয়নালের শরীর থেকে চুইয়েপড়া রক্ত বাংলার পথ-প্রান্তর ভাসিয়ে দেয়।

শুধু জয়নাল নয়, ছাত্রদের ওপর পুলিশি তাণ্ডবের সময় গুলিবিদ্ধ হয় শিশু একাডেমীতে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা “দিপালী” নামের এক শিশু ।

এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে যেসব ছাত্র সকালে মিছিলে আসেননি, তাঁরা বিকেলে জয়নালের জানাজায় বটতলায় উপস্থিত হন। হাজার হাজার সাধারণ মানুষও উপস্থিত হয়। আসেন তৎকালীন জাতীয় নেতারাও।

পুলিশ সেদিন শুধু হত্যা করেই স্থির থাকেনি, বিকেলে ক্যাম্পাসে একটি যুদ্ধ-পরিস্থিতি তৈরি করে সেনাবাহিনী। তার সঙ্গে যোগ দেয় বিডিআর-পুলিশ। শাহবাগ, টিএসসি চত্বর, কলাভবনের সামনে, নীলক্ষেত, কাঁটাবনের রাস্তা ধরে পুরো অঞ্চল ঘেরাও করে ফেলে । অপরাজেয় বাংলার সমাবেশে পুলিশ অতর্কিত লাঠিচার্জ শুরু করে। সরকারি হিসাব মতে এক হাজার ৩৩১ জন। সবাইকে গ্রেপ্তার করে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় শাহবাগের পুলিশ কন্ট্রোল রুমে। এরপর তাঁদের তুলে দেওয়া হয় আর্মির হাতে। বন্দি ছাত্র-জনতার ওপর চলে প্রথমে পুলিশ ও পরে আর্মির নিষ্ঠুর নির্যাতন।

মূলত ১৯৮৩ সালের ১৪ নিহত হওয়ার পর থেকেই জয়নাল-দিপালী দেশব্যাপী ব্যাপক আন্দোলন গড়ে উঠে।

আন্দোলনের দুই যুগ পার হতে না-হতেই জনগণের কাছে বিস্মৃতি হতে চলেছে জয়নাল-দিপালীদের নাম।

লুতোপুতো প্রেমিক-প্রেমিকার “ ভালোবাসা দিবসে” পরিণত হয়েছে “স্বৈরাচার-প্রতিরোধ দিবস”।

১৯৯২ সাল পর্যন্ত দিনটিতে বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ স্বৈরাচার-প্রতিরোধ দিবস হিসেবেই পালন করে আসছিল।

নব্বই-পরবর্তী মুক্তবাজার অর্থনীতির প্রবল জোয়ার আর পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রতি অগাধ টান এ “ভ্যালেন্টাইন’স ডে” এর উত্তাপে হারিয়ে যেতে বসেছে ইতিহাসের গুরুত্ব পূর্ণ একটি অংশ।

বুট, টিয়ারশেল আর গুলির তীব্র ঝাঁজালো বারুদের গন্ধ এমন ভাবে ভালোবেসে সবাইকে ঋণী করে নিজের বুকের রক্ত দিয়ে যাঁরা আমাদের গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়ে গেলেন, তাঁদের জন্য একটু ভালবাসাও দেখাতে পারি না আমরা।

এত স্বার্থপর জাতি আমরা বাঙালি।



সুত্রঃ উইকিপিডিয়া, দৈনিক কালের কণ্ঠের ‘রাজকূট’ ম্যাগাজিন ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১০।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.